আমার কলেজ জীবন, কলেজ জীবনের স্মৃতিচারণ [ Essay on My college life ] অথবা, কলেজ জীবন – নিয়ে একটি প্রতিবেদন রচনার নমুনা দেয়া হল।
Table of Contents
আমার কলেজ জীবন রচনার ভূমিকা:
স্মৃতি স্বপ্নের মত। স্মৃতি আনন্দ এবং বেদনার দুই-ই হতে পারে। মানুষ তার জীবনের কোনো স্মৃতিই সহজে স্কুলে যেতে চায় না। ফেলে আসা দিনগুলোর কথা মনে পড়ে বারবার। তেমনি আমার কলেজ জীবনের দিনগুলো মনের গভীরে সব সময় দোলা দিয়ে যায়।
কলেজে ভর্তির আগে মনের অবস্থা:
আমি ২০০১ সালে যশোরের মুসলিম একাডেমী থেকে এস.এস.সি. পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর থেকে আমার ইচ্ছে আমি দেশের একটি নামকরা কলেজে ভর্তি হবো। তখন থেকেই কলেজের নানা বিষয় সম্পর্কে আমার জানার আগ্রহ জাগে। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকি কবে থেকে শুরু হবে আমার কলেজ জীবন।
৩০ জুন আমার এস.এস.সি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হল। আমি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাচটি বিষয়ে লেটার মার্কসহ ৮৩৫ নম্বর পেয়ে যশোর বোর্ডের মেধা তালিকায় পঞ্চম স্থান লাভ করি। আমার ফলাফলের সংবাদ পেয়ে আমার বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন দারুণ খুশি হলেন। গ্রামের সকলেই আমাকে উৎসাহ দিতে লাগলেন। আমিও ভর্তি পরীক্ষার জন্যে প্রস্তুতি নিতে লাগলাম। ইতোমধ্যে সংবাদপত্রে ভর্তি পরীক্ষার সংবাদ প্রকাশিত হল। জুলাই মাসের ২৫ তারিখে ভর্তি পরীক্ষা দিলাম যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে। আমার বন্ধুরাও তিনজন টিকা। নতুন পরিবেশে শুরু হয় আমার কলেজ জীবন।
কলেজের অভিজ্ঞতা:
ভেবেছিলাম স্কুলের ছকবাঁধা জীবনের পর এবার কলেজে স্বাধীনতা পাব। কিন্তু বাস্তবে ঘটল তার বিপরীত ঘটনা। কলেজের নিয়ম-কানুন স্কুলের চেয়েও বেশি কড়াকড়ি। প্রতিদিন ক্লাসে বাধ্যতামূলক উপস্থিতি, শিক্ষকদের পড়া রীতিমতো না শিখে উপায় ছিল না। প্রথম প্রথম কিছুটা অস্বস্তিবোধ করতাম, পরে তা কেটে গিয়েছিল। বন্ধুরা সবাই যার যাথ পড়া নিয়ে ব্যস্ত। আমিও তাদের সাথে পড়ালেখায় পাল্লা দিতে শুরু করলাম।
সকলেরই একটা আকাঙ্ক্ষা প্রকৌশলী হবার। শিক্ষকদের সবাই স্নেহপ্রবণ ছিলেন। কোনদিন কাউকে কটু কথা বলেননি। বরং প্রতিটি ছাত্রকে পড়ালেখায় উৎসাহ যোগাতেন। কলেজের পরিবেশটি ছিল অত্যন্ত মনোরম। চারদিকে ছায়াঘেরা, ছায়া শীতল, কৃষ্ণচূড়ার রঙিন ফুলের মাধুর্য আর এল আকৃতির একাডেমিক বিল্ডিংটি সত্যি মনোমুগ্ধকর। তাই কলেজ জীবনের প্রতিটি জিনিস আমার কাছে এক নতুন অভিজ্ঞতার উদাহরণ।
কলেজ সাংস্কৃতিক অঙ্গন:
কলেজের সাংস্কৃতিক অঙ্গন বিশাল। কলেজের সামানে বিশাল খেলার মাঠ। অবসর মুহূর্তে আমরা মাঠে ফুটবল নিয়ে মেতে উঠতাম। বর্তমানে আমার অত্যন্ত প্রিয় খেলা ক্রিকেট। আর ক্রিকেটে কয়েকবার আন্তঃকলেজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছে আমাদের কলেজটি। এছাড়াও আমাদের কলেজের ছাত্ররা বিভিন্ন রকমের খেলাধূলায় সুনাম অর্জন করেছে। আমাদের কলেজের বাস্কেটবল দল কয়েকবার ট্রফি জয় করে কলেজকে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এছাড়াও আছে নানা রকম ইনডোর খেলা। যেমন-দাবা, কেরাম, টেবিল টেনিস ইত্যাদি। গত বছর আমাদের কলেজ আন্তঃকলেজ টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতায় বিজয়ের গৌরব অর্জন করেছে। আমাদের কলেজটি জাতীয় টেলিভিশন প্রতিযোগিতায় জয় লাভ করেছিল। তাছাড়া উপস্থিত বক্তৃতায়ও আমাদের কলেজের ছাত্ররা প্রচুর সুনামের অধিকারী।
কলেজে প্রিয় শিক্ষকের সান্নিধ্য:
কলেজের প্রতিটি শিক্ষকই ছিলেন আমার কাছে অত্যন্ত প্রিয়। তাঁরা সকলেই আমাদেরকে পড়া-লেখায় উৎসাহ যোগাতেন। এর সাথে চরিত্র গঠন এবং সচ্চরিত্রবান হওয়ার উপদেশ দিতেন। শিক্ষকদের সকলেই ছিলেন আদর্শবান। শিক্ষকরা আমার জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তোলার জন্যে অনেক উপদেশ দিয়েছেন। প্রয়োজনবোধে নিজের হাতে আমাকে নোট করে দিয়েছেন। যে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর বুঝতে আমার সমস্যা হত, সেগুলো তারা আন্তরিকতার সাথে আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। বিনিময়ে কোনো অর্থ গ্রহণ করেননি। তাদের প্রতিটি উপদেশ ও পরামর্শ আজ আমার চলার পথের পাথেয়। তাই সেসব দিনের স্মৃতি আজো আমার মনকে রোমাঞ্চিত করে এবং আনন্দিত করে।
উপসংহার:
পরিশেষে বলা যায় যে, কলেজ জীবনের কোনো স্মৃতি বা ঘটনাই ভূলবার মত নয়। প্রতিটি স্মৃতি আমার মনের মণিকোঠায় স্বর্ণাক্ষরে গাঁথা হয়ে আছে। এর কোনো স্মৃতিই কোনো দিন ভুলবার মত নয়।
আরও পড়ুন: