কলেজ গ্রন্থাগার সম্পর্কে প্রতিবেদন | প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন | ভাষা ও শিক্ষা

কলেজ গ্রন্থাগার সম্পর্কে প্রতিবেদন | প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন | ভাষা ও শিক্ষা , প্রতিবেদন’ শব্দটি ইংরেজি Report শব্দের বাংলা পরিভাষা। Report শব্দটির বাংলা আভিধানিক অর্থ হলো – সমাচার, বিবরণী বা বিবৃতি। কোনো ঘটনা সম্পর্কিত তথ্যভিত্তিক বর্ণনাত্মক বিবরণকে একটি প্রতিবেদন বলে। তবে কখনো কখনো কোনো সুনির্দিষ্ট ঘটনা বা বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কোনো ব্যক্তি বা তদন্ত কমিশন কোনো খুঁটিনাটি অনুসন্ধানের পর সুপারিশসহ যে বিবরণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রদান করে, তাও এক ধরনের প্রতিবেদন। এই ধরনের প্রতিবেদনকে “তদন্ত প্রতিবেদন” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

কলেজ গ্রন্থাগার সম্পর্কে প্রতিবেদন

তারিখ : ১৭ / ০৯ / ০৮

বরাবর

অধ্যক্ষ,

কুমিল্লা কলেজ,

কুমিল্লা ।

বিষয় : কলেজ গ্রন্থাগার সম্পর্কিত প্রতিবেদন।

মহোদয়,

আপনার চিঠি নম্বর (র. ম. ম. ক; ২৭৬১/০৮; ১৫/ ০৯ / ২০০৮) মোতাবেক কলেজ গ্রন্থাগারের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যানুসন্ধানপূর্বক একটি প্রতিবেদন আপনার সদয় অবগতির জন্য পেশ করছি—

১. কলেজ গ্রন্থাগারটি কলেজ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তবে প্রয়োজনীয় বইপত্র ক্রয় না করায় এর আশানুরূপ সমৃদ্ধি সাধিত হয় নি। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ক্রমান্বয়ে কলেজের ছাত্র/ছাত্রী সংখ্যা অনেক বাড়লেও তাদের প্রয়োজনের দিকটি হয়েছে উপেক্ষিত। কলেজের আর্থিক উন্নতি হলেও গ্রন্থাগারের জন্যে বরাদ্দ ছিল কম।

 

কলেজ গ্রন্থাগার সম্পর্কে প্রতিবেদন

 

২. গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠাকালে কোনো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক না থাকায় তা পরিকল্পিতভাবে পরিচালিত হয় নি। রেজিস্টারভুক্ত বইয়ের সংখ্যার সঙ্গে গ্রন্থাগারে যে বই আছে তার সংখ্যার কোনো সঙ্গতি নেই।

৩. কলেজে যেসব বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স রয়েছে সেসব বিষয়ের জন্য প্রয়োজনীয় দেশি-বিদেশি বই নেই।

৪. পাঠ্যবই ও বিজ্ঞানবিষয়ক বই নেই বললেই চলে।

৫. বিগত তিন বছর ধরে গ্রন্থাগারে নতুন বা আধুনিক সংস্করণের কোনো বই কেনার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। যদিও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে লাইব্রেরি ফান্ডের জন্য যে চাঁদা তোলা হয় তা (৭২০০০/-) দীর্ঘদিন যাবৎ উক্ত ফান্ডে পড়ে রয়েছে।

৬. বই কেনা বাবদ প্রতি বছর সরকারের কাছ থেকে যে অর্থ পাওয়া যায়, তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য ।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

৭. বইয়ের তালিকা তৈরিতে কোনো বিজ্ঞানসম্মত পন্থা অনুসরণ করা হয় নি। দশমিক পদ্ধতি সম্পর্কে গ্রন্থাগারিক অনভিজ্ঞ বলে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহৃত হয় নি।

৮. পুস্তকের ব্যবস্থা ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে তেমন কোনো সচেতনতা নেই। ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে বই ইস্যু করার ব্যাপারেও কোনো নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে না।

১. গুরুত্বপূর্ণ বইসমূহে গুরুত্বপূর্ণ পৃষ্ঠাসমূহে কাটা ছেড়ার দাগ দেখা যায়। ১০. রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা ও হই-হল্লার কারণে গ্রন্থাগারে বসে পড়াশোনার মতো কোনো পরিবেশ নেই।

১১. কতিপয় শিক্ষার্থী বীনাপ্রয়োজনেও গ্রন্থাগারে বসে আড্ডা দিতে দেখা যায়। ১২. গ্রন্থাগারে মোট বইয়ের সংখ্যার কোনো বিষয়ভিত্তিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায় নি। পুরাতন একটি পরিসংখ্যান পাওয়া গেলেও এর সঙ্গে বইয়ের কোনো মিল নেই।

এসব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, গ্রন্থাগারটি ছাত্র/ছাত্রীর তেমন কোনো উপকারে আসছে না।

 

কলেজ গ্রন্থাগার সম্পর্কে প্রতিবেদন

 

এমতাবস্থায় নিম্নরূপ সুপারিশ করছি যার বাস্তবায়নে গ্রন্থাগারটি ছাত্র/ছাত্রীর যথার্থ উপকারে আসতে পারে :

১. অতিসত্বর প্রশিক্ষিত গ্রন্থাগারিক ও ক্যাটালগার নিয়োগ করার ব্যবস্থা করতে হবে।

২. গ্রন্থাগারের সকল পুস্তকের হিসাব গ্রহণ করে দশমিক পদ্ধতিতে তালিকা তৈরি করতে হবে।

৩. ছাত্র/ছাত্রীর প্রয়োজনে আরও বইপত্র সংগ্রহ করা দরকার। এক্ষেত্রে বিষয় নির্বাচনে অধিকতর তৎপর হতে হবে।

৪. বইপত্র বাড়িতে ইস্যু করা এবং পাঠাগারে পড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্যে ছাত্র/ছাত্রীদের দু’ধরনের গ্রন্থাগার কার্ড ইস্যু করা দরকার।

৫. বই যাতে চুরি কিংবা প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠা ব্লেড দিয়ে কেটে নিয়ে যাওয়া না হয় সেজন্যে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা থাকতে হবে।

৬. গ্রন্থাগারের জন্যে স্বতন্ত্র তহবিল গড়ে তুলতে হবে এবং তাতে শিক্ষার্থীদের দেয়া বার্ষিক চাঁদার যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

সর্বোপরি গ্রন্থাগারের সঠিক উন্নয়ন ও তত্ত্বাবধানের জন্যে একটি গ্রন্থাগার কমিটি গঠন করে তার ওপর দায়িত্ব অর্পণ

করলে গ্রন্থাগারের সার্বিক উন্নতি নিশ্চিত করা যাবে বলে আমার বিশ্বাস।

বিনীত

সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ; কুমিল্লা… কলেজ, কুমিল্লা।

আরও দেখুন:

Leave a Comment