অনুবাদ কী ও এর প্রয়োজন | অনুবাদের আবশ্যকতা | নির্মিতি | ভাষা ও শিক্ষা

আজকের আয়োজনের বিষয়বস্তু – অনুবাদ কী ও এর প্রয়োজন? অনুবাদের আবশ্যকতা | এই পাঠটি “ভাষা ও শিক্ষা” বিভাগের ” নির্মিতি” বিষয়ের একটি পাঠ। অনুবাদ হল কোনো বক্তব্য বা রচনাকে এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় রূপান্তরিত করা। রচনার বক্তব্য বিষয়ের পরিবর্তন না করে ভাষাগত পরিবর্তনই অনুবাদ বা তর্জমা বলে বিবেচিত।

অনুবাদ কী ও এর প্রয়োজন | অনুবাদের আবশ্যকতা | নির্মিতি | ভাষা ও শিক্ষা

অনুবাদের আবশ্যকতা

ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে অনুবাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশ্বের অগণিত ভাষায় যে মূল্যবান বক্তব্য সাহিত্যে শিল্পে, জ্ঞান-বিজ্ঞানে, বইপত্রে বাহিত হচ্ছে তা সারা বিশ্বের মানুষের কাছে পৌঁছানোর অন্যতম উপায় হল অনুবাদ। অনুবাদের এই গুরুত্বের দিকে বিবেচনা করে বিভিন্ন সাহিত্যে অনুবাদ নামক বিশেষ এক শাখা গড়ে উঠেছে। অনুবাদের মাধ্যমে এক ভাষা অন্য ভাষার ভাব আত্মস্থ করে ঋদ্ধ হয়ে ওঠে। কোন ভাষার শব্দাবলির ‘প্রয়োগ- কৌশল’ ও ‘প্রকাশ-রীতি’ সম্বন্ধে সম্যক ধারণা অর্জনের সর্বোত্তম মাধ্যম আনুবাদ।

সুতরাং কোন ভাষার সমৃদ্ধি সাধনে ও বিশ্বসাহিত্যের ক্ষেত্রে অনুবাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। মানুষের যে জীবন, জীবনের যে মহাযাত্রায় মানুষের অগ্রগমন, তার মূলে রয়েছে ভাষা। ভাষার সহায়তা ছাড়া জীবন সম্পর্কে ধারণা গ্রহণে আর কোনো উপায় নেই আমাদের। ভাষা ব্যক্তিগত নয়, তাই ভাষা তাকে সমষ্টির দিকে টানে। একা মানুষের ভাষা নেই। সামাজিক মানুষেরই ভাষা হয়। এক সমাজের মানুষ অন্য সমাজের মানুষের ভাষা জানার একমাত্র উপায় হচ্ছে অনুবাদ। আজকের বিশ্বে মানুষ যেমন স্বাদেশিক, তেমনি আন্তর্জার্তিকও।

 

অনুবাদ কী ও এর প্রয়োজন | অনুবাদের আবশ্যকতা | নির্মিতি | ভাষা ও শিক্ষা

 

মানুষকে এখন নানা কারণে আন্তর্জাতিক মানুষ হয়ে উঠতে হয়। তাই দৈনন্দিন জীবনে ও নানা কারণে এক ভাষাভাষী মানুষকে অন্য ভাষার সাহায্য নিতে হয়। সেক্ষেত্রে অনুবাদ বিশেষ সহায়তা করে। পৃথিবীর সব দেশেই জীবনের সব তৎপরতাকে মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এসব তৎপরতা সামগ্রিকভাবে নির্ণয় করে দেশগুলোর কৃষ্টি ও সভ্যতা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষা এবং গবেষণা মানব জীনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে অনুবাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। পারিভাষিক শব্দ সৃষ্টি করতে গেলেও অনুবাদের প্রসঙ্গটি এসে যায়।

বিশ্বের বৈজ্ঞানিক যে জ্ঞানকোষ নির্মিত হয়েছে তার অনেকখানিই প্রকাশিত হয়েছে এবং হচ্ছে ইংরেজি ভাষায়। এসব বিষয়ে জানতে হলে এবং জানাতে হলে অনুবাদই একমাত্র উপায়। অনুবাদের ইতিহাস ভাষার ইতিহাসের মতোই প্রাচীন। আমরা দিগ্বিজয়ী বীরদের কথা জানি, যাঁরা পর্বত, প্রান্তর, মরুভূমি পার হয়েছেন, দেশের পর দেশ জয় করেছেন। একটি মাত্র ভাষা তিনি নিজে বহন করেছেন কিন্তু সংস্পর্শে এসেছেন দেশের পর দেশে বহু ভাষার। আমরা সম্রাটদের কথা জানি যাঁরা বিশাল সাম্রাজ্য স্থাপন করেছেন। যেখানে এক ভাষাই প্রতি পাঁচ ক্রোশে বদলাতে থাকে।

এক নদীর দুই পারে ভিন্ন দুটি ভাষাই যেখানে আজও দেখা যায়, সেখানে ওই সব সাম্রাজ্যে যে বহু ভাষা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। অতএব অনুবাদের দরকার হয় এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায়। নইলে বিজয় ও শাসন দুষ্কর হয়ে পড়ে। তাছাড়া প্রাচীনকাল থেকেই রাজা, রাজ্য, সম্রাট, সাম্রাজ্য ও তাঁদের নানা কীর্তিকলাপ নিয়ে রচিত হয়েছে নানা সাহিত্যকর্ম। আর এসব সাহিত্যকর্মের সম্মিলিত রূপই আজকের বিশ্বসাহিত্য। তাই বিশ্বসাহিত্য সম্পর্কে জানতে হলে অনুবাদের কোনো বিকল্প নেই। অনুবাদের আর দরকার হয় ধর্মক্ষেত্রে।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

বাইবেল বহু ভাষায় রচিত বহু গ্রন্থের সঙ্কলন। বাইবেলের অনুবাদ মানুষের প্রথম প্রধান অনুবাদ কীর্তি। বাইবেল এখন অনুবাদেই গৃহীত, পবিত্র ও বিশ্ববাসীর কাছে মাননীয়। কিন্তু সব ধর্মগ্রন্থের অনুবাদ মাত্রই পবিত্র ও মাননীয় নয়। অনুবাদে কোরান কেবল অর্থই জানায়, আল্লাহর উচ্চারণ আর থাকে না। বহুদিন পর্যন্ত পৃথিবীর অনেক ধর্মগ্রন্থেরই অনুবাদ নিষিদ্ধ ছিল। এমনকি পাপ বলে মনে করা হতো ওই কাজটিকে। গুনীনের বা ওঝার মন্ত্র তো অনুবাদে তার শক্তিই হারিয়ে ফেলে। মন্ত্রের তাই অনুবাদ হয় না।

কিন্তু তারপরও অনুবাদ থেমে থাকে নি। অনুবাদ আমাদের ইহজাগতিকতার সঙ্গে যুক্ত। সুদূর অতীত থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ এক ভাষা থেকে আরেক ভাষায় অনুবাদ করেই আসছে এই আশায় যে, তারা ভিন্নভাষী পরস্পরকে জানাতে ও জানতে পারবে। অনুবাদের কম্পিউটার প্রোগ্রাম পর্যন্ত সে রচনা করেছে। অনুবাদ মানুষের অসামান্য এক উদ্ভাবনা সৃজনশীল কর্ম। তাই বর্তমান বিশ্বে অনুবাদ একটি সৃজনশীল কর্মে পরিণত হয়েছে। আর এ জন্যই বিশ্ব সাহিত্যের ক্ষেত্রে অনুবাদের গুরুত্ব সবচেয় বেশি। মনে রাখতে হবে— ভাষার পুষ্টির একটা উপায় অনুবাদ ।

আরও দেখুন:

Leave a Comment