“অন্ধ মেয়ে” সুকুমার রায়ের অন্যতম কাব্যরচনা, যা তাঁর ব্যঙ্গাত্মক, রসাত্মক এবং সমাজসচেতন লেখনশৈলীর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। সুকুমার রায় (১৮৮৭–১৯২৩) বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য স্রষ্টা, যিনি মূলত শিশু-কিশোর সাহিত্যে “অবল-তাবল”, “হযবরল” ও “পাগলা দাশু”-এর মতো অমর রচনা উপহার দিয়েছেন। কিন্তু তাঁর সৃষ্টির ভাণ্ডারে রয়েছে এমন কিছু কবিতা ও গদ্য, যেখানে গভীর সামাজিক মন্তব্য ও মানবিক বোধ প্রকাশ পেয়েছে—“অন্ধ মেয়ে” তার একটি।
এই কবিতায় কবি একটি অন্ধ মেয়ের জীবনযন্ত্রণার চিত্র এঁকেছেন, যেখানে দৃষ্টিশক্তির অভাব শুধু শারীরিক অক্ষমতা নয়, বরং সমাজের অবহেলা, সহানুভূতির অভাব ও অসহায়তার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সহজ, প্রাঞ্জল ভাষা, মর্মস্পর্শী চিত্রকল্প এবং সংবেদনশীল আবহ কবিতাটিকে গভীর মানবিক আবেদনময় করে তুলেছে।
“অন্ধ মেয়ে” শুধু একটি চরিত্রকেন্দ্রিক কবিতা নয়; এটি সমাজে প্রান্তিক ও অসহায় মানুষের প্রতি সহমর্মিতার আহ্বান। এখানে সুকুমার রায় তাঁর স্বভাবসুলভ রসিকতা ত্যাগ করে সংবেদনশীল, করুণাময় দৃষ্টিতে পাঠককে মানবতার পাঠ শিখিয়েছেন।
আপনি চাইলে আমি এই কবিতার থিম, ভাষাশৈলী ও প্রতীকবাদ বিশ্লেষণ করে দিতে পারি, যাতে পরিচিতিটি আরও পূর্ণাঙ্গ হয়।
অন্ধ মেয়ে কবিতা – সুকুমার রায়
গভীর কালো মেঘের পরে রঙিন ধনু বাঁকা,
রঙের তুলি বুলিয়ে মেঘে খিলান যেন আঁকা!
গবুজ ঘাসে রোদের পাশে আলোর কেরামতি
রঙিন্ বেশে রঙিন্ ফুলে রঙিন্ প্রজাপতি!
অন্ধ মেয়ে দেখ্ছে না তা – নাইবা যদি দেখে-
শীতল মিঠা বাদল হাওয়া যায় যে তারে ডেকে!
শুনছে সে যে পাখির ডাকে হরয কোলাকুলি
মিষ্ট ঘাসের গন্ধে তারও প্রাণ গিয়েছে ভুলি!
দুঃখ সুখের ছন্দে ভরা জগৎ তারও আছে,
তারও আধার জগৎখানি মধুর তারি কাছে।।