কমা, সেমিকোলন, কোলন ও হাইফেনের ব্যবহার

আজকের আলোচনার বিষয়ঃ কমা, সেমিকোলন, কোলন ও হাইফেনের ব্যবহার। যা বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি এর অন্তর্গত।

 

কমা, সেমিকোলন, কোলন ও হাইফেনের ব্যবহার

 

কমা, সেমিকোলন, কোলন ও হাইফেনের ব্যবহার

কমার ব্যবহার  (, )

বাক্যে অল্প বিরতি বোঝাতে কমা বসে। নানা প্রয়োজনে বাক্যে কমাচিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন :

১. বাক্যের অর্থ স্পষ্ট করার জন্য কমা বসে। যেমন :

তুমি যাবে, না যাবে না?

সুখ চাও, সুখ পাবে পরিশ্রমে ।

২. বাক্যে সম্বোধনের পর কমা বসে। যেমন :

সেতু, পড়তে বসো।

বিথু, খাবে এসো।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

৩. একই পদের একাধিক শব্দ পাশাপাশি ব্যবহৃত হলে কমা বসে। যেমন :

বিশেষ্য : পদ্মা, মেঘনা, যমুনা বাংলাদেশের প্রধান প্রধান নদী ।

বিশেষণ : সুখ, দুঃখ, আশা, নিরাশা একই মালার ফুল।

সর্বনাম: তুমি, আমি ও রবিন বাজারে যাব।

৪. একই ধরনের একাধিক বাক্য বা বাক্যাংশকে আলাদা করতে কমা বসে। যেমন :

শ্রেষ্ঠা ক্লাসে ঢুকল, বই রাখল, তারপর বেরিয়ে গেল ।

আমাদের কাছে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, পহেলা বৈশাখ খুবই আনন্দের দিন ।

৫. বাক্যে উদ্ধৃতিচিহ্নের আগে কমা বসে। যেমন :

মা বললেন, “অঙ্ক করতে বসো।”

আমি বললাম, “গল্পের বই পড়তেই ভালো লাগছে।”

 

কমা, সেমিকোলন, কোলন ও হাইফেনের ব্যবহার

 

সেমিকোলন ( ; )

একাধিক বাক্যের মধ্যে নিকট সম্পর্ক থাকলে তাদের মাঝে যোগসূত্র রক্ষার জন্য সেমিকোলন ব্যবহার করা হয়। সেমিকোলনচিহ্ন কমার চেয়ে দ্বিগুণ সময় বিরতি নেয়। যেমন :

১. দুটো বাক্যের মধ্যে ভাব বা অর্থের সম্বন্ধ থাকলে সেমিকোলন বসে। যেমন :

দিনটা ভালো নয়; মাঝে মাঝে বৃষ্টি পড়ছে।

কথাটা বলা সহজ; করা কঠিন।

২. একাধিক বাক্য সংযোজক অব্যয়ের দ্বারা যুক্ত না হলে সেমিকোলন বসে। যেমন : আগে স্কুলের পড়া; পরে গল্পের বই।

৩. যেসব অব্যয় বৈপরীত্য বা অনুমান প্রকাশ করে, তাদের আগে সেমিকোলন বসে। যেমন :

মনোযোগ দিয়ে পড়; তাহলেই ভালো ফল করবে।

ছেলেটি মেধাবী; কিন্তু ভারি অলস।

 

কমা, সেমিকোলন, কোলন ও হাইফেনের ব্যবহার

 

কোলন (:)

বাক্যে নানা কারণে কোলনচিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন :

১. উদাহরণ বা দৃষ্টান্ত বোঝাতে :

বাংলা সন্ধি দু প্রকার : স্বরসন্ধি ও ব্যঞ্জনসন্ধি।

২. উদ্ধৃতির আগে :

রবীন্দ্রনাথ বলেছেন : “মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে।”

৩. নাটকের সংলাপের আগে :

দুকড়ি : কী চাই ?

কাঙালি : আজ্ঞে, মহাশয় হচ্ছেন দেশহিতৈষী।

দুকড়ি : তা তো সকলেই জানে কিন্তু আসল ব্যাপারটা কী?

কাঙালি : আপনি সাধারণের হিতের জন্য প্রাণপণ–

হাইফেন ( – )

হাইফেনকে বাংলায় সংযোগ চিহ্ন বলা হয়। বিভিন্ন কারণে বাক্যে হাইফেনের ব্যবহার হয়। যেমন :

১. দুটো শব্দের সংযোগ বোঝাতে হাইফেন বসে। যেমন :

আমার মা-বাবা বেড়াতে গেছেন ।

পাপ-পুণ্য, ভালো-মন্দ বিবেক দিয়ে বুঝতে হয়।

২. সমাসবদ্ধ পদের অংশগুলো বিচ্ছিন্ন করে দেখাবার জন্য হাইফেন বসে। যেমন :

আমাদের প্রীতি-উপহার গ্রহণ করুন ।

তাদের মধ্যে অহি-নকুল সম্পর্ক।

৩. একই ধরনের শব্দ প্রকাশের ক্ষেত্রে হাইফেন বসে। যেমন :

বাংলাদেশ নদ-নদীর দেশ ।

ঢাকা-খুলনা-বরিশাল এ দেশের বড় শহর।

 

কমা, সেমিকোলন, কোলন ও হাইফেনের ব্যবহার

 

 কর্ম অনুশীলন

১. নিচের অনুচ্ছেদগুলোতে বিরামচিহ্ন বসাও :

ক. আমাদের গ্রামের ঘরে ঘরে যে শিকা হাতপাখা ফুলপিঠা তৈরি করা হয় তা মোটেই অবহেলার সামগ্রী নয়

খ. যুবক বলিল কি সে কাজ আমি কি তাহা জানিতে পারি না কৃপা করিয়া আমাকে তাহা জানিতে দাও অভিন্ন হৃদয় সুহৃদের ন্যায় প্রাণ দিয়াও আমি সে কার্যে তোমার সহায়তা করিব

গ. মুক্তি বলল স্যার বলেছেন আজ ক্লাসে তিনি রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলা নিয়ে গল্প শোনাবেন

আমি বললাম তিনি কি কোনো বই পড়ে আসতে বলেছিলেন

মুক্তি বলল তুমি গত ক্লাসে আসনি কেন ক্লাস না করলে কত কথা জানা যায় না বুঝেছ

আমি উত্তর দিলাম সে দিন আমি খুবই অসুস্থ ছিলাম

এবার মুক্তি বলল স্যার আজ আমাদের কোনো বই পড়ে আসার কথা বলে দেন নি

২. বাক্যে কোথায় কোথায় ড্যাশ ও হাইফেন বসে দৃষ্টান্তসহ উপস্থাপন কর।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment