হেমন্ত কাল, ষড়ঋতুর চতুর্থ ঋতু প্রতিবেদন রচনা। Essay on Hemantakal

হেমন্ত কাল, ষড়ঋতুর চতুর্থ ঋতু   [Essay on Hemantakal ] অথবা, শীতের আগমনী বার্তা ঘোষণা – নিয়ে একটি প্রতিবেদন রচনার নমুনা দেয়া হল।

হেমন্তকাল রচনা । Essay on Hemantakal
হেমন্তকাল রচনা । Essay on Hemantakal

হেমন্তকাল রচনার ভূমিকা:

শরৎকাল শেষ হলেই হেমন্তের আগমন। ছয় ঋতুর মধ্যে চতুর্থ ঋতু হলো হেমন্ত যা কার্তিক অগ্রহায়ণ মাসের সমন্বয়ে গঠিত হয়। হেমন্তের শেষে শুরু হয় শীতকাল, তাই হেমন্ত কে বলা হয় শীতের পূর্বাভাস।

হেমন্তের প্রকৃতি:

হেমন্ত মানেই পাকা ধানের ঋতু। হেমন্ত আসলেই পাকা ধানের সোনালী আলোয় উদ্ভাসিত হয় বাংলার মাঠ ঘাট প্রান্তর। খুশির আলো বয় কৃষকদের ঘরে ঘরে, চারিদিক হয় উৎসবমুখর। হেমন্তের হিম বাতাস কনকনে শীতের আগমনী বার্তা ঘোষণা করে। এই সময়ে প্রকৃতি এক নতুন সাজে সেজে উঠে। বর্ষার জল শুকিয়ে গিয়ে মাঠঘাট হয়ে উঠে অনন্য।

গ্রাম বাংলার হেমন্তকাল:

বাংলার হৃদয় স্বরূপ গ্রাম বাংলা প্রতিটি ঋতুতেই ভিন্ন ভিন্ন রূপে সজ্জিত হয়ে ওঠে। গ্রীষ্মে তার রূপ এক, বর্ষায় সে অনন্য; শরতের উৎসবে সেই গ্রামবাংলাই হয় তুলনাহীন, আর হেমন্ত সে অপরূপা। হেমন্তের প্রকৃত রূপ এই আধুনিক সভ্যতার যুগে এখন অব্দি প্রত্যক্ষভাবে দেখা যায় গ্রাম বাংলার বুকেই।

হেমন্তের শিশির ভেজা ঘাস, শীতের আগে ঝরে যাবার পূর্বে শেষবারের মতন সজ্জিত হয়ে ওঠা গাছের পাতা গ্রামবাংলায় যেন সকল ঋতুর মধ্যে হেমন্তকেই রানীর মুকুট পরিয়ে দেয়। তাই বলা হয় বসন্ত যদি ঋতুরাজ হয়, তবে নিশ্চিত ভাবেই হেমন্ত হলো ঋতুদের রানী। গ্রাম বাংলার বুকে ভোরের হালকা কুয়াশায় ধানক্ষেতে ধান গাছের উপর জমে থাকা বিন্দুবিন্দু শিশির যেন সমগ্র গ্রামের পরিবেশকেই এক অপরূপ মায়ায় আচ্ছন্ন করে রাখে।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

হেমন্ত ও প্রকৃতি:

প্রকৃতির বুকে উৎসবের উত্তেজনার পর স্বস্তির প্রতীক হিসেবে হেমন্তের আগমন হলেও প্রকৃতি এই ঋতুকে প্রাকৃতিক দানের সমারোহ থেকে এতটুকুও বঞ্চিত করেনি। বরং সমগ্র হেমন্তকাল পূর্ণ হয়ে আছে বিভিন্ন প্রকার ফল ফুল ও ফসলের আড়ম্বরে। এ প্রসঙ্গে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় হেমন্তকালে ফোটা বিভিন্ন প্রকার অনিন্দ্যসুন্দর ফুল গুলির কথা।

শিউলি, কামিনী, গন্ধরাজ, মল্লিকা, ছাতিম, দেবকাঞ্চন, হিমঝুরি, রাজঅশোক ইত্যাদি ফুলের মাধুর্যে সমগ্র হেমন্তকালের প্রকৃতি যেন মাতোয়ারা হয়ে থাকে।

ফুল ছাড়া মানুষের জীবন যেন রুক্ষ, প্রাণহীন। হেমন্তকাল মানুষের জীবনকে তার ফুলের ডালি উপুর করে দিয়ে সেই রুক্ষতায় নিয়ে আসে পেলবতার ছোঁয়া। অন্যদিকে হেমন্তের পরিবেশ বিভিন্ন প্রকার ফসল চাষের জন্য বিশেষভাবে অনুকুল। এই ঋতুতেই বিশেষভাবে বিকাশ লাভ করে বাঙালির প্রিয় হেমন্তে আমন ধান।

অন্যদিকে সমগ্র হেমন্তকাল জুড়ে গাছে গাছে শোভা পায় কামরাঙা, চালতা, আমলকি, কিংবা ডালিমের মতন বিভিন্ন ফল। তাছাড়া এই ঋতুর প্রধান ফল হলো নারিকেল।

ফসল ও ফলমূল:

ইতিহাস থেকে জানতে পারা যায় কোন এক সময়ে বাংলার বছর শুরু হতো হেমন্ত কাল দিয়ে। কারণ ধান উৎপাদনের ঋতু এই হেমন্ত। বর্ষার শেষ দিকে লাগানো বোনা আউশ আমন জাতীয় ধান শরৎকালে বেড়ে ওঠে এবং কার্তিক মাসে পরিপক্ব হয়। ধান ছাড়াও এই ঋতুতে অনেক ফুল ফোটে তারমধ্যে গন্ধরাজ, মল্লিকা, শিউলি, কামিনী ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

হেমন্তকাল রচনা । Essay on Hemantakal
হেমন্তকাল রচনা । Essay on Hemantakal

নবান্ন উৎসব:

নবান্ন উৎসবের সূচনা হয় ফসল কাটাকে কেন্দ্র করে। নবান্ন অর্থাৎ নতুন অন্ন বা নতুন খাবার। নবান্ন উৎসব বাংলার একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। নতুন কাটা ধানের থেকে প্রস্তুত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষ্যে আয়োজিত হয় এই উৎসব।

এই উৎসবে বিভিন্ন ধরনের পিঠা, পায়েস, ক্ষীর জাতীয় সুস্বাদু খাবার তৈরি হয় এবং আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশীদের ঘরে ঘরে বিতরণ করা হয়। খাওয়া-দাওয়া ছাড়াও অনুষ্ঠিত হয় অনেক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। নানা ধরনের দেশীয় নৃত্য, বাউলগান, লোকগীতি ইত্যাদির ধারা সবাই আনন্দ নে।

উপসংহার:

বাংলার প্রত্যেকটি ঋতুর আছে নিজস্ব বৈচিত্রতা ও সৌন্দর্যতা সেইভাবে হেমন্তের সুন্দর্য তার সোনালী প্রকৃতি এবং নবান্ন উৎসব। কনকনে হিম বাতাস, সোনালী প্রান্তর সব মিলিয়ে সৃষ্টি হয় অপূর্ব দৃশ্য যা মানুষকে উৎফুল্লিত করে।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment