ঐতিহাসিক স্থানের বিবরণ দিয়ে বন্ধুকে পত্র | পত্র বা চিঠি | ভাষা ও শিক্ষা

ঐতিহাসিক স্থানের বিবরণ দিয়ে বন্ধুকে পত্র | পত্র বা চিঠি | ভাষা ও শিক্ষা , চিঠি বা পত্র হলো একজনের পক্ষ থেকে অন্যজনের জন্য লিখিত তথ্যধারক বার্তা। চিঠি দুজন বা দুপক্ষের মধ্যে যোগাযোগ বজায় রাখে; বন্ধু ও আত্মীয়দের আরও ঘনিষ্ট করে, পেশাদারি সম্পর্কের উন্নয়ন করে এবং আত্মপ্রকাশের সুযোগ দেয়। স্বাক্ষরতা টিকিয়ে রাখতেও একসময় চিঠির অবদান ছিল।

ঐতিহাসিক স্থানের বিবরণ দিয়ে বন্ধুকে পত্র

ডেমরা, ঢাক ০৭ জানুয়ারি, ২০০০

প্ৰিয় ‘ক’
আমার অসংখ্য প্রীতি ও শুভেচ্ছা নিও। অনেক দিন তোমার কোনো খোঁজ-খবর পাচ্ছি না। পূর্ববর্তী চিঠিতে তোমাকে বলেছিলাম যে, ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে ‘কুমিল্লা, শালবন বিহার’ দেখার ইচ্ছা আমার অনেক দিনের। সৌভাগ্যক্রমে আজই সে ইচ্ছা পূরণের সুযোগ পেয়ে যাই। কলেজ থেকে আমরা সবাই মিলে ইতিহাস ও বাংলার স্যারকে সঙ্গে নিজে চলে এলাম শালবন বিহার দেখতে। এ ভ্রমণে আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরে লিখতে শুরু করলাম। আমরা যখন শালবন বিহারে পৌঁছলাম তখন সকাল দশটা। আকাশে ছিল খণ্ড খণ্ড মেঘ। সূর্য কখনো মেঘের আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে, কখনো তীব্র উত্তাপ ছড়াচ্ছে। জায়গাটা প্রথমে দেখতে ভাল লাগছিল না কিন্তু কিছু সময়ের মধ্যে এখানকার পুরাকীর্তি ও সভ্যতা এবং জাদুঘর সম্পর্কে জানতে পেরে আনন্দে মনটা ভরে উঠল।

 

ঐতিহাসিক স্থানের বিবরণ দিয়ে বন্ধুকে পত্র

 

এখানে রয়েছে অনেক পুরোনো ঐতিহাসিক নিদর্শন, লালমাই, পাহাড়, শালবন বিহারসহ ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড, বার্ডসহ আরো অনেক জানার ও দেখার জিনিস। শিক্ষকবৃন্দ আমাদের সঙ্গে নিয়ে সব কিছু দেখান এবং প্রতিটি জিনিসের ঐতিহাসিক গুরুত্ব বুঝিয়ে দেন। আমার মনে হল আমি হাজার বছর আগে চলে গেছি। চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি ধ্যানমগ্ন বৌদ্ধসাধকদের। এককালে এখানে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা লেখাপড়া ও ধর্মচর্চা করতেন। সেই পুরোনো আমলের ধ্বংসাবশেষ দেখতে দেখতে গর্ব হল, শতশত বছর আগের ঐতিহ্য আমরা বয়ে চলেছি। এক সময় কত প্রাণচাঞ্চল্যই না ছিল এখানে। বিহারের ১১৫টা প্রকোষ্ঠে সাধনা করতেন বৌদ্ধ সাধকরা। আজ সব কালের সাক্ষী হয়ে পড়ে রয়েছে। মূল বিহারটি চারকোণা, প্রতি পাশে ৫৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের দেয়াল। প্রাচীন দেব রাজবংশের গড়ে তোলা সভ্যতা আজ ছিন্নভিন্ন, ছড়ানো-ছিটানো এক ধ্বংসস্তূপ।

 

ঐতিহাসিক স্থানের বিবরণ দিয়ে বন্ধুকে পত্র

 

রকিবের হাতে ছিল ক্যামেরা। সে ঝটপট অনেকগুলো ছবি তুলে নিল। আমি ও টিংকু একসঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম। বিহারের সাথেই রয়েছে জাদুঘরটি। ধ্বংসস্তূপ থেকে পাওয়া নানা নিদর্শন সাজানো রয়েছে। প্রাচীনকালের হাতিয়ার, তাম্রলিপি, মুদ্রা, অলঙ্কার, ব্রোঞ্জের মূর্তি, পোড়ামাটির চিত্রফলকসহ নানা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখে অবাক হলাম। আমাদের ইতিহাসের স্যার জানালেন, প্রত্নতাত্ত্বিক খননের সময় নাকি এখানে কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের চিহ্নই পাওয়া যায় নি।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

ব্রাহ্মণ্যধর্মের পুনর্জাগরণের ফলেই বৌদ্ধধর্ম রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা হারায়। ফলে এই সভ্যতা জনশূন্য হতে হতে একসময় ধ্বংস হয়ে যায়। সবকিছু দেখতে দেখতে ও জানতে জানতে প্রায় দুপুর গড়িয়ে গেল। শালবন বিহার, মন্দির আর জাদুঘর দেখে ফিরলাম সন্ধ্যাবেলা। এবার তুমি ঢাকা এলে অবশ্যই তোমাকে নিয়ে যাবো।তোমার আব্বু ও আম্মুকে আমার সালাম দিও এবং ভাই-বোনকে দিও আমার অফুরন্ত আদর। চিঠি লিখো।

ইতি
প্রীতিমুগ্ধ

আরও দেখুন:

Leave a Comment