আমার প্রিয় কবি/সাহিত্যিক রচনা, কাজী নজরুল ইসলাম [ Kaji Nazrul Islam ] অথবা, কাজী নজরুল ইসলাম এর জীবনি – নিয়ে একটি প্রতিবেদন রচনার নমুনা দেয়া হল।
![আমার প্রিয় কবি/সাহিত্যিক রচনা, কাজী নজরুল ইসলাম প্রতিবেদন রচনা | Kaji Nazrul Islam 1 আমার প্রিয় কবি- কাজী নজরুল ইসলাম [ Kazi Nazrul Islam ]](https://banglagoln.com/wp-content/uploads/2022/02/Kazi-Nazrul-Islam-কাজী-নজরুল-ইসলাম-10-300x200.jpg)
Table of Contents
আমার প্রিয় কবি/সাহিত্যিক রচনা
আমার প্রিয় কবি হলেন কাজী নজরুল ইসলাম। রবীন্দ্রোত্তর কবিদের মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় কবি কাজী-নজরুল-ইসলাম। যুগের চাহিদা পূরণে যে ক’জন কবির আগমন পৃথিবীতে ঘটেছে তার মধ্যে নজরুল ইসলাম অন্যতম। তিনি বিদ্রোহ ও সাম্যের কবি। এক হাতে মম বাঁশের বাঁশরী, আর এক হাতে রণতূর্য’ নজরুল কাব্যের এটাই বৈশিষ্ট্য।
![আমার প্রিয় কবি/সাহিত্যিক রচনা, কাজী নজরুল ইসলাম প্রতিবেদন রচনা | Kaji Nazrul Islam 2 কাজী নজরুল ইসলাম [ Kazi Nazrul Islam ]](https://banglagoln.com/wp-content/uploads/2022/02/Kazi-Nazrul-Islam-কাজী-নজরুল-ইসলাম-9-197x300.jpg)
মূল বক্তব্যঃ
জন্ম ও বংশ পরিচয়:
কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মে (১৩০৬ সনের ১২ জ্যৈষ্ঠ) ভারতের পশ্চিম বঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে অনুগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কাজী ফকির আহমদ এবং মায়ের নাম জাহেদা খাতুন।
শিক্ষাজীবন:
ছেলেবেলায় কাজী-নজরুল-ইসলাম মামা লেটো দলে যোগদান করেন। পরে বর্তমানের ও ময়মনসিংহের ত্রিশাল দরিরামপুর হাই স্কুলে লেখাপড়া করেন। তিনি গ্রাম্য মক্তর থেকে নিম্ন প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চৌদ্দ বছর বয়সে রাণীগঞ্জের সিয়ারসোল রাজ হাই স্কুলে ভর্তি হন। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি দশম শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালীন সৈনিক হিসেবে চাকরি নিয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগদান করেন।

কর্মজীবন:
বাল্যকাল থেকেই কাজী নজরুল ইসলাম চরম দারিদ্র্যের তীব্র কষাঘাতের মুখোমুখি হন। আসানসোলের রুটির দোকানে কাজ করা থেকে শুরু করে প্রতিকূল পরিবেশে তাঁর বাল্যকাল কেটেছে। সে সময় থেকেই কবি প্রতিভা বিকশিত হতে শুরু করে। কবি যখন দশম শ্রেণীর ছাত্র তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে। তিনি তখন বাঙালি পল্টনে যোগদান করে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে নজরুল ইসলাম মোসলেম ভারত’ =| পত্রিকায় লেখা শুরু করেন। তাঁর আবেগময় কবিতা রচনা ও অনন্য বৈচিত্র্যময় কানা প্রতিভার শুনে অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন।
![আমার প্রিয় কবি/সাহিত্যিক রচনা, কাজী নজরুল ইসলাম প্রতিবেদন রচনা | Kaji Nazrul Islam 4 কাজী নজরুল ইসলাম [ Kazi Nazrul Islam ]](https://banglagoln.com/wp-content/uploads/2022/02/Kazi-Nazrul-Islam-কাজী-নজরুল-ইসলাম-6-225x300.jpg)
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদান:
কবি নজরুল ইসলাম অল্প সময় সাহিত্য সাধনা করলেও বাংলা সাহিত্যে তিনি গৌরবের আসনে অধিষ্ঠিত হয়ে আছেন। বাংলা সাহিত্যে তাঁর আবির্ভাব ধূমকেতুর মত। তিনি নিপীড়িত, নির্যাতিত, পাঞ্ছিত মানুষের কবি। কুশাসন ও শোষণের নাগপাশ থেকে বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য তিনি শেকল ভাঙার গান, বিদ্রোহের গান গেয়েছেন। তাঁর এই গান ঘুমন্ত ও অবচেতন জাতিকে জাগিয়ে তুলেছে। স্বাধীনতা ও মুক্তির আকাঙ্খায় মানুষ জেগে ওঠেছে।
নজরুল ইসলাম মানবতার কবি। সামোর কবি নজরুল কারো মানুষই মূলকথা। তাঁর লেখনিতে মানুষকে তিনি মানুষ হিসেবেই দেখছেন। তাঁর সাহিত্যে জাতিভেদ, ধর্মভেদ, সম্প্রদায় ও শ্রেণীবৈষম্য বলতে কিছু নেই। তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে গেয়ে ওঠেন-
“গাহি সাম্যের গান
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই
নহে কিছু মহীয়ান’।
কবি নজরুল ইসলাম অসাধারণ ও অনন্য প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তিনি একাধারে বাঙালি মুসলিম জাগরণের কবি। আবার হিন্দু সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে বিশ্বাসী। তাই একই হাতে রচিত হয়েছে ইসলামী গান এবং সুললিত শ্যামা সংগীত। শিশুতোষ রচনায় এবং বাঙ্গ ও কৌতুক দৃষ্টিতেও কবির যথেষ্ট কৃতিত্বের পরিচয় পাওয়া যায়। এছাড়া গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ ইত্যাদিতেও নজরুলের তুলনা বিরল। বাঙালি জাতি নজরুল সাহিত্য ছাড়া অন্য কারো সাহিত্যে এমন গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হয়নি।
![আমার প্রিয় কবি/সাহিত্যিক রচনা, কাজী নজরুল ইসলাম প্রতিবেদন রচনা | Kaji Nazrul Islam 5 কাজী নজরুল ইসলাম [ Kazi Nazrul Islam ]](https://banglagoln.com/wp-content/uploads/2022/02/Kazi-Nazrul-Islam-কাজী-নজরুল-ইসলাম-7-279x300.jpg)
গ্রন্থপঞ্জি:
কাজী নজরুল ইসলাম বিরচিত প্রধান গ্রন্থ সমূহের নাম হচ্ছে- অগ্নিবীণা (কাব্য), দোলন চাঁপা (কাবা), বিষের বাঁশী (কাব্য), চক্রবাক (কাব্য), ঝিলিমিলি (কাবা), ব্যাথার দান (উপন্যাস), রিভের বেদন (উপন্যাস), দুদিনের যাত্রী (প্রবন্ধ), রুবাইয়াত-ই-ওমর খৈয়াম (অনুবাদ), ধূমকেতু (পত্রিকা), বিদ্যাকেতু (পত্রিকা), পুতুলের বিয়ে (রেকর্ড নাট্য)।
নজরুলের জীবনের সর্বাপেক্ষা কর্মবহুল সময় :
কাজী নজরুল ইসলামের জীবনী বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সৃষ্টিশীল প্রতিভার বিকাশ নজরুলের শৈশব থেকে দেখা গেলেও এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে মূলত ১৯২০ সাল থেকে ১৯৪৫ সালের জুন পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে নজরুল রচনা করেছেন তার দীর্ঘ সঙ্গীতভাণ্ডার, গল্প, কবিতা, সাহিত্য, প্রবন্ধ ইত্যাদি। নজরুলের জীবনের কর্মবহুল সময় বলতে এই সময়কেই বোঝানো হয়ে থাকে ।
মহাপ্রয়াণ:
মাত্র চল্লিশ বছর বয়সে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে কবি প্রতিভার অকাল মৃত্যু ঘটে এবং দীর্ঘকাল রোগভোগের পর ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট (১২ ভাদ্র) তিনি ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
![আমার প্রিয় কবি/সাহিত্যিক রচনা, কাজী নজরুল ইসলাম প্রতিবেদন রচনা | Kaji Nazrul Islam 6 কাজী নজরুল ইসলাম [ Kazi Nazrul Islam ]](https://banglagoln.com/wp-content/uploads/2022/02/Kazi-Nazrul-Islam-কাজী-নজরুল-ইসলাম-4-300x169.jpg)
উপসংহার :
মূলত অত্যাচারিত ও নিপীড়িত জনতার হাহাকার কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখায় সাবলীলভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। আবার রোমান্টিক অনুভবের নিবিড়তাও চিত্রিত হয়েছে। বলা চলে সব শ্রেণীর মানুষের কাছে তিনি সমান জনপ্রিয় ছিলেন। মানবিক আবেদনে তাঁর লেখনী ভরপুর ছিল। তাঁর জনপ্রিয়তার মূল সুর এখানেই নিহিত। এই মানবিক আবেদনের জন্যেই তাকে আমার এত ভাল লাগে।

আরও পড়ুন:
- প্রতিবেদন রচনা – একজন মহৎ মানুষের জীবনী/ হযরত মুহম্মদ (স) রচনা
- কাজী-নজরুল ইসলামের জীবনী [ সংক্ষিপ্ত ] Kazi-Nazrul Islam Biography [ Short ]