কারক ও বিভক্তি নির্ণয়ের কৌশল | কারক ও বিভক্তি | ভাষা ও শিক্ষা

কারক ও বিভক্তি নির্ণয়ের কৌশল | কারক ও বিভক্তি | ভাষা ও শিক্ষা , কারক নির্ণয়ের কৌশল সংস্কৃতের মতো বাংলায় কোনো কারকের জন্যে নির্দিষ্ট কোনো বিভক্তি নেই বলে ‘বিভক্তি’ দিয়ে বাংলায় কারক চেনা যায় না। বাংলা সব কারকে প্রায় সব বিভক্তি ব্যবহৃত হয়। তাই কারক চেনার সহজ উপায় নেই। বাক্যে ক্রিয়ার সঙ্গে নামপদগুলোর সম্বন্ধ চিহ্নিত করতে না পারলে কারক চেনা যাবে না। তাই বাংলা বাক্যে কারক নির্ণয়ের জন্যে ক্রিয়ার সঙ্গে নাম পদের সম্বন্ধ স্থির করে নিতে হয়। এটাই বাংলা কারক চেনার একমাত্র উপায় । সাধারণত ক্রিয়ার সঙ্গে একেক ধরনের প্রশ্ন করে একেকটা কারক নির্ণয় করা হয়। যেমন: নিচের ছকটি লক্ষ করা যাক

কারক ও বিভক্তি নির্ণয়ের কৌশল | কারক ও বিভক্তি | ভাষা ও শিক্ষা

কারক ও বিভক্তি নির্ণয়ের কৌশল কারক ও বিভক্তি নির্ণয়ের কৌশল | কারক ও বিভক্তি | ভাষা ও শিক্ষা

উদাহরণ : ১. ভিক্ষুককে ভিক্ষা দাও। ২. ধোপাকে কাপড় দাও ।

উপরের ১নম্বর বাক্যটিকে যদি উল্লিখিত ছক ব্যবহার করে, প্রশ্ন করা হয়— কাকে ভিক্ষা দাও? উত্তর হবে, ‘ভিক্ষুককে’, এবং বাক্যটি দ্বারা স্বত্বত্যাগ বোঝানো কারক এবং ভিক্ষুককে (ভিক্ষুক + কে = ভিক্ষুককে— ‘-কে’ ৪র্থী বিভক্তির চিহ্ন।)- ৪র্থী বিভক্তি। তাই ১নম্বর হয়েছে। তাই এটা সম্প্রদান বাক্যটির কারক ও বিভক্তি নির্ণয় হবে : সম্প্রদান কারকে ৪র্থী বিভক্তি

 

কারক ও বিভক্তি নির্ণয়ের কৌশল | কারক ও বিভক্তি | ভাষা ও শিক্ষা

 

আবার ২নম্বর উদাহরণে, কাকে কাপড় দাও?— ধোপাকে। কিন্তু বাক্যটি দ্বারা দান বোঝায় নি, বরং (কর্তার) কাজ বোঝায়। তাই এটা কর্মকারক এবং ধোপাকে (ধোপা + কে = ধোপাকে— ‘-কে’ ২য়া বিভক্তির চিহ্ন)— ২য়া বিভক্তি। তাই ২ নম্বর বাক্যটির কারক ও বিভক্তি নির্ণয় হবে : কর্ম কারকে ২য়া বিভক্তি ।

বিভক্তি নির্ণয়

কোনো বাক্যের বিশেষ কোনো পদের বিভক্তি করার সময় মূল শব্দটি কী এবং তার সঙ্গে অতিরিক্ত কোন্ বৰ্ণ বা বর্ণসমষ্টি বিভক্তি হিসেবে যুক্ত হয়েছে তা খুঁজে বের করতে হয়। যেমন : বুলবুলিতে ধান খেয়েছে। এখানে ‘বুলবুলিতে’ পদে মূল শব্দ ‘বুলবুলি’, আর অতিরিক্ত ‘-তে’—সপ্তমী বিভক্তি যোগ হয়েছে। ক্ত নির্ণয় কর লোকে বলে। এখানে ‘লোকে’ পদের শব্দ ‘লোক’, আর অতিরিক্ত ‘-এ’—৭মী বিভক্তি যোগ হয়েছে। সাপুড়ে সাপ খেলে। এই বাক্যে ‘সাপুড়ে’ পদে অতিরিক্ত বর্ণ না থাকায় তা শূন্য বিভক্তি—সাপুড়ে + ‘-০’ বিভক্তি হয়েছে। এভাবে পদের মূল শব্দটিকে আলাদা করে নিয়ে অতিরিক্ত বর্ণ বা বর্ণসমষ্টিকে বিভক্তির চিহ্ন হিসেবে নির্ধারণ করতে হবে এবং বিভক্তির নাম অনুসারে নাম উল্লেখ করতে হবে।

পরীক্ষায় মোটা অক্ষরে লেখা অথবা নিম্নরেখ শব্দের কারক ও বিভক্তি নির্ণয় করতে বলা হয়। প্রথমে কারক নির্ণয় করে তারপর বিভক্তি নির্ণয় করা দরকার। কারক নির্ণয়ের সঙ্গে নাম-পদের সম্পর্ক মেলাতে হয়। যে কারকের প্রশ্ন দিয়ে পদের সঙ্গে ক্রিয়ার সম্পর্ক মেলে সে কারকের নামে পদের কারক চিহ্নিত করতে হয়। তারপর আসে বিভক্তির ব্যাপারটি।

 

কারক ও বিভক্তি নির্ণয়ের কৌশল | কারক ও বিভক্তি | ভাষা ও শিক্ষা

 

পদের বিশ্লেষণ করে শব্দ ও বিভক্তির চিহ্ন পৃথক করতে হবে এবং বিভক্তি চিহ্নের পরিচয় অনুসারে বিভক্তির নাম নির্ধারণ করা যায়। কিছু দৃষ্টান্ত দেয়া যাক— ১. পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল। —এ বাক্যে দুটি ক্রিয়া ‘করে রব’ এবং ‘পোহাইল’। কে করে রব?—পাখি। ‘কে’ প্রশ্নটি কর্তৃকারকের। তাই ‘পাখি’ কর্তৃকারক।

কোনো বিভক্তি চিহ্ন নেই বলে তা শূন্য বিভক্তি। কে পোহাইল? —রাতি। ‘রাতি’ কর্তৃকারক, শূন্য বিভক্তি। [‘রাতি’ এখানে ক্রিয়া সম্পাদন করেছে নিজে।। ২. ‘আমারি সোনার ধানে গিয়াছে ভরি’ -কীসের দ্বারা ভরেছে?—ধানে। ‘ধানে’ করণ কারক—সপ্তমী বিভক্তি। ৩. সৎপাত্রে কন্যাদান কর। বাক্যে কাকে দান কর?—সৎপাত্রে। ‘সৎপাত্র’ সম্প্রদান কারকে সপ্তমী বিভক্তি। ৪. ‘বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা।’—কোথা থেকে রক্ষা করবে? — বিপদ থেকে, বিপদে অপাদান কারক, সপ্তমী বিভক্তি। [দুঃখ, বিপদ, আনন্দ, যন্ত্রণা বা ভয় প্রভৃতি হতে ক্রিয়া নিষ্পন্ন হয় বলে তা অপাদান কারক ।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

৫. সে বাড়ি নেই। এ বাক্যে কোথায় নেই? –বাড়ি। বাড়ি অধিকরণ কারকে শূন্য বিভক্তি। শুক্রবার কলেজ ছুটি।—কখন ছুটি? শুক্রবার—অধিকরণ কারকে শূন্য বিভক্তি। সুতরাং উল্লিখিত আলোচনায় দেখা যাচ্ছে যে, কোনো নির্দিষ্ট কারকের জন্যে কোনো নির্দিষ্ট বিভক্তি নেই। সকল কারকে প্রায় সকল বিভক্তির প্রয়োগ হতে পারে। তাই কারক নির্ণয়ে বিভক্তির ভূমিকা নেই।

বরং কারক নির্ণয়ের বেলায় ক্রিয়া পদের সঙ্গে নামপদের সম্পর্ক বিচার করতে হবে। তাই মনে রাখা দরকার : ১. যে ক্রিয়া সম্পন্ন করে তা কর্তৃকারক। ২. যাকে আশ্রয় করে কর্তা ক্রিয়া সম্পন্ন করে তা কর্মকারক। ৩. যার সাহায্যে কর্তা ক্রিয়া সম্পন্ন করে তা করণকারক। ৪. যাকে স্বত্ব ত্যাগ করে দান করা হয় তা সম্প্রদান কারক । ৫. যা থেকে ক্রিয়ার কাজ উৎপন্ন হয় তা অপাদান কারক। ৬. যে স্থানে বা সময়ে ক্রিয়া সম্পন্ন হয় তা অধিকরণ কারক

আরও দেখুন:

Leave a Comment