নিয়মিত লেখাপড়া করার উপদেশ দিয়ে ছোট বোনের কাছে পত্র | পত্র বা চিঠি | ভাষা ও শিক্ষা

নিয়মিত লেখাপড়া করার উপদেশ দিয়ে ছোট বোনের কাছে পত্র | পত্র বা চিঠি | ভাষা ও শিক্ষা , পত্র মানুষের মনের ভাব বিনিময়ের অন্যতম মাধ্যম। সরাসরি যখন মনের ভাব প্রকাশ করা যায় না, তখন প্রয়োজন হয় পত্রের। পত্রের মাধ্যমে মনের ভাব লেখ্যরূপে অন্যের কাছে প্রেরণ করা হয়। মানুষের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের সঙ্গে তার সামাজিক, জাতীয়, রাজনৈতিক ও জাগতিক জীবনের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। বর্তমান জগতে বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে সর্বদা ভাব ও সংবাদাদির বিনিময় একান্ত আবশ্যক হয়ে পড়ায় দিনে দিনে পত্রালাপের আবশ্যকতাও অধিকতর বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুতরাং ব্যবহারিক জীবনে পত্রের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।

নিয়মিত লেখাপড়া করার উপদেশ দিয়ে ছোট বোনের কাছে পত্র

কলেজ ছাত্রাবাস, বগুড়া

১৫ মে, ২০০০

স্নেহের ‘ক’

আমার আশীর্বাদ নিও। গতদিন মায়ের হাতে লেখা একটা চিঠি পেয়ে খুবই উদ্বিগ্ন হলাম। – তুমি এমন হতে পার কোনোদিন ভাবি নি। তোমাকে দিয়েই আমাদের পরিবারের আশা-ভরসা। আমার এই পত্র পেয়ে আশা করি সংযত হয়ে চলবে এবং রীতিমতো পড়াশোনা করবে। তুমি একটি দৈনিক কার্যতালিকা তৈরি করে নিও এবং সেই অনুসারে এখন থেকেই চলতে আরম্ভ কর।

 

নিয়মিত লেখাপড়া করার উপদেশ দিয়ে ছোট বোনের কাছে পত্র

 

কখনো বৃথাসময় নষ্ট করো না। মনে রেখো, পৃথিবীতে যা কিছু দৃশ্যমান তার সবই ক্ষণস্থায়ী এবং তাদের পরিবর্তন ও ক্ষয় অহরহ। যে জিনিসটি ক্ষণস্থায়ী নয়, যার ক্ষয় নেই বরং বিকাশ আছে, তা হল জ্ঞান। জ্ঞানই মানুষের চরম, পরম ও একান্ত নিজস্ব মহামূল্যবান সম্পদ। এই মহামূল্যবান সম্পদ অর্জনের জন্যে তোমাকে কঠোর শ্রম করতে হবে। তুমি তো জান শ্রমই উন্নতির চাবিকাঠি।

প্রতিষ্ঠা, খ্যাতি, প্রতিপত্তি, যশ-সুনাম, মর্যাদা এসব ত্রিবেণী ত্রিধারার দুর্বার স্রোতমুখে টিকে থাকার জন্যে প্রয়োজন শ্রম ও কঠোর অধ্যবসায়। অধ্যবসায় সফলতার চাবিকাঠি। অধ্যবসায় ছাড়া মানবজীবনে উন্নতির আশা কল্পনা মাত্র। মানব সভ্যতার মূলে রয়েছে অধ্যবসায়ের এক বিরাট মহিমা। জগতে যত বড় শিল্পী, সাহিত্যিক, বৈজ্ঞানিক, সেনানায়ক, ধর্মপ্রবর্তক রয়েছেন, তাঁদের সবাই ছিলেন অধ্যবসায়ী। ইতিহাসের পাতায় পাতায় রয়েছে তার দৃষ্টান্ত ।

 

নিয়মিত লেখাপড়া করার উপদেশ দিয়ে ছোট বোনের কাছে পত্র

 

তোমার এস. এস. সি পরীক্ষার তো আর মাত্র দু-চার মাস বাকি। তাই পড়া জমিয়ে না রেখে প্রতিদিন নিয়মিত পড়াশোনা করো। অনেক শিক্ষার্থীই সময়ের পড়া সময়ে না পড়ে তা জমিয়ে রাখে। পরে পরীক্ষা এসে গেলে সিলেবাস -সম্পূর্ণ করতে না পেরে নকলের মতো জঘন্য পথ বেছে নেয়। নকল করে অনেকসময় পরীক্ষা পাসের সার্টিফিকেট পাওয়া গেলেও, ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্রে তা কোনো কাজে আসে না।

নকলকারী প্রকৃত জ্ঞানার্জন থেকে বঞ্চিত হয় এবং সে দেশ, সমাজ এবং জাতির জন্য বোঝা ও হুমকি স্বরূপ। অবশ্য নকলের এ বিষয়টা তোমার মতো মেধাবী ছাত্রের জন্যে নয়। যেহেতু বিষয়টি আজ জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে তাই এর থেকে পরিত্রাণের উদ্দেশ্যে আমাদের সবারই কমবেশি দায়িত্ব রয়েছে। তুমি তোমার বন্ধুদেরও এ-বিষয়ে সচেতন করে তুলবে বলে আশা করি। তোমার প্রতি আমার দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে যে, এ বিষয়ে তুমি বেশ সচেতন।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

পরিশেষে একটি উপদেশ দিচ্ছি মনে রেখো। ‘মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন’—অধ্যবসায় সম্পর্কিত একটি পরম সত্য প্রবাদ। যে ব্যক্তি অধ্যবসায়ী নয়, সে জীবনের কোনো সাধারণ কাজেও সফলতা লাভ করতে পারে না। জীবনের সফলতা এবং বিফলতা অধ্যবসায়ের ওপরই নির্ভর করে, তাই আমাদের সকলের উচিত অধ্যবসায়ের মতো এই মহৎ গুণটিকে আয়ত্ত করা, পরশপাথরের মতো এই পাথরটিকে ছুঁয়ে দেখা এবং সোনার কাঠির মতো একে অর্জন করা। মনে রাখতে হবে অধ্যবসায়ই জীবন, জীবনই অধ্যবসায়। এর বেশি কিছু বলার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। তোমার জন্যে স্নেহ রইল। আব্বু-আম্মুর প্রতি খেয়াল রাখবে। তাঁদের কথামতো চলবে। আজ এখানেই শেষ করছি।

ইতি

তোমার বড় ভাই

আরও দেখুন:

Leave a Comment