অর্থই অনর্থের মূল | ভাব-সম্প্রসারণ | ভাষা ও শিক্ষা

অর্থই অনর্থের মূল – ভাব-সম্প্রসারণের একটি নমুনা তৈরি করে দেয়া হল। আগ্রহীরা এখন থেকে ধারণা নিয়ে নিজের ভাষায় নিজস্ব সংস্করণ তৈরি করবেন। ভাব-সম্প্রসারণ হচ্ছে এভাবে সুসংগত সমর্থক প্রসারণ। ভাবের সংহতিকে উম্মোচিত, নির্ণীত করে একটি অতুলনীয় দৃষ্টান্ত বা প্রবাদ প্রবচন এর সাহায্যে সহজ ভাষায় বিস্তারিত তত্ত্বের প্রসারণ ঘটে তাকে মূলত ভাব-সম্প্রসারণ বলা হয়। ভাব সম্প্রসারণ সাধারণত কবিতা বা যে কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একটি চলন এর মাধ্যমে তা ভাবে পূর্ণ বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। আর এই আলোচনায় ভাবনা লুকায়িত সকল মানব জীবনের আদর্শ এবং ব্যক্তিচরিত্রের বিশেষ বৈশিষ্ট্য, নৈতিকতা এবং বিচ্যুতি ফুটে উঠে।

অর্থই অনর্থের মূল

স্রষ্টা মানুষকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে সৃষ্টি করেছেন, অপরদিকে পার্থিব জীবনে মানুষের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি অর্থ। তাই অর্থ মানুষের নিয়ন্ত্রণাধীন, তথা অর্থকে সে পরিচালিত করে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মানুষ যখন অর্থের কাছে জিম্মি হয়ে অর্থের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তখনই জগতসংসারে অর্থ অনর্থের মূল হয়ে দাঁড়ায়। অর্থ-সম্পদ মানবজীবনের জন্যে অপরিহার্য হলেও এর যথাযোগ্য ব্যবহার না হলে ব্যক্তি ও সমাজজীবনে নেমে আসে অকল্যাণ।

জীবনধারণের জন্যে অর্থের প্রয়োজন অপরিহার্য। পার্থিব জীবনে অর্থ বা বিত্তই মানুষের একান্ত কামনা। অর্থ বা সম্পদের-মোহে মানুষ জীবনসংগ্রামে লিপ্ত হয়। মানুষ তার কাঙ্ক্ষিত অর্থ উপার্জনের জন্যে কঠোর পরিশ্রম করে এবং নানা প্রতিকূল অবস্থার মোকাবিলা করে। অর্থ মানুষের আজীবন প্রয়োজন মেটায় বলে অর্থ ছাড়া জীবন অর্থহীন বা মূল্যহীন বলে বিবেচিত হয়। তাই সারাজীবন মানুষ অর্থের পেছনে ছোটে। বর্তমান পৃথিবীতে একমাত্র অর্থের মাপকাঠি দ্বারাই প্রতিপত্তি ও সম্মান নির্ণীত হয় বলে, কী করে অর্থ উপার্জন করা যায় তার জন্যে মানুষের চেষ্টার অন্ত নেই।

বিপদে-আপদে, উৎসবে-আনন্দে, জন্ম-মৃত্যুতে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু অর্থ ও সম্পদ অনেকসময় সুখ ও কল্যাণের বদলে অকল্যাণ বয়ে আনে। জগতে সকল অপকর্মের মূলে অর্থ। অর্থই জীবনকে প্রবাহিত করে, আবার অর্থই জীবনকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করে— ‘অর্থই জীবন, অর্থই মৃত্যু।’ অর্থের লোভে নীতিবর্জিত হয়ে মানুষ অহরহ নানা দুষ্কর্মে লিপ্ত হয়। অন্যায় পথে অর্জিত অর্থ মানুষকে বিবেকহীন ও দাম্ভিক করে তোলে। অর্থের লালসা মানুষের নৈতিক অধঃপতন ঘটায়। অর্থের লোভেই চরিত্রহীন হয়ে মানুষ সমাজবিরোধী কাজে লিপ্ত হয়। পৃথিবীর সকল দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও অশান্তির মূলে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকে অর্থ।

অর্থ-সম্পদের স্বার্থেই রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে যুদ্ধের উন্মাদনা জাগে, শ্রমিকে মালিকে বাধে মত-বিরোধ, ভাইয়ে ভাইয়ে শুরু হয় চরম শত্রুতা। অর্থের লোভেই মানুষ মানুষকে খুন করে। তাই জগতের সব অশান্তি ও অনর্থের মূলে রয়েছে অর্থ। অর্থের লোভেই মানুষ নৈতিকতা বিসর্জন দেয়। অর্থই মানুষকে ভুল পথে চালিত করে।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

সুষ্ঠু সমাজজীবন ও স্বাভাবিক জীবন অতিবাহিত করার জন্যে অর্থের প্রয়োজন অনস্বীকার্য। কিন্তু অর্থ যেন অনর্থের মূল না হয় তার দিকে লক্ষ রাখতে হবে। সকল অনর্থের মূল হিসেবে বিবেচিত অর্থ-সম্পদের ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, অর্থের সুষ্ঠু ব্যবহারই এর মর্যাদা বৃদ্ধি করে। প্রসঙ্গত বেকনের উক্তিটি প্রণিধানযোগ্য: ‘টাকা-পয়সা ভৃত্য হিসেবে উত্তম হলেও মনিব হিসেবে একেবারে মন্দ।’

Leave a Comment