অর্থসম্পত্তির বিনাশ আছে কিন্তু জ্ঞানসম্পদ কখনো বিনষ্ট হয় না – ভাব-সম্প্রসারণের একটি নমুনা তৈরি করে দেয়া হল। আগ্রহীরা এখন থেকে ধারণা নিয়ে নিজের ভাষায় নিজস্ব সংস্করণ তৈরি করবেন। ভাব সম্প্রসারণ এর সময় সেই চরণের মূল গভীর ভাবটুকু উদ্ধার করে প্রয়োজনীয় যুক্তি, বিশ্লেষণ এবং উপমা ব্যবহার করে সেইসাথে প্রয়োজন অনুসারে উদাহরণের মাধ্যমে উপস্থাপন করার প্রক্রিয়া। কবি বা লেখকের যেখানে তার বক্তব্যকে ব্যঞ্জন এবং ইঙ্গিত ধর্মী করে প্রকাশ করেন সেগুলো কে আলোক ধর্মী হিসাবে উপস্থাপন করার মাধ্যমে ভাব সম্প্রসারণ করা হয়।
অর্থসম্পত্তির বিনাশ আছে কিন্তু জ্ঞানসম্পদ কখনো বিনষ্ট হয় না
নশ্বর এই পৃথিবীতে প্রতিটি বস্তুর ক্ষয় বা বিনাশ অনিবার্য, কিন্তু যে-সম্পদটির বিনাশ নেই বরং বিকাশ আছে তা হল জ্ঞানসম্পদ। জ্ঞান অবিনাশী বলে একবার তা অর্জন করলে সারাজীবনের সম্পদ হিসেবে পরিগণিত হয়। জ্ঞানই মানুষের চরম, পরম ও একান্ত নিজস্ব মহামূল্যবান সম্পদ ।
মানুষের বেঁচে থাকার জন্যে অর্থের প্রয়োজন অনস্বীকার্য। অর্থের জন্যে মানুষ উদয়-অস্ত পরিশ্রম করে। অর্থ এমন একটি সম্পদ যা দিয়ে আমরা ব্যক্তি ও সমাজজীবনে মানুষের অবস্থানকে নির্ণয় করে থাকি। কিন্তু এ অর্থসম্পদ কেবল মানুষের বাইরের দিকটিকেই প্রকাশ করে। অর্থ-সম্পদ যতই শক্তির অধিকারী হোক না কেন, জ্ঞানসম্পদের কাছে তা নিষ্প্রভ। সত্যিকারের জ্ঞানী ব্যক্তি বিত্তশালী লোকের চেয়ে অনেক বেশি ধনবান ও শক্তিমান।
বস্তুত অর্থ- সম্পদের কোনো স্থায়িত্ব নেই। আজকে রাজা, কালকে ফকির এরকম দৃষ্টান্ত অনেক রয়েছে। বিত্তবানের ধনভাণ্ডার এক সময়ে নিঃশেষ হয়ে আসে, কিন্তু বিদ্বানের জ্ঞানভাণ্ডার ক্রমাগত সমৃদ্ধ হতে থাকে। সময়ের ব্যবধানে সে অধিকতর জ্ঞানী হতে থাকে। নশ্বর পৃথিবীতে জ্ঞান অবিনশ্বর। যিনি জ্ঞানী তিনি আমৃত্যু জ্ঞানরূপ সম্পদে সম্পদশালী । তার ক্ষয় নেই।
এমনকি মৃত্যুর পরেও জ্ঞানের প্রাচুর্য পৃথিবীতে বিরাজ করে জ্ঞানীদের অমরত্ব দান করে। তাই অর্থ- সম্পদে নয় জ্ঞানসম্পদে সমৃদ্ধ ব্যক্তিগণই দেশ ও জাতির প্রকৃত সম্পদ, আর এ জন্যে অর্থসম্পদের মাপকাঠিতে নয়, জ্ঞানসম্পদের মাপকাঠিতেই মানুষের মূল্যায়ন হওয়া উচিত। তাই, মহানবী (স) ‘জ্ঞানীর কলমের কালিকে শহীদের রক্তের চেয়েও পবিত্র’ বলেছেন। তিনি ‘দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত ‘ ‘ মানুষকে জ্ঞানার্জনের উপদেশ দিয়েছেন এবং এ-জন্য ‘সুদূর চীনেও যেতে’ উৎসাহিত করেছেন।

জ্ঞান অতুলনীয় সম্পদ। জ্ঞানার্জন ধনার্জনের চেয়েও মহত্তর। মানুষ তার স্বরূপকে ঐশ্বর্যমণ্ডিত করতে পারে শুধু জ্ঞান, আহরণের মধ্য দিয়েই। জাগ্রত করতে পারে নিজের ক্ষমতাকে, সেবাদান করতে পারে বিশ্বমানবতাকে। তাই সবমানুষেরই উচিত জ্ঞান আহরণ করা। স্মরণ রাখতে হবে যে, ‘শিক্ষা বা জ্ঞানই একমাত্র সম্পদ, যা তোমার জীবনের মতো মহামূল্যবান। ‘
আরও দেখুন: