প্রতিবেদনের বৈশিষ্ট্য বা একটি আদর্শ প্রতিবেদন রচনার গুণাবলি | নির্মিতি | ভাষা ও শিক্ষা , প্রতিবেদনের যেসব নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে তা নিম্নরূপ :
প্রতিবেদনের বৈশিষ্ট্য বা একটি আদর্শ প্রতিবেদন রচনার গুণাবলি | নির্মিতি | ভাষা ও শিক্ষা
১. প্রতিবেদন নির্দিষ্ট কাঠামো ও নিয়মানুযায়ী রচিত হতে হবে।
২. কোনো নির্দিষ্ট ঘটনা বা বিষয় অবলম্বনে প্রতিবেদনটি বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যনির্ভর হতে হবে।
৩. প্রতিবেদনের বক্তব্য হবে সহজ-সরল, নিরপেক্ষ, যুক্তিযুক্ত ও বাহুল্য বর্জিত। প্রতিবেদকের কাছে বিশেষভাবে… প্রত্যাশিত যে, তাঁর সংবাদে পারতপক্ষে এমন কোনও বিশেষণ ব্যবহার করা যাবে না, যার ফলে তাঁর রচনাকে পক্ষপাতদুষ্ট বা অভিসন্ধিমূলক মনে হয়। ৩. জটিল বিষয়ে সরল ব্যাখ্যা দান করাই সঙ্গত।
৪. প্রতিবেদনে প্রতিবেদকের কোনো প্রকার আবেগ বা ভাবোচ্ছ্বাস প্রকাশ করার সুযোগ নেই। অর্থাৎ প্রতিবেদনের ভাষা হবে সরল। কিন্তু সরল ভাষা বলতে তরল ভাষা বোঝায় না। যেমন, আবেগ বলতে বোঝায় না উচ্ছ্বাস। ভাষা সম্পূর্ণ নিরাবেগ হবে, এমন দাবি অনুচিত। কেননা, যা নিতান্ত নিরাবেগ, সেই শুকনো ‘কেঠো’ ভাষা একই জায়গায় অনড় দাঁড়িয়ে থাকে, আবেগের ছোঁয়া না লাগা পর্যন্ত তাতে গতির স্পন্দন জাগে না। কিন্তু আবেগ নামক ব্যাপারটাকে যে সংযমের লাগাম পরিয়ে রাখা চাই, সেটা মনে রাখতে হবে। আবেগ সংযত না হয়ে উচ্ছ্বসিত হলে ভাষাকে তা অনর্থক আবিল করে মাত্র। রচনার স্বচ্ছতা তাতে নষ্ট হয়; লেখকের যা বক্তব্য, তা উচ্ছ্বাসের ফেনার তলায় চাপা পড়ে যায়।
৫. বাক্য জটিল হলে ভাষা দুর্বোধ্য হয়। যে-ভাষা দুর্বোধ্য, তা অধিকাংশ মানুষের কাছে পৌঁছায় না। নানা পত্রপত্রিকায় নানা বিষয়ে বাইরে থেকে অনেক অনেক লেখা পাঠানো হয়। তার দু-একটি ছাপা হয়, অধিকাংশই ফেরত যায়। কোন্ লেখা ছাপা হবে আর কোনটা হবে না, তা যাঁরা ঠিক করেন, একটা ব্যাপারে তাঁরা প্রায় সকলেই দেখা যায় একমত; সেটা এই যে, যে-সব লেখা তাঁদের হাতে আসে, তার অন্তত কিছু অংশের ‘বিষয়বস্তু খুবই কৌতূহলোদ্দীপক’। বস্তুত সেগুলো ছাপার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত সেগুলো বাদ পড়ে যায় একমাত্র ভাষা কঠিন বলে।
৬. বাক্যের পূর্বাপর সংগতি যেন কোনও মতেই ক্ষুণ্ণ না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। যেমন কোনো বাক্যের প্রথমাংশে ‘যখন’, ‘যত’, ‘যদিও’, ‘যে-কারণে’, ‘যেজন্য’, ‘যেহেতু’ ইত্যাদি শব্দ থাকলে, পরবর্তী অংশের সঙ্গে তাদের একটা সুষ্ঠু যোগসম্পর্ক থাকতে হবে। নইলে বক্তব্যের পূর্বাপর সংগতির সূত্র ছিন্ন হবে।
৭. প্রতিবেদনের বিষয়বস্তুকে কয়েকটি অনুচ্ছেদে ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে। প্রতিটি অনুচ্ছেদে বর্ণিত হবে প্রতিবেদনের ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার বিবরণ এবং বস্তুনিষ্ঠ, তথ্যনির্ভর ও অনুসন্ধানমূলক বিবরণী।
৮. তবে এ ক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে যে, প্রতিটি অনুচ্ছেদ শুরু করতে হবে প্রসঙ্গ বাক্য দিয়ে। যেন পাঠক তা দেখেই বুঝতে পারেন প্রতিবেদনের কোন দিকটি ওই অনুচ্ছেদে বিশদ হয়েছে। বাক্যে যতি-চিহ্নের ব্যবহার যথাযথ হতে হবে।
৯. সংবাদের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়লোই অর্থাৎ খবর হিসেবে যা গুরুত্বপূর্ণ তাই প্রতিবেদনে স্থান পাবে। বক্তা কিংবা প্রতিষ্ঠানের খ্যাতিতে বিভ্রান্ত না হয়ে বস্তু, ব্যক্তি, স্থান ও কাল সবই প্রতিবেদককে সতর্কভাবে বিচার করে আসল বা সত্য বিষয়টি প্রতিবেদনে তুলে ধরতে হবে।

১০. সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে কোনোভাবেই সুপারিশ গ্রহণযোগ্য নয়। তবে অন্যান্য প্রতিবেদনে সমস্যা সম্পর্কে সুপারিশ বা মতামত দেয়া যেতে পারে।
১১. প্রতিবেদনে ‘নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রাপ্ত’ বলে কোনো বিষয়কে চিহ্নিত করা যাবে না। বরং সুনির্দিষ্ট তথ্য-সূত্র বা উৎস-নির্দেশ করতে হবে। এছাড়া ‘পরিশেষে বলি’, ‘প্রসঙ্গত বলি’ ইত্যাদিও যথাসম্ভব বর্জনীয়। ‘বলাবাহুল্য ও লেখা উচিত নয়। বলাবাহুল্যই যদি হবে তো বলার প্রয়োজন কেন?
আরও দেখুন: