ক্রিয়াবিশেষণ | যোজক শব্দ | ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি | ভাষা ও শিক্ষা , ক্রিয়াবিশেষণ : ক্রিয়া-বিশেষণ ক্রিয়া সংঘটনের ভাব, কাল বা রূপ নির্দেশ করে। ক্রিয়াবিশেষণ বাক্যের ক্রিয়াকে বিশেষিত করে। এটি ক্রিয়ার গুণ, প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য ও অর্থ প্রকাশক শব্দ হিসেবে কাজ করে এবং ক্রিয়া সময়, স্থান, প্রকার, উৎস, তীব্রতা, উপকরণ ইত্যাদি প্রকৃতিগত অবস্থার অর্থগত ধারণা দেয়। যেমন: সে দ্রুত দৌড়াতে পারে। ধীরে ধীরে বায়ু বয়।
ক্রিয়াবিশেষণ | যোজক শব্দ | ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি | ভাষা ও শিক্ষা
ক্রিয়াবিশেষণের পদসংগঠন
ক্রিয়াবিশেষণের পদবিন্যাস দুরকম হতে পারে।
একপদী ক্রিয়াবিশেষণ: আস্তে, ধীরে, জোরে, সরবে, রেগে, সহজে, অনায়াসে, তাড়াতাড়ি, যথাযথভাবে, শক্তভাবে, দৃঢ়ভাবে, নির্বিঘ্নে, শান্তভাবে ইত্যাদি।
বহুপদী ক্রিয়াবিশেষণ পদবন্ধ : আস্তে আস্তে ধীরে ধীরে, জোরে জোরে, রেগে রেগে, রেগেমেগে চেপেচুপে, ঢেকেঢুকে ইত্যাদি।
ক্রিয়াবিশেষণের অর্থ ও অভয়গত শ্রেণিবিভাগ
১. ভাবজ্ঞাপক ক্রিয়াবিশেষণ : কোনো ক্রিয়া কীভাবে বা কেমনভাবে সংঘটিত হল তা বোঝায়। এগুলোর বেশির ভাগ গঠিত হয় ‘তাবে’ বা ‘রূপে’ শব্দ যোগে। যেমন : সে দ্রুত দৌড়াতে পারে। কাজটা ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
২. সময় বা কালজ্ঞাপক ক্রিয়াবিশেষণ : এ জাতীয় ক্রিয়াবিশেষণ একশাব্দিক হলে প্রায়শই বিভক্তিহীন বা শূন্যবিভক্তিযুক্ত হয় অথবা / -এ/-য়/-তে যুক্ত হয়। যেমন- আজ যখন সে আসবে তখন তাকে থাকতে বলো। সেদিন তোমাকে পাই নি। অনেক ক্ষণ ধরে তার জন্যে বসে আছি।
৩. স্থানজ্ঞাপক ক্রিয়াবিশেষণ : এ জাতীয় ক্রিয়াবিশেষণ একশাব্দিক হলে এগুলোর শেষে প্রায়শই স্থানবাচক অধিকরণ-বিভক্তি /-এ/-/-য়/তে যুক্ত হয়। যেমন : আমার সামনে দাঁড়াও। এখানে বস। বড় আপা চট্টগ্রামে থাকেন।
৪. সংযোজক ক্রিয়াবিশেষণ : এ জাতীয় ক্রিয়াবিশেষণ দুটি বাক্যকে সংযোগ করে। জটিল বাক্যেও (যদি তাহলে, যিনি • তিনি) ক্রিয়াবিশেষণের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। যেমন কাজে তার মন নেই, তাছাড়া সে কাজ পারেও না।
৫. না-বাচক ক্রিয়াবিশেষণ : তিনি গতকাল ঢাকায় যান নি। আমটা মিষ্টি নয়।
যোজক শব্দ
যোজক (connectives) একটি বাক্যের সঙ্গে অন্য একটি বাক্যের অথবা বাক্যস্থিত একটি পদের সঙ্গে অন্য একটি পদের সংযোজন, বিয়োজন বা সংকোচন ঘটায়। প্রচলিত ব্যাকরণে যাকে সমুচ্চয়ী অব্যয় বলা হয়েছে। সংযোজন, বিয়োজন বা সংকোচন অর্থে যোজক কথাটি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। যেমন : তুমি ও আমি যাব। মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন।’ তিনি বিধান অথচ সৎ ব্যক্তি নন।
যোজকের শ্রেণিবিভাগ : যোজক বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। যেমন :
১। সাধারণ যোজক : এবং, ও, আর। যেমন নিমিয়া আর আলিয়া দু বোন। সুখ ও দুঃখ একসঙ্গে আসে না। স্কুলে যাও এবং পাঠে মন দাও।
২। বৈকল্পিক যোজক : বা, না-হয়, অথচ যেমন সাদা বা কালো। তিনি হয় রিক্সায় না হয় হেঁটে যাবেন। সারাদিন খুঁজলাম, অথচ বইটা পেলাম না।
৩। বিরোধমূলক যোজক : কিন্তু, তবু। যেমন : তোমাকে চিঠি লিখেছি, কিন্তু উত্তর পাইনি। এত বৃষ্টি গরম গেল না।
৪। কারণবাচক যোজক : কারণ, যেহেতু, ভাই, অতএব। যেমন জিনিসের দাম বেড়েছে, কারণ পরিবহণ ধর্মঘট। যেহেতু ঠাণ্ডা লেগেছে, তাই আইসক্রিম খাচ্ছি না। তুমি অপরাধী, অতএব শাস্তি পেতে হবে।
৫। সাপেক্ষ যোজক : যথা… তথা, যত ….. . যখন …. তখন যেমন … তেমন, যেরূপ … সেরূপ। যেমন: যত গর্জে তত বর্ষে না। যথা ধর্ম তথা জয়।
অনুসর্গ ও তার শ্রেণিবিভাগ
বাংলা ভাষায় এক ধরনের সহায়ক শব্দ রয়েছে, যেগুলো কখনো স্বাধীন পদরূপে, আবার কখনো শব্দ বিভক্তির ন্যায় বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে বাক্যের অর্থ প্রকাশে সাহায্য করে, এগুলোকে অনুসর্গ বা পরবর্গ বা কর্মপ্রবচনীর বলে। যেমন : বাবার জন্যে এখানে দাঁড়িয়ে আছি, (বিভক্তিযুক্ত)। চিনাবাদাম থেকে ভোলা তেল হয়: (বিভক্তিহীন)।
বিভক্তি ও অনুসর্গের মধ্যে পার্থক্য এই যে, বিভক্তি পূর্ণ শব্দ নয়, কিন্তু অনুসর্গ পূর্ণ শব্দ, আলাদা শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বিভক্তি শব্দের সঙ্গে জমাট বেঁধে যায়, কিন্তু অনুসর্গগুলো পদের পরে বসে।
আবার কখনো ‘-কে এবং “-র বিভক্তিযুক্ত শব্দের পরে বসে।
‘দড়িতে বাঁধ’ এবং ‘দড়ি দিয়ে বাঁধ’— প্রথম বাক্যের দড়িতে পদটির যে অর্থ, দ্বিতীয় বাক্যের ‘দড়ি নিয়ে যুগল পদেরও সেই একই অর্থ (দড়িতে দড়ি দিয়ে)। বাধ’ ক্রিয়াপদের সঙ্গে উভয়েরই একই প্রকার সম্বন্ধ।
অনুসর্গের শ্রেণিবিভাগ : গঠন-প্রকৃতি অনুসারে অনুসর্গগুলোকে দু ভাগে ভাগ করা যায়, যথা – ১- নাম বা
বিশেষ্য অনুসর্গ এবং ২. ক্রিয়া অনুসর্গ।
১. নাম বা বিশেষ্য অনুসর্গ
ক্রিয়া ছাড়া অন্য শব্দ থেকে আগত অনুসর্গগুলোকে নামজাত বা বিশেষ্য অনুসর্গ বলে। ঐতিহাসিক উৎস অনুসারে নামজাত অনুসর্গ তিন প্রকারের। যথা- ক. সংস্কৃত অনুসর্গ, খ. বিবর্তিত অনুসর্গ, গ. ফারসি অনুসর্গ।
ক. সংস্কৃত অনুসর্গ : এ জাতীয় অনুসর্গ হল- অপেক্ষা, অভিমুখে, উপরে, কর্তৃক, জন্য, দিকে। যেমন : মহানগর এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম অভিমুখে ঢাকা ছেড়েছে। গ্রীষ্ম অপেক্ষা বর্ষা ভালো। মাথার উপরে নীল আকাশ।
খ. বিবর্তিত (তদ্ভব) অনুসর্গ : এ জাতীয় অনুসর্গ হল- আগে, কাছে, ছাড়া, তরে, পানে, পাশে, ভেতর মাঝে, সাথে সামনে ইত্যাদি। যেমন : বার আগে আমি এসে বসে আছি। তার কাছে কলমটা নেই। সে আমাকে ছাড়া থাকতে পারে না।
গ. ফারসি অনুসর্গ : বাংলা ভাষায় ফারসি অনুসর্গের মধ্যে রয়েছে দরুন, বদলে, বনাম বাদে, বাবদ, বরাবর ইত্যাদি। বৃষ্টির দরুন খেলা পণ্ড হয়ে গেল। আমাকে এটার বদলে ওটা দিন। খেলা চলছে আবাহনী বনাম মহামেডান।
২. ক্রিয়াজাত অনুসর্গ : ক্রিয়া থেকে নির্মিত অনুসর্গগুলোকে ক্রিয়াজাত অনুসর্গ বলে। ক্রিয়াজাত অনুসর্গ হল : করে, থেকে, দিয়ে, ধরে, হতে ইত্যাদি। যেমন ভালো করে পড়াশোনা কর। মন দিয়ে লেখাপড়া করো।
গঠন অনুসারে অনুসর্গ
গঠনের দিক থেকে অনুসর্গ দু প্রকার : ক. বিভক্তিহীন অনুসর্গ ও খ. বিভক্তিযুক্ত অনুসর্গ ।
ক. বিভক্তিহীন অনুসর্গ : অপেক্ষা, অবধি কর্তৃক, ছাড়া, দ্বারা, নাগাদ, পর্যন্ত, প্রতি, বিনা, ব্যতীত, মতো। ফারসি অনুসর্গ বিভক্তিহীন : দরুন, বনাম, বরাবর, বাবদ।
খ. বিভক্তিযুক্ত অনুসর্গ : এ জাতীয় অনুসর্গের অধিকাংশই নাম অনুসর্গ -এ’ বিভক্তিযুক্ত। যেমন : আগে, পরে, কাছে, কারণে, জন্যে, দিকে, নীচে, পাশে, পেছনে, বাইরে ভেতরে, মধ্যে, মাঝে, সঙ্গে, সাথে, সামনে, সম্মুখে। ক্রিয়া অনুসর্গগুলো -ইয়া জাত -এ’ বিভক্তিযুক্ত। যেমন— করে, চেয়ে, থেকে, দিয়ে, লেগে, হতে। কোনো কোনো ফারসি অনুসর্গ -এ বিভক্তি যোগে গঠিত। যেমন- বদলে, বাদে।

আরও দেখুন: