নাইটিংগেল পাখি ও গোলাপ ফুল The Nightingale and the Rose | অস্কার ওয়াইল্ড গল্পসমগ্র | অনুবাদ সাহিত্য

নাইটিংগেল পাখি ও গোলা’প ফুল

The Nightingale and the Rose

নাইটিংগেল পাখি ও গোলা’প ফুল The Nightingale and the Rose অস্কার ওয়াইল্ড গল্পসমগ্র [ অনুবাদ সাহিত্য ]

 

নাইটিংগেল পাখি ও গোলাপ ফুল The Nightingale and the Rose অস্কার ওয়াইল্ড গল্পসমগ্র [ অনুবাদ সাহিত্য ]
নাইটিংগেল পাখি ও গোলাপ ফুল The Nightingale and the Rose অস্কার ওয়াইল্ড গল্পসমগ্র [ অনুবাদ সাহিত্য ]

একটি তরুণ ছাত্র আক্ষেপ করে বলল–মেয়েটি কথা দিয়েছে আমি যদি তাকে একটি লাল। গোলা’প এনে দিতে পারি তাহলে সে আমার সঙ্গে নাচবে। কিন্তু হায়রে, আমার সারা বাগানে একটি লাল গোলা’প নেই।

ওক গাছের ডালে বসে একটি নাইটিংগেল তার কথাগুলি শুনল; তারপরে সে পাতার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল।

ছেলেটির সুন্দর চোখ দুটি জলে টলটল করছে।

সারা বাগানে আমার একটিও লাল গোলা’প ফোটেনি। হায়রে, কত ছোট ছোট জিনিসের ওপরেই না মানুষের সুখ নির্ভর করে! জ্ঞানী মানুষেরা আজ পর্যন্ত যা কিছু লিখেছেন সে-সবই আমি পড়েছি; দর্শনশাস্ত্রের গোপন রহস্যটুকুও আমার জানা। তবু একটি লাল গোলা’পের অভাবে আমার জীবন আজ নষ্ট হতে বসেছে।

নাইটিংগেল পাখি বলল–এতদিন পরে সত্যিকারের একজন প্রেমিকের দেখা পেলাম। আমি জানতাম না এই জন্যে রাতের পর রাত আমি প্রেমের গান গেযেছি। রাত্রির পর রাত্রি নক্ষত্রদের কাছে আমি এরই গল্প বলেছি। এখন সাস্কাতে দেখলাম একো এর চুলগুলি। কচুরিপানার ফুলের মতো কালো কুচকুচে, ঠোঁট দুটি কামনার গোলা’পী রঙে রাঙানো; কিন্তু উদগ্র কামনার বিবর্ণ হাতির দাঁতের মতো এর রঙ; গভীর একটা দুঃখ এর কপালে তার চিহ্ন এঁকে দিযেছে।

যুবকটি বিড়বিড় করে বলল–কাল রাত্রিতে রাজকুমার নাচের আসর বসাবেন। আমার প্রেমিকা যাবে সেখানে নাচতে। আমি যদি তাকে একটা লাল গোলা’প দিতে পারি তাহলে সে আমার সঙ্গে সারা রাত নাচবো আমি যদি তাকে একটা লাল গোলা’প এনে দিতে পারি। তাহলে সে আমার বাহুর মধ্যে ধরা দিয়ে আমার বুকের ওপরে তার মাথাটা রাখবে; তার দুটি হাত আমার দুটির কাছে আত্মসমর্পণ করবে। কিন্তু আমার বাগানে কোনো লাল গোলা’প নেই তাই আমি নিঃসঙ্গ অবস্থায় বসে রয়েছি, সে আমাকে অগ্রাহ্য করে চলে যাবে, সে তাকাবে না আমার দিকে; আমার হৃদয় যাবে ভেঙে।

নাইটিংগেল বলল–এইতো আসল প্রেমিক। আমি যে দুঃখের গান গাই সেই দুঃখই এ ভোগ করছে; আমার কাছে যেটা আনন্দ, এর কাছে সেইটাই দুঃখ প্রেম কতই না আশ্চর্য বস্তু! এমারেলড-এর চেয়েও দামি, ওপ্যাল পাথরের চেয়েও ও প্রিয়। কোনো দামেই ওকে কেনা যায় না; হাটে-বাজারে ও-জিনিস বিকোয় না।

যুবকটি আক্ষেপ করতে শুরু করল নাচের মজলিসে বাজনাদারেরা বসে-বসে বাজনা বাড়াবে, সেই বাজনার সুরে-সুরে আমার প্রেমিকা নাচবো এম লঘু পদসঞ্চারে সে নাচবে যে মেঝের ওপরে তার পা-ই যাবে না দেখা। রাজপুরুষেরা ভিড় করে দাঁড়াবে তার চারপাশে, কিন্তু আমার সঙ্গে সে আর নাচবে না–আমি তাকে কোন লাল গোলা’প দিতে পারিনি।–এই বলে সে ঘাসের ওপরে মুখ লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদতে থাকো।

লেজ তুলে তার পাশ দিয়ে দৌড়ে যেতে-যেতে একটা সবুজ রঙের গিরগিটি হঠাৎ থেমে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল–ছেলেটা কাঁদছে কেন?

সূর্য-কণার উদ্দেশ্যে উড়তে উড়তে একটা প্রজাপতিও সেই একই প্রশ্ন করল–তাইতো, তাইতো!

একটা ডেইজি ফুল তার প্রতিবেশীকে জিজ্ঞাসা করল–ব্যাপারটা কী বল তো?

উত্তর দিল নাইটিংগেল–ও কাঁদছে লাল গোলা’পের জন্যে।

সবাই চিৎকার করে উঠল-লাল গোলা’পের জন্য? অবাক কাণ্ড! ওদের মধ্যে সবচেয়ে নৈরাশ্যবাদী বাচ্চা গিরগিটিটা হেসে উঠল হো-হো করে।

কিন্তু ছেলেটির দুঃখ কোথায় তা বুঝল নাইটিংগেল। ওক গাছের পাতার মধ্যে চুপটি করে বসে সে প্রেমের রহস্যের কথা ভাবতে লাগল।

হঠাৎ দুটো ডানা মেলে সে ঝাঁপিয়ে পড়ল শন্যে; তারপরে হাওযার বকে উডতে লাগল। তারপরে ছায়ার মতো সে বাগানের ওপর দিয়ে গেল উড়ে ঘাসের জডিমের মাঝখানে একটি সুন্দর গোলা’প গাছ দাঁড়িয়ে ছিল। তারই পাশে গিয়ে সে বলল–আমাকে একটা লাল গোলা’প দাও।প্রতিদানে তোমাকে আমি আমার সবচেয়ে মিষ্টি গান শোনাব।

ঘাড় নেড়ে গোলা’প গাছটি বলল–আমার সব ফলই সাদা। সমুদ্রের ফেনার মতো সাদা। পাহাড়ে যে বরফ জমে থাকে এর রঙ তার চেয়েও সাদা। পুরনো সূর্য-ঘডির কাছে আমার ভাই রয়েছে। তুমি বরং সেইখানে যাও; তুমি যা চাইছে সে হয়তো তোমাকে তা দিতে পারে।

সূর্য-ঘড়ির কাছে গিয়ে নাইটিংগেল সেই গোলা’প গাছটিকে বলল–আমাকে একটি লাল গোলা’প দাও। প্রতিদানে আমি তোমাকে আমার সবচেয়ে মিষ্টি গান শোনাব।

গাছটি ঘাড় নেড়ে বলল–আমার ফুল হলদে-জল অপ্সরীদের কেশদামের মতো পীতবর্ণের, মাঠে-মাঠে যে ড্যাফোডিল ফুল ফোটে তাদের চেয়েও বেশি গীত। কিন্তু ওই ছাত্রটির জানালার ধারে আমার একটি ভাই থাকে। তার কাছে যাও, সে হয়তো তোমাকে লাল গোলা’প দিতে পারে।

ছাত্রটির জানালার নীচে যে গোলা’প গাছটি জন্মেছে নাইটিংগেল তার কাছে গিয়ে। বলল–আমাকে একটি লাল গোলা’প দাও। আমি তোমাকে আমার সব চেয়ে মিষ্টি গান শোনাব।

কিন্তু গাছটি ঘাড় নেড়ে বলল–আমার সব গোলাপই লাল-ঘুঘু পাখির পায়ের মতো। লাল-সমুদ্রের তলায় যে প্রবাল রয়েছে তার চেয়েও লাল। কিন্তু শীত আমার শিরাগুলিকে ঠান্ডায় জমাট বাঁধিয়ে দিয়েছে, আর ফোঁটার আগেই কুয়াশা নষ্ট করে দিয়েছে আমার কুঁড়িগুলিকে। ঝড়ে ভেঙেছে আমার ডালা সারা বছরই আমার ডালে কোনো ফুল ফোটেনি।

নাইটিংগেল চিৎকার করেই বলল–আমি কেবল একটি লাল গোলাপই চাই–মাত্র একটি। সেটা পাওয়ার কি কোনো উপায় নেই?

গাছটি বলল–আছে। কিন্তু সেটি এত বিপজ্জনক যে বলতে আমি সাহস পাচ্ছি নে।

আমাকে বল। কোনো কিছু করতেই আমি ভয় পাব না।

 

নাইটিংগেল পাখি ও গোলাপ ফুল The Nightingale and the Rose অস্কার ওয়াইল্ড গল্পসমগ্র [ অনুবাদ সাহিত্য ]
নাইটিংগেল পাখি ও গোলাপ ফুল The Nightingale and the Rose অস্কার ওয়াইল্ড গল্পসমগ্র [ অনুবাদ সাহিত্য ]

গাছটি বলল–যদি তুমি লাল গোলাপ পেতে চাও তাহলে চাদর আলোয় গান গেয়ে তোমাকে তা তৈরি করতে হবেঃ রঙিন করে তুলতে হবে তোমার হৃদয়ের রক্ত দিযে। কাঁটার বুকে বুক ঠেকিযে আমাকে তোমার গান শোনাতে হবে। সারা রাত ধরেই গান গাইতে হবে তোমাকে সেটা প্রবেশ করবে তোমার হৃদয়ের গভীরে, তোমার হৃদয়ের রক্ত ঝরে-ঝরে আমার শিরায় প্রবেশ করে আমার নিজস্ব হয়ে উঠবে।

নাইটিংগেল চিৎকার করে বলল–একটা লাল গোলাপের জন্যে মৃত্য-দামটা বড়ো বেশি। হয়ে যাচ্ছে। জীবন সকলের কাছেই অত্যন্ত প্রিয়। সবুজ অরণ্যের মধ্যে বসে থাকা বড়ো মধুর, বসে-বসে সোনার রথে সূর্য আর মুক্তার রথে চাঁদকে ভেসে বেড়াতে দেখতে খুবই ভালো। লাগে। তবু জীবনের চেয়ে মহত্তর প্রেম; আর মানুষের হৃদয়ের কাছে পাখির হৃদযের দাম কতটুকু!

এই ভেবে তামাটে রঙের পাখা মেলে সে আকাশে উড়ে গেল।

যুবকটির ঘাসের ওপরে পড়ে কাঁদছিল;সে ফিরে এসে দেখল তার সুন্দর চোখ দুটির ওপর থেকে তখনও জলের দাগ মুছে যায়নি।

সে চিৎকার করে বলল–শান্ত হও। লাল গোলাপ তুমি পাবে। চাঁদের আলোতে বুকের রক্ত দিয়ে সারা রাত্রি গান করে তোমার জন্যে একটি লাল গোলাপ আমি সৃষ্টি করব। প্রতিদানে আমি কেবল এইটুকু চাই যে তুমি সত্যিকার প্রেমিক হবে, কারণ বিজ্ঞ দার্শনিকের চেয়েও প্রেম বি, ক্ষমতাশালীর চেয়েও প্রেমের ক্ষমতা অনেক বেশি।

মুখ তুলে তাকিয়ে ছেলেটি কথাগুলি শুনল; কিন্তু পাখিটি কী বলতে চাইছে তা সে বুঝতে পারল না; কী করে পারবে? বই-এ লেখা না থাকলে কোনো কিছুই সে বুঝতে পারে না।

কিন্তু ওক গাছ সবই বুঝতে পারল; এবং পেরে দুঃখিত হল। তার কোটরে নাইটিংগেল পাখি বাসা বেঁধেছিল। তাকে ওক গাছ সত্যিই বড়ো ভালবাসত।

ঝোঁপের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে-হাঁটতে ছেলেটি নিজের মনে-মনেই বলুল–মেয়েটির চেহারা যে নিখুঁত সে-বিষয়ে কারও কোনো সন্দেহ থাকা উচিত নয় কিন্তু অনুভূতি বলে তার কি কিছু রয়েছে? সেদিক থেকে আমার সন্দেহ যথেষ্ট। আসল কথাটা হচ্ছে অধিকাংশ আর্টিস্টের মতোই তার রয়েছে কেবল ভঙ্গিমা–আর সেটাই হল অন্তঃসারশূন্য। পরের জন্য কোনোরকম আম্লত্যাগ সে করবে না। সে কেবল তার সঙ্গীতের কথাই চিন্তা করে আর সবাই জানে যে কলা মাত্রেই স্বার্থপর, কিন্তু তবু তার কণ্ঠস্বরটি যে বড়ো সুন্দর সেকথা স্বীকার করতেই হবে। কী দুঃখ! কণ্ঠস্বর অর্থহীন। কারও কোনো মঙ্গল তা দিয়ে হয় না।

আকাশে চাঁদ উঠতেই নাইটিংগেল পাখিটি সেই গোলাপ গাছের কাছে উড়ে এল। কাঁটার মুখে ঠেকিয়ে দিল তার বুক। সেইভাবে বুকটা রেখে সারা রাত্রি ধরেই সে গান গাইল। হেলে পড়ে সেই গান শুনতে লাগল চাঁদ। সারা রাত্রি ধরেই গান গাইতে লাগল সে। আর কাঁটাটা মুহূর্তে-মুহূর্তে তার বুকের মধ্যে ঢুকতে লাগল। একটু একটু করে ধীরে-ধীরে চুঁইয়ে-চুঁইয়ে শেষ হয়ে এল তার ধমনীর রক্ত গোলাপ গাছের ডালে একটি সুন্দর ফুল ফুটে উঠল।

কিন্তু গোলাপ গাছটির চিৎকার করে বলল–আরো জোরে, আরো জোরে? খুদে নাইটিংগেল! নতুবা, গোলাপ ফোঁটার আগেই সকাল হয়ে যাবে।

.

সুতরাং নাইটিংগেল আরো জোরে কাঁটার মুখে নিজের বুকটা চেপে ধরল, আর সেই সঙ্গে তার গান ডোরে থেকে জোরাল হয়ে উঠল।

প্রেমিকের চুম্বনে প্রেমিকার গণ্ডে যেমন লজ্জাবিধুর লাল আভা ছড়িয়ে পড়ে, গোলাপ ফুলের পাতার ওপরেও তেমনি মিষ্টি একটি লাল আভা ছড়িয়ে পড়ল। কিন্তু কাঁটাগুলি তখনও তার হৃদযের মধ্যে প্রবেশ করেনি। সেই জন্যে গোলাপের হৃদ্যটি তখনো সদাই রয়ে গেলঃ কারণ পাখিটির হৃদয়ের রক্ত না পেলে। গোলাপের হৃদয় রক্তবর্ণ ধারণ করবে না। একটা ভীষণ যন্ত্রণা তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলল। সেই যন্ত্রণা যতই বাড়তে লাগল ততই তার গান তীব্র থেকে তীব্রতর হতে লাগল; কারণ তার গান ছিল প্রেমের, যে প্রেম মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে সার্থক। কবরখানার মধ্যে তো প্রেমের বিনাশ হয় না।

এবং প্রভাতের মতো সেই অপরূপ গোলাপটি রঙিন হয়ে উঠল।

কিন্তু নাইটিংগেলের কণ্ঠস্বর স্ক্রীণ থেকে হক্কীণতর হয়ে এল; ঝপট করতে লাগল তার খুদে পাখা দুটি চোখের ওপরে নেমে এল অন্ধকারের ছায়া। তার গান অস্পষ্ট হতে লাগল; মনে হল তার গলাটা যেন আটকে আসছে।

তারপরে সে আর একবার জোরে গান গেয়ে উঠল। সাদা চাঁদ সেই গান শুনলো:প্রভাতের কথা ভুলে গিয়ে আকাশের গায়ে অপেক্ষা করতে লাগল। লাল গোলাপ সেই গান শুনল; আনন্দের আতিশয্যে হিল্লোল লাগল তার গায়ে শীতার্ত প্রভাতের বাতাসে সে তার পাপডিগুলিকে দিল মেলে।

গোলাপ গাছ চিৎকার করে উঠল-দেখ, দেখ! গোলাপ ফোঁটা শেষ হল। কিন্তু নাইটিংগেল কোনো উত্তর দিল না। কারণ, লম্বা ঘাসের বনে, হৃদয়ে কাঁটা বিদ্ধ হয়ে সে মৃত অবস্থায় রইল পড়ে।

এবং দুপুরের দিকে ছাত্রটি তার জানালা খুলে বাইরে দিকে তাকাল। তারপরেই সে চিৎকার করে উঠল–কী ভাগ্য! এইতো এখানে একটা লাল গোলা’প! জীবনে এত সুন্দর লাল গো’লাপ।

 

নাইটিংগেল পাখি ও গোলাপ ফুল The Nightingale and the Rose অস্কার ওয়াইল্ড গল্পসমগ্র [ অনুবাদ সাহিত্য ]
নাইটিংগেল পাখি ও গোলাপ ফুল The Nightingale and the Rose অস্কার ওয়াইল্ড গল্পসমগ্র [ অনুবাদ সাহিত্য ]

আর কখনো আমি দেখিনি। এটা এত সুন্দর যে মনে হচ্ছে এর একটি কোনো ল্যাটিন নাম রয়েচ্ছে। এই বলে ঝুঁকে পড়ে সে লাল গোলা’পটি তুলে নিল। তারপরে মাথায় টুপিটা চড়িযে সেই গোলা’পটি হাতে নিয়ে সে দৌড়ে গেল প্রফেসরের বাড়িতে।

প্রফেসরের কন্যা দরজার সামনে বসে নীল রঙের সিল্কের সুতো গুটাচ্ছিল তখন। তার বাচ্চা কুকুরটা শুয়েছিল তার পায়ের কাছে। ছাত্রটি চেঁচিয়েই বলল–তুমি বলেছিলে একটি লাল গোলা’প এনে দিলে তুমি আমার সঙ্গে নাচবে। এই সেই গো’লাপ-তামাম দুনিয়ায় এর চেয়ে সুন্দর গোলা’প আর কোথাও তুমি পাবে না। এটি তুমি আজ আমার বুকের কাছে পরবে। আমরা যখন নাচবো তখন এটিই তোমাকে বলে দেবে আমি তোমাকে কত ভালবাসি।

ভ্রুকুটি করল মেয়েটি বলল–ভয় হচ্ছে আমার পোশাকের সঙ্গে এটি মানাবে না। আর তা ছাড়া চেম্বারলেন-এর ভাইপো আমাকে কয়েকটি আসল জহরৎ পাঠিয়েছেন। সবাই জানে জহরতের দাম ফুলের চেয়ে অনেক বেশি।

ছাত্রটি রাগ করে বলল–সত্যি বলতে কি বড়োই অকৃতজ্ঞ তুমি।

এই বলে ফুলটিকে সে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে দিল। সেইখানে গাড়ির চাকার নীচে পড়ে সে মিশে গেল মাটির সঙ্গে।

মেয়েটি বলল–অকৃতজ্ঞ! তুমি বড়ো অভদ্র তো! তাছাড়া তুমি এমন কি একটা বস্তু? মাত্র একজন ছাত্র। চেম্বারলেন-এর ভাইপোর মুক্তোর যে জুতোর লেস রয়েছে আমার বিশ্বাস তোমার সেটুকু সম্পদও নেই।

এই কথা বলে সে চেয়ার ছেড়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেল।

ফিরে যেতে যেতে ছাত্রটি বলতে লাগল–ভালোবাসাটা কী বাজে জিনিস! লজিকের যা দাম রয়েছে, এর দাম তার অর্ধেকও নয়, কারণ, এ কিছুই প্রমাণ করে না। এ এমন সব কথা বলে যা কোনো দিন ঘটে না; মানুষকে এ এমন সব জিনিস বিশ্বাস করায় যা কোনো দিনই সত্যি হয়ে ওঠে না। আসল কথাটা হল প্রেম জিনিসটাই অবাস্তব; আর এ জগতে যা বাস্তব নয় তা কোনো কাজের নয়। তার চেয়ে আবার আমি দর্শন আর অধিবিদ্যা শাস্ত্রই পড়তে শুরু করি।

এই বলে নিজের ঘরে গিয়ে ধুলোমলিন বিরাট একটা বই বার করে পড়তে শুরু করল।

 

নাইটিংগেল পাখি ও গোলাপ ফুল The Nightingale and the Rose অস্কার ওয়াইল্ড গল্পসমগ্র [ অনুবাদ সাহিত্য ]
নাইটিংগেল পাখি ও গোলাপ ফুল The Nightingale and the Rose অস্কার ওয়াইল্ড গল্পসমগ্র [ অনুবাদ সাহিত্য ]

আমাদের আরও পোষ্ট দেখুনঃ

Leave a Comment