ক্যাবল টিভির সুফল ও কুফল সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন রচনা | প্রতিবেদন | ভাষা ও শিক্ষা ,বর্তমান টেলিভিশন রাজ্যে যুগান্তর সৃষ্টি করেছে ‘ডিস অ্যান্টেনা’। কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে প্রচারিত টেলিভিশন নেট- ওয়ার্কে বিশ্ব চলে এসেছে হাতের মুঠোয়। টেলিভিশনের মাধ্যমে ঘরে বসেই মানুষ ঘুরে আসতে পারে বিশ্বের আনাচে কানাচে। বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে উপগ্রহ ভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবাধে এদেশে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে ডিশ অ্যান্টেনা ও ক্যাবল নেটওয়ার্ক। বাণিজ্যিকভিত্তিতে মাসিক নির্দিষ্ট ‘ফি’-এর মাধ্যমে নির্ধারিত কিছু চ্যানেল দেখানোর জন্যে বিভিন্ন ডিশ লাইন (ক্যাবল নেটওয়ার্ক)-এর সংযোগ দেয়া হয়।
ক্যাবল টিভির সুফল ও কুফল সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন রচনা | প্রতিবেদন | ভাষা ও শিক্ষা
এর ফলে শহরাঞ্চলের প্রায় ঘরে ঘরে এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ডিশ পৌঁছে গেছে। কিন্তু বর্তমান সমাজব্যবস্থায় ডিশের দর্শক ও শ্রোতাদের মধ্যে এসব স্যাটেলাইট চ্যানেলের বিভিন্ন অনুষ্ঠান নিয়ে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বছর ষোলো আগে (১৯৯২ সালে) ক্যাবল টিভির জগতে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। একুশে টিভি, এটিএন চ্যানেল আই, এনটিভি, আর টিভ, বাংলা ভিশন, বৈশাখী, চ্যানেল ওয়ান, দেশটিভিসহ অনেকগুলো স্যাটেলাইট চ্যানেল চালু হয়েছে এ দেশে। তার পাশাপাশি রয়েছে বিদেশি চ্যানেলের ছড়াছড়ি।
স্টার মুভিজ, স্টার স্পোর্টস, এএক্সএন, ইএসপিএন, এমটিভি, এইচবিও, রেন টিভি, টিভি সিক্স, জিটিভি, সনি টিভি, স্টার প্লাস, জি মিউজিক, বিফোরইউ, সাহারা, ন্যাশনাল জিউগ্রাফি, ইএসপিএন, এমএম-১, ২, অ্যানিমেল ওয়ার্ল্ড এরকম প্রায় শতাধিক চ্যানেল রয়েছে।
১৯৯২ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত যদি একটা বিশ্লেষণে যাওয়া যায় তাহলে দেখা যাবে যে, ব্যক্তি ও সমাজজীবনে স্যাটেলাইটের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিনোদন, খেলাধুলা, রকমারি অনুষ্ঠানমালাসহ আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সকল দিক এ-সব চ্যানেলের মাধ্যমে উপভোগ করা যায় বলে ডিশ আন্টেনা ও স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলোর পক্ষে অনেকেরই জোরালো সমর্থন রয়েছে। তবে, ডিশ অ্যান্টেনা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মূল্যবোধ পাল্টে দিচ্ছে অথবা তাদের উস্কে দিচ্ছে মূল্যবোধের বিপরীতে অবস্থান নিতে— এমন মন্তব্যও রয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণির দর্শক শ্রোতাদের সঙ্গে আলাপ করে ডিস অ্যান্টেনার সুফল ও কুফল সম্পর্কে যে তথ্য পাওয়া গেছে তা নিম্নরূপ :
০১. ডিস অ্যান্টেনার সুফল সম্পর্কে মতামত
১.১. শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিনোদন, খেলাধুলাসহ অনুষ্ঠানমালা ডিস অ্যান্টেনার মাধ্যমে উপভোগ করা যায় বলে অনেকেই এর প্রতি জোরালো সমর্থন জানিয়েছেন।
১.২. নিজ দেশে অবস্থান করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের চিন্তা-চেতনা, কৃষ্টি-সৃষ্টি ইত্যাদির সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায় এর মাধ্যমে।
১.৩. বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান প্রচারিত হয় বলে অনেকেই এর সমর্থন করেন।
১.৪. ডিস অ্যান্টেনার সাহায্যে আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির সকল দিক সম্পর্কে অবগত হওয়া যায় বলে অনেকেই একে বিজ্ঞানের অবদান হিসেবে মূল্যায়ন করে।
১.৫. সর্বোপরি ডিস অ্যান্টেনা যোগাযোগ স্থাপনের জন্য সমগ্র বিশ্ববাসীকে একই পরিবারে অন্তর্ভুক্ত করেছে বলে অনেকেই একে বিজ্ঞানের আশীর্বাদ হিসেবে গণ্য করেন। পরিপন্থি।

০২. ডিস অ্যান্টেনার কুফল সম্পর্কে মতামত
২.১. কিছু কিছু চ্যানেলে অবলীলায় প্রচার করা হয় অশ্লীল দৃশ্যাবলি যা আমাদের সংস্কৃতির অনেকেই এর বিরুদ্ধে আপত্তি তোলে।
২.২. নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যগত মূল্যবোধের উপর চরম আঘাত হানায় অনেকে এর বিপক্ষে মতামত জানায়।
২.৩. উঠতি বয়সের যুবক-যুবতীরা এতে বিপদগ্রস্ত হচ্ছে।
২.৪. এর প্রভাবে যুবকশ্রেণি অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে বলেও অনেকের ধারণা। গঠনমূলক নিরপেক্ষ বক্তব্যও দিয়েছেন অনেকে। যেমন- স্যাটেলাইট টিভির সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকপ্রভাব সম্পর্কে আমাদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখা দরকার। এ-সব চ্যানেলে প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে সরকারি বিধি- নিষেধ আরোপ করা দরকার। বিশ্বের জ্ঞানবিজ্ঞানের দরজা-জানালা আমরা অবশ্যই খোলা রাখতে চাই, কিন্তু সেটা
করতে গিয়ে অপসংস্কৃতির দুর্গন্ধ আমাদের সমাজজীবনে ছড়িয়ে পড়ুক— সেটা আমরা চাই না। প্রত্যেকটি জিনিসেরই নেতিবাচক এবং ইতিবাচক দুটি দিকই থাকে, শ্রোতা বা দর্শকগণ নেতিবাচক দিকগুলো পরিহার করে ইতিবাচক দিকগুলোকে সহজেই গ্রহণ করতে পারে। ডিশ অ্যান্টেনা ও স্যাটেলাইট অত্যাধুনিক প্রযুক্তির দান। ডিশের মাধ্যমে আমরা নিমেষেই পৌঁছুতে পারি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। যদিও কিছু কুপ্রভাব আছে, তথাপি আমরা ভালো ও শিক্ষণীয় দিকগুলো গ্রহণ করে আমাদের ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয়জীবনে ডিশ অ্যান্টেনা ও স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলে সম্প্রচারিত শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের সুফলগুলো কাজে লাগাতে পারি।
আরও দেখুন:
- বন্যা দুর্গত এলাকার বিপর্যস্ত জনজীবনের বিবরণ দিয়ে একটি প্রতিবেদন | প্রতিবেদন | ভাষা ও শিক্ষা
- আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে সংবাদপত্রের জন্যে প্রতিবেদন | প্রতিবেদন | ভাষা ও শিক্ষা
- তৎসম ও বাংলা উপসর্গের মধ্যে পার্থক্য | উপসর্গ যোগে গঠিত পরিভাষা | উপসর্গযুক্ত শব্দের বাক্যে প্রয়োগ | ভাষা ও শিক্ষা
- স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্যে প্রতিবেদন | প্রতিবেদন | ভাষা ও শিক্ষা