Site icon Bangla Gurukul [ বাংলা গুরুকুল ] GOLN

চিনতে পারোনি? কবিতা – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের “চিনতে পারোনি?” কবিতাটি আধুনিক বাংলা কবিতার এক অনন্য অনুভূতিমণ্ডিত সৃষ্টি। কবিতাটি মূলত এক গভীর মানবিক মুহূর্তকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে—যেখানে অতীতের কোনো চেনা সম্পর্ক, অভিজ্ঞতা বা স্মৃতি হঠাৎ করেই সামনে এসে দাঁড়ায়, অথচ তা অচেনা হয়ে ওঠে।

এই কবিতার মধ্যে কাব্যিক ‘আমি’ একজন ব্যক্তিকে বা একটি সময়কে উদ্দেশ করে এক ধরনের প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন—”চিনতে পারোনি?”। এই প্রশ্নের মধ্যে নিহিত থাকে অতীতের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা, আর বর্তমানের দূরত্ব ও বিস্মৃতি। কবিতার ভেতরে বারবার ফিরে আসে সেই বিচ্ছিন্নতা, পরিচয়ের ধোঁয়াশা, এবং হারানো আত্মীয়তার হাহাকার।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এই কবিতার মাধ্যমে অত্যন্ত সংবেদনশীল ও ব্যক্তিগত এক অনুভবকে ভাষায় রূপ দেন, যা পাঠকের মনে তীব্র বেদনার রেখা টেনে দেয়। তাঁর সরল অথচ সুনিপুণ ভাষা, অন্তর্মুখী আবেগ এবং আধুনিক মননের ছোঁয়া কবিতাটিকে করে তোলে পাঠযোগ্য এবং হৃদয়গ্রাহী।

“চিনতে পারোনি?” কবিতাটি শুধুই একটি ব্যক্তিগত প্রশ্ন নয়, বরং তা হয়ে ওঠে এক সার্বজনীন আর্তি—আমরা কি সত্যিই চিনি, না কালের স্রোতে হারিয়ে ফেলি একে অপরকে?

চিনতে পারোনি?

যে-কোনো রাস্তায় যে-কোনো লোককে ডেকে বলো,
তুমি আমার বাল্যকালের খেলার সঙ্গী,
মনে পড়ে না?
কেন তোমার ব্যস্ত ভঙ্গি?
কেন আমায় এড়িয়ে যাবার চঞ্চলতা!
আমার অনেক কথা ছিল, তোমার জামার বোতাম ঘিরে
অনেক কথা
এই মুখ, এই ভূরুর পাশে চোরা চাহনি,
চিনতে পারেনি?
যে-কোনো রাস্তায় যে-কোনো লোককে ডেকে বলো,
আমি তোমার বল্যকালের খেলার সঙ্গী
মনে পড়ে না?

আমরা ছিলাম গাছের ছায়া, ঝড়ের হাওয়ায় ঝড়ের হাওয়া
আমরা ছিলাম দুপুরে রুক্ষ
ছুটি শেষের সমান দুঃখ-
এই দ্যাখো সেই গ্রীবার ক্ষত, এই যে দ্যাখো চেনা আঙ্গুল
এখনো ভুল?
মনে হয় না তোমার সেই নিরুদ্দেশ সখার মতো?
কেন তোমার পাংশু চিবুক, কেন তোমার প্রতিরোধের
কঠিন ভঙ্গি
চিনতি পারোনি?

যে-কোনো রাস্তায় যে-কোনো লোককে ডেকে বলো,
শত্রু নই তো, আমরা সেই ছেলেবেলার খেলার সঙ্গী
মনে পড়ে না?
আমরা ছিলাম নদীর বাঁকে ঘূর্ণিপাকে সন্ধেবেলা
নিষিদ্ধ দেশ, ভাঙা মন্দির, দু’চোখে ধোঁয়া
দেবী মানবীর প্রথম দ্বিধা, প্রথম ছোঁয়া, আমৃত্যু পণ
গোপন গ্রনে’ এক শিহরণ, কৈশোরময় তুমুল খেলা…
লুকোচুরির খেলার শেষে কারুকে খুঁজে পাইনি
দ্যাখো সে মুখ, চোরা চাহনি
একই আয়না
চিনতে পারো না?

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

আরও পড়ুন:

Exit mobile version