Site icon Bangla Gurukul [ বাংলা গুরুকুল ] GOLN

নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন | নারীবিষয়ক | বাংলা রচনা সম্ভার

নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন | নারীবিষয়ক | বাংলা রচনা সম্ভার ,  ভূমিকা : পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। নারীরা এখন আর শুধু অন্তঃপুরবাসী নয়, বরং পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সমাজের উন্নতি সাধনে কাজ করছে। অথচ বাংলাদেশের নারীসমাজ যুগ যুগ ধরে শোষিত ও অবহেলিত হয়ে আসছে। পুরুষশাসিত সমাজব্যবস্থায় ধর্মীয় গোঁড়ামি, সামাজিক কুসংস্কার, নিপীড়ন ও বৈষম্যের বেড়াজালে নারীদের সর্বদা রাখা হয়েছে অবদমিত। তাদের মেধা ও শ্রমশক্তিকে সমাজ ও দেশ গঠনে সম্পৃক্ত করা হয়নি।

Table of Contents

নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন | নারীবিষয়ক | বাংলা রচনা সম্ভার

নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে গ্রহণ করা হয়নি কোনো বাস্তব পদক্ষেপ। অথচ মানুষের মৌলিক প্রয়োজনগুলো পূরণ করতেও পুরুষের পাশাপাশি সহায়তা করে নারী। এটি কোনো একমুখী প্রক্রিয়া নয় বরং দ্বিপাক্ষিক প্রক্রিয়া। নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন বলতে বোঝায় ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যক্তির অধিকার এবং রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সর্বজনীনতা সংরক্ষণ করে আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে নারীর স্বাধীন ও সার্বভৌম সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নিশ্চিত করা। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে নারীর সার্বিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা প্রয়োজন ।

 

বাংলাদেশের সংবিধানে নারী:

উনবিংশ শতাব্দীর গোড়া থেকেই এ উপমহাদেশে নারী জাগরণের উন্মেষ ঘটে। ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন, পাকিস্তান আমলে ভাষা আন্দোলন, ‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং স্বাধিকার আন্দোলনেও নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল অসাধারণ। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও অসামান্য অবদান রাখে। মুক্তিযুদ্ধের এই প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকেই বাংলাদেশের নারীরা আত্মনির্ভরশীল ও সচেতন হয়ে ওঠে। শিক্ষা গ্রহণ ও কর্মসংস্থানের প্রত্যাশা এবং নিজেদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় নারীসমাজের মধ্যে বিপুল সাড়া জাগে।

এতে দেশে নারী উন্নয়নের এক বিরাট সম্ভাবনা সৃষ্টি হয় । ফলে দেশের জাতীয় উৎপাদনে নারীর অংশগ্রহণ আবশ্যক হয়ে ওঠে। এ প্রেক্ষাপটে ১৯৭২ সালে নবগঠিত রাষ্ট্র বাংলাদেশের সংবিধানে নারীর অধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করার বিধান সন্নিবেশিত হয়। সংবিধানের ২৭ ধারায় উল্লেখ করা হয়, ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান ও আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। ২৮(১) ধারায় রয়েছে, ‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ ভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করবে না।’ ২৮(২) ধারায় বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী পুরুষের সমান অধিকার লাভ করবেন।’

২৮(৩)-এ উল্লেখ আছে, ‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ ভেদে বা বিশ্রামের কারণে জনসাধারণের কোনো বিনোদন বা বিশ্রামের স্থানে প্রবেশের কিংবা কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে কোনো নাগরিককে কোনোরূপ অক্ষমতা, বাধ্যবাধকতা, বাধা বা শর্তের অধীন করা যাবে না। ২৮(৪)-এ উল্লেখ আছে, ‘নারী বা শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের কোনো অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন   হতে এই অনুচ্ছেদের কোনো কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করবে না।’ ২৯(১)-এ রয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকবে।

২৯(২)-এ বলা হয়েছে, ‘কেবল ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মের নিয়োগ বা পদলাভের অযোগ্য হবেন না কিংবা সেক্ষেত্রে তার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাবে না।’ ৬৫(৩) ধারায় নারীর জন্য জাতীয় সংসদে আসন সংরক্ষিত রাখা হয়েছে এবং এ ধারার অধীনে স্থানীয় শাসনসংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে।

বাংলাদেশে নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ:

১. উন্নয়ন পরিকল্পনা:

১৯৭২ সালে রচিত সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয়। শুধু সংবিধানে নয়, বাস্তব জীবনের সর্বক্ষেত্রে নারী-পুরুষের অংশগ্রহণ ও নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বাস্তব পদক্ষেপ নিয়ে বর্তমান সরকারের লক্ষ্য হলো নারীসমাজের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ সমাজের সকল স্তরে নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা । স্বাধীনতা সংগ্রামে যে সকল নারী অবদান রেখেছেন ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন, সেসব নারীর পুনর্বাসন ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ নারী পুনর্বাসন বোর্ড গঠন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সরকার। সে সময় ১৯টি জেলা ও ২৭টি মহকুমাসহ মোট ৬৪টি কেন্দ্রের মাধ্যমে নারী উন্নয়ন কর্মসূচি শুরু হয় ।

সে সময় প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার (১৯৭৩-৭৮) আওতায় গঠিত নারী পুনর্বাসন বোর্ডের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম ছিল ক. স্বাধীনতা যুদ্ধে নির্যাতিত নারী ও শিশুর সঠিক তথ্য আহরণের জন্য জরিপ কাজ পরিচালনা করা এবং তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা; খ. যুদ্ধে নির্যাতিত নারীদের বিভিন্ন বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা; গ. বীরাঙ্গনা নারীসহ যেসব পরিবারে উপার্জনক্ষম পুরুষ মুক্তিযুদ্ধে নিহত হয়েছে সেসব পরিবারের কর্মক্ষম নারীদের চাকরি এবং প্রশিক্ষণ প্রদান করা। এছাড়াও বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের প্রচেষ্টায় দশজন বীরাঙ্গনা নারীর বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়। পারিবারিক ও সামাজিকভাবে অধিকাংশ মেয়ের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

নারী পুনর্বাসন বোর্ডের দায়িত্ব ও কর্মপরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৯৭৪ সালে এ বোর্ড বৃহত্তর কলেবরে পুনর্গঠিত করে সংসদের একটি অ্যাক্ট-এর মাধ্যমে নারী পুনর্বাসন ও কল্যাণ ফাউন্ডেশনে রূপান্তরিত করা হয়। ফাউন্ডেশনের বহুবিধ কার্যক্রমের মধ্যে অন্যতম ছিল : ১. দেশের সকল জেলা ও মহকুমায় নারী উন্নয়নের লক্ষ্যে ভৌত অবকাঠামো গড়ে তোলা; ২. নারীর ব্যাপক কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান; ৩. নারীকে উৎপাদনমুখী কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত করে প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করা; ৪. উৎপাদন ও প্রশিক্ষণ কাজে নিয়োজিত নারীর জন্য দিবাযত্ন সুবিধা প্রদান করা;

৫. যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের চিকিৎসা প্রদান করা এবং ৬. মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত নারীর ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য বৃত্তিপ্রথা চালু করা, যা বর্তমানে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের আওতায় ‘দুস্থ মহিলা ও শিশুকল্যাণ তহবিল’ নামে পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় নারীদের অর্থকরী কাজে নিয়োজিত করার উদ্দেশ্যে সর্বপ্রথম আন্তঃখাত উদ্যোগ গৃহীত হয়। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় নারীদের জন্য বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি (গ্রামীণ মহিলা ক্লাব) চালু করে। স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয় গণশিক্ষা কার্যক্রম চালু করে। পরবর্তী এই কর্মসূচি বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় নারী সমবায় কর্মসূচিতে রূপান্তরিত হয়। সাভারে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের ৩৩ বিঘা জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত ‘গ্রামীণ মহিলাদের জন্য কৃষিভিত্তিক কর্মসূচি’র কাজও শুরু হয় ১৯৭৩ সালে।

অনুরূপভাবে দ্বিবার্ষিক পরিকল্পনায়ও (১৯৭৮-৮০) নারীর কর্মসংস্থান ও দক্ষতা বৃদ্ধি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায়ও (১৯৮৫-৯০) একই কর্মসূচি গৃহীত হয়। চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (১৯৯০-৯৫) নারী উন্নয়নকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্তকরণের লক্ষ্যে আন্তঃখাত উদ্যোগ গৃহীত হয়। এ পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্যগুলোর প্রধান কয়েকটি হলো শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প-বাণিজ্য, সেবা ও অন্যান্য খাতে নারীর বর্ধিত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, দারিদ্র্য দূর করা, দক্ষতা বৃদ্ধি করা, স্ব-কর্মসংস্থান ও ঋণ সুবিধা সম্প্রসারণ করা, জেন্ডার সম্পর্কীয় সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং নারীর জন্য সহায়ক সুবিধা সম্প্রসারণ করা যথা— হোস্টেল, শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র, আইন সহায়তা প্রদান উল্লেখযোগ্য ।

ত্রিবার্ষিক আবর্তক পরিকল্পনা ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে নারী উন্নয়নের লক্ষ্যে স্ব-কর্মসংস্থান, নারী নির্যাতন রোধ, অনানুষ্ঠানিক ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, শিশু নিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন, নারী-সহায়তা কর্মসূচি, কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল স্থাপন, দুস্থ নারীর জন্য খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি, খাদ্যের বিনিময়ে শিক্ষা কর্মসূচি, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা, পল্লী অঞ্চলে মাধ্যমিক পর্যায়ে মেয়েদের অবৈতনিক শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, টিকাদান কর্মসূচি গ্রহণ বাস্তবায়িত হচ্ছে। তবে এ সকল কর্মসূচি নারী উন্নয়ন ও নারী- পুরুষের সমতা অর্জনের লক্ষ্যে সামগ্রিক প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল এবং নারী উন্নয়ন ও স সমতার যথাযথ প্রেক্ষিতের ওপর বিন্যস্ত হয়নি বলে অনেক ক্ষেত্রেই ফলপ্রসূ হয়নি।

২. সাংগঠনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক উত্তরণ :

নারী উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৪ সালে ‘বাংলাদেশ নারী পুনর্বাসন বোর্ডকে’ নারী পুনর্বাসন ও কল্যাণ ফাউন্ডেশনে রূপান্তরিত করার পর নারী উন্নয়নে নীতি নির্ধারণের লক্ষ্যে ১৯৭৮ সালে মহিলাবিষয়ক স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় গঠন করে। এছাড়া ১৯৭৬ সালে সরকারি রেজুলেশনবলে জাতীয় মহিলা সংস্থা গঠিত হয় এবং ১৯৯১ সালে জাতীয় মহিলা সংস্থাকে বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়।

সরকারের গৃহীত নারী উন্নয়ন কার্যক্রম মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১৯৮৪ সালে মহিলাবিষয়ক পরিদপ্তর গঠিত হয় এবং ১৯৯০ সালে এ পরিদপ্তরকে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে উন্নীত করা হয়। এছাড়া ১৯৭৬ সালে শিশুদের সর্বিক উন্নয়নে বাংলাদেশ শিশু একাডেমী প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৯৪ সালে শিশু বিষয়কে অন্তর্ভূক্ত করে মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নামকরণ করা হয় ‘মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ।’

১৯৯০ সালের পর থেকে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং ১৯৯৪ সালের ৫ মার্চ থেকে শিশুবিষয়ক, ১৯৯৫ সালে বেইজিং কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং ১৯৯৬ সালে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি মন্ত্রণালয়ের ওপর ন্যস্ত হয়। এছাড়াও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় যেসব অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে তা হলো : ক. নারীসমাজকে উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্তকরণ, খ, নারীর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণ সনদ (সিডো) বাস্তবায়ন এবং নিয়মিতভাবে জাতিসংঘে প্রতিবেদন প্রেরণ,

গ. মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা সংস্থার বিষয়াদি, ঘ. শিশু অধিকার সদন (সিআরসি) বাস্তবায়ন ও জাতিসংঘে প্রতিবেদন প্রেরণ, ড. জাতীয় শিশুনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, চ. বিশ্বখাদ্য কর্মসূচি বাস্তবায়ন। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সার্বিক নির্দেশনায় মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর ৬৪টি জেলায় ১৩৬টি থানায় এবং জাতীয় মহিলা সংস্থা ৬৪টি জেলা ও ৫০টি থানায় নারী উন্নয়ন ক্ষমতায়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।

এছাড়া জাতীয় পর্যায়ে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, নীতি নির্ধারণ ও উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও পর্যালোচনার জন্য সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীকে সভাপতি করে ৪৪ সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় মহিলা ও উন্নয়ন পরিষদ গঠন করা হয়েছে। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে আন্তঃমন্ত্রণালয় নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয়েছে।

নারী ও মেয়ে শিশু নির্যাতন প্রতিরোধের লক্ষ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ সেল, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, জাতীয় মহিলা সংস্থায় নারী ও শিশু নির্যাতন সেল এবং জেলা, থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিক্ষিপ্তভাবে সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সহযোগিতা ও সংযোগ রয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকে সরকার সক্রিয় সহযোগিতা প্রদান করছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দলিল ও নীতিমালায় সরকারি- বেসরকারি সহযোগিতা ও সংযোগের জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে।

৩. আইনি পদক্ষেপ :

বাংলাদেশে নারী ও মেয়ে শিশুর প্রতি নির্যাতন রোধকল্পে কতিপয় প্রচলিত আইনের সংশোধন ও নতুন আইন প্রণীত হয়েছে। এসব আইনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মুসলিম পারিবারিক আইন, যৌতুক নিরোধ আইন, বাল্যবিবাহ রোধ আইন, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ (বিশেষ বিধান) আইন প্রভৃতি। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে আইনগত সহায়তা ও পরামর্শ প্রদানের জন্য নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেল, নির্যাতিত নারীদের জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।

তাছাড়া আইনজীবীর ফি ও অন্যান্য খরচ বহনে সহায়তা দানের উদ্দেশ্যে জেলা ও সেশন জজের অধীনে নির্যাতিত নারীদের জন্য একটি তহবিল রয়েছে। যদিও ইতিমধ্যে বেশ কিছু আইন প্রণীত হয়েছে কিন্তু বিভিন্ন পদক্ষেপ সত্ত্বেও মেয়ে শিশুর অবস্থার বিশেষ পরিবর্তন ঘটেনি। মেয়ে শিশুর বাল্যবিবাহ, পাচার, নির্যাতন ও অপব্যবহার চলছে অব্যাহতভাবে। বৃহত্তর সামাজিক প্রেক্ষাপটে মেয়ে শিশুর সাংস্কৃতিক, মানসিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে উল্লেখযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি।

৪. প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন :

নারীর প্রশাসনিক ক্ষমতায়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর্যায়ে নারীর অন্তর্ভুক্তি তথা উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় নারীকে সম্পৃক্ত করার প্রথম উদ্যোগ ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান সরকার গ্রহণ করে। সরকারি চাকরিতে দশ ভাগ কোটা নারীর জন্য সংরক্ষণ করা হয়। ১৯৭৩ সালে দু জন নারীকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং ১৯৭৪ সালে একজন নারীকে বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক নিয়োগ করা হয়। বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভায় ৪ জন নারী রয়েছেন।

বর্তমানে সরকারপ্রধান ও বিরোধীদলীয় নেত্রী দুজনই স্বনামধন্য নারী। গত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩৮ জন মহিলা প্রার্থী ৪৬টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তন্মধ্যে বেগম খালেদা জিয়া ৫টি আসনের মধ্যে ৫টিতেই বিজয়ী হন। অন্যদিকে শেখ হাসিনা ৫টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৪টি আসনে জয়ী হন। তাছাড়া খুরশিদ জাহান হক, ড. হামিদা বানু শোভা, বেগম রওশন এরশাদ ও ইলেন ভুট্টো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন খুরশিদ জাহান হক ও বেগম সেলিমা রহমান।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

ইউনিয়ন পরিষদের ১২টি সদস্যপদের মধ্যে ৯টিতে সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ রাখাসহ সংরক্ষিত ৩টি আসনে নারীর প্রতিযোগিতার সুযোগ রাখা হয়েছে। বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে যেসব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদের মহিলাদের সংরক্ষিত আসনে সরাসরি ভোটে  নির্বাচন। ২০০২ সালের নির্বাচনে বহু নারী সরাসরি ভোটে চেয়ারম্যান ও মেম্বার ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়াও মহিলাদের সংরক্ষিত আসনে ১২ হাজার ৮২৮ জন মহিলা সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯ পৌরসভা নির্বাচনেও মহিলারা এক-তৃতীয়াংশ সংরক্ষিত আসন লাভ

করেন। গ্রাম পরিষদেও ৩০% নারীর অংশগ্রহণ সংরক্ষণ করা হয়েছে। এভাবে উপজেলা ও জেলা পরিষদে ৩০% মহিলা নির্বাচিত হলে সারা বাংলাদেশে রাজনৈতিকভাবে নারীদের অংশগ্রহণ শক্তিশালী হবে বলে আশা করা যায়। তাছাড়া পার্লামেন্টেও নারীর অংশগ্রহণ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে সাধারণ আসন থেকে ৭ জন নারী সদস্য এবং সংরক্ষিত আসনে ৪৫ জন নারী সংসদ সদস্য রয়েছেন। বাংলাদেশের প্রশাসনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব এবং উপসচিবগণ নীতি নির্ধারণে ভূমিকা পালন করে থাকেন।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমতুল্য পদসহ সচিবদের পদ ৬৪টি এবং এর মধ্যে মাত্র একজন নারী রয়েছেন। অতিরিক্ত সচিবদের মধ্যে তিনজন নারী, যুগ্ম সচিবদের মধ্যে আটজন নারী এবং উপসচিবদের মধ্যে মাত্র ১৫ জন নারী রয়েছেন। রাষ্ট্রদূত, বিচারপতি, কাস্টমস কমিশনার, ডিসি পুলিশ সুপারসহ কয়েকজন নারী রয়েছেন। সম্প্রতি ডিসি পর্যায়ে মহিলা নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকার নারীর ক্ষমতায়ন ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য গেজেটেড পদে শতকরা ১০ ভাগ এবং ননগেজেটেড পদে শতকরা ১৫ ভাগ কোটা নির্দিষ্ট করেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে শতকরা ৬০ ভাগ কোটা নারীদের জন্য সংক্ষরণ করেছেন। সম্প্রতি সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীতে অফিসার পদে মহিলাদের নিয়োগ বাংলাদেশে নারী ক্ষমতায়নের ইতিহাসে জন্ম দিয়েছে নতুন অধ্যায়ের।

বিশ্ব প্রেক্ষিতে নারী উন্নয়নের ক্রমবিকাশ:

১৯৪৫ : জাতিসংঘ নারী-পুরুষের সমান অধিকার নকশা তৈরি করে ।

১৯৪৬

১৯৫২ : জাতিসংঘ নারীর মর্যাদা শীর্ষক কমিশন গঠন করে।

১৯৭৫: জাতিসংঘে নারীর রাজনৈতিক অধিকার সনদ প্রণয়ন ও অনুমোদন ।

১৯৭৬: আন্তর্জাতিক নারীবর্ষ পালিত হয়। মেক্সিকোতে প্রথম নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৫ সময়কালকে জাতিসংঘের বিশ্ব নারী দশকরূপে ঘোষণা ।

১৯৭৯ : জাতিসংঘ নারীর সার্বিক অধিকার সুরক্ষামূলক ‘সিডো’ সনদ প্রণয়ন ও অনুমোদন করে ।

১৯৮০ : মধ্য দশকী বিশ্ব নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮৫ : দশক সমাপনী বিশ্ব নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

১৯৯৩ : মানবাধিকার বিশ্ব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

১৯৯৪ : কায়রোতে অনুষ্ঠিত হয় জনসংখ্যা ও উন্নয়ন শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলন ।

১৯৯৫ : সামাজিক উন্নয়ন শীর্ষক বিশ্বসভা অনুষ্ঠিত হয়। নারী বিষয়ক চতুর্থ বিশ্ব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

১৯৯৮ : চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলন গৃহীত প্লাটফরম ফর অ্যাকশন বাস্তবায়ন।

 

বাংলাদেশে নারী উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ:

১৯৭৩ : জাতীয় সংসদে সদস্য পদে মহিলাদের জন্য কোটা ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয় ।

১৯৭৫ : প্রথম বিশ্ব নারী সম্মেলনে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করে এবং বর্ষধারার পক্ষে ভোটদান করে ।

১৯৭৬ ক. বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা সংস্থা গঠন করা হয়,

খ. মহিলা সেল গঠন করা হয়,

গ. মহিলাবিষয়ক বিভাগ গঠন করা হয়,

ঘ. সরকারি খাতের সাংগঠনিক কাঠামোতে কোটাভিত্তিক মহিলাদের পদ সৃষ্টি করা হয়।

১৯৭৮  মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয় চালু করা হয় ।

১৯৮৫-১৯৯০ : নারী ও পুরুষের উন্নয়নে অসাম্য দূর করতে লক্ষ্য নির্ধারণ এবং বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।

১৯৯১ : WID Focal point তৈরি করা হয় ।

১৯৯৫ : ক. NCWD (National Council For Women’s Develoment) সৃষ্টি করে।

খ. চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলনে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করে এবং সুপারিশ করে ।

১৯৯৬: ক. PFA বাস্তবায়নের জন্য টাস্কফোর্স গঠন করা হয়।

খ. PFA বাস্তবায়নে কোর গ্রুপ গঠন করা হয় ।

১৯৯৭: ক. নারী উন্নয়নে জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন করা হয় ।

খ. স্থানীয় সরকারসমূহে নির্বাচনে মহিলাদের জন্য এক-তৃতীয়াংশে সংরক্ষিত আসনে সরাসরি ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

১৯৯৮: নারী উন্নয়নে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়। : পৌরসভার নির্বাচনে মহিলাদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ সংরক্ষিত আসন বরাদ্দ ।

১৯৯৯: সরকারি চাকরিজীবী মহিলাদের প্রসূতিকালীন (মাতৃত্বকালীন) ছুটির মেয়াদ তিন মাসের স্থলে চার মাস নির্ধারণ।

২০০১ : ক. এসিড অপরাধ দমন আইন ২০০২ এবং এসিড নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০২ জারি করা হয়।

খ. উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্রী উপবৃত্তি প্রকল্প চালু।

২০০৩ : নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) বিল পাস ।

২০০৪ : সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর মাধ্যমে জাতীয় সংসদের ৪৫টি আসন সংরক্ষণ।

জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ও সরকারের কর্মপরিকল্পনা:

ইতিপূর্বে বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনায় নারী উন্নয়নে কর্মসূচি ও কার্যক্রম গ্রহণ করা হলেও তা ছিল বিচ্ছিন্ন ও সমন্বয়হীন। কিন্তু বেইজিং নারী উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনায় নারী উন্নয়নের লক্ষ্যে যে ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত হয়েছে তার একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক বাস্তবায়ন কৌশল প্রণয়নের লক্ষ্যে ও বেইজিং ঘোষণা বাস্তবায়নের অঙ্গীকারের ফলে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে, যার প্রধান লক্ষ্য হলো নির্যাতিত ও অবহেলিত এ দেশের বৃহত্তম নারী সমাজের ভাগ্যোন্নয়ন করা। নারী উন্নয়ন নীতির প্রধান লক্ষ্যসমূহ হলো নিম্নরূপ :

– রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও পারিবারিক জীবনের সকল ক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; – নারীর রাজনৈতিক, সামাজিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা;

– নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা;

– নারীকে শিক্ষিত ও দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা;

– নারী সমাজকে দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্ত করা;

– নারী-পুরুষের বিদ্যমান বৈষম্য নিরসন করা;

– সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে নারীর অবদানের যথাযথ স্বীকৃতি প্রদান করা;

– জাতীয় জীবনে সর্বত্র নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠা করা;

– নারী ও মেয়ে শিশুর প্রতি সকল প্রকার নির্যাতন বন্ধ করা। রাজনীতি, প্রশাসন ও অন্যান্য কর্মক্ষেত্র, আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ড, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া এবং পারিবারিক জীবনের সর্বত্র নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা;

– নারীর স্বার্থের অনুকূল প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও আমদানি করা এবং নারীর স্বার্থবিরোধী প্রযুক্তির ব্যবহার নিষিদ্ধ করা; নারীর সুস্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করা;

– নারীর জন্য উপযুক্ত আশ্রয় ও গৃহায়ন ব্যবস্থা নারীর অগ্রাধিকার নিশ্চিত করা;

– প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সশস্ত্র সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত নারীর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা;

– বিশেষ দুর্দশাগ্রস্ত নারীর চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করা;

– বিধবা, অভিভাবকহীন, স্বামী পরিত্যক্তা, অবিবাহিতা ও সন্তানহীনা নারীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা;

– গণমাধ্যমে নারী ও মেয়ে শিশুর ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরাসহ জেন্ডার প্রেক্ষিত প্রতিফলিত করা;

– মেধাবী ও প্রতিভাময়ী নারীর সৃজনশীল ক্ষমতা বিকাশে সহায়তা দেয়া;

– নারী উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সহায়ক সেবা প্রদান করা ইত্যাদি। উপরোক্ত লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নে সরকার যেসব পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে তা হলো :

১. নারীর মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা বাস্তবায়ন:

মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা যেমন-

-রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের যে সমঅধিকার, তার স্বীকৃতিস্বরূপ নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ করা;

-নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ (সিডো) বাস্তবায়ন করা; সম্পদ, কর্মসংস্থান, বাজার ও ব্যবসায়ে নারীকে সমান সুযোগ ও অংশীদারিত্ব দেয়া;

-শিক্ষা পাঠ্যক্রম, বিভিন্ন পুস্তকাদিতে নারীর অবমূল্যায়ন দূরীভূত করা এবং নারীর ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরা;

-নারী-পুরুষ শ্রমিকদের সমান মজুরি ও কর্মস্থলে নিরাপত্তা প্রদান এবং চাকরি ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করা;

-নারীর অংশগ্রহণ প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানিক এবং অ-প্রাতিষ্ঠানিক খাতে অর্থ- সামাজিক উন্নয়নে নারীর অবদানের স্বীকৃতি দেয়া; জাতীয় অর্থনীতিতে নারীর অবদান প্রতিফলনের জন্যে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোসহ সকল প্রতিষ্ঠানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা;

-সরকারের জাতীয় হিসাবসমূহে গার্হস্থ্য শ্রমসহ সকল নারী শ্রমের সঠিক প্রতিফলন নিশ্চিত করা;

-নারী যেখানে অধিক সংখ্যক কর্মরত আছেন সেখানে যাতায়াত ব্যবস্থা, বাসস্থান, বিশ্রামাগার, পৃথক প্রক্ষালন কক্ষ এবং দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা ।

২. নারীর প্রতি সকল প্রকার নির্যাতন দূরীকরণ:

পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে এবং কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি শারীরিক, মানসিক ও যৌন নিপীড়ন, নারী ধর্ষণ, পতিতাবৃত্তিতে নিয়োগ, যৌতুক ও নারীর প্রতি সহিংসতা দূর করা; নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সম্পর্কিত প্রচলিত আইন যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে সংশোধন এবং নতুন আইন প্রণয়ন করা;

– নির্যাতিত নারীকে আইনগত সহায়তা দেয়া; নারী পাচার বন্ধ ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করা;

– নারীর প্রতি নির্যাতন দূরীকরণ এবং এক্ষেত্রে আইনের যথাযথ প্রয়োগের জন্য বিচার ব্যবস্থায় পুলিশ বাহিনীর সর্বস্তরে বর্ধিত হারে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা;

– বিচার বিভাগ ও পুলিশ বিভাগকে নারীর অধিকার সংশ্লিষ্ট আইন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া ও জেন্ডার সংবেদনশীল করা;

– নারী ও মেয়ে শিশু নির্যাতন ও পাচার সম্পর্কিত অপরাধের বিচার ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পন্ন করার লক্ষ্যে বিচার পদ্ধতি সহজতর করা।

৩. শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ:

– নারীশিক্ষা বৃদ্ধি, নারী-পুরুষের মধ্যে শিক্ষার হার ও সুযোগের বৈষম্য দূর করা এবং উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় নারীকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে সক্রিয় ও স্পষ্ট নীতি অনুসরণ করা;

– আগামী দশ বছরে নিরক্ষরতা দূর করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করা, বিশেষত মেয়ে শিশু ও নারীসমাজের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া;

– বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে একটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা; মেয়েদের জন্য দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা;

– টেকসই উন্নয়ন ও অব্যাহত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে নারীর জন্য আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ ও শক্তিশালী করা;

– শিক্ষার ক্ষেত্রে নারী ও মেয়েশিশুর সমান অধিকার নিশ্চিত করা, শিক্ষার সকল পর্যায়ে অসমতা দূর করা, শিক্ষাকে সর্বজনীন করা, ভর্তির হার বৃদ্ধিসহ নিরক্ষরতা দূর করা এবং মেয়েশিশুকে বিদ্যালয়ে ধরে রাখার লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা;

– জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে সকল স্তরে পাঠ্যসূচিতে নারী-পুরুষ সমতা প্রেক্ষিত সংযোজন করা;

– নারীর দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সকল প্রশিক্ষণে নারীকে সমান সুযোগ দেয়া;

– নারী ও মেয়েশিশুর প্রতি দৃষ্টি রেখে বিদ্যমান নীতিসমূহের খাতওয়ারি সময়ভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা; কারিগরি প্রযুক্তিগত ও উচ্চ শিক্ষাসহ শিক্ষার সকল পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করা।

৪. জাতীয় অর্থনীতিতে নারীর সক্রিয় ও সমঅধিকার নিশ্চিতকরণ:

– অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহে সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং নারী-পুরুষের মধ্যে বিরাজমান পার্থক্য দূর করা; অর্থনৈতিক নীতি (বাণিজ্যনীতি, মুদ্রানীতি, করনীতি প্রভৃতি) প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করা;

– নারীর ক্ষমতায়নের প্রতি লক্ষ্য রেখে সামষ্টিক অর্থনীতিতে নীতি প্রণয়নে ও কর্মসূচিতে নারীর চাহিদা ও স্বার্থ বিবেচনায় রাখা;

– সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতির প্রয়োগে বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রতিহত করার লক্ষ্যে নারীর অনুকূলে Safetynets গড়ে তোলা।

– জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে নারীর দারিদ্র্য দূরীকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সহায়তা দান ও অনুপ্রাণিত করা। 

৫. নারীর দারিদ্র্য দূরীকরণ:

দরিদ্র নারী শ্রমশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধিকল্পে তাদের সংগঠিত করে ও প্রশিক্ষণ দিয়ে নতুন এবং বিকল্প অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুযোগ সৃষ্টি করা;

– দরিদ্র নারীকে উৎপাদনশীল কর্মে, অর্থনৈতিক কর্মে এবং অর্থনৈতি মূলধারায় সম্পৃক্ত করা; অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ নারীর সকল চাহিদা পুরণের লক্ষ্যে জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা, বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা; –

– নারীর মানবাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিদ্যমান আইন সংশোধন ও প্রয়োজনীয় নতুন আইন প্রণয়ন করা; বিদ্যমান সকল বৈষম্যমূলক আইন বিলোপ করা এবং আইন প্রণয়ন ও সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত কমিশন বা কমিটিতে নারী আইনজ্ঞদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা; স্থানীয় বা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কোনো ধর্মের কোনো অনুশাসনের ভুল ব্যাখ্যার ভিত্তিতে নারীস্বার্থের পরিপন্থী এবং প্রচলিত আইনবিরোধী কোনো বক্তব্য বা অনুরূপ কাজ করা বা কোনো উদ্যোগ নেয়া যাবে না; বৈষম্যমূলক কোনো আইন প্রণয়ন না করা বা বৈষম্যমূলক কোনো সামাজিক প্রথার উল্লেখ ঘটতে না দেয়া;

– গুণগত শিক্ষার সকল পর্যায়ে, চাকুরিতে, কারিগরি প্রশিক্ষণে, সম পারিতোষিকের ক্ষেত্রে, কর্মরত অবস্থায় স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা, সামাজিক নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য পরিচর্যায় নারীর সম অধিকার নিশ্চিত করা; মানবাধিকার ও নারীবিষয়ক আইন সম্পর্কে শিক্ষা প্রদান ও সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করা;

– পিতা ও মাতা উভয়ের পরিচয়ে সন্তানের পরিচিতির ব্যবস্থা করা, যেমন জন্ম নিবন্ধীকরণ, সকল সনদপত্র, ভোটার তালিকা, ফরম, চাকরির আবেদনপত্র, পাসপোর্ট ইত্যাদিতে ব্যক্তির নাম প্রদানের সময় পিতা ও মাতার নাম উল্লেখ করা;

৬. নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন:

নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে জরুরি বিষয়াদি যথা—স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, জীবনব্যাপী শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা, তথ্য, উপার্জনের সুযোগ, উত্তরাধিকার, সম্পদ, ঋণ প্রযুক্তি এবং বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অর্জিত সম্পদসহ ভূমির ওপর অধিকার ইত্যাদির ক্ষেত্রে নারীর পূর্ণ ও সমান সুযোগ এবং নিয়ন্ত্রণের অধিকার দেয়া এবং এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নতুন আইন প্রণয়ন করা।

৭. নারীর কর্মসংস্থান:

– নারীর শ্রমশক্তির শিক্ষিত ও নিরক্ষর উভয় অংশের কর্মসংস্থানের জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করা; চাকরির ক্ষেত্রে নারীর বর্ধিত নিয়োগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রবেশ পর্যায়সহ সকল ক্ষেত্রে কোটা বৃদ্ধি এবং কার্যকর করা;

– সকল নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে সরকার অনুসৃত কোটা ও কর্মসংস্থানের নীতির আওতায় চাকরির ক্ষেত্রে নারীকে সকল প্রকার সমসুযোগ প্রদানের জন্য উদ্বুদ্ধ করা;

– নারী উদ্যোক্তা শ্রেণী গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিশেষ প্রশিক্ষণ ও ঋণদান কর্মসূচি গ্রহণ করা; নারীর বর্ধিত হারে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ, অবস্থান ও অগ্রসরমানতা বজায় রাখার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পরিবেশ গড়ে তোলা; নারীর ব্যাপক কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকল আইন, বিধি ও নীতির প্রয়োজনীয় সংস্কার করা।

৮. নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন:

– রাজনীতিতে অধিক হারে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য প্রচার মাধ্যমসহ রাজনৈতিক দলসমূহকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা; নারীর রাজনৈতিক অধিকার অর্জন ও প্রয়োগ এবং এর সুফল সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা;

– নির্বাচনে অধিক হারে নারীপ্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুপ্রাণিত করা; নারীর রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের ও প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগে সচেতন করা এবং তৃণমূল পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত ভোটার প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা; রাজনীতিতে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণে তাগিদ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে নারী সংগঠনসহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকে প্রচার অভিযান গ্রহণ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা।

– জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনে চলতি সময়সীমা শেষ হবার পর ২০০১ সালে বর্ধিত সংরক্ষিত আসনে প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য উদ্যোগ নেয়া; স্থানীয় সরকার পদ্ধতির সকল পর্যায়ে বর্ধিত সংরক্ষিত আসনে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা;

– সিদ্ধান্ত গ্রহণের সর্বোচ্চ স্তর মন্ত্রিপরিষদে, প্রয়োজনে সংবিধানের সংশ্লিষ্ট ধারার অধীনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী নিয়োগ করা ।

৯. নারীর প্রশাসনিক ক্ষমতায়ন:

– প্রশাসনিক কাঠামোর উচ্চ পর্যায়ে নারীর জন্য সরকারি চাকরিতে প্রবেশ সহজ করার লক্ষ্যে চুক্তিভিত্তিক এবং সরাসরি প্রবেশের (লেটারেল এনটি) ব্যবস্থা করা;

– বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতে রাষ্ট্রদূতসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশন, পরিকল্পনা কমিশন,

– বিচার বিভাগের উচ্চ পদে নারীদের নিয়োগ প্রদান করা; জাতিসংঘের বিভিন্ন শাখা ও অঙ্গ সংগঠনে এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংগঠনে রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি বা প্রার্থী হিসেবে নারীকে নিয়োগ/মনোনয়ন দেয়া;

– নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে প্রবেশ পর্যায়সহ সকল পর্যায়ে, গেজেটেড ও নন-গেজেটেড পদে কোটা বৃদ্ধি করা ।

১০. বিশেষ দুর্দশাগ্রস্ত নারী:

নারীর অবস্থানের বিভিন্নতা এবং বিশেষভাবে দুর্দশাগ্রস্ত নারীর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে তাদেরকে বিশেষ সুবিধা প্রদানের জন্য পদক্ষেপ ও কর্মসূচি গ্রহণ করা ।

 

উপসংহার :

নারী ক্ষমতায়নের ধারণা বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সে কারণে বাংলাদেশ বেইজিং-এ নারী উন্নয়ন ও কর্মপরিকল্পনায় যে ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত হয়েছে তা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছে। এ কারণে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ জাতীয় নারী উন্নয়ন ও কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

বেইজিং প্লাটফরম ফর অ্যাকশনে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে নারী উন্নয়নে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে যে পথ নির্দেশনা দিয়েছে তা বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নারীর সার্বিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। সুশীল সমাজ গঠনে নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে মানবিক মূল্যবোধের অনুশীলন করার লক্ষ্যে শুধু সরকারি প্রচেষ্টা নয়, বেসরকারি সংস্থাসমূহের দায়দায়িত্বও অনেক। সরকারি-বেসরকারি যৌথ প্রচেষ্টায় নারী উন্নয়ন নীতিমালা ও কার্যক্রম বাস্তবায়নের পথ প্রশস্ত হতে পারে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় ।

 

আরও দেখুন:

Exit mobile version