প্রাণ থাকলেই প্রাণী হয় | ভাব-সম্প্রসারণ | ভাষা ও শিক্ষা

প্রাণ থাকলেই প্রাণী হয় – ভাব-সম্প্রসারণের একটি নমুনা তৈরি করে দেয়া হল। আগ্রহীরা এখন থেকে ধারণা নিয়ে নিজের ভাষায় নিজস্ব ভাষণ তৈরি করবেন। উপমাত্মক বাক্যের ভাব-সম্প্রসারণে উপমান ও উপমেয় অংশকে দুটো অনুচ্ছেদে বিশেষণ করা বাঞ্ছনীয়। প্রথম অনুচ্ছেদে থাকবে আক্ষরিক অর্থ, দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে ব্যক্তনার্থ।ভাব-সম্প্রসারণ হবে মূলভাবের অনুসারী, অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে পরিহার্য।প্রারম্ভিক বাক্যটি হবে সুসংহত, ঘনপিনদ্ধ ও শ্রুতিমধুর এবং ক্রিয়াপদ বিরহিত।

প্রাণ থাকলেই প্রাণী হয়

মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। এই শ্রেষ্ঠত্বের কারণ হল মানুষের একটা সুন্দর মন আছে, যা আর কোনো প্রাণীর নেই। মনই মানুষকে অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা করেছে। মনই মানুষকে পশুত্ব থেকে মনুষ্যত্বে রূপায়িত করেছে। পৃথিবীর যত প্রকার জীব আছে, তাদের প্রত্যেকেরই প্রাণ রয়েছে। শুধু এ-দিক থেকে বিবেচনা করলে মানুষ আর দশটা প্রাণীর মতই একটা প্রাণী। তবে একটিমাত্র বৈশিষ্ট্যের কারণে সে সকল প্রাণী থেকে শ্রেষ্ঠ আর তা হল ‘মন’। মনোজগতের বৈশিষ্ট্যের কারণেই মানুষ অন্যান্য প্রাণী থেকে স্বতন্ত্র। মন আছে বলেই মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব।

 

প্রাণ থাকলেই প্রাণী হয়

 

মন আছে বলেই মানুষের মধ্যে প্রেম আছে, কল্পনা আছে, সৌন্দর্যবোধ আছে, ধর্ম আছে। পৃথিবীর সকল পাপ-পুণ্য, ভাল-মন্দ, ধর্ম-অধর্মের পার্থক্য নির্ধারণে মানুষকে পরিচালিত করে তার মন। এ মন বা হৃদয় দ্বারা পরিচালিত হয়ে মানুষ সৎ কাজ করে এবং শিক্ষা, সাধনা ও অনুশীলনের মাধ্যমে মানবিক গুণাবলি আয়ত্ত করে সত্যিকারের মানুষ হয়ে গড়ে ওঠে। তখন অন্যান্য প্রাণী থেকে সে আলাদা হয়ে যায় এবং দৈনন্দিন জীবনের দ্বন্দ্ব-সংঘাত, হিংসা- বিদ্বেষ, লোভ-লালসা, স্বার্থচিন্তা, কুমন্ত্রণা প্রভৃতির ক্লেদাক্ত সংস্পর্শ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখে। এই সুন্দর মনের কারণেই মানুষ আজ সভ্যতার চরম শিখরে পৌঁছতে পেরেছে।

 

প্রাণ থাকলেই প্রাণী হয়

 

মানুষ তার মন দিয়ে সাধনা করে জীবনের বিচিত্র বিকাশ ঘটায়। যা অন্য কোনো প্রাণী পারে না। আবার কোনো প্রাণীই নিজেকে জানে না, কিন্তু মানুষ নিজেকে জানে। আর এটা সম্ভব হয় তার মনের মাধ্যমেই। মনই তার রহস্যময় আয়না, মনই তাকে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছে। তাই সকল প্রাণীর ওপরে মানুষের স্থান ও মর্যাদা। যে কেবল মানুষের আকৃতি নিয়ে পশুর মতো কাজ করে, পশুসুলভ আচরণ করে, যার মধ্যে মানবতাবোধ, সত্যনিষ্ঠা, ঔদার্য, সৎবিবেচনাবোধ, বিবেক-বুদ্ধি ইত্যাদি নেই তাকে সত্যিকারের মানুষ বলা চলে না। তাই মানুষ হতে হলে শুধু প্রাণ থাকলেই চলবে না, প্রাণ ও মনের যুগপৎ বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটাতে হবে, হতে হবে বিবেকবুদ্ধিসম্পন্ন সুস্থ মনের অধিকারী,— তবেই মানুষ। মানুষ হিসেবে অর্জন করতে হবে সমস্ত মানবীয় গুণাবলি ।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

মন বা হৃদয়ই মানুষকে বিশিষ্টতা দান করে। মানুষের সঙ্গে জীবজন্তুর তফাত হল – আত্মরক্ষা, বংশরক্ষা ও খাদ্য সংগ্রহ জীবজন্তুর প্রধান ধর্ম, তারা বড় বেশি আত্মকেন্দ্রিক, নিজেদের নিয়ে প্রতিনিয়ত অতি ব্যস্ত। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে মানুষকেও খাদ্য সংগ্রহ করতে হয়, তার আত্মরক্ষা বংশরক্ষার প্রয়োজনও আছে, তাছাড়া মানুষ জ্ঞান, বুদ্ধি, বিদ্যা, হৃদয়জ সুকোমল বৃত্তির অধিকারী। সে পরার্থে আত্মোৎসর্গ করতে পারে। এগুলো পশুদের নেই। মানুষ এ জন্য সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব।

আরও দেখুন:

Leave a Comment