Site icon Bangla Gurukul [ বাংলা গুরুকুল ] GOLN

নিজের কানে কানে কবিতা – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের “নিজের কানে কানে” একটি অত্যন্ত প্রভাবশালী কবিতা, যা বাংলা আধুনিক কবিতার অন্তর্গত গুরুত্বপূর্ণ রচনা। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন আধুনিক বাংলা সাহিত্যের একজন প্রধান কণ্ঠ, যিনি মানব জীবনের সূক্ষ্ম অনুভূতি, অন্তর্মুখী ভাবনা ও সময়ের পরিবর্তনের ছাপ খুব সুন্দরভাবে কবিতায় ফুটিয়ে তুলেছেন।

“নিজের কানে কানে” কবিতাটি ব্যক্তিগত চিন্তা ও অনুভূতির গভীরতায় প্রবাহিত। এই কবিতায় আত্ম-মনন ও আত্মসংলাপের মাধ্যমে মানুষের অন্তরের নানা দিকের প্রকাশ ঘটে, যেখানে কবি নিজেকে এবং চারপাশের পৃথিবীকে নিজের কানে কানে শোনার আহ্বান জানান। কবিতাটি পাঠকের মনে এক ধরনের নীরবতা ও ভাবাবেগ সৃষ্টি করে, যা আধুনিকতার মধ্যেও অন্তর্মুখী চিন্তার স্থান তৈরি করে।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ভাষা সাবলীল, সরল হলেও তার ভাবপ্রকাশ অত্যন্ত গভীর ও বিমূর্ত, যা বাংলা কবিতার পাঠকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলে। “নিজের কানে কানে” কবিতাটি পাঠকের আত্ম-অনুসন্ধান ও ভাবনার এক সুন্দর সঙ্গীতময় আভাস।

নিজের কানে কানে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

এক এক সময় মনে হয়, বেঁচে থেকে আর লাভ নেই
এক এক সময় মনে হয়
পৃথিবীটাকে দেখে যাবো শেষ পর্যন্ত!
এক এক সময় মানুষের ওপর রেগে উঠি
অথচ ভালোবাসা তো কারুকে দিতে হবে
জন্তু-জানোয়ার গাছপালাদের আমি ওসব
দিতে পারি না
এক এক সময় ইচ্ছে হয়
সব কিছু ভেঙেচুরে লন্ডভন্ড করে ফেলি
আবার কোনো কোনো বিরল মুহূর্তে
ইচ্ছে হয় কিছু এককটা তৈরি করে গেলে মন্দ হয় না।

হঠাৎ কখনো দেখতে পাই সহস্র চোখ মেলে
তাকিয়ে আছে সুন্দর
কেউ যেন ডেকে বলছে, এসো এসো,
কতক্ষণ ধরে বসে আমি তোমার জন্য
মনে পড়ে বন্ধুদের মুখ, যারা শত্রুদের, যারাও হয়তো কখনো
আবার বন্ধু হবে
নদীর বিনারে গিয়ে মনে পড়ে নদীর চেয়েও উত্তাল সুগভীর নারীকে
সন্ধের আকাশ কী অকপট, বাতাসে কোনো মিথ্যে নেই,
তখন খুব আস্তে, ফিসফিস করে, প্রায়
নিজেরই কানে-কানে বলি,
একটা মানুষ জন্ম পাওয়া গেল, নেহাৎ অ-জটিল কাটলো না!

 

আরও পড়ুন:

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
Exit mobile version