বেশ পাকা হাতের কাজ
Table of Contents
বেশ পাকা হাতের কাজ -থ্রি অ্যাক্ট প্লে ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
১৮.
বেশ পাকা হাতের কাজ। সুপারিন্টেডেন্ট স্পেন্স মন্তব্য করলেন। ওঁর লালচে গ্রাম্য মুখে সুস্পষ্ট রাগের আভাস। এরকুল পোয়ারো এতক্ষণ যেদিকে চুপচাপ বসে ওঁর কথা শুনছিলেন, সেদিকে ফিরে তাকালেন।–খুব পরিচ্ছন্ন আর নিষ্ঠুরভাবে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে। সিল্কের স্কার্ফভদ্রমহিলার নিজের স্কার্ফ দিয়েই বোধহয় সারা হয়েছে কাজটা–সেটা উনি সেদিন পরেছিলেন। পরিষ্কার, দ্রুত, তৎপর কাজ। শুনেছি ভারতবর্ষে এই ধরণের ঠগীর ফঁসের প্রচলন ছিল। ক্যারোটিড ধমনীতে চাপ পড়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি আত্মরক্ষা করার বা চেঁচাবার কোনো সুযোগই পায় না।
–এ বিষয়ে তার মানে খুনীর জ্ঞান আছে।
হতে পারে। আবার এটা জানা একান্ত প্রয়োজনীয় নয় কাজ হাসিল করার জন্য। এভাবে যদি আক্রমণ করাই উদ্দেশ্য হয়, দু-চারটে বই পড়েই তা জানা যাবে। বিশেষত সেখানে আক্রান্ত ব্যক্তি অসন্দিগ্ধ এবং সেজন্য যথেষ্ট অসতর্ক থাকে আর এক্ষেত্রে ভদ্রমহিলাটি তাই-ই ছিলেন।
ঘাড় নেড়ে পোয়ারো সমর্থন জানালেন। হা–ওঁর পরিচিত কেউ।
–একঘরে ওরা দুজন কফি পান করেন–দুটো কাপ ছিল ওঁর আর অতিথিটির জন্য। সব চিহ্ন রয়ে গিয়েছে এখনো।
–তাহলে একজন মহিলা?
–আপনি তো একজন মহিলার কথাই ভাবছেন?
–ও হা, তাই তো পাচ্ছি দেখছি।
স্পেন্স বললেন, মিসেস আপওয়ার্ড চারখানা ছবির যে একটিকে সনাক্ত করেন তা লিলি গ্যাম্বলের ছবি। সুতরাং এটা ম্যাগিনটি হত্যারই পরবর্তী অধ্যায়।
–ঠিক। একসূত্রে গাথা দুটোই। মনে পড়ে গেল পোয়ারোর মিসেস আপওয়ার্ডের কৌতুকময় হাসিমাখা মুখ, ছড়া কেটে তিনি যখন বলেছিলেন
মিসেস ম্যাগিনটি অক্কা পেলেন। কেমনে তো জানি, হাঁটু ভেঙে, ঘাড় মটকে যেমনি আছি আমি।
মিঃ স্পেন্স বললেন, একটা সুযোগ নিয়েছিলেন ভদ্রমহিলা, ওঁর ছেলে আর মিসেস অলিভারকে পাঠিয়ে দিয়ে থিয়েটারে। সন্দেহভাজন ব্যক্তি বা মহিলাটিকে উনি ফোন করে ডাকেন ওঁর সাথে দেখা করার জন্য। মিঃ পোয়ারো ব্যাপারটাকে কি আপনি অনুধাবন করতে পারছেন? নিজেই উনি গোয়েন্দা সাজতে গিয়েছিলেন–
-হ্যাঁ, ওইরকমই কিছু। নিজে যা জানতেন উনি, তা গোপন রেখেছিলেন এবং উনি আরও বেশি জানতে চেয়েছিলেন। স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি যে উনি যা করতে চলেছেন, সেটা ডেকে আনতে পারে ভয়ংকর বিপদ। সকলে খুনটুনগুলো এত খেলার ছলে দেখে যে, কি বলব। আদপেই যে এটা খেলা নয়–এ কথা আমি ওঁকে বলেছিলাম। উনি শুনলেন না। পোয়ারো দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
-না, ঠিকই বলেছেন আপনি। তা আমরাও বলেছি, যাই হোক, স্পষ্ট ব্যাপারটা। যখন মিসেস অলিভারের সঙ্গে রবিন রওনা হয়েও আবার ফিরে দেখতে আসেন মাকে তখন ওঁর মা সবেমাত্র টেলিফোন করা শেষ করেছেন। তিনি বলেননি ফোন করেছিলেন কাকে। উনি সেটা রহস্য হিসেবেই রাখতে চেয়েছিলেন। রবিন আর মিসেস অলিভার তো ভেবেছিলেন ব্যক্তিটি আপনি।
-তাই হলে তো ভালোই হত। তাহলে কোনো ধারণাই নেই আপনাদের কাকে ফোনটা করা হয়েছিল?
–নাঃ। সবই স্বয়ংক্রিয় ব্যাপার এখানে, আপনি তো তা জানেন।
–পরিচারিকাটিও সাহায্য করতে পারবে না?
–না। সে প্রায় সাড়ে দশটার সময় ফিরে আসে। তার কাছে একটা খিড়কির দরজার চাবি ছিল। এসে সোজা সে নিজের ঘরে চলে যায় এবং শুয়ে পড়ে। সে বাড়ি অন্ধকার থাকায় ধরেই নেয় যে ঘুমিয়ে পড়েছেন মিসেস আপওয়ার্ড। এবং তখনো অন্যরা ফেরেনি।
আরও যোগ করলেন স্পেন্স, কানে আবার সে কম শোনে আর কি ঘটছে না ঘটছে সে ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন। আমার তো ধারণা, যতটা সম্ভব ও মেয়েটি বেশি কথা বলে, ততটা সম্ভব কম কাজ করার ধান্দা করে।
–তার মানে ও তেমন বিশ্বাসী না?
–ওহ, তা নয়। ও তো মোটে দু বছর মিসেস আপওয়ার্ডের কাছে আছে।
দরজায় উঁকি দিয়ে একজন কনস্টেবল বলল, স্যার আপনাদের সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন একজন অল্পবয়সী মহিলা। বলছেন, কাল রাত্রের ঘটনা সম্বন্ধে উনি নাকি আপনাদের কিছু বলবেন। জরুরী ব্যাপারটা।
কাল রাত্রের ব্যাপারে? ভেতরে পাঠিয়ে দাও ওকে।
ডীডার হেণ্ডারসন এল। কেমন ফ্যাকাসে এবং সেই সাথে ওকে যথরীতি একটু অদ্ভুত দেখাচ্ছিল।
সে বলল, আমার মনে হয় আমার আসাটা একান্তই দরকার। আমি নিশ্চয়ই আপনাদের বিরক্ত করছি না?
–না মিস হেণ্ডারসন, একেবারেই না।
উঠে দাঁড়িয়ে মিঃ স্পেন্স চেয়ার এগিয়ে দিলেন। ডীডার স্কুলের বাচ্চা মেয়ের মত চেয়ারে বসলে বেশ উৎসাহ ভরে স্পেন্স বললেন, কাল রাত্রের ব্যাপারে তো? মিসেস আপওয়ার্ড তাই না?
–হ্যাঁ। এটা তো সত্যি যে খুন হয়েছেন উনি? পিওন, রুটিওয়ালা সে কথা সবাই বলছে। অবশ্য মা বলছেন সবটাই গুজব, সত্যি হতে পারে না কখনো…
থেমে গেল ডীডার। এটা আপনার মা সঠিক বলেননি। সত্যি ঘটনাটা। তাহলে আপনি আমাদের কিছু বলতে চান?
-হ্যাঁ। মানে ওখানে যে আমি গিয়েছিলাম।
কিঞ্চিৎ সরকারী অফিসারের সুর স্পেন্সের আচরণে।
-কি, ওখানে আপনি গিয়েছিলেন? ল্যাবারনাম-এ কটার সময়?
-দেখুন সঠিক আমি বলতে পারব না। আমার ধারণা সাড়ে আটটা থেকে নটার মধ্যে হবে। সম্ভবত নটার কাছাকাছি। মোটমাট খাওয়া দাওয়ার পর। আমাকে উনি ফোন করেছিলেন কিনা।
–আপনাকে মিসেস আপওয়ার্ড টেলিফোন করেছিলেন?
–হ্যাঁ। উনি বলেন যে রবিন আর মিসেস অলিভার কালেনকোয়েত-এ যাচ্ছেন থিয়েটারে। একলাই থাকবেন উনি, আমি যদি গিয়ে ওঁর সঙ্গে কফি পান করি…. মানে একটু সঙ্গ দিই আর কি।
–এবং তাই আপনি সেখানে যান?
–হ্যাঁ।
–এবং কফিও পান করেন ওঁর সঙ্গে বসে?
ডীডার বলল, না। ওখানে যাই আমি। ধাক্কা দিই দরজায় কিন্তু কোনো সাড়া পাই না। আমি তখন নিজেই দরজা খুলে হলঘরের মধ্যেই যাই। বড় অন্ধকার ছিল ঘরটা। আর বুঝতেই পারছিলাম না যে, একটুও আলো নেই কেন বসার ঘরে। হতভম্ব হয়ে যাই একেবারে। মিসেস আপওয়ার্ডকে দু-একবার ডেকেও ছিলাম। ভাবলাম সাড়া না পেয়ে হয়ত আমারই কোথাও কোনো গণ্ডগোল হয়েছে।
–আপনার কি ব্যাপারে গণ্ডগোল হতে পারে বলে মনে হয়েছিল?
–আমার মনে হয়েছিল হয়ত উনি শেষ পর্যন্ত থিয়েটারেই চলে গেছেন রবিনদের সঙ্গে।
–আপনাকেই না জানিয়েই?
–অবশ্য সেটা একটু অদ্ভুত। আর কোনো ধারণা হয়নি আপনার?
—আমি পরে ভেবেছিলাম যে ফ্রিডাই হয়ত আসল খবরটা গোলমাল করে ফেলেছিল। ওর তাড়াতাড়ি কাল রাতে ছুটি পাবার কথা থাকায় ও বোধহয় নিজে খুব উত্তেজিত ছিল।
-আপনি তারপর কি করলেন?
চলে এলাম।
–সোজা বাড়ি?
–না। হাঁটলাম একটুক্ষণ। কাল বেশ চমৎকার ছিল আবহাওয়া।
দু-একমুহূর্ত স্পেন্স চুপ করে থাকলেন। উনি মেয়েটির ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। তা লক্ষ্য করলেন পোয়ারো। একটুক্ষণ বাদে উঠে দাঁড়িয়ে তিনি বললেন, মিস হেণ্ডারসন ধন্যবাদ। একথা আপনি আমাদের জানিয়ে ভালো করেছেন। আপনার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।
ডীডারের করমর্দন করলেন তিনি।
ডীডার বলল, আমার আসাই উচিত আমি ভেবেছিলাম। অবশ্য মা চাননি যে আমি আসি।
-তাই বুঝি?
–ঠিকই বলেছেন আপনি। মিস হেণ্ডারসনকে বিদায় জানালেন স্পেন্স। তিনি ফিরে এসে পোয়ারোর দিকে টেবিল চাপড়িয়ে তাকালেন।
–মঁসিয়ে পোয়ারো, কোনো লিপষ্টিক ছিল না ঠোঁটে। কিংবা আজ সকালে হয়ত মেয়েটি লিপষ্টিক ব্যবহারই করেনি।
-না না, আজ সকালে বলে নয়, ও কোনোদিনই ব্যবহার করে না।
–আজকালকার মেয়েদের পক্ষে এটা একটু অস্বাভাবিক, কি বলেন?
–আসলে একটু অদ্ভুত মেয়েটি, বলতে পারেন অপরিণতও।
–এবং কোনো সুগন্ধিও ব্যবহার করেননি, অন্তত টের পায়নি তো আমার নাক, কিন্তু মিসেস অলিভার বলেছিলেন একটা সেন্টের গন্ধ তিনি পেয়েছিলেন, ও বাড়িতে কাল রাত্রে দামী সেন্ট। সেকথাও রবিনও সমর্থন করেছে। সে বলেছে ওটা তার মায়ের ব্যবহৃত সেন্টের গন্ধ নয়।
–সেন্ট ব্যবহার করে না বলেই তো মনে হয় এ মেয়েটি।
–ঠিক তাই আমার মতও। দেখলেই মনে হয় সাবেকী চাল চলনের কোনো স্কুলে হকির খেলার ক্যাপ্টেন কিন্তু বোধহয় বয়স ত্রিশ ছুঁই ছুঁই, কি বলেন?
–হ্যাঁ, তা হবে। কিন্তু সে অনুপাতে পরিণত নয়।
চিন্তা করলেন পোয়ারো এটা কিন্তু বলা যায় না এত সহজেই।
ভুরু কুঁচকে গেল স্পেন্সের। ঠিক কিন্তু মিলছে না। সেন্ট নেই, লিপস্টিক নেই এবং যথেষ্ট বুদ্ধিমতী মেয়েটির মা। মদ্যপ ছিল লিলির মা এবং মাত্র লিলির ন বছর বয়সেই সে জড়িত নানান ঝামেলায়। এই মেয়েটি সেক্ষেত্রে কি করেই বা লিলি হয়। আবার মিসেস আপওয়ার্ড একে কাল রাত্রে টেলিফোনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, মোটেও ব্যাপারটা সোজা নয়।
কি বলছে ডাক্তারের সাক্ষ্য, সেখানেও বিশেষ কোন সাহায্য পাচ্ছি না। ভদ্রমহিলা মারা যান মোটামুটি আন্দাজ সাড়ে নটা হবে তা সব ডাক্তারই বলছে।
মিস হেণ্ডারসন আসার ঠিক আগেই মারা যান উনি, তাহলে এমনও হতে পারে, হতে পারে অবশ্য যদি সত্যি কথা বলে থাকে মেয়েটি। হয় সে বলছে সত্যি কথা, নয় গভীর জলের মাছ সে, ওকে ওর মা আসতে দিতে চাইছিলেন না। আপনার কি মত সেই ব্যাপারে?
–ঠিক বলা যাচ্ছে না। মা-টি মেয়েকে আসতে নাও দিতে চাইতে পারেন। অকারণ ঝামেলা তিনি অপছন্দ করেন।
দীর্ঘশ্বাস ফেললেন স্পেন্স। তার মানে আমরা অকুস্থলে মিস হেণ্ডারসনকে পাচ্ছি, অথবা এমন একজনকে যে, মিস হেণ্ডারসন আসার আগে ওখানে যায়, একজন মহিলা। একজন মহিলা যিনি ব্যবহার করেন লিপষ্টিক আর দামী সেন্ট। নিশ্চয়ই আপনি তদন্ত করবেন? স্পেন্স পোয়ারোকে বললেন, তদন্ত করছি আমি, এই মুহূর্তে অত্যন্ত সতর্কভাবে। ইভ কার্পেন্টার কাল রাতে কি করছিলেন? গত রাত্রে শেলা রেগুল কোথায় ছিলেন? ওরা নাকি বাড়িতেই ছিলেন মিঃ কার্পেন্টার, অবশ্য যতদূর জানি আমি, একটা রাজনৈতিক সভায় ব্যস্ত ছিলেন।
চিন্তান্বিত গলায় পোয়ারো বললেন, ইভ। তাড়াতাড়ি কি নামের ফ্যাশান বদলায়। আজকাল ইভা নামটা শোনাই যায় না, না? এটা হয়ে গেছে সেকেলে নাম। বরং ইভ নামটা অনেক বেশি আধুনিক।
নিজের চিন্তায় কিন্তু স্পেন্স অটল। বেশ দামী সেন্ট উনি ব্যবহার করতে পারেন। ওঁর সে সঙ্গতি আছে।
আমাদের আরও কিছু জানা দরকার এই মহিলাটির অতীত সম্বন্ধে। কারণ যুদ্ধের সময় থেকে বিধবা এরকম সাজা খুব সাধারণ ব্যাপার। একজন দুঃখী বিধবা সেজে যেখানে সেখানে আপনি সহানুভূতি পেতে পারেন। কেউ কিছু জানতে চাইবে না।
চিনি গুঁড়ো করার হাতুড়ি, আপনি সেটা অস্ত্র সন্দেহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছেন আমাদের কাছে, আমরাও সন্দেহ করছি ওটাই মিসেস ম্যাগিনটির হত্যার জন্য দায়ী। ডাক্তার বলছেন, এ ধরনের আঘাত করার জন্য খুবই সুবিধাজনক ওটা। ওতে আছে রক্তের দাগও। যদিও ওটা এখন পরিষ্কার করার পর আমাদের হাতে এসেছে তবুও সাধারণ লোক বোঝেই না যে কত সূক্ষ্ম জিনিসও অনুবীক্ষণ যন্ত্রে সহজেই ধরা পড়ে। যা পাওয়া গেছে ওতে তা মানুষেরই রক্ত। আবারও বোধহয় ঘটনায় ওয়েদারবিদের আর ডীডারকে জড়িয়ে ফেলা হল, তাই না?
মিস হেণ্ডারসন কিন্তু জোর দিয়েই বলেছেন যে, ওটাকে ফসল কাটা উৎসব উপলক্ষ্যে একজিবিশনে দেওয়া হয়েছিল বিক্রির জন্য।
–এবং মিসেস সামারহেসও আবার নিশ্চিত যে, বড়দিনের একজিবিশনে ওটা ছিল। কোনোদিনই মিসেস সামারহেস কোনো ব্যাপারে নিশ্চিত নন। উনি খুব ভালো কিন্তু কোনো বাঁধুনী নেই কাজকর্মে। তবে আমি আপনাকে এটুকু বলতে পারি–আমি লং মিডোস-এ এতদিন আছি, সর্বদাই দরজা, জানলা ও বাড়ি হাট করে ভোলা থাকে। ইচ্ছে করলে যে কেউ কোনো সময়ে ঢুকে যে কোনো জিনিস ওখান থেকে নিয়ে যেতে পারে আবার পরে এসে তা রেখে দিলে লক্ষ্যও করবে না বাড়ির লোক। ধরুন যদি একদিন মহিলা ঐ যন্ত্রটাই না দেখতে পান, ভাববেন স্বামী ওটা খরগোস মারতে বা মাঠ কাটতে নিয়েছেন। আর যদি ওটা দেখতে না পান, স্বামী তবে ভাববেন কুকুরদের জন্য মাংস কাটবেন বলে ওটা নিয়েছেন স্ত্রী। যে যার খুশিমত জিনিস নেয় ও বাড়িতে, কাজ হয়ে গেলে যেখানে খুশি রাখে। কেউ কিছু মনে রাখতে পর্যন্ত পারে না। ও বাড়ির বাসিন্দা হতে হলে আমার তো মশাই মাথা খারাপ হয়ে যেত। ওরা কিন্তু কিছু পরোয়াই করেন না এ সবের।
গম্ভীর সুরে স্পেন্স বললেন, ভালো কথা। ভালো খবর একটাই যে পুরো তদন্ত ভালোভাবে না মিটলে, বেন্টলীর শাস্তির কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আমরা একটা চিঠিও দিয়েছি মন্ত্রীকে। উত্তরে তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় সময় আমাদের তিনি দিয়েছেন।
–আমার মনে হয় একবার বেন্টলীর সঙ্গে দেখা করা দরকার, বিশেষত যখন আমরা কিছুটা এগিয়েছি। পোয়ারো বললেন।
.
বিশেষ কোনো পরিবর্তন হয়নি জেমস বেন্টলীর। অবশ্য শরীর আগের চেয়ে খারাপই হয়েছে একটু রোগা। হাত নাড়ার ভঙ্গি দেখে মনে হয় সে কিছুটা অশান্ত। এছাড়া মোটামুটি আগের মতই চুপচাপ নিরাশ।
খুব সাবধানে পোয়ারো কথাবার্তা শুরু করলেন।
-নতুন করে তদন্তের একটা দিক শুরু হয়েছে। আশা জেগেছে যে…..
কোনো আশাই নেই বেন্টলীর মনে। সে বলল, কোনো লাভ নেই। আর নতুন করে কিই বা তদন্ত হবে।
-আপনার বন্ধুরা কিন্তু খুব আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন।
–আমার বন্ধুরা, কোনো বন্ধু নেই আমার। কাঁধ ঝাঁকালো বেন্টলী।
–এ আপনি বলতে পারেন না। অন্তত দুজন শুভাকাঙ্খী বন্ধু আছে আপনার।
–দুজন বন্ধু? জানতে ইচ্ছা করছে আমার তারা কে? অবিশ্বাসের সুর বেন্টলীর গলায়।
–প্রথম, সুপারিন্টেন্টে স্পেন্স।
–স্পেন্স? আমার বিরুদ্ধে যে পুলিশ সুপার মামলা সাজিয়েছেন? আপনি হাসালেন।
–না আপনার সৌভাগ্য। যথার্থ বুদ্ধিমান স্পেন্স এবং ন্যায়পরায়ণ। সব ব্যাপারেই উনি সন্দেহমুক্ত হতে চান।
–তা উনি তো নিঃসন্দেহ আমার অপরাধের ব্যাপারে।
–না–সেটাই আশ্চর্য যে নিঃসন্দেহ নন উনি। সেজন্যই তো বলছি আপনার বন্ধু উনি।
ওঃ, সেইরকম বন্ধু, পরবর্তী প্রশ্নের অপেক্ষায় পোয়ারো চুপ করে রইলেন। তিনি জানেন। যে, সাধারণ মানুষের মত বেন্টলীরও কৌতূহল থাকবে। ঠিক হল তার অনুমান।
জিজ্ঞেস করল বেন্টলী, আর অন্য জন?
–মড উইলিয়ামস।
বেন্টলীর মুখে কোনো রেখাপাত হল না। নিস্পৃহভাবে সে বলল, তিনি আবার কে?
–উনি, বিদ্রার অ্যাণ্ড স্কাটল এর অফিসে কাজ করেন।
–ওঃ, সেই মিস উইলিয়ামস?
–হ্যাঁ, তিনিই। কিন্তু এ ব্যাপারে তার মাথা ঘামানোর কি প্রয়োজন?
এমন এক একটা সময় আসে যে, পোয়ারোরও বিরক্তি ধরে যায় বেন্টলীর এই অনাবশ্যক নিরসক্তিতে। তখন তাঁর সত্যি সত্যিই মনে হয় এরকম চরিত্রের ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হলেই খুশি হতেন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, বেন্টলী যতই তাকে রাগিয়ে দেয় তার ব্যবহারে, ততই বেন্টলীকে তার অপরাধী ভাবতে কোথায় যেন দ্বিধা জাগে, মিঃ স্পেন্সের মত। তার মনে হতে থাকে যে কাউকে হত্যা করার ব্যাপারে বেন্টলীর মত মানুষ নিতান্তই নিরাসক্ত। আর, কাউকে হত্যা করতে চাইলেও সেরকম ক্ষমতা বেন্টলীর আছে বলেও তো মনে হয় না। যা বলেছেন স্পেন্স তাতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে যে অন্যতম গুণ তৎপরতা তা একেবারেই বেন্টলীর নেই।
পোয়ারো ফিরে এলেন পুরনো কথায়, পূর্ণ তদন্তের ব্যাপারে মিস উইলিয়ামস খুব উৎসাহী। উনি স্থির নিশ্চিত যে আপনি নির্দোষ।
-আমি তো ভেবে পাচ্ছি না একথা উনি কি করে ধরে নেন?
–কারণ আপনাকে উনি যথেষ্ট জানেন।
চোখ পিটপিট করল বেন্টলী। তারপর একগুঁয়ে ভাবে বলল। হ্যাঁ, হয়ত কিছুটা জানেন। কিন্তু সবটা নয়।
একই অফিসে আপনারা কাজ করতেন, তাই নয় কি? একসঙ্গে কখনো কখনো খেতেও যেতেন।
–ও হা। সে মাত্র একবার কি দুবার। ব্লু-ক্যাট কাফেতে ওই রাস্তাটা পেরোলেই।
–ওর সঙ্গে কি কখনো বেড়াতে যাননি?
–আমরা একসঙ্গে হেঁটেছিলাম একদিন, খানিকক্ষণ।
চেঁচিয়ে উঠলেন পোয়ারো, আপনি মশাই কি? কোনো মহিলার সাথে মিশে কি কোনো অপরাধ করেছেন আপনি নাকি সে সব কথা আপনার পেট থেকে টেনে বার করতে হবে? এটাই তো আপনার বয়সে স্বাভাবিক। আপনার এসব ভালো লাগে না?
–তা কেনই বা লাগতে যাবে?
–কি বলছেন যা তা। এই সবই তো করে আপনার বয়সের ছেলেমেয়েরা।
–বেশি মেয়েকে আমি চিনি না।
–সে কথা হচ্ছে না। কিন্তু আপনার লজ্জিত হওয়া উচিত। মিস উইলিয়ামসকে আপনি চেনেন, ওঁর সহকর্মী ছিলেন, কথা বলতেন ওঁর সঙ্গে, বেড়াতেও গিয়েছিলেন একবার। ওঁর কথা এসব সত্ত্বেও আমি যখন আপনাকে বললাম, আপনি কিন্তু ওঁকে চিনতেও পারলেন না। এবার লজ্জায় লাল হল বেন্টলী।
–মঁসিয়ে পোয়ারো দেখুন, মেয়েদের সঙ্গে ওভাবে কোনোদিনই আমি মিশিনি। রীতিমাফিক অভিজাত মহিলা বলতে যা বোঝায়, ঠিক তাই ছিলেন মিস উইলিয়ামস। উনি এমনিতে খুব ভালো সত্যি আমার মনে হয় আমার মায়ের বিচারে উনি খুবই সাধারণ মেয়ের পর্যায়ে পড়তেন।
–ওঁর সঙ্গে মেলামেশা না করার এটাই কি একমাত্র কারণ? আবারও লাল হল বেন্টলী।
— ওঁর চুল, পোশাক কিছুই নয় আমার মায়ের মত। মা খুব সেকেলে ধাঁচের মহিলা।….
বেন্টলী চুপ করে গেল। জিজ্ঞাসা করলেন পোয়ারো, খুব সহানুভূতিশীল মহিলা মিস উইলিয়ামস। তাই না?
হ্যাঁ, খুব দয়ালু উনি কিন্তু…. অবুঝ একেবারে। বুঝতে চান না সব কথা। খুব ছেলে বেলায় অবশ্য ওঁর মা মারা গেছেন বলে শুনেছি।
–তারপর, চাকরিটি খোয়া যায় আপনার। অন্য চাকরি পাচ্ছিলেন না। ব্রডহিনিতে মিস উইলিয়ামসের সঙ্গে সম্ভবত দেখা হয় আপনার?
হতাশাগ্রস্ত দেখালো বেন্টলীকে।
-ওখানে উনি বৈষয়িক কাজে এসেছিলেন। সে কথা আমায় একটা চিঠিতে জানান। ওঁর সঙ্গে দেখা করতে বলেন। কিন্তু কেন, অনেক ভেবে তার কোনো কারণ আমি খুঁজে পাইনি। ওঁকে আমি বিশেষ ভালোভাবে জানতামও না।
–কিন্তু দেখা করেন আপনি।
–হ্যাঁ, অকারণে অভদ্রতা করতে পারিনি।
–তারপর? আপনি ওঁকে নিয়ে কোথায় গেলেন? সিনেমা না রেস্তোরাঁয়?
–না, মশাই না। দুচার কথা বলেছিলাম বাস স্টপে দাঁড়িয়ে।
–আহা হা, সুন্দরী মেয়েটির কপালে সেদিন অনেক দুর্ভোগ ছিল।
এবার বেন্টলী রেগে গেল। মঁসিয়ে পোয়ারো, কত বার বলব, আমার হাতে সেদিন মোটে টাকা পয়সা ছিল না।
হা হা। আচ্ছা, এটা তো মিসেস ম্যাগিনটি মারা যাবার কয়েকদিন আগের ঘটনা, তাই না?
মাথা নাড়ল বেন্টলী। সে হঠাৎ বলল, হ্যাঁ, সোমবারের ঘটনা এটা। বুধবার মিসেস ম্যাগিনটি মারা যান।
আমি এবার আসছি অন্য প্রসঙ্গে। বলুন তো, মিসেস ম্যাগিনটি কি সানডে কম্প্যানিয়ন পত্রিকার গ্রাহিকা ছিলেন?
-হ্যাঁ।
–আপনি কখনো পড়েছেন ঐ কাগজটা?
–পড়েছি। উনি অনেকবারই দিতে চেয়েছেন আমাকে, আমি নিইনি প্রতিবার। আমার মা ঠিক ঐ ধরনের পত্রিকাগুলো পড়তেন না।
–সেই সপ্তাহের পত্রিকাটা তাহলে আপনি পড়েননি?
-না। এবং মিসেস ম্যাগিনটি ওই কাগজ বা কাগজের কোনো খবর নিয়ে আপনাকে কিছু বলেনও নি?
-বলেছিলেন তো। অনেক কথাই বলেছিলেন।
-তাই নাকি? তাহলে অনেক কথা বলেছিলেন। একটু মনে করে কথাগুলো বলুন তো। ব্যাপারটা জরুরী।
-খুব ভালো করে তা এখন আর মনে নেই। কোনো পুরনো দিনের খুনের ঘটনা। বোধহয় ক্রেগ মামলা, আবার নাও হতে পারে। যাকগে, উনি বলেছিলেন যে, ওরকম কোনো পুরনো মামলার সঙ্গে জড়িত কেউ এখন ব্রডহিনিতেই বাস করছেন। অনেক কথা এনিয়ে উনি বলেন। যদিও ভেবে পাইনি আমি ওঁর তাতে মাথা ব্যথাটা কি?
-কি বলেছিলেন উনি, কে জড়িত ব্যক্তিটি?
–মনে হয় নাটক লেখেন যে ভদ্রমহিলাটির ছেলে, সেই মহিলাটি।
–কি নাম করে উনি বলেছিলেন?
–না….আমি…কি জানি অনেক দিনের কথা তো, মনে করতে পারছি না ঠিক।
–হাতজোড় করে আমি অনুরোধ করছি। চেষ্টা করুন মনে করতে। নিশ্চয়ই খুনের দায় থেকে আপনি মুক্তি পেতে চান, তাই না? এবার অবাক হল জেমস বেন্টলী।
-মুক্তি?
–হ্যাঁ, মুক্তি।
–আমি….হা। নিশ্চয়ই চাই।
–তাহলে ভাবুন…ঠিক কি কি কথা বলেছিলেন মিসেস ম্যাগিনটি।
-অনেকটা এই ধরনের : সব কিছু নিয়ে নিজের ব্যাপারে মহিলার এত গর্ব…এত গর্বের কিছু নেই…যদি সব জানাজানি হয়ে যায়। আরও বলেন, কেউ নাকি ভাবতেই পারবে না ফটোর মহিলা আর এই মহিলাটি এক, তবে এত বছর আগের ঘটনা ইত্যাদি।
–এ ধারণা তাহলে আপনার মনে কেন এল যে, মিসেস আপওয়ার্ডের কথাই উনি বলতে চেয়েছেন?
-সত্যিই জানি না। তবে কেন যেন ধারণাটা দাণা পাকিয়ে যায়। হয়ত উনি কিছু বলছিলেন মিসেস আপওয়ার্ডের সম্বন্ধে। মন দিয়ে আমিও শুনছিলাম না, বা এখন এতদিন বাদে বলতে গিয়ে গুলিয়ে ফেলছি, এও হতে পারে। উনি যে কথা বলতেন বড্ড বেশি।
পোয়ারো দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন; আমিও মনে করি না যে, উনি মিসেস আপওয়ার্ডের কথাই বলতে চেয়েছিলেন। সম্ভবত উনি অন্য কারও কথা বলেন, ঠিকমত মনে করে আপনি কিছুই বলতে পারলেন না…প্রকৃত তদন্তের গতিও এতে বাধা পাবে। আর কে বলতে পারে, হয়ত কঁসি কাঠে আপনাকেও লটকাতে হবে হয়ত। আচ্ছা, যে সব বাড়িতে মিসেস ম্যাগিনটি কাজ করতেন, সেই সব বাড়ির মহিলাদের সম্বন্ধে উনি কিছু বলতেন?
-হ্যাঁ, কিছু কিছু। কিন্তু আমাকে সে কথা জিজ্ঞাসা করে লাভ নেই, মঁসিয়ে পোয়ারো। আমি নিজে তখন এত অশান্তির মধ্যে ছিলাম যে, কোনো কথাই আমার মনে রেখাপাত করত না।
-কিন্তু যে রকম দুশ্চিন্তায় এখন আছেন, সেই তুলনায় কিছু নয়। উনি কি মিসেস কার্পেন্টার (যিনি আগে মিসেস সেলকার্ক ছিলেন) অথবা মিসেস রেগুলের সম্বন্ধে কিছু বলেছিলেন?
–পাহাড়ের ওপরে নতুন বাড়িটার মালিক মিসেস কার্পেন্টাররাই তো? ওঁর স্বামীর তো একটা মস্ত গাড়ি আছে। তখন ভদ্রলোক ছিলেন ভদ্রমহিলার বাগদত্ত। মোটেও মিসেস কার্পেন্টারের ওপর মিসেস ম্যাগিনটির ভালো ধারণা ছিল না। খালি বলতেন, কপালের জোর।
-আর রেগুলের সম্বন্ধে?
–উনি ডাক্তার, না? মনে পড়ছে না আমার বিশেষ কিছু ওঁদের সম্বন্ধে শুনেছি বলে।
–আর ওয়েদারবিরা, বেশ খুশী খুশী দেখাল বেন্টলীকে। মনে আছে আমার ওদের সম্পর্কে কি বলেছিলেন মিসেস ম্যাগিনটি। ধৈর্য নেই ভদ্রমহিলার। যা খুশী তাই করছেন? ভদ্রলোকের কথায় বলেছিলেন, বৌয়ের আঁচল ধরা, মুখে কথাটি নেই, উনি বলেছিলেন, খুব অসুখী পরিবার।
চোখ তুলে তাকালেন পোয়ারো। তাঁর মনে হল এক মুহূর্তের জন্য এই প্রথম বেন্টলীর কথার সুরে এসেছে পরিবর্তন। সত্যিই বেন্টলী বাড়িটা সম্পর্কে চিন্তা করছিল, পরিবারের সম্বন্ধে, তাদের সুখ, অসুখ…
নরম গলায় পোয়ারো বললেন, ওদের চেনেন আপনি? ভদ্রমহিলাকে? ভদ্রলোককে? মেয়েটিকে?
-না না। বরং কুকুরটাকে বলতে পারেন। ফাঁদে আটকা পড়ে যায় একদিন কুকুরটা, একা ওটাকে মুক্ত করতে পারছিল না মেয়েটি। সাহায্য করেছিলাম আমি, এই পর্যন্ত।
পোয়ারোর কানে এ সুরটাও নতুন ঠেকল। আমি সাহায্য করেছিলাম, একটু যেন গর্বের ছোঁয়া কথাটায়। মিসেস অলিভার আর মিস হেণ্ডারসনের মধ্যে যা কথাবার্তা হয়েছিল সেগুলো মনে করার চেষ্টা করলেন পোয়ারো। মৃদুস্বরে তিনি বললেন, আপনারা কথাও বলেছিলেন?
-হ্যাঁ। উনি বলেছিলেন অনেক কষ্ট স্বীকার করেছেন ওঁর মা। উনি খুব ভালোবাসেন মাকে।
-এবং তাকে আপনিও আপনার মায়ের কথা বলেন?
–হ্যাঁ। বেন্টলী সরলভাবে উত্তর দিল।
চুপ করে রইলেন পোয়ারো। বেন্টলী বলল, খুব নিষ্ঠুর জীবন, খুব নির্মম। সারা জীবনেও কেউ কেউ সুখের মুখ দেখতে পায় না।
–তা ঠিক।
–আমার মনে হয় মিস ওয়েদারবিও অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত জীবনে।
–হেণ্ডারসন।
–ও হ্যাঁ। আমায় উনি বলেছিলেন, মিঃ ওয়েদারবি ওঁর সৎপিতা।
–ডীডার হেণ্ডারসন, করুণ নাম। নামটা সুন্দর কিন্তু উনি দেখতে তত সুশ্রী নন।
–আমার মনে হয় যথেষ্ট সুন্দরী উনি।
১৯.
মিসেস সুইটিম্যান বললেন, আমার কথাটা তুমি মন দিয়ে শোনো, ব্যস।
নাক টানল এডনা। কিছুক্ষণ ধরেই সে শুনে যাচ্ছে মিসেস সুইটিম্যানের কথা। যত্তো সব অপ্রাসঙ্গিক, অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা। একশোবার একই কথা বলেন। শুধু ওরই মধ্যে এডনা ফাঁক পেয়ে নিজের দুটো কথা ওঁর কানে প্রাণপণে তোলার চেষ্টা করছিল–এক, কোনোক্রমেই সে কিছু বলতে পারবে না। আর দুই, ওর বাবা ওর ছাল চামড়া তুলে ফেলবেন। জানতে পারলে।
মিসেস সুইটিম্যান বললেন, সেটা হলেও ক্ষতি নেই। তবে খুন সব সময় খুনই এবং যা তুমি দেখেছ তা অস্বীকার করতে তুমি পারো না।
আবার নাক টানল এডনা।
এবং এডনা, যা তোমার করা উচিত….
কথা থামিয়ে মিসেস সুইটিম্যান তার দোকানে সদ্য আগত মিসেস ওয়েদারবিকে বোনবার কাটা আর উলের গোলা দিতে এগিয়ে গেলেন।
–মাদাম আপনি অনেকদিন এদিকে আসেননি।
-না–বেশ কিছুদিন যাবৎ ভালো যাচ্ছে না শরীরটা, হার্টের অসুখ, বোঝেনই তো। বেশি সময় কাটে বিছানাতেই।
–শুনলাম, কাজের লোক পেয়েছেন আপনি? এই যে উলি আর কাটা আপনার।
-হ্যাঁ। যথেষ্ট করিল্কর্মা মেয়েটি। রাঁধেও মন্দ না। তবে স্বভাব, বেশভূষা আঁটসাঁট, অসহ্য একেবারে।
-ওহ, আজকাল আসলে মেয়েদের সুশিক্ষাই দেওয়া হয় না। মাত্র তের বছর বয়সে আমার মা কাজে যোগ দেন। রোজ উঠতেন ভোের পৌনে পাঁচটায়। উনি পরিচারিকাদের প্রধান ছিলেন। আরও তিনজন মেয়ে ছিল ওঁর অধীনে, যাদের উনি চমৎকার তৈরি করে নেন শিখিয়ে পড়িয়ে, কিন্তু এখন? ও সবের পাটই শুধু পুঁথিপড়া বিদ্যেটাই জানে মেয়েরা। যেমন এডনা।
এডনার দিকে দুজন মহিলাই তাকালেন। তখন এডনা কাউন্টারে হেলান দিয়ে পিপারমেন্ট চুষছিল বিমর্ষ মুখে। সত্যিই তার মধ্যে শিক্ষাগত উন্নতির কোনো পরিচয় ছিল না।
মিসেস সুইটিম্যান কথা চালিয়ে যাচ্ছিলেন–খুবই বীভৎস মিসেস আপওয়ার্ডের ব্যাপারটা না?
রঙবেরঙের কাটা বাছছিলেন মিসেস ওয়েদারবি। সায় দিলেন তিনি।
–ঠিক বলেছেন। নৃশংস ব্যাপার। ঘটনাটা বাড়ির লোকেরা আমাকে বলতে ভরসাই পায়নি। শেষ পর্যন্ত যেই না বলেছে; হার্টের অবস্থা আমার খারাপ হয়ে গেল। আমি আবার খুব নার্ভাস তো।
-হ্যাঁ, খবরটা আমাদের সকলের পক্ষেই বড় অস্বস্তিকর। বিশেষত রবিনের কথা ভাবলে বড় কষ্ট হয়। ওর পক্ষে এ শোক সামলানো খুবই কষ্টকর হয়েছিল। একেবারে ডাক্তার-টাক্তার ডেকে একাকার কাণ্ড। ও তো এখন লং মিডোস-এ পেয়িংগেস্ট হিসেবে থাকবে বলেছে। অবশ্য এজন্য ওকে দোষ দিই না। জ্যানেট, ওদের পরিচারিকাটি চলে গেছে তার ভাগিনীর কাছে। বাড়ির চাবি পুলিসের হেফাজতে। ওদের অতিথি হয়ে এসেছিলেন যে লেখিকাটি, তিনি আপাতত চলে গেছেন লন্ডনে, তবে আবার কেস চললে আসবেন।
মিসেস সুইটিম্যান অত্যন্ত আত্মপ্রসাদের সঙ্গে সমস্ত তথ্য জানিয়ে দিলেন। মিসেস ওয়েদারবি, উল কেনা ওঁর মূল উদ্দেশ্য হলেও খুব উপভোগ করছিলেন ব্যাপারটা।
–অত্যন্ত অস্বস্তিকর। সমস্ত পরিবেশটাই আমাদের এর আওতায় পড়ে। কোনো পাগলের কাণ্ড নিশ্চয়ই। যখনই ভাবি আমার নিজের মেয়েও বাইরে গিয়েছিল সে রাত্রে তখন যেন সমস্ত শরীরের রক্ত জল হয়ে যায়। আক্রান্ত হতে পারত সেও, খুনও হতে পারত….মিসেস ওয়েদারবি উত্তেজনায় দুচোখ বন্ধ করে ফেললেন–সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত এ অঞ্চলে। কোনো অল্পবয়সী যুবক বা যুবতাঁকে সন্ধ্যের পর ঘোরাঘুরি করতে দেওয়া উচিত নয়। জানেন তো, লং মিডোস-এর মিসেস সামারহেস বাড়ির একটা দরজাও বন্ধ করেন না, এমন কি রাত্রেও না। খিড়কীর দরজা, বৈঠকখানার জানলা সবই খোলা থাকে হাট করে যাতে ওর পোষা বেড়াল, কুকুর অবাধে যাতায়াত করতে পারে। এটাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে পাগলামী ছাড়া কিছু ভাবতে পারি না। কিন্তু মিসেস সামারহেস বলেন চুরি হবার হলে, তা হবেই, দরজা জানলা খোলা বা বন্ধ করে তা আটকানো যায় না।
মিসেস সুইটিম্যান বললেন, হয়ত তেমন কিছু সম্পত্তি নেই ওদের চুরি যাওয়ার মত।
দুঃখিতভাবে মিসেস ওয়েদারবি মাথা নেড়ে বিদায় নিলেন জিনিসপত্র গুছিয়ে।
আবার সেই পুরনো তর্ক শুরু হল এডনা আর মিসেস সুইটিম্যানের মধ্যে।
-এডনা, একথা স্বপ্নেও ভেবো না যে, সব সময় যা তুমি মনে কর সেটাই ঠিক। খুনটুন মোটেও ছেলেখেলার ব্যাপার নয়। সত্যি কথা বল এবং সৎপথে থাকো–তাতেই শায়েস্তা হবে শয়তান, আমার এটাই ব্যক্তিগত বিশ্বাস।
-আমি নিশ্চিত যে, আমার বাবা মেরেই ফেলবেন।
–তোমার বাবার সঙ্গে আমি এ ব্যাপারে কথা বলব, তা হলেও….
-মৃত মিসেস আপওয়ার্ড এবং এমন কিছু তুমি দেখেছ যা পুলিশ জানে না। ডাকঘরে তুমি কাজ কর তার মানেই একজন সরকারী কর্মচারী তুমি। তোমার কর্তব্য তোমাকেই করতে হবে। কার্ট হেলিং-এর কাছে যেতেই হবে তোমাকে।
নতুন করে এডনা কান্না শুরু করল।–না কার্ট নয়, কার্টের কাছে আমি কি করে যাব? তাহলে সবাই জেনে যাবে।
-তাহলে সেই বিদেশী ভদ্রলোককে, দ্বিধাগ্রস্তভাবে সুইটিম্যান বললেন।
–না না। বিদেশী নয়। কোনো বিদেশীর কাছে আমি এ ব্যাপারে কিছু বলতে যাৰ না।
–হয়ত এ কথাটা তুমি ঠিকই বলছ।
একটা গাড়ি থামার শব্দ হল বাইরে। মিসেস সুইটিম্যানের মুখখানা উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
-ওই যে এসে গেছেন মেজর সামারহেস। তুমি বরং খুলে বল সব কিছু। উনি বাতলে দেবেন তোমার পথ।
-না, না, আমি পারব না।
ভেতরে এলেন জনি সামারহেস। তিনটে কার্ডবোর্ডের বাক্স ওঁর হাতে।
-মিসেস সুইটিম্যান সুপ্রভাত। ওজন করে এগুলো দেখুন না, নিশ্চয়ই বেশি হয়ে যায়নি ওজন।
পার্শেলের দিকে মিসেস সুইটিম্যান নজর দিলেন। যখন মেজর সামারহেস স্ট্যাম্প লাগাতে ব্যস্ত, তখন উনি বললেন, মেজর মাপ করবেন, বিশেষ একটা ব্যাপারে আপনার মতামত নিতে চাই আমি, যখন আপনি এ অঞ্চলের বাসিন্দা তখন আপনাকেই জিজ্ঞাসা করা ভালো।
সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়লেন বটে মেজর কিন্তু এই সব মেয়েদের ধারণা তিনি ঠিক বুঝতে পারেন না। যেহেতু তার অধিকাংশ পূর্ব পুরুষ বংশানুক্রমে এ অঞ্চলের বাসিন্দা তাই সকলে এঁরা আশা করেন যে সব ব্যাপারে উপদেশ দেবেন তিনিই।
এডনার ব্যাপারে কথাটা। মিসেস সুইটিম্যান জানালেন।
নাক টানল এডনা। সন্দিগ্ধভাবে মেজর তাকালেন এডনার দিকে। জীবনে উনি এত নির্জীব মেয়ে কমই দেখেছেন। ঠিক যেন ছাল ছাড়ানো একটা খরগোস। পুরোপুরি বুদ্ধিও পাকেনি বলেই মনে হয়। বিপদ বলতে আক্ষরিক অর্থে যা বোঝায়, তাতে এ মেয়েটি পড়তেই পারে না।
মেজর কিঞ্চিৎ অনুকম্পা মিশ্রিত গলায় বললেন, কি ব্যাপার?
–স্যার খুনের ব্যাপারটা। খুনটা হয় যে রাত্রে, সেদিন এডনা কিছু একটা দেখেছিল।
জনি সামারহেসের তীক্ষ্ণ ও দ্রুত দৃষ্টি প্রথমে এনা, তারপর মিসেস সুইটিম্যানের ওপর পড়ল। পরে আবার সে দৃষ্টি ঘুরল এডনার দিকে।
তুমি কি দেখেছ, এনা? ফোঁপাতে শুরু করল এডনা। মিসেস সুইটিমান অবস্থা আয়ত্তে আনতে চেষ্টা করলেন।
-দেখুন মেজর, অনেক গুজবই আমরা শুনেছি। কিছু সত্যি বাকিটা মিথ্যে। কিন্তু এটা নিশ্চয়ই সত্যি যে, সেদিন রাত্রে একজন মহিলা মিসেস আপওয়ার্ডের সংগে কফি পান করেন?
–হ্যাঁ, তাই বিশ্বাস আমারও। এটা সত্যি কারণ কার্ট হেলিং এ কথা বলেছেন আমাদের।
স্থানীয় পুলিশ কনস্টেবল অ্যালবার্ট হেলিং অত্যন্ত ধীর ভাষী এবং নিজের কর্তৃত্ব সম্বন্ধে সচেতন।
মেজর বললেন, ও। কিন্তু ওরা তো জানে না কে মহিলাটি।
এডনা কিন্তু তাকে দেখেছে।
এডনার দিকে তাকালেন জনি। ঠোঁট দিয়ে তিনি শিস দেবার ভঙ্গি করলেন।
-ভদ্রমহিলাকে তুমি দেখেছ এডনা। ঢুকতে না বেরিয়ে যেতে?
–মনে তো হল ভেতরে যাচ্ছিলেন বলেই (এডনার গলায় গাম্ভীর্য)। আমি ছিলাম উল্টোদিকের রাস্তায়। ওই গাছগুলোর নিচে। রাস্তাটা যেখানে বাঁক নিয়েছে, সেখানে। অন্ধকার জায়গাটা। গেট দিয়ে ভদ্রমহিলা ভেতরে ঢুকলেন, তারপর চলে গেলেন বাড়ির দিকে।
মনের ভার কেটে গেল জনি সামারহেসের।
-ওঃ মিস হেণ্ডারসন ভদ্রমহিলা। এডনা এ কথা পুলিশ জানে। নিজেই ভদ্রমহিলা পুলিশকে জানিয়ে এসেছেন।
মাথা নাড়ল এডনা-না, মিস হেণ্ডারসন নয়।
-নয়? কে তাহলে?
–ঠিক জানি না আমি। আমি মুখ দেখতে পাইনি। আমার দিকে উনি পেছন ফিরে ছিলেন যদিও, কিন্তু উনি কখনোই মিস হেণ্ডারসন নন।
–তুমি সেটা কেমন করে জানলে? মুখটাই তো তুমি দেখনি বলছ।
–কারণ আমি ওঁর চুল দেখেছি, হালকা রংয়ের। মিস হেণ্ডারসনের চুলের রং গাঢ়।
অবিশ্বাসের গলায় মেজর সামারহেস বললেন, কিন্তু সেদিন রাত্রে তো তেমন ছিল না চাঁদের আলো। তোমার পক্ষে খুব সঠিকভাবে চুলের রং বোঝা সহজ নয়।
কিন্তু দেখেছি আমি। গাড়ি বারান্দায় ছিল আলো। বেরোবার সময় মিঃ রবিন আর লেখিকা ভদ্রমহিলা আলোটা জ্বালিয়ে রেখেই বেরিয়ে যান। আলোর ঠিক নিচেই আগন্তুক মহিলাটি দাঁড়িয়েছিলেন, তার পরনে গাঢ় রংয়ের কোট ছল, কোনো টুপি ছিল না মাথায় এবং চুলে আলো পড়ায় স্পষ্ট দেখতে পেলাম তা হালকা রংয়ের।
খুব আস্তে শিস দিলেন জনি। চোখ দুটো তার এখন গম্ভীর। জিজ্ঞাসা করলেন, কটা বাজে তখন?
নাক টানল এডনা–সঠিক আমি বলতে পারব না।
মিসেস সুইটিম্যান বললেন, তুমি তবুও আন্দাজ করতে পারো।
তখনো নটা বাজেনি, গীর্জার ঘন্টা শুনেছিলাম। তাতে মনে হয় সাড়ে আটটার পর।
তার মানে সাড়ে আটটা থেকে নটার মধ্যে। মহিলাটি কতক্ষণ ভেতরে ছিলেন?
জানি না স্যার, কারণ আর বেশিক্ষণ আমি অপেক্ষা করিনি। কোনো শব্দ শুনিনি। কান্না বা চিৎকার কোনোটাই নয়।
গম্ভীরভাবে মেজর সামারহেস বললেন, একটাই করণীয় কাজ আছে আমাদের, তা হল পুলিশকে জানানো।
সশব্দে এডনা কেঁদে উঠল। –আমায় তাহলে বাবা জ্যান্ত পুঁতে ফেলবেন।
এডনা একথা বলেই পেছনের ঘরে দ্রুতপায়ে চলে গেল।
মেজরকে মিসেস সুইটিম্যান বললেন, স্যার বড় ছেলেমানুষী এনা করছে। ব্যাপারটা কি জানেন? খুব রাশভারী আর কড়া মেজাজের মানুষ ওর বাবা। এখন খুব অসন্তুষ্ট হয়ে আছেন এডনার ওপর। কুলাভনে একজন ভদ্রলোক, মার্জিত ছেলের সাথে এডনার বাগানের কথা ঠিক হয়ে গিয়েছিল সব। ছেলেটিকে ওর বাবাও খুব পছন্দ করতেন, কিন্তু আজকালকার মেয়েদের ব্যাপার তো–এডনা ঐ রেগকে ছেড়ে এখন ঘোরাঘুরি করছে চার্লি মাস্টার্সের সঙ্গে।
-মাস্টার্স? মানে মিঃ কোলের কর্মচারী, না?
-হ্যাঁ। আবার বিবাহিত লোকটা। ছেলেমেয়েও আছে দুটি। মেয়েদের পেছনে ঘোরাঘুরি করাই ওর স্বভাব। মোটেই ভালো না লোকটা, এডনার মতিগতি দেখে ওর বাবা চার্লির সঙ্গে একেবারে বন্ধ করে দিয়েছেন মেয়ের মেলামেশা। সেদিন এডনা বাবাকে বলেছিল সেই রাত্রে ও কুলাভনে সিনেমায় যাচ্ছে রেগের সঙ্গে। আসলে লুকিয়ে ও চার্লির সঙ্গে দেখা করতে যায় ওই রাস্তাতেই, সে রাত্রে চার্লি শেষ পর্যন্ত আসেনি। হয় ওর বৌ আটকে দিয়েছিল ওঁকে নয়তো অন্য কোনো মেয়ের পেছনে ঘুরঘুর করছিল। তাই এডনা ভয় পাচ্ছে যে সবাই জানতে পারলেও ওর বাবার কানেও কথাটা উঠতে দেরি হবে না যে ও চার্লির সঙ্গে এখনো মিশছে।
মাথা নাড়লেন মেজর। কি করে এডনার মত মেয়ে এসব করে উনি ভেবেই পেলেন না। ওর মতন মেয়ের পক্ষে দু-দুজন ছেলে বন্ধু জোটানো।
-তাই বুঝি এডনা কার্টের সঙ্গে দেখা করতে চাইছে না?
—স্যার আপনি ঠিকই ধরেছেন।
–কিন্তু এসব পুলিশকে জানানো উচিত। এ ব্যাপারে ওরা কৈফিয়ত নাও চাইতে পারে আর যদিও বা চায়, ওরা তা গোপন রাখবে অনুরোধ করলে। আমি বরং মিঃ স্পেন্সকে এখানে আসতে বলি-না থাক, গাড়ি করে আমি এডনাকে কিলচেস্টারে নিয়ে যাচ্ছি। ওখানে এডনা জবানবন্দী দিলে এখানকার কেউ তা জানতে পারবে না। আমি শুধু ফোনে জানিয়ে দিচ্ছি যে আমরা যাচ্ছি।
এর কিছুক্ষণ পরেই মিসেস সুইটিম্যানের উৎসাহ পেয়ে এডনা জনি সামারহেসের স্টেশন ওয়াগনে চেপে কিলচেস্টারের পথে রওনা দিল।
.
২০.
কিলচেস্টারে এরকুল পোয়ারো মিঃ স্পেন্সের অফিসেই ছিলেন। তিনি চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসেছিলেন, কোলের ওপর দিয়ে হাত দুটো। হাতের কাজ শেষ করে তার দিকে স্পেন্স তাকালেন।
-মঁসিয়ে পোয়ারো, কিছু আসছে কি মাথায়?
–চিন্তা করছি, চেষ্টা করছি।
–ভালো কথা। ভুলে গেছি আপনাকে জিজ্ঞাসা করতে, বেন্টলীর সংগে যে আবার দেখা করলেন, কোনো নতুন তথ্য পেলেন?
মাথা নাড়লেন পোয়ারো। ভুরু কুঁচকানো তার। তিনি এই মুহূর্তে বেন্টলীর কথাই ভাবছিলেন। ভাবছিলেন তাঁর মত একজন বিখ্যাত গোয়েন্দা যেখানে বিনা পারিশ্রমিকে ব্যয় করছেন নিজের বুদ্ধি আর সময় শুধুমাত্র পুরনো বন্ধুত্বের খাতিরে, অভিযুক্ত ব্যক্তিটি সেখানে এত কাঠখোট্টা, এটা ঠিক উচিত নয়। বরং একজন অল্পবয়সী সুন্দরী যুবতী, সরল কিন্তু বেহিসাবী, বা সুশ্রী যুবক একটি যে কর্মদক্ষ, কাব্যনুরক্ত অথচ উদ্ধত চরিত্র, যেন এরকম হলেই ভালো হত। তার বদলে কি না জেমস বেন্টলী। মানসিক বিকারগ্রস্ত আত্মকেন্দ্রিক একটা ছেলে, যে শুধু নিজের সম্বন্ধে ছাড়া কিছুই আর ভাবে না, তাছাড়াও এমন অকৃতজ্ঞ আর নির্বিকার যে, তারজন্য এই যে এত চেষ্টা করা হচ্ছে সেজন্য একটা শুকনো ধন্যবাদ পর্যন্ত দেওয়া দরকার বলে মনে করে না। ভাব দেখায় এমন যেন ওর কেনো কিছুতেই কিছু এসে যায় না। শুধু এই কারণেই ফাঁসিকাঠে ওকে ঝোলালেও বোধহয় দোষ হত না।
পোয়ারোর মনে এই সব চিন্তা চলছিল, স্পেন্স তাকে উদ্দেশ্য করে যখন কথা শুরু করেছিলেন। পোয়ারো বললেন, দেখুন, আমাদের দুজনের সাক্ষাৎকারটা তেমন কিছু ফলপ্রসু হয়েছে বলে মনে করি না আমি। যেটুকু দরকারী কথা বেন্টলীর মনে করতে পারা উচিত ছিল, তাও মনে করতে পারেনি সে। ওর যা মনে পড়েছে তা এত অস্পষ্ট যে, তার থেকে কোনো যুক্তিবদ্ধ উপসংহার পাইনি আমি। তবে একথা সত্যি যে সানডে কম্প্যানিয়নর ওই ফিচারটা পড়ে যথেষ্ট উত্তেজিত হন মিসেস ম্যাগিনটি। এমন কারও কথা বেন্টলীকে উনি বলেন যে, উল্লিখিত কোনো একটা মামলার সাথে জড়িত এবং ব্রডহিনির বাসিন্দা বর্তমানে।
–কোন মামলা, মিঃ স্পেন্স জিজ্ঞাসা করলেন।
আমাদের বন্ধু বেন্টলী সেইটুকু বলতে পারছে না সঠিকভাবে। দ্বিধাগ্রস্তভাবে বলল হয়ত ক্রেগ মামলা হতে পারে। কিন্তু ঐ একটা মামলার বিষয়বস্তু সম্বন্ধে ও নিজে ওয়াকিবহাল সেইজন্য ওটা ওর আন্দাজও হতে পারে। কিন্তু বাসিন্দাটি একজন মহিলা। বেন্টলী এ প্রসঙ্গে মিসেস ম্যাগিনটির কথা উল্লেখ করেছে, এমন কেউ, সব জানাজানি হয়ে গেছে বুঝলে সে আর অত গর্ব করতে পারবে না।
–গর্ব?
–হ্যাঁ, অর্থব্যঞ্জক কথাটা, তাই না? কিন্তু গর্বিত মহিলাটি কে? কিছুই জানতে পারা যায়নি সে সম্বন্ধে?
–একবার বেন্টলী বলল মিসেস আপওয়ার্ড হয়ত, কিন্তু যতদূর মনে হয় আমার সেরকম হওয়ার কোনো কারণ নেই।
ভদ্রমহিলাকে অত্যন্ত অহংকারী এবং ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ভেবেই হয়ত একথা বলেছিল। কিন্তু মিসেস আপওয়ার্ড হতেই পারেন না কারণ তিনি মৃতা এবং এমন একটি কারণে যে কারণে মিসেস ম্যাগিনটিও খুন হন। কারণটি একটি ফটোর সনাক্তকরণ।
পোয়ারো বিষণ্ণভাবে বললেন, ওঁকে আমি সাবধান করে দিয়েছিলাম।
বিড়বিড় করে স্পেন্স বললেন, লিলি গ্যাম্বল। বয়সের হিসেব মত দেখতে গেলে মাত্র দুটো নাম পাওয়া যাচ্ছে মিসেস রেগুল এবং মিসেস কার্পেন্টার। আমি বাদই দিচ্ছি মিসেস হেণ্ডারসনকে, ওর একটা জন্মপরিচয় আমরা জানি।
এবং একেবারেই অজ্ঞাতকুলশীল অন্য দুজন? দীর্ঘশ্বাস ফেললেন স্পেন্স। জানেনই তো কি দিনই না চলছে আজকাল। সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে যুদ্ধ। যে স্কুলে লিলি ছিল, তার আজ কোনো চিহ্নই নেই। মানুষ জনের কথাই ধরুন। অজ্ঞাতকুলশীলদের সংখ্যাই বেশি যুদ্ধের বাজারে। ব্রডহিনির ব্যাপারেই দেখুন, নিশ্চিতভাবে আমরা চিনি সামারহেসদের যারা কিনা আজ তিনশো বছর যাবৎ বংশপরম্পরায় ব্রডহিনির বাসিন্দা। আর মিঃ কার্পেন্টারকে চিনি যার বংশের অনেকে যথেষ্ট পরিচিত। ডঃ রেগুল? এইটুকুই আমরা জানি যে উনি কোথায় শিক্ষালাভ করেন বা কোথায় চিকিৎসক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন কিন্তু আমাদের ওঁর বংশ পরিচয় অজানা। ডাবলিনের বাসিন্দা ছিলেন ওঁর স্ত্রী, ইভা সেলকার্ক। মিঃ কার্পেন্টারকে বিয়ে করার আগে যুদ্ধের কারণে ভদ্রমহিলা ছিলেন নিহত কোনো ব্যক্তির সদ্যবিধবা যুবতী স্ত্রী। যে কেউই তো সে সাজতে পারে। ওয়েদারবিদের কথাই ধরুণ–এরা তো পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত চষে বেড়িয়েছেন, কেন? হয়ত বা ওঁরা কোনো সৎ নয়তো কোনো কুকীর্তি করেছেন। এ কথা বলছি না যে, কোনো সংবাদই আমরা সংগ্রহ করতে পারবো না, কিন্তু তাতেও তো সময় লাগবে। নিজে থেকে লোকজন কেউ আপনাকে কিছু খবর দেবে না।
-কারণ তাদের অনেকেই লুকোতে চায় কিছু না কিছু। কিন্তু সেটা নাও খুন হতে পারে। পোয়ারো বললেন।
বোধহয় তাই হবে। হয়ত তারা যা করেছে, তা আইনের চোখে অল্পবিস্তর দোষের। হয়ত সাধারণ কোনো ঘটনা। যাই হোক এত কষ্ট করে লোকে তা লুকিয়ে রাখে যে, আসল খবর খুঁজে বের করা ঢের বেশি কষ্টকর।
–কিন্তু অসম্ভব তো নয়।
-না। কিন্তু সময় সাপেক্ষ। ধরুন যদি লিলিই ব্রডহিনিতে থেকে থাকে, তা হলে হয় সে ইভ কার্পেন্টার নয়ত শেলা রেগুল। দুজনেরই রুটিন মাফিক জবানবন্দী নিয়েছি আমি। ওঁরা নাকি খুনের সময় দুজনেই বাড়িতে ছিলেন। সরলতার প্রতিমূর্তি মিসেস কার্পেন্টার আর সত্যিই মিসেস রেগুলের স্নায়ু দুর্বল। কাজেই আমরা সেদিকেও এগোতে পারছি না।
মনে পড়ল পোয়ারোর লং মিডোস-এর বাগানে মিসেস রেগুলের সঙ্গে তার নিজের দেখা হয়ে যাওয়ার কথা। একটা বেনামী চিঠি পেয়েছিলেন ভদ্রমহিলা (অন্তত পোয়ারোকে উনি সেরকমই বলেছিলেন)। এখনো ওই ব্যাপারে পোয়ারোর সন্দেহ কাটেনি।
স্পেন্স বললেন, এবং আমাদের সতর্ক হয়ে চলতে হবে। কারণ যদি দোষীও হয় একজন, অন্যজন তো নির্দোষ।
–আর মিঃ কার্পেন্টারও ভাবী সদস্য লোকসভার এবং বাসিন্দাদের মধ্যে যথেষ্ট নামকরা লোক।
যদি খুনের ব্যাপারে ওঁর স্ত্রী সত্যি জড়িত থাকেন, তাহলে ওঁর সুনাম, প্রতিপত্তি এসব কিছুই শেষ পর্যন্ত কাজে আসবে না।
-আমি তা জানি, কিন্তু সব দিক দিয়ে আপনাদের সতর্ক সন্দেহমুক্ত, নিশ্চিত হতে হবে, তাই না?
–ঠিক কথা। কিন্তু আপনি এটা তো জানেন যে, এই দুজনের মধ্যেই দোষী কোনো একজন।
-না, ঠিক তা বলতে পারি না। অন্য সম্ভাবনাও রয়েছে…
—যেমন?
পোয়ারো এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে হঠাৎ বললেন, আচ্ছা, কেন ফটো রাখে মানুষ?
-কেন আপনার সাথে কিছুনেক জিনিস ফেলে কেন মানুষ ফটোগ্রাফ ফটোগ্রাফ মনে
-কেন? ভগবান জানেন। লোকে অনেক আবর্জনাই প্রাণে ধরে ফেলতে পারে না।
–আমি আপনার সাথে কিছুটা একমত। কেউ কেউ অনেক জিনিস জমায়। কেউ বা প্রয়োজন ফুরোলেই টান মেরে অনেক জিনিস ফেলে দেয়। এটা যার যার স্বভাবের ব্যাপার। কিন্তু বিশেষভাবে ফটোর কথাই আমি বলতে চাইছি। কেন মানুষ ফটোগ্রাফ রাখে?
প্রাণে ধরে ফেলতে পারে না বলে : কিংবা হয়ত তাদের পুরনো কথা ফটোগ্রাফ মনে করিয়ে দেয়…ধরুণ স্মৃতি রাখার জন্য…..
–ঠিক তাই। পুরনো কথা মনে পড়ে। আবার জানতে চাইছি আমরা কেন? একজন বিগত যৌবনা ভদ্রমহিলা কেন তার যুবতী বয়সের ছবি রেখে দেন সযত্নে, প্রথম কারণ আত্মতুষ্টি। হয়ত বয়স কালে ভদ্রমহিলা যথেষ্ট সুন্দরী ছিলেন। ফটোতে দেখলে এক ধরনের আনন্দ পান উনি। যখন আয়নায় উনি নিজের চেহারাটায় প্রৌঢ়ত্বের ছাপ লক্ষ্য করেন, তখন ফটোতে যৌবনের সৌন্দর্য ওঁকে উৎসাহিত করে। তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে কোনো বন্ধুকে বলেন–আমি কি ছিলাম আঠারো বছর হয়সে। মিঃ স্পেন্স, আপনি কি আমার কথা সমর্থন করছেন?
–হ্যাঁ-হ্যাঁ। আমি মানি যে, এটা সত্য।
–তাহলে প্রথম কারণ আত্মতুষ্টি। আমার মতে দ্বিতীয় কারণ অবেগপ্রবণতা।
–দুটোই তো এক।
-না, ঠিক এক নয়। কারণ দ্বিতীয় কারণটা শুধু আপনাকে নিজের নয়, অন্য লোকেরও ছবি রাখতে বাধ্য করে। যেমন ধরুণ আপনার মেয়ের ছোটবেলার ইজের পরা ছবি, যে মেয়ে হয়ত এখন বিবাহিতা।
–হ্যাঁ, হা, আমি এ-রকম অনেক দেখেছি। স্পেন্স হাসতে হাসতে বললেন।
–ছেলেমেয়েদের অনেক সময় অস্বস্তি লাগে কিন্তু এ ব্যাপারে মায়েরা অত্যুৎসাহী। আবার ছেলেমেয়েরাও ছবি রাখে মায়ের, যদি অল্প বয়সে তাদের মা মারা যান। এই আমার মা, অল্প বয়সে…তারা ভাবে।
–বোধহয় আমি আঁচ করতে পারছি মিঃ পোয়ারো, কোন দিকে এগোচ্ছেন আপনি।
–আর তৃতীয় কারণ, আত্মতুষ্টি নয়, আবেগও নয়, নিছকই ঘৃণা।
–ঘৃণা?
-হ্যাঁ। ধরুন চরিতার্থ করতে হবে প্রতিহিংসা। হয়ত কেউ অনেক ক্ষতি করেছে আপনার। তার একটা ছবি আপনি নিজের কাছে রেখে দিলেন যাতে আপনি কোনোদিনও তার কথা না ভোলেন। এমন কি হয় না, বলুন?
-কিন্তু, নিশ্চয়ই এক্ষেত্রে সেটা প্রযোজ্য হতে পারে না।
পারে না বুঝি?
–আপনি কি ভাবছেন ঠিক বলুন তো?
বিড়বিড় করে পোয়ারো বললেন, অনেক সময় খবরের কাগজে ভুল তথ্য ছাপা হয়। সানডে কম্প্যানিয়ন বলছে যে ইভা কেনকে মিঃ ক্রেগের বাড়িতে নিযুক্ত করা হয়েছিল বাচ্চার দেখাশুনোর জন্য। কিন্তু আসল ঘটনাটা কি?
–আসল ঘটনা ওটাই। এখানে কাগজের তথ্য ঠিকই আছে। কিন্তু আমরা তো লিলি গ্যাম্বলকে খুঁজছি।
হঠাৎ চেয়ারে সোজা হয়ে বসলেন পোয়ারো। স্পেন্সকে হাত নেড়ে থামিয়ে দিয়ে বললেন, দেখুন, লিলির দিকে আপনি ভালো করে তাকিয়ে দেখুন। মোটেই সুশ্রী না লিলি, এবড়ো খেবড়ো দাঁত, কাঁচের মোটা চশমা, সব মিলিয়ে প্রায় কুৎসিতই বলা চলে। সুতরাং আমার বক্তব্যের প্রথম কারণটার জন্য ওর ছবি কেউই রাখবে না। ইভা কার্পেন্টার, শেলা রেগুল দুজনেই যথেষ্ট সুন্দরী। যদি সত্যিই ওদের মধ্যে কেউ লিলি হন, তাহলেও কারও হাতে পুরনো ছবি পড়ার আগে ওরা দুজনেই তো ছিঁড়ে ফেলবেন টুকরো টুকরো করে।
এবার ভাবুন দ্বিতীয় কারণটির কথা। স্নেহ, ভালোবাসা ইত্যাদি আবেগের কথা ধরা যাক। লিলি ছোট ছিল যখন, কেউ কি তখন স্নেহ করত ওকে, যা চরিত্র লিলির তাতে তা অসম্ভব। ও চিরদিনই অনাদর পেয়েছে। যিনি ওকে একমাত্র ভালোবাসতেন, সেই ওর পিসী, তার পরিণতি হয় অত্যন্ত করুণ। সুতরাং দ্বিতীয় কারণে ওর ছবি কেউ রাখবে না। তৃতীয় কারণ? কেউ ওকে ঘৃণাও করত না। যে পিসীকে ও মেরে ফেলে, তার স্বামী বা স্বজন বলতে কেউ ছিল না। ঘৃণা নয়, সকলে ওকে করুণা করত।
মোদ্দা ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে এই যে, আপনার হিসেব মত ওর ফটো কারও কাছে থাকার কথা নয়।
–ঠিক ধরেছেন। আমার চিন্তার ফল এটাই।
–কিন্তু কেউ রেখেছিল। এবং সেই ফটো মিসেস আপওয়ার্ড দেখেন।
–সত্যি উনি কি, দেখেছিলেন?
–ধৎ। আরে মশাই, সে কথা তো আপনিই বলেছিলেন আপনাকে নাকি উনি বলেছেন, হ্যাঁ, তাই বলেছিলেন স্বগতা মিসেস আপওয়ার্ড। কিন্তু কোনো কোনো ব্যাপারে উনি গোপনীয়তা পছন্দ করতেন। নিজের ব্যাপার নিজেই দেখা পছন্দ করতেন। আমি ছবিগুলো ওঁকে দেখিয়েছিলাম এবং সেগুলোর মধ্যে থেকে উনি একটা ছবি সনাক্ত করেন। কিন্তু কোনো বিশেষ কারণে গোপন করেন সেটা। ব্যাপারটা নিয়ে নিজেই অনুসন্ধান করবেন ঠিক করেছিলেন। ইচ্ছে করেই তাই অন্য ফটো সনাক্ত করে ভুল পথে আমাদের চালিত করেন।
–কিন্তু কেন? আগেই তো আমি বললাম উনি নিজের হাতে নিতে চেয়েছিলেন।
ব্ল্যাকমেলের কোনো ব্যাপার নয় তো এটা? অনেক টাকার মালিক কিন্তু ভদ্রমহিলা। সব টাকাই নাকি ওনার স্বামীর।
-ওঃ না। ব্ল্যাকমেল নয়। হয়ত ছবি দেখে সনাক্ত করতে পেরেছিলেন যাকে তাকে উনি পছন্দ করতেন। এবং সেজন্যই চাননি যে, তাকে আমরা খুঁজে পাই। সে যাই হোক না কেন অত্যন্ত বেশি ছিল ওঁর কৌতূহল। গোপনে তার সাথে উনি কথা বলতে চান এবং সেই সময় জানবার চেষ্টায় ছিলেন যে, সে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত কিনা ম্যাগিনটি হত্যার ব্যাপারে।
–তা হলে তো বাকি তিনখানা ফটোর ব্যাপারে মাথা ঘামানো উচিত আমাদের।
-হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। মিসেস আপওয়ার্ড প্রথম সুযোগেই ফটোর মহিলার সঙ্গে কথা বলতে চান। ওঁর ছেলে আর মিসেস অলিভার যখন থিয়েটারে গেলেন সেই সময়টারই সুযোগ নেন উনি।
–এবং উনি ফোন করেন মিস হেণ্ডারসনকে। আবার মিস হেণ্ডারসন তাহলে ঘটনার সাথে জড়িয়ে পড়লেন দেখছি এবং তাঁর মা ও।
স্পেন্স বিষণ্ণ গলায় আরও বললেন, মঁসিয়ে পোয়ারো, জাল যতই গুটিয়ে আনতে চাই, আপনি ততই ব্যাপারটা কঠিন করে দেন, তাই না?