কলেজে তোমার প্রথম দিনের বর্ণনা দিয়ে পত্র | পত্র বা চিঠি | ভাষা ও শিক্ষা

কলেজে তোমার প্রথম দিনের বর্ণনা দিয়ে পত্র | পত্র বা চিঠি | ভাষা ও শিক্ষা , সতের ও আঠারো শতকে চিঠি লেখা হতো স্ব-শিক্ষার জন্য। চিঠি ছিল পাঠচর্চা, অভিজ্ঞতা বর্ণনা করা, বিতর্কমূলক লেখা বা সমমনা অন্যদের সাথে আইডিয়া বিনিময়ের পদ্ধতি। কিছু লোক চিঠিকে মনে করতো কেবল লেখালেখি। আবার অন্যরা মনে করে যোগাযোগের মাধ্যম। বাইবেলের বেশ কয়েকটি পরিচ্ছেদ চিঠিতে লেখা।

কলেজে তোমার প্রথম দিনের বর্ণনা দিয়ে পত্র

মতিঝিল, ঢাকা ১০ জুন, ২০০০

প্ৰিয় ‘ক’,

দিন আসে দিন যায়, মাস পেরিয়ে একসময় বছরও কেটে যায়— স্মৃতি-বিস্মৃতির দোলায় জীবনও থেমে থাকে না। সুখ- দুঃখকে বয়ে নিয়ে সেও ধেয়ে চলে। তার গন্তব্য কোথায় আমরা কেউ জানি না বলেই জীবনের আগামী দিনগুলোর অপেক্ষায় থাকি। কিন্তু ফেলে আসা দিনগুলোকে কী ভোলা যায়? স্মৃতির পাতায় দাগ কেটে দেয় কিছু কথা, কিছু ব্যথা, সুখ, দুঃখ, আনন্দ অথবা কিছু মুহূর্ত অথবা পুরো একটি দিন। এরকম একটা দিন আমার স্মৃতির পাতায় আজও উজ্জ্বল হয়ে আছে। সেটি হল আমার কলেজ জীবনের প্রথম দিন। আজ সে-দিনটির কথা তোমাকে লিখছি। তোমাকে লিখছি এ জন্যে যে, সে-দিনটি আমার সঙ্গে তোমারও উপভোগ করার কথা ছিল। কিন্তু তোমার বাবা-মা তোমাকে বিদেশ নিয়ে গেল।

 

কলেজে তোমার প্রথম দিনের বর্ণনা দিয়ে পত্র

 

বন্ধু তুমি হয়ত একটা নতুন পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্যে ব্যস্ত, তাই আমাকে ভুলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক, কিন্তু তুমি চলে যাওয়ার পর আমি নিতান্তই একা হয়ে পড়েছি। তারপরও এ-দেশের কথা তুমি ভুলতে পারবে না বলেই আমার বিশ্বাস। তাই এ লেখাটি তোমাকে বেশ আনন্দ দেবে। দিনটি ছিল রোববার। সকাল ন’টায় কলেজের উদ্দেশে পা বাড়াতেই অনাবিল আনন্দে আমার মনটা ভরে উঠল। কিছু সময়ের ব্যবধানেই কলেজে গিয়ে হাজির হলাম। কলেজের বিরাট বিরাট বিল্ডিং আমাকে মোহিত করল।

 

কলেজে তোমার প্রথম দিনের বর্ণনা দিয়ে পত্র

 

বিল্ডিংগুলোরদেয়ালে বিভিন্ন বাণী আমার দৃষ্টিকে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করল : “এসো হে নবীন- ফুলের মতো গড়ি জীবন’‘বেজে উঠলো কি সময়ের ঘড়ি?/ এসো, তবে আজ বিদ্রোহ করি।’শুরু হল নবীনবরণ অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান শেষে প্রিন্সিপাল স্যার যার যার ক্লাসে যাওয়ার জন্যে ঘোষণা দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে আমরা যার যার ক্লাসে চলে গেলাম। এটি ছিল বাংলা ক্লাস। কেমন একটা অজানা ভয়-আবার একইসঙ্গে আনন্দে বুককাঁপছিল। ক্লাস নিলেন অধ্যাপক মফিজুল ইসলাম। স্যার সবার উদ্দেশে প্রথমে যে কথাটি বললেন, তা হল— ‘আজ বন্ধ কাল ছুটি, কলেজ জীবন মোটামুটি। ‘ছিপছিপে গড়নের এই মানুষটি এত চমৎকার বাচন ভঙ্গির অধিকারী যে আমি তাঁকে প্রথমেই পছন্দ করে ফেললাম।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

তারপর ইংরেজি ক্লাস শুরু হল— প্রতিটি ক্লাসই আমার কাছে ছিল উপভোগ্য। কলেজ জীবনের প্রথম দিনেই আমি বুঝতে পারলাম যে, চলমানতাই কলেজ জীবনের ধর্ম। এ-দিনেই আমি স্বাধীন জীবনের পরিপূর্ণ স্বাদ লাভ করলাম। প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা আমাকে বলে দিল, আমার আছে অফুরন্ত স্বাধীনতা। কিন্তু আমাকে সময়ের অপব্যয় করলে হবে না, বন্ধুত্বও করতে হবে সৎ, ভদ্র ও রুচিশীল ছেলেদের সঙ্গে। আজ আর নয়। তুমি ভালো থেকো, সুন্দর থেকো, শ্রেণিভেদে সালাম ও স্নেহ রইল।

প্রীতিমুগ্ধ

ইতি

আরও দেখুন:

Leave a Comment