Site icon Bangla Gurukul [ বাংলা গুরুকুল ] GOLN

সমার্থক শব্দ বা সমার্থশব্দ বা প্রতিশব্দ

সমার্থক শব্দ বা সমার্থশব্দ বা প্রতিশব্দ নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি আমাদের “ভাষা ও শিক্ষা” সিরিজের, নির্মিতি বিভাগের, বিশিষ্টার্থক শব্দ অনুবিভাগের  পাঠের অংশ।

সমার্থক শব্দ বা সমার্থশব্দ বা প্রতিশব্দ

সমার্থক (সম + অর্থ + ক) শব্দের অর্থ হল সমার্থবোধক, সমার্থজ্ঞাপক, সমার্থসূচক, একার্থবোধক, এক বা অনুরূপ অর্থবিশিষ্ট। বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডারে বেশ কিছু শব্দ আছে যা অন্য একটি শব্দের প্রতিশব্দ অর্থাৎ অন্য একটি শব্দের অনুরূপ অর্থ বা সম-অর্থ প্রকাশ করে। এরূপ সম-অর্থ জ্ঞাপক ভিন্ন শব্দকে সমার্থশব্দ বা সমার্থক শব্দ (synonym) বা প্রতিশব্দ বলে।

অথবা, যেসব শব্দ একই অর্থ প্রকাশ করে বা একই অর্থে ব্যবহার করা চলে, তাদের বলা হয় প্রতিশব্দ বা সমার্থক ‘শব্দ বা সমার্থশব্দ । যেমন : ‘অগ্নি’ শব্দের প্রতিশব্দ-আগুন, অনল, সর্বভুক, দহন, শিখা। আগুন : আগুনে সবকিছু পুড়ে নিঃশেষ হয়ে গেল । অনলা আমার সুখের ঘর অনলে পুড়ে হল ছাই । সর্বভুক আগুন হল সর্বভুক, মুহূর্তে সবকিছু খেয়ে নিঃশেষ করে ফেলে। দহন শিখা : দহনে পুড়িল হৃদয় দেখিল না কেউ। জ্বেলে দে তোর বিজয়-শিখা ।

সমার্থক’ শব্দ বা প্রতিশব্দ বাংলা ব্যাকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশ, সৌন্দর্য রূপায়ণ তথা বাক্যের মাধুর্যময় অবয়ব গঠনে প্রতিশব্দ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে সাহিত্যের সৃষ্টিশীলতা ও মননশীলতার ভূষণ হল সমার্থক ‘শব্দের ব্যবহার। নিচে বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে সমার্থক’ শব্দ বা প্রতিশব্দের প্রয়োজনের : কয়েকটি দিক উল্লেখ করা হল  সমার্থক’ শব্দের মাধ্যমে শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়। সমার্থক’ শব্দের ব্যবহার ভাষাকে একই শব্দের বার বার প্রয়োগজনিত সমস্যার হাত থেকে রক্ষা করে। ফলে রচনায় শাব্দিক বৈচিত্র্য আসে। এর ব্যবহার প্রকাশশৈলীতে অভিনবত্ব আনয়ন করে। ৩. 8. বাক্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। মনোভাবের সার্থক প্রকাশ ঘটাতে সমার্থশব্দ সাহায্য করে।

 

 

এর মাধ্যমে পাঠক নতুন নতুন শব্দের সঙ্গে পরিচিত হতে পারে। সাহিত্য রচনায়, কবিতায় মিল দেওয়ায়, বক্তৃতা আকর্ষণীয় করার জন্য সমার্থক’ শব্দের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । ৬. যেমন : ‘সাগর জলে সিনান করি সজল এলোচুলে।’— এখানে সাগর এর প্রতিশব্দ সমুদ্র ব্যবহার করলে ছন্দের পতন ঘটে। সমার্থক ‘শব্দ ব্যবহারে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত বিস্ময়কর অবদান রেখেছেন। মেঘনাদবধ কাব্যে বিভিন্ন শব্দের প্রচুর প্রতিশব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

একই শব্দের পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য যেমন এসব শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, তেমনি ছন্দ, ধ্বনিগাম্ভীর্য ও শ্রুতিমাধুর্যের জন্য বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রতিশব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এতে শব্দের অর্থ সম্পর্কে কবির পাণ্ডিত্য, ছন্দ সম্পর্কে সচেতনতা, ধ্বনির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে কবির উপলব্ধির গভীরতার পরিচয় মেলে। শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে মহাকবির বিস্ময়কর প্রতিভার পরিচয় এখানে সহজেই উপলব্ধি করা যায়।

মেঘনাদবধ কাব্যে ব্যবহৃত সমার্থক বা প্রতিশব্দের কিছু নমুনা :

(ক) রাবণ : রক্ষঃকুলনিধি, রাঘবারি, রক্ষঃকুলপতি, নৈকষেয়, রাক্ষসকুলশেখর, লঙ্কা- অধিপতি, রাক্ষসপতি, মন্দোদরী-মনোহর, রাক্ষসেশ্বর, বৈদেহীহর, রাজরাজেন্দ্র, লঙ্কানাথ, রাজকুলেশ্বর, দশানন, রক্ষোনাথ, দাশরথি-অরি, নিকষানন্দন, নিশাচরপতি, কর্পূরনাথ, পৌলস্ত্য, রাঘবরিপু, রাক্ষসকুলচূড়মণি, রক্ষঃশ্রেষ্ঠ, রক্ষোরাজরাজ, কর্পূরপতি, লঙ্কেশ। ২

(খ) সাগর : সমুদ্র, জলধি, সিন্ধু, প্রচেত, রত্নাকর, নীলাম্বুস্বামী, বারীন্দ্র, বারীশ, যাদঃপতি, জলনাথ, জলকান্ত, বারিনাথ, অম্বুরাশি, অর্ণব, অনাথ, অম্বুরাশিপতি, জলদলপতি, পয়োনিধি।

 

 

বক্তব্যের অনুষঙ্গ বা পরিবেশ সৃষ্টির জন্য শব্দ বাছাই করতে হয়। ভাষাবিজ্ঞানীদের মতে কোনো শব্দের অপ্রীতিকর, অবাঞ্ছিত অনুষঙ্গ থাকলে অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের সৌজন্যবোধ সেই শব্দটির মার্জিত রূপ খুঁজতে গ্যাস প্ররোচিত করে। উদাহরণ হিসেবে মৃত্যু’র কথাই ধরা যাক। প্রয়াণ, ইহলোক ত্যাগ, পরলোকগমন, তিরোধান, (দেহাবসান, দেহান্ত, শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ, গঙ্গাযাত্রা ইত্যাদি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়।” যেমন :

“ধনীরা ইন্তেকাল করেন বা পরলোকগমন করেন। কিন্তু গরিবেরা মরে। প্রধান অতিথি মঞ্চে কাটায় উপবেশন করেন। কিন্তু দর্শকেরা আসনে বসে।”

 

সমার্থক শব্দ বিশ্লেষণ ঃ

 

আরও দেখুন:

Exit mobile version