আমার একার আলো সে যে অন্ধকার | ভাব-সম্প্রসারণ | ভাষা ও শিক্ষা

আমার একার আলো সে যে অন্ধকার – ভাব-সম্প্রসারণের একটি নমুনা তৈরি করে দেয়া হল। আগ্রহীরা এখন থেকে ধারণা নিয়ে নিজের ভাষায় নিজস্ব সংস্ককরণ তৈরি করবেন। ভাব সম্প্রসারণ এর সময় সেই চরণের মূল গভীর ভাবটুকু উদ্ধার করে প্রয়োজনীয় যুক্তি, বিশ্লেষণ এবং উপমা ব্যবহার করে সেইসাথে প্রয়োজন অনুসারে উদাহরণের মাধ্যমে উপস্থাপন করার প্রক্রিয়া। কবি বা লেখকের যেখানে তার বক্তব্যকে ব্যঞ্জন এবং ইঙ্গিত ধর্মী করে প্রকাশ করেন সেগুলো কে আলোক ধর্মী হিসাবে উপস্থাপন করার মাধ্যমে ভাব সম্প্রসারণ করা হয়।

আমার একার আলো সে যে অন্ধকার

আলোকিত মানুষের মহান দায়িত্ব সকলকে নবচেতনায় উজ্জ্বীবিত করা, জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেয়া এবং অপরকেও আলোকিত করা। পরার্থে জীবন উৎসর্গ করার মাধ্যমে মানবজীবন সার্থকতায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সমাজের কল্যাণে নিজেদের নিঃশেষে বিলিয়ে দেওয়ার মধ্যে আছে পরম সুখ, অনির্বচনীয় আনন্দ ও অপরিসীম পরিতৃপ্তি। সমাজবদ্ধ প্রতিটি মানুষ যদি সমাজের বৃহত্তর কল্যাণের জন্যে নিজ নিজ সামর্থ্য ও যোগ্যতা অনুসারে মেধা ও শ্রম না দেয় তবে সমাজের অগ্রগতি ব্যাহত হয় এবং তা শেষ পর্যন্ত ব্যক্তির জীবনেও সংকট বয়ে আনে। তাই মহৎ ও আলোকিত মানুষ শুধু নিজের অন্ধকার দূর করেই ক্ষান্ত হন না, বরং তাঁর মহৎ জ্ঞানের আলো সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিয়ে বিশ্বময় সমাজকে আলোকিত করে তুলেন।

 

আমার একার আলো সে যে অন্ধকার

 

মানুষের জীবন সমাজের সঙ্গে অচ্ছেদ্য বন্ধনে বাঁধা। প্রাণীজগতে মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের কারণ— মানুষ কেবল নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত নয়। অন্যান্য প্রাণীর মতো কেবল নিজের প্রাণ ও বংশ রক্ষাতেই সে ব্যাপৃত থাকে না, সমাজ-সভ্যতার অগ্রগতিতেও তাকে ভূমিকা রাখতে হয়।

সমাজ জীবনই ব্যক্তিমানুষের জীবনকে নিশ্চিন্ত, নিরাপদ, সুগম ও উন্নয়নমুখী করার নিশ্চয়তা দেয়। তাই, শুধু পরিবার বা সমাজ নয়, রাষ্ট্র নয়, সমগ্র পৃথিবী ও রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং জাতিগোষ্ঠী পরস্পর সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য, নির্ভরতা ও সহযোগিতার মধ্যে বাস করার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। এমন একটি বৈশ্বিক সমাজে আমরা নিজেদের নিয়ে আত্মকেন্দ্রিকভাবে, শুধু নিজের সুখ-শান্তির কথা চিন্তা করে বাস করতে পারব না। প্রকৃতপক্ষে, মানুষ শুধু ভোগ-বিলাস ও স্বার্থের জন্যেই জন্মগ্রহণ করে নি। পরের কল্যাণে জীবনকে উৎসর্গ করার মাঝেই তার জীবনের চরম ও পরম সার্থকতা।

 

আমার একার আলো সে যে অন্ধকার

 

অপরের কল্যাণে নিজকে নিয়োজিত করতে পারলেই জীবন সুখময় ও আনন্দময় হয়ে ওঠে। জগতের সাধু ও মহৎ ব্যক্তিগণও তাই করেন। তাঁরা সর্বদা পরের হিত সাধনে ব্যাপৃত থাকেন এবং পরের তরে জীবন বিসর্জন দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না। কেননা ব্যক্তিস্বার্থ পরিহারের মাধ্যমেই সমাজ সুন্দর ও সার্থক হয়ে ওঠে। মানুষ সবার সঙ্গে সবার মধ্যে সবার জন্যে বাঁচে। পরের কল্যাণে আত্মত্যাগের অপরিসীম আনন্দে জীবন স্নিগ্ধ হয়, পরস্পরের মঙ্গলের চেষ্টাতেই সমাজের কল্যাণ হয়, মানুষের জীবন হয় সার্থক।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

আমরা শুধু নিজের জন্যই জন্মগ্রহণ করিনি, নিজের সুখই আমাদের একমাত্র কাম্য হতে পারে না। পরের কল্যাণকামনা, অন্যের সুখ-দুঃখ-আনন্দ-বেদনা ভাগ করে নেওয়ার মধ্যেই সুখ। এ সুখই আমাদের প্রার্থিত হওয়া উচিত। অন্যের উপকার সাধনই তাই সবার লক্ষ্য হওয়া উচিত।

আরও দেখুন:

Leave a Comment