কবি জীবনানন্দ দাশ এর কবিতা নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন। কবি জীবনানন্দ দাশ ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক। তিনি ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমানে বাংলাদেশ) অন্তর্গত বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সর্বানন্দ দাশগুপ্ত জন্মসূত্রে হিন্দু ছিলেন; পরে ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা নেন জীবনানন্দ দাশের পূর্বপুরুষরা বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বিক্রমপুর পরগণার নিবাসী ছিলেন। জীবনানন্দ দাশ বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে একজন।

জীবনানন্দ দাশ মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে তিনি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন এবং ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে যখন তাঁর জন্মশতবার্ষিকী পালন করা হচ্ছিল, ততদিনে তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় কবিত হয়ে উঠেন। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যময় নিসর্গ ও রূপকথা-পুরাণের জগৎ জীবনানন্দের কাব্যে হয়ে উঠেছে চিত্ররূপময়, জীবনানন্দ দাশ ‘রূপসী বাংলার কবি’ অভিধায় খ্যাত হয়েছেন। বুদ্ধদেব বসু তাঁকে ‘নির্জনতম কবি’ ও অন্নদাশঙ্কর রায় তাঁকে ‘শুদ্ধতম কবি’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
জীবনানন্দ দাশের বনলতা সেন কাব্যগ্রন্থ নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলনে (১৯৫৩) পুরস্কার লাভ করে। ভারত সরকারের সাহিত্য একাডেমীতে (১৯৫৫) সালে শ্রেষ্ঠ কবিতা গ্রন্থটি পুরস্কার লাভ করে। তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে রূপসী বাংলা, বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, বেলা অবেলা কালবেলা, শ্রেষ্ঠ কবিতা ইত্যাদি।
জীবনানন্দ দাশ মূলত কবি হলেও তিনি বেশ কিছু প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা ও প্রকাশ করেছেন। তবে ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর পূর্বে তিনি ২১টি উপন্যাস এবং ১২৬টি ছোটগল্প রচনা করেছিলেন যার একটিও তাঁর জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়নি।
Table of Contents
কবি জীবনানন্দ দাশ এর কবিতা
জীবনানন্দ দাশের কাব্যগ্রন্থ:
ঝরা পালক (১৯২৭):
ঝরা পালক কাব্যগ্রন্থটি কবি জীবনানন্দ দাশের লেখা প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে (১৩৩৪ বঙ্গাব্দ) ভারতের কলকাতা থেকে এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।
ধূসর পাণ্ডুলিপি (১৯৩৬)
ধূসর পান্ডুলিপি কবি জীবনানন্দ দাশের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ। এই কাব্যগ্রন্থটি ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে (১৩৪৩ বঙ্গাব্দ) ভারতে প্রকাশিত হয়। জীবনানন্দ এই বইটি কবি বুদ্ধদেব বসুকে উৎসর্গ করেন। বইটি সিগনেট প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়।
বনলতা সেন কাব্যগ্রন্থ ( ১৯৪২)
বনলতা সেন কাব্যগ্রন্থ রচনাকাল: ১৩৩২ থেকে ১৩৪৬। প্রথম প্রকাশ: ১৯৪২। ‘বনলতা সেন’ প্রথম প্রকাশিত হয় ইংরেজি ডিসেম্বর ১৯৪২, বাংলা ১৩৪৯ সালে; কবিতা- ভবন প্রকাশিত ‘এক পয়সায় একটি’ গ্রন্থমালার অন্তর্ভুক্ত হিসেবে। প্রকাশক জীবনানন্দ দাশ নিজেই। কাগজের মলাটে ১৬ পৃষ্ঠার প্রথম সংস্করণের প্রচ্ছদ করেছিলেন। শম্ভু সাহা। এই সংস্করণে কবিতা ছিল মোট ১২ টি। এই কাব্যগ্রন্থে সংকলিত ‘বনলতা সেন’ শীর্ষক কবিতাটি ইংরেজি ১৯৪৪ সালে পূর্বাশা লিমিটেড থেকে সত্যপ্রসন্ন দত্ত প্রকাশিত “মহাপৃথিবী’ কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করেন জীবনানন্দ দাশ।
পরবর্তিতে, জীবনানন্দ দাশের মৃত্যুর দুই বছর আগে, ইংরেজি ১৯৫২ সালে [ বাংলা শ্রাবণ ১৩৫৯] কলকাতার সিগনেট প্রেস থেকে বোর্ড বাঁধাইয়ে ৪৯ পৃষ্ঠায় বর্ধিত আকারে প্রকাশিত হয় ‘বনলতা’ সেন’। সিগনেট সংস্করণের প্রচ্ছদ করেছিলেন সত্যজিৎ রায়। মূল্য দুই টাকা। কবির জীবিতকালে এটিই ‘বনলতা সেন’- এর সর্বশেষ সংস্করণ। প্রকাশক ছিলেন দিলীপকুমার গুপ্ত। এই সংস্করণে আগের সংস্করণ থেকে বেশি আরো ১৮টি কবিতাসহ মোট ৩০টি কবিতা অন্তর্ভুক্ত হয়, এর মধ্যে ‘বনলতা সেন’ শীর্ষক কবিতাটিও আবার স্থান পায়।
মহাপৃথিবী (১৯৪৪)
মহাপৃথিবী (ইংরেজি: Môhaprithibi) কবি জীবনানন্দ দাশের চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ। এটি প্রকাশিত হয় ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে (১৩৫১ বঙ্গাব্দ); প্রকাশক ছিলেন পূর্বাশা লিমিটেডের পক্ষে সত্যপ্রসন্ন ঘোষ। ঝরাপালক (১৯৪২), ধূসর পাণ্ডুলিপি (১৯৩৬) ও বনলতা সেন (১৯৪২) এর পর ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে ‘মহাপৃথিবী’ কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশ করেছিলেন জীবনানন্দ দাশ। মহাপৃথিবী’র সবচেয়ে বিখ্যাত কবিতা আট বছর আগের একদিন।
সাতটি তারার তিমির (১৯৪৮)
সাতটি তারার তিমির কবি জীবনানন্দ দাশের লেখা পঞ্চম কাব্যগ্রন্থ। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে (১৩৫৫ বঙ্গাব্দ) কলকাতা থেকে এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই এই কাব্যগ্রন্থের বিরুদ্ধে দুবোর্ধ্যতার অভিযোগ ওঠে।
জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৫৪)
জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি জীবনানন্দ দাশ সংকলিত স্বরচিত কবিতার একটি সংকলন। কবির মৃত্যুর কয়েকমাস পূর্বে ১৯৫৪ সালের মে মাসে এই গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থটি সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার অর্জন করে ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে।
রূপসী বাংলা ( ১৯৫৭ )
রূপসী বাংলা বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি জীবনানন্দ দাশের সর্বাধিক জনপ্রিয় কাব্যগ্রন্থ। এটি তাঁর সপ্তম কাব্যগ্রন্থ। কবি জীবদ্দশায় এ গ্রন্থটি বা এর অন্তর্ভুক্ত কোন কবিতা প্রকাশ করেন নি। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে দুঘর্টনায় অকালমৃত্যুর পর এর পাণ্ডুলিপির খাতাটি আবিষ্কৃত হয়। কবি এ গ্রন্থটির প্রচ্ছদনাম নির্বাচন করেছিলেন বাংলার ত্রস্ত নীলিমা। জীবনানন্দ কেন স্বীয় জীবদ্দশায় এ কাব্যগন্থটি প্রকাশ করেননি তা অদ্যাবধি এক পরম বিস্ময় হয়ে আছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এ কাব্যের কবিতাগুলি বাঙালিদের বিশেষভাবে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল।

বেলা অবেলা কালবেলা ( ১৯৬১ )
বেলা অবেলা কালবেলা আধুনিক বাংলা কবিতার পথিকৃৎকবি জীবনানন্দ দাশের সপ্তম কাব্যগ্রন্থ। কবির মৃত্যুর পর তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতা অশোকানন্দ দাশ ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে (১৩৬৮ বঙ্গাব্দ) এ কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশ করেছিলেন। এ কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশের বহু আগে ১৯৫৪-এর ২২ অক্টোবর এক ট্র্যাম দুর্ঘটনায় আহত হয়ে জীবনানন্দ লোকান্তরিত হয়েছিলেন।
সুদর্শনা (১৯৭৩):
“সুদর্শনা” কবি জীবনানন্দ দাসের কাব্যগ্রন্থ যা কবির মৃত্যুর অনেক বছর পর ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত হয়।
জীবনানন্দ দাশের কবিতা (১৯৭৪)
জীবনানন্দ দাশের কবিতা গ্রন্থ সম্পাদনা করেন আবদুল মান্নান সৈয়দ। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে নলেজ হোম।
মনবিহঙ্গম (১৯৭৯)
মনবিহঙ্গম কাব্যগ্রন্থটি ১৯৭৯ সালে বেঙ্গল পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত হয়।
আলোপৃথিবী ( ১৯৮৩)
আলোপৃথিবী কাব্যগ্রন্থটি ১৯৮৩ সালে গ্রন্থালয় প্রাইভেট লিমিটেড থেকে প্রকাশিত হয়।
জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৮৬)
জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা কাব্যগ্রন্থটি ১৯৮৬ সালে নলেজ হোম প্রকাশনি থেকে প্রকাশিত হয়। সম্পাদনা করেছেন আবদুল মান্নান সৈয়দ।
জীবনানন্দ দাশের কাব্যসংগ্রহ (১৯৯৩)
জীবনানন্দ দাশের কাব্যসংগ্রহ গ্রন্থটি ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত হয়। দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় এর সম্পাদনায় “ভারবি” প্রকাশনি থেকে প্রকাশিত হয়।
হে প্রেম তোমাকে ভেবে ভেবে ( ১৯৯৮)
এই কাব্যগ্রন্থটির তিনটি ভাগ। প্রথম অংশে আছে কিছু কবিতার পাণ্ডুলিপিচিত্র এবং মুদ্রিত পাঠ। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অংশে আছে কিছু কবিতার শুধু মুদ্রিত পাঠ। প্রথম অংশের পাণ্ডুলিপিচিত্র থেকে পাঠক বুঝতে পারবেন যে একটি কবিতা জীবনানন্দ কেমন ভাবে রচনা করতেন। এক-একটি চরণ সংশোধনে যে যত্ন, মমতা এবং শ্রম তিনি উজাড় করেছেন, সেই চরণই হয়ত কবিতার প্রয়োজনে পরে তিনি বর্জন করেছেন। জীবনানন্দকে চিনতে এ এক অবশ্যপাঠ। ভূমেন্দ্র গুহ ও প্রিয়ব্রত দেব সম্পাদিত এবং ::: প্রতিক্ষণ থেকে প্রকাশিত।
শিরোনাম ::: প্রকাশকাল ::: প্রকাশনা ::: টীকা
অপ্রকাশিত একান্ন ::: ১৯৯৯ ::: ::: ফয়জুল লতিফ চৌধুরী সম্পাদিত
ছায়া আবছায়া ::: ২০০৪ ::: প্রতিক্ষণ ::: ভূমেন্দ্র গুহ ও গৌতম মিত্র সম্পাদিত
পাণ্ডুলিপির কবিতা (১৪ খণ্ড) ::: ২০০৫ ::: প্রতিক্ষণ ::: ভূমেন্দ্র গুহ ও গৌতম মিত্র সম্পাদিত
কৃষ্ণাদশমী ::: ২০১৫ ::: পাঠক সমাবেশ ::: ফয়জুল লতিফ চৌধুরী সম্পাদিত
অপ্রকাশিত জীবনানন্দ ১ম খণ্ড ::: ২০১৫ ::: ::: গৌতম মিত্র সম্পাদিত
অপ্রকাশিত জীবনানন্দ ২য় খণ্ড ::: ২০১৬ ::: ::: গৌতম মিত্র সম্পাদিত
সূর্য-অসূর্যলোক ::: ২০১৭ ::: সূচীপত্র ::: ফয়জুল লতিফ চৌধুরী সম্পাদিত
জীবনানন্দ দাশের দীর্ঘ কবিতা ::: ২০১৭ ::: ::: ফয়জুল লতিফ চৌধুরী সম্পাদিত
অন্য এক প্রেমিককে – জীবনানন্দ দাশ
অন্য প্রেমিককে – জীবনানন্দ দাশ
অশ্বত্থ বটের পথে – জীবনানন্দ দাশ
অশ্বত্থে সন্ধ্যার হাওয়া – জীবনানন্দ দাশ
অস্তচাঁদে – জীবনানন্দ দাশ
আকাশে চাঁদের আলো – জীবনানন্দ দাশ
আকাশে সাতটি তারা – জীবনানন্দ দাশ
আজ তারা কই সব – জীবনানন্দ দাশ
আজকে রাতে – জীবনানন্দ দাশ
আজকের এক মুহূর্ত – জীবনানন্দ দাশ
আদিম – জীবনানন্দ দাশ
আদিম দেবতারা – জীবনানন্দ দাশ
আবার আসিব ফিরে – জীবনানন্দ দাশ
আমাকে একটি কথা দাও – জীবনানন্দ দাশ
আমাদের রূঢ় কথা শুনে – জীবনানন্দ দাশ
আমার এ ছোটো মেয়ে – জীবনানন্দ দাশ
আমি কবি – সেই কবি – জীবনানন্দ দাশ
আমি যদি হতাম – জীবনানন্দ দাশ
আমি হাত প্রসারিত করে দেই – জীবনানন্দ দাশ
সূর্যতামসী – জীবনানন্দ দাশ
সৃষ্টির তীরে – জীবনানন্দ দাশ
সেদিন এ-ধরণীর – জীবনানন্দ দাশ
স্থান থেকে – জীবনানন্দ দাশ
স্বপ্নের হাতে – জীবনানন্দ দাশ
হাওয়ার রাত – জীবনানন্দ দাশ
হাজার বছর শুধু খেলা করে – জীবনানন্দ দাশ
হায় চিল – জীবনানন্দ দাশ
১৩৩৩ – জীবনানন্দ দাশ
অঘ্রাণ – জীবনানন্দ দাশ
অঘ্রাণ প্রান্তরে – জীবনানন্দ দাশ
অদ্ভুত আঁধার এক – জীবনানন্দ দাশ
অনন্ত জীবন যদি পাই – জীবনানন্দ দাশ
অনিবার – জীবনানন্দ দাশ
অনেক আকাশ – জীবনানন্দ দাশ
অনেক নদীর জল – জীবনানন্দ দাশ
অনেক মুহূর্ত আমি করেছি ক্ষয় করে – জীবনানন্দ দাশ
অনেক মৃত বিপ্লবী স্মরণে – জীবনানন্দ দাশ
অনেক রাত্রিদিন – জীবনানন্দ দাশ
সহজ – জীবনানন্দ দাশ
সিন্ধুসারস – জীবনানন্দ দাশ
সুচেতনা – জীবনানন্দ দাশ
সুবিনয় মুস্তফী – জীবনানন্দ দাশ
সুরঞ্জনা – জীবনানন্দ দাশ
আরও পড়ুন: