জীবনানন্দ দাশ, কবি জীবনানন্দ দাশ প্রতিবেদন রচনা। Essay on jibanananda Das

জীবনানন্দ দাশ অর্থাৎ কবি জীবনানন্দ দাশ [ Essay on jibanananda Das  ] অথবা, কবি জীবনানন্দ দাশের গুরুত্ব নিয়ে  একটি প্রতিবেদন রচনার নমুনা দেয়া হল। আপনারা উক্ত রচনা দেখে অভ্যাস করুন। মুখস্থ করবেন না। এখন থেকে ধারণা নিয়ে নিজের মতো করে লিখবেন।

কবি জীবনানন্দ দাশ প্রতিবেদন রচনা

জীবনানন্দ দাশ রচনা । Essay on jibanananda Das
জীবনানন্দ -দাশ রচনা । Essay on jibanananda Das

 

জীবনানন্দ দাশ রচনার ভুমিকা:

জীবনানন্দ- দাশ ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক। জীবনানন্দ- দাশ বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অন্যতম।

 

জন্ম ও পিতামাতা:

জীবনানন্দের জন্মকাল ১৮৯৯ খ্রীঃ ১৭ ই ফেব্রুয়ারী , বরিশালের এক ব্রাহ্মণ পরিবারে । তার পিতার নাম সত্যানন্দ দাশ ও মাতার নাম কুসুমকুমারী । তার মা সেই যুগে “ বিন্দু কবিতা রচনা করে কবি খ্যাতি লাভ করেছিলেন । তার মায়ের বিখ্যাত একটি কবিতা হল— “ আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।”

 

জীবনানন্দের অনুপ্রেরণা:

মায়ের সাহিত্য প্রতিভাই জীবনানন্দকে সাহিত্য সৃষ্টি সাধনে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলাে । তার কাব্য প্রতিভা মূলত বিকাশ লাভ করেছিলাে মায়েরই প্রযত্নে ও উৎসাহে । মায়ের কাছ থেকে লাভ করেছিলেন এক গভীর অনুভূতি যা তার গলায় ব্রাহ্মসঙ্গীতের মধ্যে ফুটে উঠত ।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

জীবনানন্দের শৈশবকাল :

জীবনানন্দের বাল্যকালে অনাবিল আনন্দ ও প্রীতময় পরিবেশে প্রথম শিক্ষা শুরু হয় । তারই ফলে বাল্যবয়স থেকেই রূপময় প্রকৃতির প্রতি তাঁর কবিমন আকৃষ্ট হয়েছিল । সেই ভােরের নির্মল আকাশ , শিশির ভেজা ঘাস , ধানের ক্ষেতে বয়ে যাওয়া উদ্দাম হাওয়ার মাতন , সেই নদীর চরের চিল – ডাকা বিষগ্ন দুপুর , জলে – ভাসা নৌকোর তন্ময় গলুই — সবকিছু , বলা যায় প্রকৃতির সমস্ত বর্ণ , বৈচিত্র্য জীবনানন্দের কাছে এক অজানা সুদূরের হাতছানি হয়ে ধরা দিত ।

ছেলেবেলায় অনেক সহচরদের কাছ থেকে তিনি নানা গাছগাছালির নাম শুনেছিলেন এবং এরই সাথে পরিচিত হয়েছিলেন নানা লতাপাতা ও পাখির সঙ্গে । তার পরবর্তীকালের কবিতায় এসমঞ্জ কিছুর উল্লেখ পাওয়া যায় । জীবনানন্দ কবিতা উৎস – পরিচিত বিচার করতে গিয়ে যে সমস্ত উপাদানের উল্লেখ করেছেন তাতে তার শৈশব ও কৈশােরে প্রাকৃতিক এবং কবি মানসের বিচরণক্ষেত্র স্পষ্টভাবে ধরা পরেছে ।

ছেলেবেলায় উপনিষদ পাঠ ও ব্রাহ্মসঙ্গীত শুনে শুনে জীবনানন্দের কবি মানস গড়ে উঠেছিলাে । এরই সাথে এক অকারণ বিষয়াতায় ভরে উঠতাে তার মন । রূপ থেকে অরূপের সন্ধানে বিচরণশীল মন নিয়ে তার স্কুলের খাতায় নানা কবিতা লিখে নিজেকে ভরিয়ে রাখতেন এরই সাথে লাভ করত অবাধ মুক্তি । তিনি একাকী ভাবে স্বীয় ভাবনা চেতনায় ডুবে থাকতেন ।

 

জীবনানন্দের শিক্ষাজীবন:

জীবনানন্দের স্কুল – কলেজ শিক্ষা শুরু হয় ব্রজমােহন স্কুল ও ব্রজমােহন কলেজে । এই কলেজ থেকে আইএ পাশ করে তিনি কোলকাতায় আসেন । ভর্তি হন প্রেসিডেন্সি কলেজে । ইংরাজী । সাহিত্যের সাম্মানিক ছাত্র হিসাবে ১৯১৯ খ্রীঃ স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন । পরে ১৯২১ খ্রীঃ এম . এ পাস করে প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনার কাজ দিয়ে তিনি তার কর্মজীবন শুরু করেন ।

জীবনানন্দ দাশ রচনা । Essay on jibanananda Das
জীবনানন্দ দাশ রচনা । Essay on jibanananda Das

জীবনানন্দ দাশের প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ :

১৯২২ খ্রীঃ তিনি সিটি কলেজের অধ্যাপনা শুরু করেন এবং ঝড়া পালক কাব্যগ্রন্থটি এই সময়ে প্রথম প্রকাশিত হয় ।

এছাড়া তিনি কোলকাতায় নানা সাহিত্য পত্রিকায় কবিতা রচনা শুরু করেন।তার সমস্ত কবিতাই পাঠক সমাজে সমাদৃত হয় ।

 

জীবনানন্দ দাশের কাব্যগ্রন্থ সমুহ :

জীবনানন্দের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ঝরা পালক । পরে একে একে প্রকাশিত হয় ধূসর পান্ডুলিপি , সাতটি তারার তিমির , রূপসী বাংলা , মহাপৃথিবী , বেলা অবেলা কাল বেলা প্রভৃতি । তার রচিত বনলতা সন আধুনিককালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ ।

জীবনানন্দের কাব্যের ইতিহাস চেতনা , নিঃসঙ্গ বিষন্নতা এবং অবশ্যই বিপন্ন মানবতার ব্যথা তার স্বকীয় বিশিষ্টতা নিয়ে স্থান লাভ করেছিলেন ।

জীবনানন্দের প্রবন্ধ গ্রন্থ কবিতার কথা , জীবনানন্দ দাশের গল্প উপন্যাস ‘ মাল্যবান ও সতীর্থ তার সাহিত্যধারার উল্লেখযােগ্য সংযোজন ।

 

জীবনানন্দ দাশের পুরস্কার :

জীবনানন্দ দাশ সাহিত্য রচনার জন্য রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন । ববাহোত্তরকালের একবিশিষ্ট কবি ছিলেন জীবনানন্দ দাশ । বাংলা কাব্য সাহিত্যে তার প্রভাব সর্বাধিক ।

বাংলা সাহিত্যে তার প্রথম আবির্ভাবের সময় বহু বিতর্কিত কবি ছিলেন । কারণ তার সব কবিতার উপমা , চিত্রকলা এতই প্রথাবিরােধী ছিলাে যে তা রবীন্দ্রোত্তর বাংলা কাব্যের ঐতিহ্যের পথে ছিলাে এক বিরাট ব্যাতিক্রম ।

জীবনানন্দের কবিতায় মনন অপেক্ষা আবেগের প্রাধান্য বেশী থাকলেও তার কবিতায় ইতিহাস – ভূগােল সমন্বিত এক বুদ্ধিদীপ্ত চেতনার সাক্ষাৎ পাওয়া যায় ।

জীবনানন্দের কাব্যের বিষয়বস্তুহল প্রকৃতি ও প্রেম । এই কাব্যকলার অসাধারণ তত্ত্বই তাঁকে বৈচিত্র্য ও গভীরতা দান করেছে । এছাড়াও তার বিভিন্ন গ্রন্থে শিল্পীশৈলী ও বর্ণাঢ্য চিত্রকল্পের মাধ্যমে প্রকৃতি ও প্রেমের নানা দিক উদ্ঘাটিত হয়েছে ।

 

জীবনানন্দ দাশ রচনা । Essay on jibanananda Das
জীবনানন্দ দাশ রচনা । Essay on jibanananda Das

 

জীবনানন্দ দাশের সাহিত্যকৃতি :

আধুনিক কবিতার ক্ষেত্রে জীবনানন্দ দাশ এক স্বতন্ত্র কবি । তাঁর কাব্যকলার ক্ষেত্রে এই স্বাতন্ত্রতার জন্যই বাংলা সাহিত্যে তার অবদান অনন্য । তিনি ছিলেন এক রােমান্টিক কবি । বাল্যবয়স থেকেই রূপময় প্রকৃতির প্রতি তার কবিমন আকৃষ্ট হয়েছিল । ভােরের নির্মল । আকাশ , শিশির ভেজা ঘাস , ধানের ক্ষেতে উদ্দাম হাওয়ার মাতন , নদীর চরের চিল – ডাকা বিষন্ন দুপুর , জলে – ভাসা নৌকোর তময় গলুই —সবকিছু , প্রকৃতির সব বর্ণ- বৈচিত্র্য জীবনানন্দের কাছে এক অজানা সুদূরের হাতছানি হয়ে ধরা দিত ।

এই রূপমুগ্ধ কবির কণ্ঠে তাই আমরা শুনতে পেয়েছিলাম –

“ বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি , তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর । ”

 

উপসংহার:

১৯৫৪ খ্রীঃ ১৪ ই অক্টোবর দক্ষিণ কোলকাতায় একট্রাম দুর্ঘটনায় তিনি আহত হন ও ২২ শে অক্টোবর তার জীবনদীপ নির্বাপিত হয় ।

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment