ধান কবিতা – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

ধান কবিতাটি প্রখ্যাত বাংলা কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় রচিত একটি চমৎকার এবং গভীর কবিতা। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বাংলা আধুনিক কবিতার অন্যতম প্রধান ধারার প্রতিভাবান কবি। তার কবিতা সাধারণত জীবনের সাধারণ অথচ গভীর দিকগুলোকে স্পর্শ করে, যেখানে অনুভূতি, প্রকৃতি, সামাজিক প্রেক্ষাপট ও মানবজীবনের সম্পর্ক সুন্দরভাবে মিশে থাকে।

ধান কবিতাটি বাংলার গ্রামীণ জীবনের একটি চিত্র, যেখানে ধানের ক্ষেতের সোনালী রঙ এবং সেটির পেছনের পরিশ্রম, প্রতীক্ষা ও আশা ফুটে ওঠে। ধান শুধু এক ধরণের ফসল নয়, বরং বাংলার কৃষিজীবনের প্রাণ এবং মানুষের জীবিকার প্রতীক। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ভাষায় ধান হয়ে ওঠে এক জীবন্ত প্রতীক, যা কৃষকের জীবন, প্রকৃতির নিয়ম এবং সময়ের প্রবাহকে গভীর অর্থে প্রতিফলিত করে।

এই কবিতার মাধ্যমে কবি আমাদের বাংলার মাটির সঙ্গে মানুষের গভীর বন্ধনের কথা স্মরণ করিয়ে দেন এবং কৃষিজীবনের মূল্য ও সৌন্দর্যের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ভাষার সরলতা ও গভীরতা একসাথে এই কবিতাকে বিশেষভাবে হৃদয়স্পর্শী করে তোলে।

সুতরাং, ধান কবিতা শুধুমাত্র একটি কৃষি বিষয়ক কবিতা নয়, এটি বাংলার সংস্কৃতি, প্রকৃতি এবং মানুষের জীবনের এক আন্তরিক প্রতিচ্ছবি।

ধান কবিতা - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

 

ধান – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

হলুদ শাড়ি আর পরো না, এবার মাঠে হলুদ ধান ফলেনি
ঘরে তোমার হল্‌দে পর্দা! মিনতি করি খুলে রাখো
এবার মাঠে হলুদ ধান ফলেনি।
এপাড়া জুড়ে সানাই বাজে, ওপাড়া জুড়ে শামিয়ানা
ব্যস্ত মানুষ, সুখী মানুষ, শঙ্খ আর উদ্ধ্বনি লাল চেলি
সবই থাকুক, বন্ধ রাখো গায়ে-হলুদ
এবার মাঠে হলুদ ধান ফলেনি

আয় কাক আয় কাকের পাল আয়রে আয়-
গোয়াল ঘরের পাশে দাঁড়িয়ে ছেলেটা ডাকে পুরোনো সুরে
ও খোকা, তুই কাক ডাকিসনে, ও ডাকা যে অলুক্ষণে
এ-বছর আর নবান্ন নেই, বান এসেছে
এবার মাঠে হলুদ ধান ফলেনি।
দুপুরবেলা হলদে হাওয়া উদাস হয়ে ঘুরে বেড়য়ে
কোথায় কেউ কথা বললে রক্ত আলোয় তুফান ওঠে
পায়ের কাছে লুটিয়ে থাকে হিম নিশীথের নীল জ্যোৎস্না
গাছের পাতা হলুদ হয় তবুও ভয়ে
মায়ের মুখ শিশুর মতো, জলে যেমন মেঘের ছায়া, থমথমে ভয়
ও মা, তুমি ভয় পেও না
শিশুর অন্নপ্রাশন হবে অনাদিকালের গোধুলি বেলয়।।

 

 

আরও পড়ুন:

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

Leave a Comment