ক্রিয়া বিভক্তির রূপভেদ – আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “ভাষা ও শিক্ষা” বিভাগের “ক্রিয়া বিভক্তি ও ধাতু বিভক্তি” বিষয়ের একটি পাঠ। ১| সাধু ও চলিত রীতিভেদে ক্রিয়াবিভক্তির পরিবর্তন হয়।
ক্রিয়া বিভক্তির রূপভেদ | ক্রিয়ার বিভক্তি ও প্রয়োগ | ক্রিয়া বিভক্তি ও ধাতু বিভক্তি | ভাষা ও শিক্ষা
যেমন—
২| বিভক্তিসমূহ ক্রিয়ার কাল, পুরুষ ও বাচ্যভেদে বিভিন্ন রূপ পরিগ্রহ করে। যেমন- আমি যাই— সাধারণ বর্তমান কালে উত্তম পুরুষের ক্রিয়াপদ ‘যাই’। আপনারা যাচ্ছেন— সাধারণ ভবিষ্যৎ কালে (সম্ভ্রমাত্মক) মধ্যম পুরুষের ক্রিয়াপদ ‘যাচ্ছেন’।
৩| প্রযোজক ক্রিয়াতেও ক্রিয়াবিভক্তির সাধু ও চলিত রীতিভেদে পরিবর্তন সাধন হয়। যেমন-
ক্রিয়ার বিভক্তি ও প্রয়োগ
ব্যাকরণ শাস্ত্রে, ক্রিয়ামূল বলতে ক্রিয়াপদের অবিভাজ্য বা মূল অংশের অন্তর্নিহিত ভাবটির দ্যোতনা [টীকা ১] করে[১] অথবা বিশ্লেষণ করা যায় না এ রকম যে ক্ষুদ্রতম ধ্বনিসমষ্টি ক্রিয়ার বস্তু বা গুণ বা অবস্থানকে বুঝায়। ক্রিয়ামূলকে ধাতুও বলে। ক্রিয়ামূল বা ধাতু নির্দেশ করতে মূল শব্দের পূর্বে “” করণী চিহ্ন ব্যবহার করা হয়।মৌলিক বা সিদ্ধ ধাতু যেসকল ধাতুকে ভাঙা বা বিশ্লেষণ করা যায় না তাদের মৌলিক বা সিদ্ধ ধাতু বলে। উদাহরণ: কর্, চল, দেখ্, খেল,পড়, খা।
উৎস বিবেচনায় মৌলিক ধাতুগুলোকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়: (ক) বাংলা ধাতু (খ) সংস্কৃত ধাতু এবং (গ) বিদেশি ধাতু সাধিত ধাতু , কোনো মৌলিক ধাতু কিংবা নাম শব্দের সাথে আ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে যে ধাতু গঠিত হয় তাকে সাধিত ধাতু বলে। উদাহরণ: কর + আ = করা, দেখ্ + আ = দেখা, পড়্+আ= পড়া।
সংযোগমূলক বা যৌগিক ধাতু বিশেষ্য , বিশেষণ ও ধ্বনাত্বক অব্যয়ের সাথে কর্, দে, হ, পা ইত্যাদি মৌলিক ধাতু যুক্ত হয়ে যে ধাতু গঠন করে তাকে সংযোগমূলক বা যৌগিক ধাতু বলে। উদাহরণ: পূজা কর্, রাজি হ, কষ্ট পা, শাস্তি দে।
অন্যান্য ধাতুসমূহ নাম ধাতু নাম শব্দ অথ্যাৎ বিশেষ্য, বিশেষণ, অব্যয় প্রভৃতি শব্দ কখনও কখনও প্রত্যয়যোগে, কখনওবা প্রত্যয় যুক্ত না হয়ে ক্রিয়ারূপে ব্যবহৃত হয়, এ ধরনের ক্রিয়ার মূলকে নাম ধাতু বলে। উদাহরণ: জুতা > জুতানো, বেত > বেতানো, হাত > হাতানো, বাঁকা > বাঁকানো। ণিজন্ত বা প্রযোজক ধাতু মৌলিক ধাতুর সাথে ‘আ’ বা ‘ওয়া’ যুক্ত হয়ে ণিজন্ত বা প্রযোজক ধাতু গঠিত হয়। উদাহরণ: কর + আ =করা। যা কিছু হারায় গিন্নী। বলেন, “কেষ্টা বেটাই চোর”, এখানে হারায় হলো প্রযোজক ধাতু। এটা এক ধরনের সাধিত ধাতু।
ধ্বন্যাত্মক ধাতু ধাতুরূপে ব্যবহৃত অনুকার (অনুকার = সাদৃশ্যকরণ, অনুকরণ) ধ্বনিকে ধ্বন্যাত্মক ধাতু বলে। উদাহরণ: ফোঁসা, হাঁপা, মচ্মচা, টল্টলা। নঞ্র্থক ধাতু “অস্তি” বাচক হ ধাতুর পূর্বে নঞ্র্থক ‘ন’ শব্দের যোগে গঠিত নহ্ ধাতুকে নঞ্র্থক ধাতু বলে। উদাহরণ: নহি, নই, নহ, নও, নহে, নয়।
ধাতুর মূল শব্দ বা ধাতুর মূলকে প্রকৃতি বলে। সাধারণ অর্থে শব্দের মূল বলতে মৌলিক শব্দকে এবং ধাতুর মূল বলতে সিদ্ধ বা মৌলিক ধাতুকেই বুঝায়। উদাহরণ: “দোকান” শব্দের মূল “দোকান”, “ঢাকা” শব্দের মূল “ঢাকা” এবং লিখ ধাতুর মূল “লিখ্”, কর ধাতুর মূল “কর্”। প্রকৃতি দুই প্রকার। যথা-
ক্রিয়া-প্রকৃতি: ধাতু-প্রকৃতি বা ক্রিয়া-প্রকৃতি হলো ধাতুর মূল। ধাতু-প্রকৃতি বা ক্রিয়া-প্রকৃতি প্রত্যয় বা বিভক্তিযুক্ত না হয়ে শব্দরূপে ব্যবহৃত হয় না। যে সমস্ত ধাতু শব্দরূপে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়, সেগুলোতে একটি “শূন্য প্রত্যয় (০)” যুক্ত আছে বলে ধরে নেওয়া হয় । উদাহরণ: লিখ্, কর্ ।
আরও দেখুন: