লিঙ্গের কতকগুলো বিশেষ নিয়ম – আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “ভাষা ও শিক্ষা” বিভাগের “পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ (লিঙ্গ)” বিষয়ের একটি পাঠ। ব্যাকরণ বলতে সাধারণত ভাষার কাঠামোর, বিশেষ করে শব্দ ও বাক্যের কাঠামোর, গবেষণাকে বোঝায়। এ অর্থে ব্যাকরণ হল কোন ভাষার রূপমূলতত্ত্ব ও বাক্যতত্ত্বের আলোচনা। কখনও কখনও আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানে ব্যাকরণ পরিভাষাটি দিয়ে কোন ভাষার কাঠামোর সমস্ত নিয়মকানুনের বর্ণনাকে বোঝানো হয়, এবং এই ব্যাপকতর সংজ্ঞার ভেতরে ঐ ভাষার ধ্বনিতত্ত্ব ও প্রয়োগতত্ত্বের আলোচনাও চলে আসে।
কতকগুলো বিশেষ নিয়ম | পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ (লিঙ্গ) | ভাষা ও শিক্ষা
১. কতকগুলো শব্দে পুরুষ ও স্ত্রী দু-ই বোঝায়। যেমন : জন, পাখি, শিশু, সন্তান, শিক্ষিত, গুরু ইত্যাদি।
২. কতকগুলো শব্দে কেবল পুরুষ বোঝায় এবং কতকগুলো শব্দে কেবল স্ত্রী বোঝায়। যেমন : পুরুষ- কবিরাজ, ঢাকী, কৃতদার, অকৃতদার ইত্যাদি। স্ত্রী— সতিন, সত্মা, সধবা ইত্যাদি।
৩. কিছু পুরুষবাচক শব্দের দুটো করে স্ত্রীবাচক শব্দ রয়েছে। যেমন : দেবর ননদ (দেবরের বোন) / জা (দেবরের ত্রী), ভাই – বোন এবং ভাবি / বৌদি (ভাইয়ের স্ত্রী), বন্ধু – বান্ধবী (মেয়ে বন্ধু) এবং বন্ধুপত্নী (বন্ধুর স্ত্রী) ইত্যাদি।
8. বাংলা স্ত্রীবাচক শব্দের বিশেষণ হয় না। যেমন : সুন্দর ছেলে – সুন্দর মেয়ে, সুন্দর বলদ – সুন্দর গাই, মেজ খুড়ো – মেজ খুড়ি ইত্যাদি।
৫. বিধেয় বিশেষণ অর্থাৎ বিশেষ্যের পরবর্তী বিশেষণও স্ত্রীবাচক হয় না। যেমন : মেয়েটি পাগল হয়ে গেছে (‘পাগলি হয়ে গেছে’ হবে না)। আসমা ভয়ে অস্থির (‘অস্থিরা’ হবে না)।
৬. কুল উপাধির স্ত্রীবাচকতা রয়েছে। যেমন : ঘোষ (পুরুষ) — ঘোষজা (কন্যা অর্থে), ঘোষজায়া (পত্নী অর্থে)। সাধারণত পদবির লিঙ্গান্তর হয় না, নন্দী – নন্দিনী কিংবা মিত্র – মিত্রা হয় না। কিন্তু গুপ্ত গুপ্তা হয়। যেখানে লিঙ্গবোধটিকে গৌণ করেও দেখা যেতে পারে সেক্ষেত্রে কিছু শব্দকে উভয়য়িলঙ্গ করে নেওয়া হচ্ছে। যেমন : কবি, সম্পাদক, সভাপতি, চেয়ারম্যান- এই শব্দগুলো আজকাল মহিলা ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ হচ্ছে।
৭. এমন কিছু শব্দ আছে যা বাগ্বিধির অন্তর্গত, তা পুংলিঙ্গবাচক হলেও স্ত্রীলোকদের বোঝাতে পারে, আবার এমন শব্দও আছে যা স্ত্রীবাচক হয়েও পুরুষদের বোঝাতে পারে। যেমন : ছেলেবেলা যেমন ছেলেদেরও হতে পারে তেমনি মেয়েদেরও হতে পারে। ‘মেয়েবেলা’ বলে কোন কথা হতে পারে না। ‘মেয়েবেলা’ বললে বাগ্বিধিলঙ ঘন হয়। মা বিবাহিত মেয়েকে বলছেন, কী ছেলেমানুষি করছিস। এখানে ‘মেয়েমানুষি’ হবে না। একজন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে বলছেন, “থাক, ভাই, তোর সতীপনার কথা আর বলিস না। তোর বাড়ি গাড়ি কী করে হয়েছে আমি তা জানি।’ এখানে সতীপনা মানে সততা ।

পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ :
আরও দেখুন:
- ভাষারীতি এবং রূপান্তরের নিয়ম | বাংলা ভাষা | ভাষা ও শিক্ষা
- বাংলায় পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ | প্রত্যয়ঘটিত স্ত্রীবাচক শব্দ | বিশেষ নিয়মে সাধিত স্ত্রীবাচক শব্দ | পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ (লিঙ্গ) | ভাষা ও শিক্ষা
- লিঙ্গের প্রকারভেদ | বাংলায় পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ এবং লিঙ্গ পরিবর্তন | পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ (লিঙ্গ) | ভাষা ও শিক্ষা
- লিঙ্গ ও লিঙ্গভেদে শব্দভেদ | পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ (লিঙ্গ) | ভাষা ও শিক্ষা