অক্ষর বা হরফ নিয়ে আজকের আলাপ। এই পাঠটি আমাদের ভাষা ও শিক্ষা সিরিজের, ধ্বনিতত্ত্ব বিভাগের, ধ্বনিবিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব পাঠগুলোর একটি পাঠ।
Table of Contents
অক্ষর বা হরফ
সাধারণ অর্থে অ’ক্ষর বলতে বর্ণ বা হরফ (Letter)-কে বোঝালেও প্রকৃত-প্রস্তাবে অ’ক্ষর ও বর্ণ পরস্পরের প্রতিশব্দ বা সমার্থক শব্দ নয়। অ’ক্ষর হচ্ছে বাগ্যন্ত্রের স্বল্পতম প্রয়াসে উচ্চারিত ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছ। আর বর্ণ বা হরফ হচ্ছে ধ্বনির চক্ষুগ্রাহ্য লিখিতরূপ বা ধ্বনি-নির্দেশক চিহ্ন বা প্রতীক ।
ইংরেজিতে আমরা যাকে ‘Syllable’ বলে অভিহিত করি, তা-ই অ’ক্ষর। উদাহরণস্বরূপ বলা চলে, ইংরেজি *Incident’ শব্দে ‘In-ci-dent’-এ তিনটি সিলেবল আছে । এ তিনটি সিলেবল-ই হল অ’ক্ষর। কিন্তু, আলাদাভাবে ‘I-n-c-i-d-e-n-t’—এগুলো অ’ক্ষর নয়; এগুলো বর্ণ বা হরফ। তদ্রুপ, বাংলা ‘বন্ধন’ শব্দেও বন্ + ধন্—এ দুটো অ’ক্ষর, কিন্তু ব–ধ-নৃ— এগুলো অ’ক্ষর নয়; এগুলো বর্ণ বা হরফ মাত্র। ভাষা-বিশেষজ্ঞগণ অ’ক্ষরকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। যেমন :
‘নিঃশ্বাসের স্বল্পতম প্রয়াসে একই বক্ষঃস্পন্দনের ফলে (by a single breath pulse) যে ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছ, একবারে উচ্চারিত হয়, তাকেই সিলেবল বা অ’ক্ষর বলা যেতে পারে।’ – মুহম্মদ আব্দুল হাই
“কোনও শব্দে যখন যে ধ্বনিসমষ্টি এক সময়ে একত্রে উচ্চারিত হয়, তাহাকে অ’ক্ষর বলে।’ — ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
এক প্রয়াসে উচ্চারিত ধ্বনিসমষ্টির নাম অ’ক্ষর (Syllable)। ‘ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, ‘বাংলা কবিতার ছন্দ’।
“বাগ্যন্ত্রের স্বল্পতম প্রচেষ্টায় উচ্চারিত ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টিকেই অ’ক্ষর বলে। -শ্রী অমূল্যধন মুখোপাধ্যায়।
কোনো শব্দের যতটুকু অংশ একটানে বা এক ঝোঁকে উচ্চারিত হয়, তাকে অক্ষর বলে। ছন্দ বিজ্ঞানে অক্ষরকে ‘দল’ বলা হয়। যেমন :আমি। আমি = আ+মি (এখানে দুটি অক্ষর আছে)।
হরফ বা অক্ষর (ইংরেজি: Glyph) বলতে লিখনের একটি মৌল উপাদানকে বোঝায়। দুই বা ততোধিক অক্ষর একই প্রতীককে নির্দেশ করলে তাদেরকে সহ-অক্ষর বলে; সহ-অক্ষরগুলি একে অপরের প্রতিস্থাপনীয় হতে পারে, কিংবা প্রতিবেশভদে আলাদাভাবে ব্যবহৃত হতে পারে। একাধিক সহ-অক্ষর যে বিমূর্ত এককের রূপভেদ, তাকে অক্ষরমূল বলা হয়। কম্পিউটিং-এর পরিভাষায় অক্ষরমূলকে ক্যারেক্টার নামেও ডাকা হয়।
কোন অক্ষর একাধিক ক্যারেক্টার তথা অক্ষরের সংযুক্ত রূপ হতে পারে। তখন একে যুক্তাক্ষর বলে। অক্ষরগুলি মুদ্রণে বা লেখায় ব্যবহৃত নির্দেশক চিহ্ন-ও হতে পারে।
অক্ষর কত প্রকার ও কি কি?
অক্ষর দুই প্রকার। যথা– ক. স্বরান্ত অক্ষর এবং খ. ব্যঞ্জনান্ত অক্ষর।
ক. স্বরান্ত অক্ষর : যে অক্ষরের শেষে স্বরধ্বনি উচ্চারিত হয়, তাকে স্বরান্ত অক্ষর বলে। যেমন- ভাষা = ভ + আ + ষ + আ; আশা = আ + শ + আ।
খ. ব্যঞ্জনান্ত অক্ষর : যে অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জন ধ্বনি উচ্চারিত হয়, তাকে ব্যঞ্জনান্ত অক্ষর বলে। যেমন শীতল = শী + তল; পবন = প + বন।
ধ্বনি ও অক্ষরের মধ্যে পার্থক্য কি?
ধ্বনি ও অক্ষরের মধ্যে পার্থক্য হলোঃ
ধ্বনি
ভাষার ক্ষুদ্রতম একক হচ্ছে ধ্বনি। ধ্বনির লিখিত রূপকে বর্ণ বলে। ধ্বনি দুভাগে বিভক্ত। যেমন– স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জন ধ্বনি।
ধ্বনি হচ্ছে ভাষার মূল একক।
ধ্বনিতে একটিমাত্র প্রতীক বা বর্ণ ব্যবহৃত হয়।
মানুষ তার মনের ভাব অন্যের কাছে প্রকাশ করতে গেলে বাগযন্ত্রের মাধ্যমে যে অর্থদ্যোতক শব্দ সৃষ্টি করে সেই সার্থক শব্দই হল ধ্বনি।
ধ্বনির উদাহরণ : অ, ক।
অক্ষর
অক্ষর হচ্ছে এক বা একাধিক ধ্বনির সমষ্টি, যা বাগযন্ত্রের সামান্য প্রয়াসে উচ্চারিত হয়। অক্ষর দুভাগে বিভক্ত। যেমন– ১. স্বরান্ত ও ২. ব্যঞ্জনান্ত।
অক্ষর হচ্ছে শব্দের একক।
অক্ষরের লিখিত রূপে এক বা একের অধিক বর্ণ ব্যবহৃত হয়।
কোন শব্দ উচ্চারণের সময় আমরা সে শব্দকে ভেঙে উচ্চারণ করি। উচ্চারণের এই ভাঙা অংশটিকে অক্ষর বলে।
অক্ষরের উদাহরণ ‘আকাশ’ শব্দে দুটি অক্ষর আছে ‘আ’ এবং ‘কাশ’।
আরও দেখুন:
- [৩.২] ধ্বনি ও বর্ণ | ধ্বনিবিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব | অধ্যায় ৩ | ভাষা ও শিক্ষা
- [৩.১] ধ্বনি কী ও কেন | ধ্বনিবিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব | অধ্যায় ৩ | ভাষা ও শিক্ষা
- ব্যাকরণ সূচিপত্র | ভাষা-শিক্ষা | বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি | সূচিপত্র
- গণমাধ্যম রচনা । Essay on Mass media । প্রতিবেদন রচনা
- দীপাবলি রচনা । Essay on Diwali । প্রতিবেদন রচনা
- স্কোয়াশ চাষ পদ্ধতি