চরিত্র ও চরিত্র গঠন, চরিত্র গঠনের উপায় [ Essay on Character ] অথবা, চরিত্রের মূল্য – নিয়ে একটি প্রতিবেদন রচনার নমুনা দেয়া হল।
Table of Contents
চরিত্র ও চরিত্র গঠন রচনার ভূমিকা:
মানুষের আচার আচরণ, কাজকর্ম ,চিন্তাভাবনায় যে এক বিশেষ ভূমিকা লক্ষ্য করা যায় তাকেই চরিত্র বলে। এটি মানব-ব্যক্তিত্বের এমন একটি শক্তি যা সততা, ন্যায়-নিষ্ঠা, নীতিপরায়ণতা ও নৈতিক মূল্যবােধের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত। চরিত্র একমাত্র মানুষকে সম্মান দান করে এবং লোক সমাজে উচ্চ মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেন । চরিত্রবান লোকজনের জন্যই সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়।
চরিত্র কি:
কোন মানুষের বিশেষ আচরণ বৈশিষ্ট্যকে চরিত্র বলা হয়। এটি এর ব্যাপক অর্থ। কিন্তু চরিত্র শব্দটি সংকুচিত অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মানুষের চলাফেরায় কাজকর্মে কথাবার্তায় এবং চিন্তা ধারায় যে মহৎ ভাব পরিলক্ষিত হয় তাকেই চরিত্র বলে। যিনি অপরে কল্যাণ কামনায় আত্মত্যাগ করেন ,তাকেই চরিত্রবান মানুষ বলে।
চরিত্রবান মানুষের কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যের জন্যই সমাজের লোক তাকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করে। মানুষ এবং অন্য ইতর প্রাণীর মধ্যে প্রধান পার্থক্য আছে বিবেক বুদ্ধি। এর জন্যই আদিমকাল থেকে মানুষ নিজেদের প্রয়োজনেই সমাজ গড়ে তুলেছিল এবং শান্তি শৃঙ্খলার জন্য বেশ কিছু নিয়ম চালু করেছিল।
এখনো সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য এ সকল নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয়। সমাজে পরস্পরের মধ্যে আচরণবিধি নিজ নিজ দায়িত্বে পালন করাই হলো মানবিক চরিত্র। আচরণবিধির মধ্যে যাদের শ্রদ্ধাবোধ নেই সেই সকল মানুষ পশুর সমতুল্য এবং তাদেরকে চরিত্রহীন মানুষ বলে। সুতরাং আমাদের উচিত মানুষের সামাজিক আচরণ বিধির প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করা।

চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য:
সত্য ও ন্যায়ের পথে যে সব সময় অবিচল থাকে, কাজে-কর্মে যে আন্তরিকতা দেখায়, অন্য মানুষের প্রতি যাদের মনের সহানুভূতি সঞ্চিত থাকে এবং পরস্পরের কল্যাণে একে অপরে এগিয়ে যায় এমন লোকদের মধ্যে চরিত্র আছে বলে মনে করা হয়। চরিত্রবান মানুষ সকল দের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।ফুলের সৌরভ , পাখির কলকাকলি চারিপাশে ছড়িয়ে মানুষের হৃদয়কে মোহিত করে, তেমনি মহৎ চরিত্র সবার মন আকৃষ্ট করে এবং সবার হৃদয়ে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অর্জন করতে সমর্থ হয়। সর্বদা সত্যের প্রতি নিষ্ঠা থাকা ,অন্যায় কে না বলা ,বিশৃঙ্খলা নৈরাজ্যকে উপেক্ষা করা হলো চরিত্রবান মানুষের আসল গুন।
চরিত্র গঠনের গুরুত্ব:
গঠনগত দিক থেকে চরিত্রের দুটি দিক- ১. সচ্চরিত্র, ২. দুশ্চরিত্র। ইতিবাচক গুণের সমন্বয়ে গঠিত হয় সচ্চরিত্র আর নেতিবাচক গুণ তথা পশুত্ব নিয়ে গঠিত হয় দুশ্চরিত্র। মানজীবনে চরিত্র গঠনের গুরুত্ব স্বল্প কথায় অপ্রকাশ্য। বিদ্যার চেয়ে চরিত্রের মূল্য অধিকতর। কেননা দুশ্চরিত্রবান বিদ্বান সমাজের বা দেশের কল্যাণের পরিবর্তে অকল্যাণই করে বেশি। অন্যদিকে, শুধু চরিত্রবলেই মানুষ হতে পারে বিশ্ববরেণ্য। অহিংস মনােভাব নিয়েই দেশ, জাতির কল্যাণ সম্ভব হয়। আর তা একমাত্র সচ্চরিত্রবানের পক্ষেই সম্ভব।
চরিত্র গঠনে পারিপার্শ্বিক ভূমিকা:
সাধারণত পারিপার্শ্বিক অবস্থানেই মানুষের চরিত্র গঠিত হয়। পরিবারের বাইরে প্রতিবেশী এবং বন্ধু-বান্ধবদের মাধ্যমে শিশুদের চরিত্র গঠন হয়। পরিবেশ যদি ভালো হয় তবে জীবনের বিকাশ সুষ্ঠু হবে। আর পরিবেশ প্রতিকূল হলে ভালো চরিত্রের মানুষ আশা করা যায় না। তাই পরিবেশ যাতে দূষিত না হয় সেদিকে সবারেই সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। কথায় আছে-“সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।” মন্দ পরিবেশ চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে। আমাদের সব সময় সৎসঙ্গের চিন্তা করতে হবে তাহলে জীবন সুন্দর এবং মধুময় হয়ে উঠবে।

চরিত্র গঠনের মাধ্যম:
নিজ ঘর থেকেই প্রথম চরিত্রগঠনের পদক্ষেপ শুরু হয়। মা বাবাই হচ্ছে প্রথম চরিত্রগঠনের শিক্ষক। মাতাপিতা আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে সব পারিপার্শ্বিক অবস্থার মধ্য দিয়ে শিশুর চরিত্র গড়ে ওঠে। বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সময় বা বন্ধু-বান্ধবদের সাথে খেলাধুলার মাধ্যমে সঙ্গপ্রভাবে চরিত্র গঠিত হয়। শিশুদের কোন ধরনের চরিত্র গড়ে উঠেছে তা অভিভাবক এবং শিক্ষকদের লক্ষ্য রাখা উচিত। সাধনার মাধ্যমে হয়ে চরিত্র সুমহান হয়ে ওঠে। সাধনার ফলে মহৎ গুণাবলী অর্জিত হয়। বাণীতে আছে-
“পৃথিবীতে আর কিছু নেই
চরিত্রের চেয়ে দামী
চরিত্র এক অমূল্য ধন
চির কল্যাণকামী।”
পাপের অসংখ্য প্রলোভন মানুষকে বিপথে চালিত করে। নিজের আত্মার শক্তির বলে সেইসব প্রলোভন কে দমন করে নিজেকে সত্যের পথে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। চরিত্র গঠনে একটি উপাদান হচ্ছে আত্মবিশ্বাস। এটি মানুষকে বিপদ থেকে মুক্ত করে মানসিকভাবে শ্রেষ্ঠত্ব দান করে। আজকে আমরা যাদের জীবন কাহিনী আলোচনা করি তারা সবাই ছিলেন সচ্চরিত্রের মানুষ।
মহৎ চরিত্রের দৃষ্টান্ত:
চরিত্রশক্তিতে বলীয়ান ব্যক্তিগণ অমরত্ব নিয়ে মানব মনে বেঁচে থাকে চিরকাল। অন্যায়, অসত্য ও পাপের বিরুদ্ধে এসব মহৎ ব্যক্তিদের দৃঢ় অবস্থান অক্ষয় ঔজ্জ্বল্য নিয়ে আলােকিত করে সবাইকে। তারা ধনসম্পদে সমৃদ্ধ হলেও গৌরবৌশ্বর্যে মহীয়ান। এমনই চরিত্রের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হজরত মুহাম্মদ (স.), যিশু খ্রিস্ট, গৌতমবুদ্ধ, বিদ্যাসাগর, রাজা রামমােহন রায়, মহাত্মা গান্ধী, মওলানা ভাসানী, হাজী মুহম্মদ মুহসীন প্রমুখ। এরা সবাই মানবব্রতী, দেশব্রতী, উন্নত ও মহৎ চরিত্রের অধিকারী।

চরিত্রহীন ব্যক্তির ফল:
চরিত্রহীন ব্যক্তি পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট। চরিত্রবান না হলে মানুষ অসৎ পথে মত্ত হয়ে উঠে এবং পাপ কাজ করতে কোন দ্বিধাবোধ করে না। জীবনে পারিপার্শ্বিক থেকেই তারা কারও শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা পায় না এবং সমাজে সবাই তাদের ঘৃণা করে। এ ধরনের লোক মানব জাতির জন্য কলংক স্বরূপ ।মানুষের মনে তাদের কোন জায়গা নেই।
উপসংহার:
চরিত্র মানুষকে উচ্চতম পর্যায়ে অধিষ্ঠিত করে। চরিত্র ছাড়া মানুষের গর্ব করার মতো আর কোনো জিনিস নেই। চরিত্রের জন্য মানুষ সবার শ্রদ্ধা ও ভালবাসা অর্জন করে। চরিত্রবান মানুষ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান।
আরও পড়ুনঃ