মানব জীবনে ইতিহাস, মানব জীবনে ইতিহাসের গুরুত্ব প্রতিবেদন রচনা। History of Human life Essay

মানব জীবনে ইতিহাস, মানব জীবনের ইতিহাসের গুরুত্ব [ History of Human life Essay ]  অথবা, মানব জীবন – নিয়ে একটি প্রতিবেদন রচনার নমুনা দেয়া হল।

মানব জীবনে ইতিহাস রচনা । History of Human life Essay
মানব জীবনে ইতিহাস রচনা । History of Human life Essay

মানব জীবনে ইতিহাস রচনার ভূমিকাঃ

ইতিহাস আমাদের অতীত সম্পর্ক জ্ঞানদান করে। ইতিহাসের আলােকে আমরা বর্তমানকে বিচার করতে পারি। ইতিহাস পাঠ জাতীয় চেতনা উন্মেষের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। একটি জাতির ঐতিহ্য ও অতীতের গৌরবান্বিত ইতিহাস ঐ জাতিকে বর্তমানের মর্যাদাপূর্ণ কর্মতৎপরতায় উদ্দীপিত করতে পারে। জাতীয় পরিচয়, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে জাতীয়তাবােধ গড়ে ওঠে যা দেশ ও সমাজের উন্নতি তথা দেশপ্রেমের জন্য একান্ত অপরিহার্য।

ইতিহাসের ধারণাঃ

ইংরেজী History শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে এসেছে ইতিহাস শব্দটি। আর ইংরেজী History শব্দটি এসেছে গ্রিক ও ল্যাটিন Historia শব্দ থেকে। যার অর্থ হচ্ছে সত্যানুসন্ধান বা গবেষণা।

ইতিহাসের জনক হিসেবে খ্যাত গ্রিসের হেরােডােটাস তার গ্রিক ও পারসিকদের মধ্যে সামরিক সংঘর্ষের ঘটনা সংবলিত গ্রন্থের নামকরণ করেন Historia (যার ইংরেজী অনুবাদ করা হয়েছে Histories)।

ঘটনার অনুসন্ধান অর্থেই হেরােডােটাস Historial History শব্দটি ব্যবহার করেন। বাংলা ইতিহাস শব্দটি এসেছে ‘ইতিহ’ শব্দ থেকে যার অর্থ ঐতিহ্য। আর ইতিহাস কথাটির প্রত্যয় বিভক্তিতে দাড়ায় ইতিহ + আস যার অর্থ দাড়ায় এমনটি ছিল বা এমনটিই ঘটেছিল।

ঐতিহ্যের ধারণাঃ

ঐতিহ্য বলতে অতীত কর্মকান্ডকে বুঝায় যার অন্তর্ভুক্ত থাকে শিল্প ভাষা, সংস্কৃতি, খাদ্যভ্যাস ইত্যাদি। তাদের মধ্যে অন্যতম হলাে বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। তাদের মধ্যে অন্যতম হলাে মহাস্থানগড়ের পুন্ড্রবর্ধন, সােমপুর বিহার, শালবন বিহার, বিভিন্ন মন্দির বাংলার ঐতিহ্যের পরিচয় বহন করে। এসব ঐতিহ্যের মাধ্যমে প্রাচীন বাংলার সংস্কৃতির পরিচয় ফুটে ওঠে।

মুসলিম শাসনামলের প্রধান ঐতিহ্যগুলাের মধ্যে অন্যতম ছিল বিভিন্জায়গায় নির্মিত মসজিদ। লালবাগের কেল্লা বড় কাটরা, কাটরা, আহসান মঞ্জিল প্রভৃতি মধ্যযুগের ঐতিহ্য। আর্মেনীয় গির্জা, কালিয়াটি জমিদার বাড়ি, চিনিটিকগির মসজিদ এ সময়কালের অন্যতম নিদর্শন।

মানব জীবনে ইতিহাস রচনা । History of Human life Essay
মানব জীবনে ইতিহাস রচনা । History of Human life Essay

ইতিহাস রচনার উপাদানঃ

১. লিখিত উপাদান:

পূথিবীতে মানব সভ্যতার সাথে সম্পর্কিত অতীতকালের বিভিন্ন সত্য ঘটনা ও কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিক লিখিত বিবরণকে ইতিহাসের লিখিত উপাদান বলা হয়। দেশি-বিদেশি সাহিত্য, দলিলপত্র, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের বিবরণ প্রভৃতি হল ইতিহাসের লিখিত উপাদান। উদাহরণস্বরূপ- সাহিত্যের রূপকথা, কিংবদন্তি ও গল্পকাহিনি; বেদ; কৌটিল্যের

অর্থশাস্ত্র; আবুল ফজলের ‘আইন-ই-আকবরী’; সরকারি নথি ও চিঠিপত্র; খ্রিস্টীয় ৫ম থেকে ৭ম শতকে বাংলায় আগত চীনা পরিব্রাজক, যেমন- ফা হিয়েন, হিউয়েন সাং ও ইৎসিং-এর লিখিত বিবরণ প্রভৃতি। এসব লিখিত বিবরণ থেকে প্রাচীনকালের সভ্যতা, সমাজ, ধর্ম, আচার-অনুষ্ঠান, অর্থনীতি, রাজনীতি প্রভৃতি সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা যায়।

২. অলিখিত উপাদান বা প্রচ্নতাত্ত্বিক নিদর্শন:

যে সব উপাদান বা বস্তু থেকে অতীত কালের বিশেষ সময়, স্থান ও ব্যক্তি সম্পর্কে ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায়, সে সব উপাদান বা বস্তুকে ইতিহাসের অলিখিত উপাদান বা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বলা হয়।

এসব উপাদানকে আবার ইতিহাসের বস্ত্তুগত উপাদান বা প্রত্ননিদর্শনও বলা হয়। মূলত প্রত্ননিদর্শনগুলােই হল ইতিহাসের অলিখিত উপাদান। উদাহরণস্বরূপ- প্রাচীনকালের তৈজসপত্র, শিলালিপি, তাম্রলিপি, শিলালিপি, ধাতব মুদ্রা, স্থাপত্যিক নিদর্শন বা ইমারত প্রভৃতি।

এসব প্রত্ননিদর্শনের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিশ্লেষণ করে প্রাচীনকালের অধিবাসীদের সভ্যতা, ধর্ম, জীবনযাত্রা, রাজনীতি, অর্থনীতি, নগরায়ণ, নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্র, কুষি উপকরণ প্রভৃতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতাসহ ভারত উপমহাদেশের সিদ্ধু সভ্যতা এবং বাংলাদেশের বগুড়া।

জেলার মহাস্থানগড় (প্রাচীন পুণ্ডনগর), নওগাঁ জেলার পাহাড়পুর মহাবিহার, কুমিল্লা জেলার শালবন বিহার প্রভৃতি প্রত্ননিদর্শন ইতিহাসের অলিখিত উপাদান হিসেবে উল্লেখ করা যায়। এরূপ প্রত্ননিদর্শনের আবিষ্কারের ফলে যে কোন জাতির ইতিহাসও বদলে যেতে পারে। যেমন- সম্প্রতি বাংলাদেশের নরসিংদী জেলার উয়ারী-বটেশ্বরের প্রত্ননিদর্শনের আবিষ্কার প্রমাণিত হয়েছে যে, বাংলাদেশে প্রায় ২৫০০ বছর আগেও উন্নত নগর সভ্যতা গড়ে উঠেছিল।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

ইতিহাসের গুরুত্বঃ

আঞ্চলিক বা স্থানীয় ইতিহাস বিভিন্ন দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। যেমন-(১) প্রামাণ্য ইতিহাসে সব জায়গার পরিচিতি থাকে না। গুরুত্ব বেশি না থাকলে বা বিশেষ উল্লেখযােগ্য ঘটনা না ঘটলে সেই স্থানের বিবরণ থাকে না। সেই ক্ষেত্রে স্থানীয় ইতিহাস এই অভাব পূরণ করে।

(২) জাতীয় স্তরের ইতিহাস রচনার সময়ে অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় ইতিহাসকে উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

(৩) স্থানীয় ইতিহাস, স্থানীয় ঐতিহ্য, সংস্কৃতির অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত চালচিত্র তুলে ধরে।

(৪) স্থানীয় ইতিহাস সেই অঞ্লের রাজনৈতিক উৎ্থানপতনের দীর্ঘ কাহিনির পরিচয় দেয়। স্থানীয় ইতিহাসের মাধ্যমে সেই স্থানের জনগােষ্ঠীর ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়।

মানব জীবনে ইতিহাস রচনা । History of Human life Essay
মানব জীবনে ইতিহাস রচনা । History of Human life Essay

ইতিহাস পাঠের প্রয়ােজনীয়তাঃ

ইতিহাস পাঠের মাধ্যমে আমরা মানব সমাজের শুরু থেকে তার যাবতীয় কর্মকান্ড, চিন্তা-চেতনা ও জীবনযাত্রার অগ্রগতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারি। কেননা ইতিহাসের প্রধান উপজীব্য বিষয় হল মানব সমাজের অগ্রগতির ধারা বর্ণনা। সভ্যতার প্রধান প্রধান স্তর, সভ্যতার সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিবর্তনের কথা সম্পর্কে ইতিহাস থেকে জানা যায়।

ইতিহাস আমাদের জাতির পথ স্বরুপ। অতীতের ইতিহাস আমাদের আগামীর পথ চলতে সাহায্য করে। ইতিহাস রচনা ও ইতিহাস চর্চা সম্পর্কে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে পারে, কিন্তু ইতিহাসের প্রয়ােজনীয়তা সম্পর্কে কোন দ্বিমত নেই। রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, সামরিক ব্যক্তিবর্গ ও প্রশাসকসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের নিকট ইতিহাস খুবই মূল্যবান বিষয়।

উপসংহারঃ

ঐতিহাসিক ঘটনার সঠিক আলােচনার জন্য বর্তমানে বিভিন্ন জ্ঞানের শাখার সাহায্য গ্রহণ করা হয়। ফলে ইতিহাস হয়ে ওঠে বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ। ইতিহাস একটি জাতির ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক মূল্যকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে।

সমাজ ও জাতির অগ্রগতির কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছতে ইতিহাস জ্ঞানসহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। ইতিহাস পাঠ চেতনাবােধ জাগ্রত করে মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। আজ আত্মপরিচয়ের সংকটের লগ্নে ইতিহাস পাঠ আমাদের জাতীয় দায়িত্ব। কেননা ইতিহাস জ্ঞান আমাদের গর্বিত করে তােলে।

আরও দেখুনঃ

 

Leave a Comment