জাতীয় জীবনে একুশে ফেব্রুয়ারির গুরুত্ব | ভাষা আন্দোলন-স্বাধিকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ | বাংলা রচনা সম্ভার , ভূমিকা : একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির জাতীয় জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এর সাথে বাঙালির গৌরব ও বেদনার ইতিহাস জড়িত রয়েছে। নিজের মাতৃভাষার যথার্থ মর্যাদা আদায়ের জন্য কয়েকটি তরুণপ্রাণকে বিসর্জন দিতে হয়েছিল বলে এ দিনটি বেদনার রক্তে রঙিন। আবার ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনের পথে বাঙালি তার স্বাধিকার অর্জনের সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছে বলে এ দিনটি জাতীয় জীবনে একান্ত গৌরবেরও।
জাতীয় জীবনে একুশে ফেব্রুয়ারির গুরুত্ব | ভাষা আন্দোলন-স্বাধিকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ | বাংলা রচনা সম্ভার
জাতীয় জীবনে একুশে ফেব্রুয়ারির গুরুত্ব
প্রকৃতপক্ষে একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার ন্যায্য অধিকার আদায়ের বলিষ্ঠ সংগ্রামের ইতিহাস। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসানে পাকিস্তানের সৃষ্টি হলেও বাঙালিদের অভিপ্রেত মুক্তি যে আসেনি তার প্রমাণ ভাষা আন্দোলন। বাঙালিদের ওপর যে শোষণ চলছিল তা মাতৃভাষা বাংলাকেও অব্যাহতি দান করেনি ।
ভাষা আন্দোলনের সূচনা পর্ব: দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর পরই ব্রিটিশ সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী স্বায়ত্তশাসন তথা স্বাধীনতার প্রস্তাব নিয়ে ক্যাবিনেট মিশন আসে ভারতে। পাকিস্তানের জন্ম সম্ভাবনার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠালগ্নের অব্যবহিত পূর্বে; বিশেষ করে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভাইস চ্যান্সেলর ড. জিয়াউদ্দিন উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করেন। পূর্ববঙ্গ থেকে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার দাবি উত্থাপন করেন (১১ শ্রাবণ, ১৩৫৪ বঙ্গাব্দ) । এভাবেই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার অব্যবহিত পূর্বেই রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে বিতর্কের সূচনা হয়েছিল।
বাংলা ভাষার প্রতি অবহেলা : দেশের বৃহত্তর জনসংখ্যার মাতৃভাষা বাংলা হলেও তার অমর্যাদা করে উর্দুকেই দেশের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার অশুভ চক্রান্ত চলে পাকিস্তানের সৃষ্টিল্যা থেকে। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন কর্ণধার মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় এক জনসভায় একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুর কথা ঘোষণা করেন। কিন্তু বাংলার জাগ্রত জনতা এ স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি। প্রতিবাদে তখন বাঙালির কণ্ঠ সোচ্চার হয়ে ওঠে। পরবর্তীকালে নাজিমুদ্দিনের আমলে পুনরায় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুকে প্রতিষ্ঠা করার জোরালো প্রচেষ্টা শুরু হয়য়।
বাংলা ভাষার আন্দোলন: ১৯৪৮ সালের পর থেকে বাংলা ভাষার ন্যায্য দাবি প্রতিষ্ঠার যে ক্ষীণ আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল তা শাসকচক্রের অশুভ তৎপরতায় ক্রমান্বয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ফলে এ আন্দোলন গোটা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রদের মধ্যে এ আন্দোলনের সূত্রপাত হলে সমগ্র বাংলাদেশের জনগণ এর সমর্থনে দাঁড়ায়। ভাষা আন্দোলনের ওপর সরকারের যতই দমননীতি চলতে থাকে, আন্দোলন ততই প্রকট হয়ে ওঠে।
একুশে ফেব্রুয়ারি : ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশনকে সামনে রেখে সারা দেশে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দাবিতে ধর্মঘট আহ্বান করা হয়। স্বৈরাচারী সরকার ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে এবং সভা-সমিতি ও মিছিল নিষিদ্ধ করে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এবং সেখানে আন্দোলনকারী ছাত্ররা সমবেত হয়।
সরকারের অন্যায়- অত্যাচারের প্রতিবাদে ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে প্রতিবাদ মিছিল করতে উদ্যত হয়। এ উদ্যোগ প্রতিহত করার জন্য পুলিশ মেডিক্যাল কলেজের সম্মুখে ছাত্রদের ওপর বেপরোয়াভাবে গুলিবর্ষণ করে। এর ফলে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ অনেক ছাত্র নিহত হয়। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রচিত হয় গান, কবিতা ও নাটক । ফলে বাঙালির নবজাগরণ হয় আরও বেগবান ও কার্যকরী ।
রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি: এ জঘন্য হত্যাকাণ্ডের খবর সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং সমগ্র বাংলাদেশ প্রচণ্ডভাবে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। আতঙ্কিত সরকার অবশ্য পরিণামে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাহ্যিক স্বীকৃতি দেয় ১৯৫৬ সালের তৈরি পাকিস্তানের সংবিধানে। কিন্তু তা কাজকর্মে প্রমাণিত হয়নি।
শহীদ দিবস: ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে যে বর্বর হত্যাকাণ্ড সাধিত হয়েছিল তা স্মরণ করার জন্য প্রতিবছর ভাবগম্ভীর পরিবেশে শহীদ দিবস উদ্যাপন করা হয়। কিন্তু একুশে ফেব্রুয়ারির তাৎপর্য কেবল শহীদ দিবস পালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, তা বাঙালির জীবনের সর্বত্র প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়।
পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ : ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির ছাত্রজনতার হত্যাকাণ্ড সুদূরপ্রসারী পরিণামদর্শী ঘটনার জন্ম দেয়। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে তখন থেকে নিজের ন্যায্য অধিকার সম্পর্কে সচেতনতার সৃষ্টি হয় এবং ক্রমান্বয়ে অধিকার আদায়ের জন্য তৎপর হয়। ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে স্বার্থান্বেষী মহলের পতন, ‘৬৯ সালের স্বাধিকার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘটনাবলী বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনেরই ফলশ্রুতি। ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই বাঙালির পরবর্তী সকল আন্দোলন দানা বেঁধে উঠেছে।
আজকের স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের যে সগৌরব অভ্যুত্থান তার পেছনে ভাষা আন্দোলনের চেতনা কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে। মাতৃভাষার মর্যাদা আদায়ের এই মহান আত্মত্যাগ থেকে অপরাপর ক্ষেত্রের অধিকার সম্পর্কে জাতি সচেতন হয়ে ওঠে। পশ্চিমাদের অন্যায় আচরণ ও নিপীড়ণ সম্পর্কে মানুষ সচেতন হয়ে ওঠে। কি করে অধিকার আদায় করা যায় সে পথের সন্ধান দেয় বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন। এ দেশের মানুষের পরবর্তী আন্দোলনগুলো সফল করার পথ দেখিয়েছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন। বলা যেতে পারে ভাষা আন্দোলনের রক্তদানই সুদৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করেছিল পরবর্তী আন্দোলনগুলোর ।
একুশের প্রভাব: বাংলাদেশের মানুষ একুশে ফেব্রুয়ারির আত্মত্যাগ থেকে যে চেতনা লাভ করেছে তা জাতির সকল আন্দোলনের প্রেরণা হিসেবে কাজ করছে। সমগ্র জাতি একতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে একুশের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। ঐক্যবদ্ধ জাতি দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েছে—তার পেছনে একুশে ফেব্রুয়ারির আত্মত্যাগ কাজ করছে। অত্যাচার আর শোষণের কাল হাত গুঁড়িয়ে দেয়ার শক্তি ও প্রেরণা এসেছে এই একুশের চেতনা থেকে। বাংলাদেশের জনগণের স্বজাত্যবোধের স্ফুরণের উৎস একুশে ফেব্রুয়ারি। একুশে ফেব্রুয়ারি দেশ ও জাতির নতুন ইতিহাসের জন্মদাতা। অধিকার আদায়ের জন্য আত্মসচেতন হওয়ার প্রেরণা দিয়েছে মহান একুশে। একুশে ফেব্রুয়ারিতে জাতি নতুন করে জেগে উঠেছিল। সে জাগ্রত চেতনা ছড়িয়ে গেছে বাংলাদেশের মানুষের পরবর্তী কর্মকাণ্ডে।

একুশের রক্ত থেকেই পরবর্তীকালে দেশের মুক্তির রক্তিম পতাকা উড়েছে। লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্তে রাঙা হয়ে বাংলাদেশের আকাশে যে লাল সূর্যের আবির্ভাব হলো তার চেতনায় আছে একুশের দান করা রক্তের রং। দেশে বিভিন্ন সময়ে যে সব আন্দোলন হয়েছে তাতে দুর্জয় সাহস, দুর্বার গতি আর অটুট মনোবল সৃষ্টি করেছে মহান একুশে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে এ দেশের সর্বস্তরের মানুষ যে দুর্বার সাহসের পরিচয় দিয়েছিল এবং অগণিত জীবন উৎসর্গ করেছিল, তার প্রেরণা এসেছিল একুশের চেতনা থেকে। তাই দেখা যায় একুশের চেতনা জাতীয় জীবনের সর্বত্র প্রভাব বিস্তার করে রয়েছে।
বর্তমানের একুশ : প্রতিবছর মহান একুশে ফেব্রুয়ারি নতুন চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে জাতীয় জীবনে দেখা দেয়। অত্যন্ত ভাকারীর পরিবেশে একুশে ফেব্রুয়ারি তারিখে শহীদ দিবস উদযাপিত হয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদর্শে সারা দেশ জুড়ে অসংখ্য শহীদ মিনার তৈরি হয়েছে। একুশের ভোরে সেই কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি শোক বিজ্ঞান কণ্ঠে অনুরণিত হয়ে যায়; বসে আলোচনা সভা; আয়োজিত হয় সঙ্গীতানুষ্ঠান। সবকিছুর লক্ষ্য বায়নের ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিচারণ, শহীদ দিবসের চেতনা অনুধাবন, নতুন করে উদ্দীপ্ত হওয়ার প্রেরণা লাভ। প্রতিবছর একুশে ঘুরে ঘুরে আসে বাংলাদেশের মানুষকে নবচেতনায় আলোড়িত করার জন্য ।
একুশের চেতনা : একুশ মানে বিশ্বাস; একুশ মানে চেতনা। মহান একুশে ফেব্রুয়ারি প্রতিবছর আমাদের কাছে বয়ে আনে এক অবিনাশী চেতনা। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন বাঙালিকে দিয়েছে আপন সত্তা আবিষ্কারের মহিমা। একুশে ফেব্রুয়ারির মাধ্যমেই আমরা অর্জন করেছি স্বাধিকার অর্জনের প্রেরণা । কিন্তু আইয়ুবী কালো দশকে শাসকগোষ্ঠী নতুন কৌশল ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এ চেতনাকে পঙ্গু ও ধ্বংস করে দেয়ার পাঁয়তারা করতে থাকে। যার কারণে বারবার শহীদ মিনার গুঁড়িয়ে দিয়েছে সাম্প্রদায়িক শাসকগোষ্ঠী।
কিন্তু বাঙালির বুকের ভিতরে গড়ে ওঠা শহীদ মিনারে কেউ ফাটল ধরাতে পারেনি। প্রতিটি আন্দোলনে শহীদদের আত্মাহুতি হয়েছে তাদের আদর্শের উৎস, শুভযাত্রার মাইলফলক । কালক্রমে এ আন্দোলন রূপ নিয়েছে স্বাধিকার আন্দোলনে। যার সর্বাপেক্ষা রূপায়ণ ঘটেছে সাহিত্যের মাধ্যমে। প্রগতিশীল লেখকগোষ্ঠী এ ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই সাহিত্যের বিস্তৃতি ঘটিয়েছেন। বস্তুত সাহিত্য-সংস্কৃতির মাধ্যমে আমাদের জাতীয় চেতনা বিকাশে একুশের দান অপরিহার্য ছিল।
সাহিত্যক্ষেত্রে একুশের অবদান : একুশের চেতনা আমাদের জাতীয় চেতনা । সাহিত্যক্ষেত্রে এ চেতনা প্রকাশ পেয়েছে সর্বাধিক। বাঙালির সাহিত্য-সংস্কৃতি-কৃষ্টির সাথে এ চেতনা মিশে আছে স্বাভাবিকভাবে। কথাসাহিত্য, নাটক, ছোটগল্প, কবিতা, সঙ্গীত অর্থাৎ সাহিত্যের প্রতিটি ধারায় এ চেতনাকে তুলে ধরেছেন এ দেশের সচেতন লেখক সমাজ। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার জন্য যে তরুণেরা রক্তের অঞ্জলি দিয়েছিলেন, তা পরবর্তীকালে বাংলাদেশের শিল্প- সাহিত্যের ধমনীতে নিত্য সক্রিয় রয়েছে।
মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, সিকান্দার আবু জাফর, মুনীর চৌধুরী, শামসুর রাহমান, আবুল ফজল প্রমুখ কবি-সাহিত্যিক ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশ- কাল-সমাজের সমকালীন কালপুরুষের দিকে যাত্রা করেছেন। শামসুর রাহমানের ‘স্বাধীনতা তুমি’, মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের ‘শহীদ স্মরণে’, গোলাম মোস্তফার ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ প্রভৃতি কবিতায় ভাষা আন্দোলনের চেতনা প্রস্ফুটিত হয়েছে। সংগ্রাম চলবেই’ কবিতায় সিকান্দার আবু জাফর লিখেছেন, “
‘জনতার সংগ্রাম চলবেই;
আমাদের সংগ্রাম চলবেই।’
কবির এ সংগ্রাম পাকিস্তানি শোষকদের বিরুদ্ধে অত্যাচারের প্রতিবাन। “স্বাধীনতা তুমি কবিতার শামসুর রাহমান লিখেছেন,
“স্বাধীনতা তুমি
শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা।’
মুনীর চৌধুরীর প্রতিবাদী নাটিকা ‘কবর’। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন এ নাটিকাটির পটভূমি। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনকে সরকার কমিউনিস্ট ও ভারতীয় এজেন্টদের কাজ বলে প্রচার করে। ‘কবর’ নাটিকায় নেতার উক্তি তৎকালীন সরকারি ভাষ্যেরই প্রতিধ্বনি,
*নেতা! জীবিত থাকতে তুমি দেশের আইন মানতে চাও
. কম্যুনিজমের প্রেতাত্মা তোমাকে ভর করেছে।’
আবুল ফজলের বিখ্যাত প্রবন্ধ ‘মাতৃভাষা ও বাঙালি মুসলমান’ তৎকালীন বাঙালির মাতৃভাষা নিয়ে বে সমস্যা ছিল তা নিয়েই লেখা। যেমন—’পৃথিবীতে অনেক কিছু অদ্ভুত দেখিতে ও শুনিতে পাওয়া যায়। বাঙালি মুসলমানদের মাতৃভাষা কী? উর্দু? না বাংলা? আমার মতে ইহাই সর্বাপেক্ষা অদ্ভুত কথা। আমগাছে আম ফলিবে না কাঁঠাল এমন অদ্ভুত প্রশ্ন অন্য কোনো দেশের কেহ করিয়াছে কিনা জানি না।’ (তরুণ পত্র, শ্রাবণ, ১৩৩২)
বস্তুত ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এ দেশের সাহিত্যিকগণ রচনা করেছেন অজস্র সাহিত্য। ভাষা আন্দোলনের চেতনা তাদের উজ্জীবিত করেছে মুক্তির সংগ্রামে।
উপসংহার : একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনাই বাঙালিকে স্বাধিকার আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করে এবং এর মাধ্যমে বাঙালি আত্মসচেতন হয়ে নিজেদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়। একুশের প্রেরণ থেকেই ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান ঘটে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বাঙালির সংগ্রামী চেতনার কেন্দ্রবিমূতে পরিণত হয়। মাতৃভাষার মর্যাদা আদায়ের জন্য সংগ্রাম করতে গিয়ে বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হয় এবং শোষকের গ্রাস থেকে আত্মরক্ষা করতে সচেষ্ট হয়। ফলে, বাঙালি জাতির মধ্যে জাতীয়তাবোধের বিকাশ ঘটে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামে এ জাতীয়তাবোধ বিশেষভাবে কার্যকর ছিল। তাই বলা চলে, একুশে ফেব্রুয়ারির সংগ্রামের পথ ধরেই স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা সম্ভবপর হয়েছে। সর্বোপরি ২০০০ সালে ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ ঘোষণা করে বিশ্বের দরবারে বাংলা ভাষার মানকে সমুজ্জ্বল করে।
আরও দেখুন: