বিরোধমূলক অলঙ্কার – বিষয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “ভাষা ও শিক্ষা” বিষয়ের “ছন্দ ও অলঙ্কার” বিভাগের একটি পাঠ।
Table of Contents
বিরোধমূলক অলঙ্কার | ছন্দ ও অলঙ্কার | ভাষা ও শিক্ষা
দুটি পদার্থের আপাত বিরোধকে অবলম্বন করে যে শ্রেণির অলঙ্কার রূপ লাভ করে তাকে বিরোধমূলক অলঙ্কার বলে। বিরোধমূলক অলঙ্কার নানা প্রকারের হয়ে থাকে। যেমন : কি অলঙ্কার নানা প্রকা হয়ে থাকে। যেমন:
বিরোধাভাস :
যেখানে দুটি বিষয়ের মধ্যে আপাতা আপাতবিরোধ আছে, প্রকৃত বিরোধ নেই, সেখানে বিরোধাভাস অলঙ্কার হয়। যেমন : বড় যদি হতে চাও ছোট হও তবে।
বিভাবনা :
যেখানে প্রসিদ্ধ কারণ ছাড়াই কার্যের উৎপত্তি হয়, সেখানে বিভাবনা অলঙ্কার হয়ে থাকে। যেমন : শ্রম বিনা ক্ষীণ কটি, ভয় বিনা নয়ন চঞ্চল, / অভূষণে শোভা দেহ, এ যে নবযৌবনের ফল ।
বিশেষোক্তি :
যেখানে প্রসিদ্ধ কারণ থাকা সত্ত্বেও কার্যোৎপত্তি হয় না, সেখানে বিশেষোক্তি অলঙ্কার হয় যেমন : জনম অবধি হাম রূপ নেহারিনু / নয়ন না তিরপিত ভেল। লাখ লাখ যুগ হিয়ে হিয়ে রাখনু / তবু হিয়া জুড়ন না গেল।
অসঙ্গতি :
এক স্থানে কারণ থাকলে এবং অপর স্থানে কার্যোৎপত্তি হলে অসঙ্গতি অলঙ্কার হয়। যেমন বারেক তাকাই যদি তব মুখপানে । পৃথিবী টলিয়া ওঠে। : কারণ ও কার্যের বৈষম্য দেখা দিলে কিংবা বিসদৃশ বস্তুর একত্র সমাবেশ হলে বিষম অলঙ্কার হয়। বিষম যেমন অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো / সে তো তোমার আলো।
কারণমালা :
কোনো কারণের কার্য যদি পরবর্তী কার্যের কারণ হয়ে পড়ে এবং এভাবে কার্য-কারণ পরম্পরা চলতে থাকে, তবে কারণমালা অলঙ্কার হয়। যেমন বিদ্যা হতে জ্ঞান হয়, জ্ঞানে হয় ভক্তি । ভক্তি হতে মুক্তি হয়, এই সার যুক্তি
একাবলী :
যেখানে পূর্ববর্তী বাক্য বা বাক্যাংশের বিশেষণ পদ পরবর্তী বাক্য বা বাক্যাংশের বিশেষ্য পদ রূপে ব্যবহৃত হয়, সেখানে একাবলী অলঙ্কার হয়। যেমন : গাছে গাছে ফুল, ফুলে ফুলে অলি / সুন্দর ধরাতল।
সার :
যেখানে পদার্থের উত্তরোত্তর উৎকর্ষ বর্ণিত হয়, সেখানে সার অলঙ্কার হয়। যেমন : সংসার ভিতর সার, যে বস্তু চেতন। চেতনের মধ্যে সার, মনুষ্য রতন।। হ উপস্থিত করা হয়।
ন্যায়মূলক অর্থালঙ্কার :
যেখানে কোনো বক্তব্যকে ন্যায়সঙ্গত সমর্থনসহ করা হয় তাকে ন্যায়মূলক অর্থালঙ্কার বলে। ন্যায়মূলক অর্থালঙ্কার অর্থান্তরন্যাস ও কাব্যলিঙ্গ এই দুই শ্রেণিতে বিভক্ত।
অর্থান্তরন্যাস :
যেখানে সাধারণ বিষয়ের দ্বারা বিশেষ বিষয় অথবা বিশেষ বিষয়ের দ্বারা সাধ দ্বারা সাধারণ বিষয় সমর্থিত হয় সেখানে অর্থান্তরন্যাস অলঙ্কার হয়। যেমন : এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি / রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।
কাব্যলিঙ্গ :
যেখানে কোনো পদের বা বাক্যের অর্থকে ব্যঞ্জনায় বর্ণনীয় বিষয়ের কারণ বলে, মনে হয়, সেখানে কাব্যলিঙ্গ অলঙ্কার হয়। যেমন : কি কুক্ষণে (তোর দুঃখে দুঃখী) পাবক-শিখা-রূপিণী জানকীরে আমি আনিনু এ হৈম গেহে ?

গূঢ়ার্থমূলক অর্থালঙ্কার :
যেখানে প্রস্তাবিত বাচ্যার্থের আড়ালে আরেকটি গূঢ়ার্থ থাকে তাকে গূঢ়ার্থমূলক অর্থালঙ্কার বলে। এই অলঙ্কার দু ধরনের। যেমন :
ব্যাজস্তুতি :
স্তুতিচ্ছলে নিন্দা অথবা নিন্দাচ্ছলে স্তুতি বোঝালে ব্যাজস্তুতি হয়। যেমন : অতি বড় বৃদ্ধ পতি সিদ্ধিতে নিপুণ কোন গুণ নাই তার কপালে আগুন।
অপ্রস্তুত প্রশংসা :
যেখানে অপ্রস্তুত বিষয়ের বর্ণনা দ্বারা প্রস্তুত বিষয়ের প্রতীতি হয়, সেখানে অপ্রস্তুত প্রশংসা অলঙ্কার রূপ লাভ করে। যেমন : প্রাচীরের ছিদ্রে এক নাম-গোত্র-হীন / ফুটিয়াছে ফুল এক অতিশয় দীন।
আরও দেখুন: