একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা [ Ekushey February Essay ]
একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সহ পশ্চিমবঙ্গ তথা সমস্ত বাংলা ভাষা ব্যবহারকারী জনগণের গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন। এটি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবেও সুপরিচিত। বাঙালি জনগণের ভাষা আন্দোলনের মর্মন্তুদ ও গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতিবিজড়িত একটি দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ১৯৫২ সালের এই দিনে (৮ ফাল্গুন, ১৩৫৮, বৃহস্পতিবার) বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণে অনেক তরুণ শহীদ হন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো রফিক, জব্বার, শফিউল, সালাম, বরকত সহ অনেকেই। তাই এ দিনটি শহীদ দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ৫ই আগষ্ট, ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়।
Table of Contents
একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা
ভূমিকা:
“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি”
একুশে ফেব্রুয়ারিকে আমরা ভুলতে পারি না। কারণ একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনের এক অমর অধ্যায়। একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের বেদনার কনক চেতনার মশাল। একুশের চেতনামন্ত্রে উজ্জীবিত হয়েই আমরা পেয়েছি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। পেয়েছি কথা বলার অধিকার, পেয়েছি মাঝে মা বলে ডাকার অধিকার। বস্তুত জাতীয় জীবনের যে কোন সময় একুশের চেতনা আমাদের পথ দেখায়।
মূল বক্তব্য :
(ক) একুশের প্রেক্ষাপট :
একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাভাষাকে মাতৃভাষারূপে প্রতিষ্ঠাদানের জন্য নিজেদের উৎসর্গ করার এক স্বরণীয় দিবস। আমরা জানি ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যখন গণপরিষদে বাংলা ভাষাকে পাশ কাটিয়ে উর্দু ও ইংরেজি ভাষায় বক্তৃতা দানের ফরমান জারি হল তখন গণপরিষদের কিছু সংখ্যক পূর্ববাংলার সদস্য বাংলাভাষায় বক্তৃতা নানের দাবি তোলেন। কিন্তু কায়েমী স্বার্থের বাহকরা এর বিরুদ্ধাচারণ করতে থাকে। তারা তৎকালীন পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৬৩ ভাগ জনতার মাতৃভাষা বাংলাকে অবজ্ঞা করে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা দেয়ার পাঁয়তারা শুরু করে। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় তখন এক জনসভায় দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দেন। বাংলাদেশের আপামর জনতা সেদিন জিন্নাহর এই অবৈধ ঘোষণা মেনে নেয়নি। এর প্রতিবাদে তারা বিক্ষোভ করে, সংগ্রাম করে এবং প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কিন্তু জিন্নাহর মৃত্যুর কারণে এ আন্দোলনে কিছুটা ভাটা পড়ে।
আমাদের আরও প্রতিবেদন পড়ুন:
- বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রচনা [ Essay on The natural beauty of Bangladesh ]
- নারী শিক্ষার গুরুত্ব, অথবা, নারী শিক্ষা, অথবা, নারী শিক্ষা ও জাতীয় উন্নয়ন [ The importance of women’s education ]
- হার্ডির টেস : “A Pure Woman”? সাহিত্যে নারীজীবনের রূপায়ণ
- খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা রচনা [ Essay on Importance of Sports ]
(খ) ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন :
১৯৫২ সালে খাজা নাজিমউদ্দীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়ে পূর্ব পাকিস্তান সফর করতে আসেন। এখানে এসে ঢাকা আউটার স্টেডিয়ামের বিশাল জনসভায় তিনি জিন্নাহর সুরে সুর মিলিয়ে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দেন। এ ঘোষণা দেয়ার পর পরই বাংলার দামাল ছেলেরা প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। ঢাকাসহ সারা দেশে তখন বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠাদানের জন্য আন্দোলন গড়ে ওঠে। বাংলাভাষার পাবিতে শ্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে ঢাকার রাজপথ, সরকারি পেটোয়া বাহিনীর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে, ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ঢাকা শহর তখন মিছিলের শহরে পরিণত হয়। এ আন্দোলনকে বানচাল করার জন্য সরকারের পেটোয়া বাহিনী বাংলা মায়ের দামাল ছেলেদের ওপর গুলি বর্ষণ করে। ৫২’র একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ হন বাংল মায়ের সবুজ সন্তান সালাম-রফিক-জব্বার বরকত প্রমুখ। রাজপথ তখন আমার ভাইয়ের রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায়।
(গ) জাতীয় জীবনে একুশের তাৎপর্য/চেতনা:
একুশ বাঙালি জাতিকে প্রতিবিন্দু রক্তের জাগরণে জন্ম দিয়েছে। প্রতিষ্ঠা নিয়েছে এর ভাষাকে। একুশ মানে তাই আমরা বুঝি একতাবদ্ধতা, উন্নততর নৈতিক মূল্যবোধ, স্বদেশপ্রেম, ভ্রাতৃপ্রেম, মাতৃপ্রেম, মুক্তবুদ্ধি ইত্যাদি। একুশের মর্মবাণী বলতে আমরা বুঝ কারো কাছে মাথা নত না করা। একুশের দাবি বলতে আমরা বোঝি জীবনের দাবিকে ঘোষণা করা। একুশের অঙ্গীকার বলতে আমরা বোঝি হৃদয়ের অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়া। একুশ মানে আমরা বুঝি প্রতিবাদ, প্রতিরোধ আন্দোলন, সংগ্রাম। এই প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, আন্দোলন ও সংগ্রামের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে ১৯৭১ সালে ছিনিয়ে এনেছি আমাদের স্বাধীনতা, পেয়েছি মুক্ত স্বদেশ।
উপসংহার :
কিন্তু পরিতাপের বিষয়, একুশের চেতনাকে একুশের তাৎপর্যকে ভুলে গিয়ে আজ আমরা পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে কলহে লিপ্ত। ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদানেরা যে আপন বুকের তাজা রক্তে মাটি ভিজিয়ে এদেশের কোটি কোটি মানুষের মাতৃভাষার অধিকারকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল আমরা আজ সে লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত। তাঁদের সে আত্মত্যাগকে আমরা করছি অবজ্ঞা এই আত্মসংকট থেকে মুক্তি পেতে চাইলে আমাদের পুনরায় একুশের চেতনায় উজ্জীবিত হতে হবে, দেশ গড়ার কাজে মনোনিবেশ করতে হবে।
আরও পড়ুন: