কত বড়ো আমি কহে নকল হীরাটি | ভাব-সম্প্রসারণ | ভাষা ও শিক্ষা

কত বড়ো আমি কহে নকল হীরাটি | ভাব-সম্প্রসারণ | ভাষা ও শিক্ষা ,ভাব-সম্প্রসারণ হচ্ছে এভাবে সুসংগত সমর্থক প্রসারণ। ভাবের সংহতিকে উম্মোচিত, নির্ণীত করে একটি অতুলনীয় দৃষ্টান্ত বা প্রবাদ প্রবচন এর সাহায্যে সহজ ভাষায় বিস্তারিত তত্ত্বের প্রসারণ ঘটে তাকে মূলত ভাব-সম্প্রসারণ বলা হয়। ভাব সম্প্রসারণ সাধারণত কবিতা বা যে কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একটি চলন এর মাধ্যমে তা ভাবে পূর্ণ বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। আর এই আলোচনায় ভাবনা লুকায়িত সকল মানব জীবনের আদর্শ এবং ব্যক্তিচরিত্রের বিশেষ বৈশিষ্ট্য, নৈতিকতা এবং বিচ্যুতি ফুটে উঠে।

কত বড়ো আমি কহে নকল হীরাটি

বস্তুর বহিরঙ্গ আকৃতিতে অভিভূত না হয়ে তার অন্তরস্থ সত্য উপলব্ধিতেই আছে সার্থকতা। আয়তনের দিক থেকে বিশালত্ব, চাকচক্যের দিক থেকে ঔজ্জ্বল্য শ্রেষ্ঠত্বের পরিচায়ক নয়। মিথ্যা পরিচয় নিয়ে যারা বড়াই করে, তাদের গর্ব ঠুনকো। আর যারা প্রকৃত অর্থে বড়, তারা নিরহংকার ও বিনয়ী হয়। মিথ্যা, ভিত্তিহীন পরিচয়ের অহংকার নিয়ে বেশিদিন চলা যায় না। একদিন না একদিন তার আসল পরিচয় ধরা পড়বেই। তখন তার অহংকার চূর্ণ হয়ে কচুপাতার পানির মতো গড়িয়ে পড়ে।

 

কত বড়ো আমি কহে নকল হীরাটি

 

এই পৃথিবীতে যাঁরা প্রকৃত মহৎ তাঁদের সুকৃতি আত্মপ্রচারের অপেক্ষা রাখে না। তাঁদের প্রকাশ স্বতঃস্ফূর্ত। হীরক মহামূল্যবান ধাতু। খাঁটি হীরক আকারে ছোট হয়। পক্ষান্তরে নকল হীরক হয় আকারে বড়। কিন্তু নকল হীরা যতই বড় হোক না কেন, সে আসল হীরার মতো অপরূপ আলোকরশ্মি বিচ্ছুরণের মাধ্যমে মনোহর বর্ণালিছটার সৃষ্টি করতে পারে না। তার আকৃতি বা আত্মপ্রচার কোনোটাই তাকে খাঁটি হীরকে পরিণত করতে পারে না। সে মেকি, মেকিই থেকে যায়। বরং নিজের আকৃতি এবং আলোকরশ্মি বিচ্ছুরণে অতিরিক্ত কৃত্রিমতার কারণে সে ধরা পড়ে যায়।

আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে, যারা সত্যিকার অর্থে খুবই তুচ্ছ, নিকৃষ্ট, হীনচিত্ত, কিন্তু অহমিকায় অদ হয়ে তারা বাইরে প্রচার করে যে তারা অনেক বড়। এমনকী প্রচারসর্বস্ব পন্থায় সমাজের কাছ থেকে নাম কেনার চেষ্টা করে। শুধু তাই নয়, অনেক সময় হীনচিত্তের এ মানুষগুলো নকল হীরের মতো আমাদের সমাজের মধ্যমণি হয়ে ওঠে। কিন্তু অন্যকে তুচ্ছজ্ঞান করে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বেশিদূর অগ্রসর হওয়া যায় না। তাদের আত্মপ্রচারের মধ্য দিয়ে তারা যে প্রকৃত ছোট তা ধরা পড়ে যায়। একদিন তাদের সত্যিকার মুখোশ বেরিয়ে পড়ে। তখন মুখ লুকোবার জায়গা থাকে না। বস্তুত নিজের ঢাক নিজে পিটিয়ে কখনও বড় হওয়া যায় না।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

প্রকৃতই যারা বড় তাঁদের নিজের ক্ষমতা জাহিরের প্রয়োজন হয় না। তাঁদের সুকৃতির আলোতেই লোকে তাদের পরিচয় পায়। মানুষের মহত্ত্ব প্রমাণিত হয় তার বিশ্বাস, কাজ, মূল্যবোধ, মন-মানসিকতা ইত্যাদি দিয়ে। আকাশে চাঁদ উঠলে তাকে দেখার জন্যে। যেমন আলো জ্বালাবার প্রয়োজন হয় না, এমনিতেই দেখা যায়, তদ্রূপ প্রকৃত মহৎ ব্যক্তিদের স্বভাব ও কর্মের গুণে স্বাভাবিকভাবেই চিহ্নিত করা যায়। বাইরের দিক থেকে আকৃতিগত বিরাটত্ব যার, অন্তরের দিক থেকে তার মহত্ত্ব হয়ত নিতান্ত অকিঞ্চিৎকর।

প্রকৃত শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্ব বস্তুর বহিরঙ্গের আকার-অবয়বে নয়, বিরাটত্বে বিশালত্বে নয়, তার আভ্যন্তরীণ গুণধর্মে, অন্তরস্থ সৌন্দর্যে। প্রকৃতপক্ষে, নিছক বাহ্য আকৃতি কারোর আসল পরিচয় বহন করে না। বিশালকায় ডাইনোসর লক্ষ বছর আগে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তার দৈহিক আকৃতি তাকে টিকিয়ে রাখতে পারে নি। তেমনি হৃদয়ের বিশালতাই মানুষকে বড় করে, দেহের বিশালতা কিংবা অর্থ-সম্পদের প্রাচুর্য বা ক্ষমতার প্রাবল্য তাকে একটুও বড় করে না।

 

কত বড়ো আমি কহে নকল হীরাটি

 

বস্তুত যাদের কর্মের ভাণ্ডার শূন্য; নিষ্ঠা, সাধনা ও শ্রমে যারা বিমুখ, মনের দিক থেকে যারা নিকৃষ্ট, চিন্তায় যারা তরল তারাই আত্মপ্রচারসর্বস্ব হয়। প্রকৃত গুণিব্যক্তিগণ কখনোই অহেতুক আত্মপ্রচারের কৌশল অবলম্বন করেন না। যার গুণ আছে তার সুনাম এমনিতেই প্রকাশ পায়। পক্ষান্তরে, মিথ্যা পরিচয়ে যে অহংকার করে, একদিন তার সত্য পরিচয় উন্মোচিত হলে সে লজ্জিত হয়।

আরও দেখুন:

Leave a Comment