বন্ধুত্বের পরিচয় | গল্প লিখন | ভাষা ও শিক্ষা ,দু বন্ধু সুমন আর সুজন। শুধু নামের মিল নয়, দুজনের মধ্যে বন্ধুত্বও খুব প্রগাঢ়। যাকে বলে মানিকজোড়। পড়াশোনা, চলা-বলা, হাঁটা-বেড়ানো সব কিছুই এক সঙ্গে। পাড়া-পড়শিরা বলে, এমনটি আর দেখা যায় না।
বন্ধুত্বের পরিচয় | গল্প লিখন | ভাষা ও শিক্ষা
পাহাড় অঞ্চলে শেষ ফাগুনের বিকেলটা অপরূপ। কথামতো সেদিন বিকেলে দুজনে বনের অপরূপ শোভা দেখতে বেরিয়ে পড়ে। কথা বলতে বলতে পাশাপাশি হাঁটে দুজনে। কিছুটা খাড়া পাহাড় বেয়ে টিলার উপরে এসে আবার কিছুটা সমতল ভূমিতে গভীর বনের পথ ধরে হাঁটতে শুরু করে দু বন্ধু।
ওদের কথা হচ্ছিল গাছ-গাছালি আর জন্তু-জানোয়ার নিয়ে। সুমন বলে, এ বনে তো বাঘ-ভালুক আছে বলে শুনেছি, সুজন। সেবার আমাদের বাড়িতে যে কাজ করে জব্বার চাচা, সে কাঠ কাটতে এসে এক নেকড়ের কবলে পড়েছিল। বুড়োর ভাগ্য ভালো, সে-যাত্রা প্রাণ নিয়ে বাড়ি ফিরেছিল।
সুজন বলে, ও গল্প তোর কাছে আগেও শুনেছি সুমন। বনে-বাদাড়ে জীবজন্তু তো থাকবেই। অত ভয় করলে তো সুমন বলে, ধর সুজন, আজই যদি কোন জন্তু-জানোয়ারের মুখোমুখি হই আমরা, তাহলে কী করবি। সুজন হাসতে হাসতে বলে, দুজনে মিলে আত্মরক্ষ্মা করব লড়াই করে। আমরা দু বন্ধু, কেউ কাউকে ছেড়ে তো পালাব না। বন্ধু হয়ে এমন হীন কাজ তো করতে পারি না।
সুমন জোর দিয়ে বলে, দ্যাখ ভাই আমি তো গাছে চড়তে জানি না— আরে ধ্যাত, ভয় কীসের, সুজন সুমনের পিঠ চাপড়ে আশ্বাস দেয়। মিছে এসব কথা ভাবছিস ব্যাপারটাকে হাল্কা করে আনার জন্যে সুজন বলে, শুকনো পাতা মাড়িয়ে হাঁটতে বেশ মজাই রাগে, তাই না সুমন ?
যেন মুচমুচে পাঁপড়ভাজা মাড়িয়ে হাঁটছি। তো যা বলছিস। সুজনের কথায় সুমন সায় দেয়। একথায় ওকথায় ওরা যখন মশগুল, তখন ভারী পায়ে শুকনো পাতা মাড়িয়ে কে যেন আসছে এ আশঙ্কায় চমক ভেঙে ওরা মুখ ফিরিয়ে দেখেই ভয়ে সারা। বিরাট এক ভালুক গর্গর্ করতে করতে ঘাড়ের চুল ফুলিয়ে ওদের দিকে এগিয়ে আসছে।

প্রাণভয়ে দৌড়াতে থাকে দুজনে। দৌড় দৌড় দৌড়। ভালুকের সঙ্গে পাল্লায় এঁটে উঠবে কেন? সুজন লাফ মেরে গাছে চড়ে বসে। সুমন বলে, আমায় টেনে তোল সুজন। আমি তো আগেই বলেছি গাছে চড়তে জানি না। ভালুক এলো বলে।
সুজন নিরুত্তর। বরং আরো এক ধাপ উপরে উঠে নিরাপদ আশ্রয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে বসে। সুমন কাতর গলায় বলতে চায়, এই কি অঙ্গীকার ছিল সুজন। কিন্তু আর একটুকু সময় বইয়ে দিলে নিজেকে আর বাঁচাতে পারবে না সে। তার হঠাৎ মনে পড়ে মরা মানুষ ছোঁয় না ভালুক। সঙ্গে সঙ্গে মরার মতো হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়ে সে। গাছে চড়া বন্ধু সুজন দেখে ভালুকটা এসে শুয়ে-থাকা সুমনের শরীরটা শুঁকে কানের কাছে কিছুক্ষণ মুখ রাখে। তারপর চলে যায়। সুজন গাছ থেকে নেমে এসে জিজ্ঞেস করে, ভালুক তোর কানে কানে কী বলে গেল ভাই? সুমন উঠে দাঁড়িয়ে বলে, ভালুকটা বলে গেল বিপদের মাঝেই তো প্রকৃত বন্ধুকে চেনা যায়।
আরও দেখুনঃ