Site icon Bangla Gurukul [ বাংলা গুরুকুল ] GOLN

কারক | কারক ও বিভক্তি | ভাষা ও শিক্ষা

কারক – আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “ভাষা ও শিক্ষা” বিভাগের “কারক ও বিভক্তি” বিষয়ের একটি পাঠ।  কারক = √কৃ + অক (ক), অর্থাৎ, যে করে বা যা ক্রিয়া সম্পাদন করে। বাক্যস্থিত ক্রিয়াপদের সঙ্গে নামপদের (বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের কিংবা বিশেষ্যের অর্থে ব্যবহৃত কোনও পদের) যে সম্বন্ধ থাকে, তাকে ‘কারক’ বলে। যেমন : শফিক পড়ে। এখানে ‘পড়ে’ পদটি একটি ক্রিয়াপদ। ‘শফিক পড়ে’ বাক্যটিতে ক্রিয়াপদ ‘পড়ে’র সঙ্গে অপর পদ ‘শফিক’ এই বিশেষ্য পদের একটি সম্পর্ক রয়েছে এই সম্পর্কটিই ‘কারক’।

কারক | কারক ও বিভক্তি | ভাষা ও শিক্ষা

⇒ বিশ্লেষণ আরো সহজ করে ‘কারক’-এর ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করা যায়। যেমন : আমরা জানি, শব্দ যখন বাক্যে ‘বিভক্তি’ যোগে ব্যবহৃত হয় তখন তাকে ‘পদ’ বলে। একটি বাক্যে একটিমাত্র পদ (যেমন : ‘যাও’, এটি একটি অর্থবহ বাক্য) কিংবা একাধিক পদও থাকতে পারে। বাক্যে কোনো পদ-ই খাপছাড়া নয়। পদগুলোর পরস্পরের মধ্যে কোনো না-কোনো সম্বন্ধ বা সম্পর্ক বা যোগসূত্র থাকে। ব্যাকরণে এই সম্বন্ধকে বলে অন্বয় ৷ বাক্যে পাঁচ শ্রেণির পদের ব্যবহার দেখা যায়—বিশেষ্য, সর্বনাম, বিশেষণ, অব্যয় ও ক্রিয়া। বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনামকে ও অব্যয়কে একত্রে ‘নামপদ’ বলে।

এবং ক্রিয়া-বিভক্তিযুক্ত ধাতুকে ক্রিয়াপদ বলা হয়। বাক্যে ‘নামপদে’র সঙ্গে ‘ক্রিয়াপদে’র যে সম্পর্ক তাকে কারক বলে। নামপদের সঙ্গে ক্রিয়াপদের যে সম্পর্ক তা নানা রকম হতে পারে। কারণ কর্তা একা ক্রিয়া (কাজ) সম্পাদন করতে পারে না, তার সহযোগী দরকার হয়। ক্ৰিয়া যত বড় হবে কর্তার আয়োজনও তত বাড়বে। যেমন : কোনো ক্রিয়া সম্পাদনের জন্য কারও কর্তৃত্ব দরকার কিংবা ক্রিয়া সম্পাদনের জন্যে কোনো অবলম্বন দরকার হতে পারে। আবার ক্রিয়া সম্পাদন করার জন্যে কোনো বস্তু বা ব্যক্তির সাহায্য নিতে হতে পারে এবং ক্রিয়া সম্পাদনের স্থান বা অধিকার বা কালেরও দরকার হয়।

 

 

এভাবে কোনো ক্রিয়া সম্পাদনে যার বা যা কিছুর কোনো-না-কোনো সম্পর্ক ক্রিয়ার সঙ্গে বর্তমান থাকে। সেই সম্পর্কের সমষ্টিই কারক । প্রতিটি সার্থক বাক্যে একটি সমাপিকা ক্রিয়া থাকে। এই ক্রিয়া থাকা মানে কী? মানে নিশ্চয়ই কাজ ঘটানো, অর্থাৎ, কোনো কাজের ঘটনাকে বাক্যটিতে বর্ণনা করা হয়েছে। তাহলে বাক্যটি সম্পূর্ণ করতে হলে, অর্থাৎ, কাজটিকে বর্ণনা করতে হলে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা দরকার।

যেমন : কে করে ? কী করে ? কাকে ? / কার জন্যে করে? কোথায় করে ? কোথা থেকে করে ? কী দিয়ে করে ? কখন করে? আর এসব তথ্য সাজালেই বক্তব্য একটি বাক্য হয়ে উঠবে। কিন্তু কীভাবে সাজাতে হবে? এই সাজানোর কৌশলটা জানার জন্যেই ‘কারক’ জানা প্রয়োজন।

মনে করি, একটি কাজ (ক্রিয়া) ‘দেওয়া’। ‘দেওয়া’ বিষয়ে একটি বাক্য গঠন করা প্রয়োজন। তাহলে একে একে ওপরের প্রশ্নগুলো ক্রিয়ার ওপর আরোপ করে আমরা সেগুলো দিয়ে একটি বাক্য সাজাতে পারি। যেমন—

তাহলে বাক্যটি দাঁড়ায়— বেগম সাহেবা প্রতিদিন ভাঁড়ার থেকে নিজ হাতে গরিবকে/ গরিবদের চাল দেন। উল্লিখিত বাক্যটিতে ‘গরিবদের’ শব্দের সঙ্গে ‘দের’ যোগ হয়েছে— গরিব + দের = গরিবদের; ‘হাত’-এর সঙ্গে ‘-এ’ যোগ হয়েছে (হাত + – এ) হাতে। = পূর্বে আমরা জেনেছি যে, শব্দ যখন বাক্যে ব্যবহৃত হয় তখন তার সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত হয়ে পদে রূপান্তরিত হয়। তাহলে ‘গরিব’ শব্দের সঙ্গে ‘–কে’ বা ‘-দের’ বর্ণসমষ্টি হল বিভক্তি। সুতরাং শব্দকে বাক্যে ব্যবহারের জন্যে প্রয়োজন বিভক্তির। শব্দগুলো যখন বাক্যে স্থান পায় তখন পারস্পরিক বন্ধন বা যোগসূত্র বা অন্বয় সাধনের জন্যে শব্দের সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত হয়।

কিন্তু বাংলায় এমন বাক্য আছে, যাতে ক্রিয়া থাকে না। তাহলে ধরে নেয়া যায় ওই সব বাক্যে কারক নেই। তাই বাংলা ভাষায় ‘কারক’ না হলেও বাক্য রচনা করা যায়। কিন্তু বিভক্তিস্থানীয় শব্দ ব্যতীত কোনো বাক্য রচিত হতে পারে না। এ প্রসঙ্গে ড. মুহম্মদ এনামুল হক লিখেছেন, “বাক্যান্তর্গত নামপদের সহিত ক্রিয়ার যে অন্বয় তাহার নাম কারক হইলে, বাংলায় যে সমস্ত বাক্য বিনা ক্রিয়াপদে রচিত হয়, সে সমস্ত বাক্যে কারক থাকে কিনা, • ইহা একটি বিচার্য বিষয়। সত্যই বাংলায় ক্রিয়া ব্যতীত অসংখ্য বাক্য রচিত হইয়া থাকে। যেমন : ‘এক রাজা। তাঁহার দুই রানি। তাঁহাদের মধ্যে একজনের নাম সুয়োরানি এবং অপর জনের নাম দুয়োরানি।

রাজার বিশ্বাস, সুয়োরানি খুব বুদ্ধিমতী আর দুয়োরানি সুয়োরানির চেয়ে বুদ্ধিতে হীন। সুয়োরানির সুখের সীমা নাই; দুয়োরানির দুঃখও অসীম। সকলের ধারণা এই যে, সুয়োরানিই দুয়োরানির দুঃখের একমাত্র কারণ। দুয়োরানির এই দুঃখের প্রতিকার কী?’ এই সমস্ত বাক্যে কোনো প্রকারের ক্রিয়া স্বীকার বাংলা ভাষার প্রকৃতিবিরুদ্ধ। ভাষার মধ্যে যে সমস্ত নিয়ম প্রচ্ছন্নভাবে অবস্থিত, তাহার আবিষ্কারই যদি ব্যাকরণকারের কার্য হয় অর্থাৎ নিয়ম রচনা না করিয়া নিয়ম আবিষ্কার করাই যদি তাঁহার কাজ হয় (এবং তাহাই তাঁর কাজ), তবে স্বীকার করিতে হইবে, উক্ত বাক্যগুলোতে ক্রিয়া নাই, সুতরাং কারকও নাই।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

অতএব, কারক না থাকিলেও বাংলা বাক্য রচিত হইতে পারে ও হয়।”  বিভক্তি বাক্যের বিভিন্ন পদ বিশ্লেষণ করলে তার দুটি অংশ পাওয়া যায়। এর একটি ‘শব্দ’ এবং অপরটি ‘বিভক্তি’। বিভক্তি বলতে সেসব বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি বোঝায়— যেগুলো শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাক্য গঠনের জন্যে পদ সৃষ্টি করে এবং ক্রিয়াপদের সঙ্গে অন্য পদের সম্পর্ক নির্ণয় করতে সাহায্য করে। যেমন—— কলমে লেখ। এখানে— কলম + এ = কলমে, ‘-এ’ একটি বিভক্তি। বীণা পড়ে। এ বাক্যে ‘বীণা’ পদে কোনো বিভক্তি নেই, ‘বীণা’ শব্দটি বিভক্তিহীন হয়েই পদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এখানে বিভক্তির কোনো চিহ্ন নেই, অর্থাৎ বিভক্তিচিহ্ন স্পষ্ট না হলে তা শূন্য (”) বিভক্তি আছে মনে করা হয়। শূন্য বিভক্তি ছাড়া অন্যান্য বিভক্তির চিহ্ন বর্ণ, বর্ণসমষ্টি বা শব্দের সাহায্যে তৈরি হয়।

 

আরও দেখুন:

Exit mobile version