ডিশ এন্টেনার সুফল ও কুফল | ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি | বাংলা রচনা সম্ভার , ভূমিকা : আধুনিক তথ্যপ্রবাহ ও বিনোদনমূলক ব্যবস্থা দ্রুত সম্প্রচারের ব্যবস্থার নাম স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক। পৃথিবীর গণমাধ্যমসমূহের মধ্যে এটি পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছে গেছে প্রযুক্তির উৎকর্ষতার ফলে। তাই আজকের পৃথিবীতে এই মাধ্যম মানুষকে অনেক কাছে টেনে এনে দূরত্বকে কমিয়ে দিয়েছে।
ডিশ এন্টেনার সুফল ও কুফল | ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি | বাংলা রচনা সম্ভার
ডিশ এন্টেনার সুফল ও কুফল
এই স্যাটেলাইট প্রযুক্তি সাংস্কৃতিক জগতে এক প্রকার নিয়ন্ত্রণকারী শক্তির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এ প্রসঙ্গে Curran M. Gurevitch বলেন, যোগাযোগ প্রতিষ্ঠানসমূহ আজকের সাংস্কৃতিক বিশ্বকে করায়ত্ত করছে। এসব মাধ্যম এমনভাবে তাদের ভিত্তি ও পরিচালনার উপায়সমূহ সমগ্র বিশ্বে বৃদ্ধি করছে, যা সামাজিক বিশ্ব এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চার করে চলছে । তাই যে কোনো দেশের সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য তথ্যমাধ্যমসমূহের যেমন গুরুত্ব রয়েছে, তেমনি স্যাটেলাইট টিভির আগমনে সাংস্কৃতিক বিকাশ ত্বরানিত বা বাধড়ান্ত হয়েছে বা হতে পারে ।
এমতাবস্থায় স্যাটেলাইট প্রযুক্তি তথা ডিশ এন্টেনার ব্যাপক প্রচলনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশসমূহ । ডিশ এন্টেনার ব্যাপক প্রচলন এ সকল দেশে তাদের নিজস্ব সমাজ, সংস্কৃতি, বিশ্বাস ও মূল্যবোধকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে। বিশেষ করে যুবক ও কিশোরদের মাঝে এর প্রভাব ব্যাপকভাবে প্রতিফলিত হতে দেখা যায়। ফলে এসব দেশের সমাজ ও পারিবারিক ব্যবস্থাও আজ চরম সংকটে নিপতিত। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডিশ এন্টেনা কিছুটা সুফলও বয়ে আনছে । তারপরও ডিশ এন্টেনার মাধ্যমে প্রচারিত অনুষ্ঠান মানবিক বিকাশ ও সভ্যতার উৎকর্ষে কতটুকু কার্যকর তা ভাববার বিষয় ।
স্যাটেলাইট ও ডিশ এন্টেনা : ডিশ এন্টেনা মূলত স্যাটেলাইটের অনুষ্ঠান প্রচারের জন্য ব্যবহৃত বিশেষ এন্টেনা। এটি সাধারণ দেশীয় টিভিতে ব্যবহৃত এন্টেনার তুলনায় ভিন্নতর ও বড়। বর্তমানে মহাশূন্যে অসংখ্য স্যাটেলাইট স্থাপিত হয়েছে। এশিয়া অঞ্চলে স্থাপিত স্যাটেলাইটগুলোর অন্যতম হলো এশিয়া স্যাট। হংকংভিত্তিক এ স্যাটেলাইটটি বিষুব রেখা থেকে প্রায় ২২ হাজার মাইল ওপরে অবস্থিত এরকম অসংখ্য স্যাটেলাইটের মধ্যে একটি। এটি অক্ষরেখার সাথে ১০৫ ডিগ্রি কৌণিক অবস্থানে রয়েছে।
এর পাশাপাশি অন্যান্য স্যাটেলাইটের মধ্যে রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার তিনটি পালাপা, তিনটি চীনা স্যাট, রাশিয়ার দুটি, ইউরোপীয় ইন্টারন্যাশনাল ইনটেলস্যাট। এগুলো ঠিক ইকুয়েডরের ওপরে অবস্থিত। আর এশিয়া স্যাটের অবস্থান সিঙ্গাপুরের ওপর। হংকংয়ের ওয়াস্পাও গ্রুপ হাচিসানের সঙ্গে যৌথভাবে এ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে অনুষ্ঠান প্রচার করে । একটি প্রাইভেট কোম্পানি স্টার টিভি এটির মালিক ।
বাংলাদেশে ডিশ এন্টেনার ব্যবহার শুরু হয় ১৯৯২ সালে। বর্তমানে আমাদের প্রায় সব শহরেই ডিশ এন্টেনার ব্যবহার রয়েছে। এমনকি তা গ্রামাঞ্চলেও ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। এই সম্প্রচার প্রচলন ক্যাবল (Cable) সংযুক্তির মাধ্যমে সম্ভব হচ্ছে। একটি ডিশ থেকে ক্যাবল সংযোগের মাধ্যমে পঞ্চাশ বা একশটি টিভি গ্রাহক স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলো দেখতে পারে। তারা এককালীন ২০০০ টাকা এবং মাসে কমবেশি ২০০ টাকা ভাড়া দিয়ে ঘরে বসে স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কের অনুষ্ঠানগুলো উপভোগ করে থাকে।
ডিশ এন্টেনার সুফল : ডিশ এন্টেনার প্রভাব ও পরিণতি নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক থাকলেও ডিশ এন্টেনার
যে ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। যেমন——
১. দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ ও প্রসার : বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লবের যুগে তা থেকে পালিয়ে বাঁচার উপায় খোঁজার অর্থ হলো নিজেকে বঞ্চিত করা। এ প্রেক্ষিতে ডিশ এন্টেনার প্রচলন থেকে দূরে থাকার অর্থ নিজের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ ঘটানো। বরং এর প্রচলন আমাদেরকে বিভিন্ন সমাজ, সভ্যতা আর সংস্কৃতির সাথে যেভাবে পরিচিত হওয়ার অপার সুযোগ সৃষ্টি করে, তা যে কোনো দেশের জনগণের দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ ও প্রসারের সুযোগ এনে দেয়। মানুষ তার নিজের সাথে অপরের যোগসূত্র ঘটিয়ে ভাবতে শিখে এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে মানিয়ে নেয়ার উপযোগী করে নিজেকে গড়ে তুলতে পারে।
২. বিশ্বায়নের বৃহত্তর প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ : বিশ্বায়নের প্রভাবে মানুষ বিশ্বের আনাচে-কানাচে যেখানেই থাকুক না কেন তাকে অন্যান্য সমাজ, সভ্যতা ও সংস্কৃতির সংস্পর্শে আসতেই হচ্ছে। আর এটা তার নিজ স্বার্থেই প্রয়োজন। কেননা বিশ্বায়ন মানুষকে তার জ্ঞান-বিজ্ঞান, অভিজ্ঞতা, সম্পদ সবকিছুই অপরের সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে ভোগ বা বিতরণ করতে বাধ্য করছে। এমতাবস্থায় ডিশ এন্টেনার মাধ্যমে স্যাটেলাইটের সম্প্রসারিত প্রক্রিয়ায় অনুপ্রবেশ করলে মানুষ বিশ্বায়নের বৃহত্তর প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে। নতুবা জগতের স্বাভাবিক নিয়মে অন্যরা তাকে শোষণ করবে; কিন্তু নিজের অজ্ঞতার কারণে সে কেবল শোষিতই হবে।
৩. প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সামর্থ্য অর্জন: প্রতিযোগিতামূলক এ বিশ্বব্যবস্থায় মুখ লুকিয়ে রেখে বাঁচার উপায় নেই। বরং প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়ে ঘাত-প্রতিঘাতের মাধ্যমেই সামর্থ্য অর্জন করতে হবে। এমতাবস্থায় নানা অজুহাত দেখিয়ে ডিশ এন্টেনার বিরুদ্ধে না দাঁড়িয়ে বরং স্যাটেলাইটের বৃহত্তর জগতে অনুপ্রবেশ করে অন্যান্য জাতি, গোষ্ঠী ও সংস্কৃতিসমূহের পাশে নিজের অবস্থান গড়ে নিতে চেষ্টা করাটাই বেশি বাস্তবসম্মত ।
৪. আন্তর্জাতিক বাজার ব্যবস্থায় অনুপ্রবেশ: আজকাল স্যাটেলাইট প্রযুক্তি বিনোদনের চেয়ে অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যেই বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই ডিশ এন্টেনার মাধ্যমে স্যাটেলাইটের বৃহত্তর জগতে ব্যাপক অনুপ্রবেশের সুযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেদের পণ্যের পসরা উপস্থিত করা যায় । এতে দেশীয় শিল্পগুলো রপ্তানিমুখী করারও সুযোগ সৃষ্টি হয়।
৫. ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রচার ও প্রসার: প্রতিটি জাতিরই নিজস্ব ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে, যা অন্যান্য জাতির জন্য শিক্ষণীয়, অনুসরণীয় এবং প্রেরণাদায়ী হতে পারে। এগুলো ডিশ এন্টেনার মাধ্যমে নিজের জাতি ও দেশের বাইরে পৌঁছে দিতে পারলে বিশ্ব দরবারে নিজের যেমন মাথা উঁচু হয়, তেমনি অন্যান্য জাতি এবং জনগোষ্ঠীও উপকৃত হয়।
৬. শিক্ষা বিস্তার: শিক্ষা বিস্তারেও ডিশ এন্টেনার বিরাট ভূমিকা থাকতে পারে। এর মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিষয়, শিক্ষাব্যবস্থা, পদ্ধতি ও আচার-আচরণ সম্পর্কে ধারণা লাভ করে নিজের একটা ভুবন তৈরি করতে শেখে। এতে শিক্ষার্থীর জ্ঞানের প্রসারতা ও অভিজ্ঞতার ক্ষেত্র বৃদ্ধি পায়।
৭. বিনোদনের ক্ষেত্র প্রসার: ডিশ এন্টেনার প্রচলনের মাধ্যমে বিনোদনের ক্ষেত্র অনেক দূর
প্রসারিত হয়। দেশীয় সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের বাইরে অনুপ্রবেশের ফলে বিনোদনের সুযোগ বৃদ্ধি পায় এবং দেশীয় সংস্কৃতির সাথে বিনোদনের নতুন নতুন মাধ্যম ও উপকরণ যুক্ত হতে থাকে।

নেতিবাচক দিক: আধুনিক সভ্যতা আর সংস্কৃতির অন্যতম বাহন হিসেবে স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যাপকতর হলেও বিশ্বে, বিশেষত উন্নয়নশীল বিশ্বে এর নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে নানা কথা হচ্ছে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে এটা সভ্যতা, মানবিকতা ও সমৃদ্ধির জন্য কতটা সহায়কর?
১. দেশীয় সংস্কৃতির ক্ষয়সাধন: ডিশ এন্টেনা বিভিন্ন জাতি ও সম্প্রদায়ের সংস্কৃতিকে বিদেশী সংস্কৃতির সংস্পর্শে নিয়ে আসার ফলে অনেক ক্ষেত্রে দেশীয় সংস্কৃতি, ভাষা ও সাহিত্যের বিলুপ্তির মতো করুণ পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে। বিশেষ করে পশ্চিমা চাকচিক্যপূর্ণ প্রাণহীন সংস্কৃতি দেশীয় সংস্কৃতি ধ্বংসের জন্য মূলত দায়ী। প্রযুক্তির দখলদারিত্বের মাধ্যমে পশ্চিমারা সাংস্কৃতিক আধিপত্যের যে নীতি গ্রহণ করেছে তাতে উন্নয়নশীল দেশসমূহ তাদের দেশীয় সংস্কৃতিকে আর টিকিয়ে রাখতে পারছে না।
২. নৈতিক অধোগতি: প্রতিটি সংস্কৃতিই একটা বোধ, বিচার আর নৈতিক মানদণ্ডের ওপর প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু ডিশ এন্টেনার ব্যাপকতায় বিদেশী সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের কবলে পড়ে দেশীয় সংস্কৃতির এ মৌলিক বৈশিষ্ট্য টিকে থাকছে না। বিশেষত পশ্চিমা খোলামেলা সংস্কৃতি অনেকটা সমাজ ও সামাজিক মানুষের জীবন বোধের সাথে বেমানান। তাই দেখা যায়, এসব সমাজের জনগণ তথা যুবশ্রেণীর মাঝে নৈতিক অবনতি চরম রূপ ধারণ করে এবং তা সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।
৩. পশ্চিমের ওপর নির্ভরশীলতা: সত্তর ও আশির দশকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর উন্নত দেশের ওপর নির্ভরশীলতার বিষয়ে যে তোলপাড় শুরু হয়েছিল তার একটি অন্যতম বিবেচ্য বিষয় ছিল সাংস্কৃতিক ও প্রযুক্তিগত নির্ভরশীলতা। ডিশ এন্টেনা তথা স্যাটেলাইটের ব্যাপক প্রচলনই এ নির্ভরশীলতাকে তীব্রতর করার অন্যতম মাধ্যম। কেননা এর মাধ্যমে একদিকে যেমন সাংস্কৃতিক স্বকীয়তা হারিয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলো পশ্চিমের ওপর নির্ভরশীল হচ্ছে, তেমনি স্যাটেলাইট প্রযুক্তি আমদানির জন্যও পশ্চিমের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে।
৪. নব্য ঔপনিবেশিকতার ধারক: স্যাটেলাইট প্রযুক্তিকে নব্য ঔপনিবেশিকতার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা যায়। কেননা উপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের যে সকল নতুন কৌশল উদ্ভাবন করে তার মধ্যে সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ অন্যতম। এ সময় তারা অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টির মাধ্যমে পুরনো কলোনিগুলোতে শাসন করার যে নীতি গ্রহণ করে তা দূর থেকে সম্ভব করছে এ স্যাটেলাইট প্রযুক্তি। তাই পশ্চিমারা এখন ভূমি দখলের চেয়ে আকাশ দখলের ব্যাপারেই বেশি আগ্রহী।
৫. সংস্কৃতির পণ্যায়ন: সংস্কৃতি মানুষের একান্তই নিজস্ব এবং প্রতিটি মানুষই তার নিজের সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাঝে নিজের পরিচয় ও অস্তিত্বের সন্ধান পায়। কিন্তু ডিশ এন্টেনার ব্যাপক ব্যবহারের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক আমদানি-রপ্তানির বাণিজ্য এতই প্রসারিত হয়েছে যে, সংস্কৃতি এখন আর মানসিক শান্তি ও আত্মিক প্রশান্তির খোরাক নয় বরং সংস্কৃতি এখন এক ধরনের পণ্যে পরিণত হয়েছে। সংস্কৃতির এ পণ্যায়ন বিশ্ব সভ্যতার আগামী দিনগুলোর জন্য একটি অশনি সংকেত।
৬. নগ্নতার বিশ্বায়ন: মানুষ ইতিহাসের অনেকগুলো ধাপ পেরিয়ে আজকের এ সভ্যতার পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। আদিম যুগে মানুষ যখন পোশাক আবিষ্কার করেনি তখন তারা উলঙ্গ ছিল। কিন্তু সভ্যতার চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেও উলঙ্গতাকে সভ্যতা বলে চালিয়ে দেয়ার যে অপপ্রয়াস তার অন্যতম আশ্রয় হচ্ছে স্যাটেলাইট। পশ্চিমাদের এ পশ্চাদপদতা এ মাধ্যমটির আশ্রয়ে আজ সভ্যতা বলে বিশ্বব্যাপী প্রচারিত হচ্ছে। নগ্নতার বিশ্বায়নের জন্য পশ্চিমারা আজ স্যাটেলাইটকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে।
পুঁজিবাদের মুখপাত্র: স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বিবিসি, সিএনএন, এবিসি, স্টার টিভিসহ দেশী- বিদেশী চ্যানেলগুলো মূলত পুঁজিবাদের মুখপাত্র হিসেবেই ভূমিকা পালন করছে। এরা প্রতিনিয়ত পণ্যের বিজ্ঞাপন, পুঁজিবাদী শক্তিগুলোর প্রশংসা আর বাণী প্রচার করে পুঁজিবাদকে আরো স্ফীত এবং শোষণকে স্থায়ী করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
উপসংহার: ওপরের আলোচনায় ডিশ এন্টেনার ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় দিকই আলোচনা করা হলেও বাস্তবতা হলো আধুনিক সভ্যতার অন্যতম আবিষ্কার এ মাধ্যমটিকে উপেক্ষা করার কোনো উপায় নেই । কেননা বিশ্বায়ন আর প্রযুক্তি বিপ্লবের এ বিশ্বব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার অর্থ হলো নিজেকে সভ্যতা থেকে আলাদা করে রাখা । এটা কোনো জাতির জন্যই সুখকর নয় । এখন প্রশ্ন জাগে, তাহলে কি নিজস্ব সমাজ, সভ্যতা আর সংস্কৃতিকে উপেক্ষা করে কেবলই বিশ্বব্যবস্থার সাথে তাল মিলাতে গিয়ে স্যাটেলাইটের জগতে অনুপ্রবেশ করতে হবে? যদি তাই হয় তাহলে এটাও জাতীয় অস্তিত্বের জন্য একটি মারাত্মক হুমকি।
কেননা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর অর্থনৈতিক দারিদ্র্য আর রাজনৈতিক দেউলিয়াপনার সুযোগ পশ্চিমা দেশগুলো অনেক আগেই গ্রহণ করেছে। এবার তাদের সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পালা। সুতরাং তাদের উপেক্ষা করা অসম্ভব হলেও নিজের অস্তিত্বের খাতিরে সাংস্কৃতিক স্বকীয়তা বজায় রাখার ব্যাপারে প্রতিটি জাতি-গোষ্ঠীকেই সতর্ক থাকতে হবে। সেজন্য ডিশ এন্টেনা কিংবা স্যাটেলাইটের ওপর দেশীয় নিয়ন্ত্রণ আবশ্যক। আর প্রযুক্তিকে দোষ দেয়ার চেয়ে প্রযুক্তি উত্তম ও পরিশীলিত ব্যবহার নিশ্চিত করাই আধুনিক সভ্যতায় অংশগ্রহণের পূর্বশর্ত।
আরও দেখুন: