অ্যান মারিসো রচনা-ডেথ ইন দ্য ক্লাউডস ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]

অ্যান মারিসো রচনা

Table of Contents

অ্যান মারিসো রচনা -ডেথ ইন দ্য ক্লাউডস ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]

অ্যান মারিসো -ডেথ ইন দ্য ক্লাউডস ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
আগাথা ক্রিস্টি

২১.

 অ্যান মারিসো

 পরদিন সকালে মিঃ ফার্নে পোয়ারোর ঘর খুঁজে প্রাণোচ্ছলভাবে জানালেন যে, লন্ডনে থাকতে খুঁজে পাওয়ার তার বক্তব্যের শেষ পর্যন্ত বুঝতে পেরেছে। তিনি প্রথমে অসম্ভব মনে করলেন তার বাঁকানলের সম্পর্কে একটা যে সূত্র খুঁজে পেয়েছেন।

তিনি বলতে চান খুনী ফেলে দিতে চায়নি কারণ সে চেয়েছিল বাঁকানলটা আমাদের চোখে পড়ুক। চমৎকার, পোয়ারো বললেন, ফার্নে বললেন যে বিষাক্ত তীর ব্যবহার করা হয়েছে কিন্তু বাঁকানল ব্যবহার করা হয়নি। খুনী এমন কিছু ব্যবহার করেছেন যেটা মানুষ মুখে ঢোকায়। এখানে দুটো জিনিসের ওপর তার সন্দেহ। একটা লেডি হরবেরিলর সিগারেট হোল্ডার দুজনে যে টেবিলের ওপর কতকগুলো কুরদিপ নল ছিল।

মঁসিয়ে ফার্নে বললেন যে, তিনি দুটো জিনিসই কারো সন্দেহ না জাগালে বেঁধে রাখা যায়। পোয়ারো তাকে ঠিক পথে এগোচ্ছেন বললেন। ভীমরুলের কথা বলতে বললেন। ফার্নে হাকরে বললেন যে, এতো ভীমরুল কোথা থেকে আসছে তা বুঝতে পারছেন না।

হঠাৎ টেলিফোন বেজে উঠল, বললো যে তাকে জানানো হল ওখানে ফার্নে আছে। ফার্নে থিকের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলেন মাদাম গিজেলের মেয়ে তার উত্তরাধিকার দাবী করতে সেখানে এসেছে। উনি বোধ হয় আমেরিকা থেকে এসেছেন। থিকের কথা মঁসিয়ে পোয়ারোকে জানালেন। তিনি তাকে সাড়ে এগারোটায় আবার আসতে বলেছেন। তিনি বলছেন, আমরা তার কাছে যাব। তাই পোয়ারো যাবার আগে মিস গ্রেকে চিঠি লিখে রেখে যেতে চান। তিনি লিখলেন জরুরী কারণে আমাকে বাইরে যেতে হচ্ছে। যদি জ্যা জ্যাপ কোনো কারণে দেখা করতে আসে একটু দেখবেন। বোম আর মোজার কথা বললেন, কিন্তু প্রাগৈতিহাসিক মৃৎশিল্প সম্পর্কে এখনও কোনো কথা বলবেন না। তিনি আপনার প্রশংসা করেন কিন্তু খুব বুদ্ধিমান তিনি।

পোয়ারো এবার উঠে সেই মেয়েটির সঙ্গে দেখা করতে চান। তিনি বললেন যে খুব শীঘ্রই তিনি সবকিছু বুঝতে পারবেন।

থিকো পোয়ারো ও ফার্নেকে আনন্দে অভিনন্দন জানালেন। থিকো বললেন, গতকাল একটা চিঠি পেয়েছি আজ সকালে ভদ্রমহিলা এসে হাজির, তার বয়স ২৪ বছর। নাম মিসেস রিচার্ডস। কারণ তিনি বিবাহিতা ভদ্রমহিলা তার পরিচয় প্রমাণ করার জন্য আর একটা বিবাহ চুক্তি অনুলিপি লেখা ছিল। জর্জ লেম্যান (অবিবাহিতা) আর মেরি মারসো দুজনেই কুইবেকের বাসিন্দা, তাদের মধ্যে বিবাহ চুক্তি। তারিখ ১৯১০ সালের মাথা তাদের মেয়ে অ্যান মারিসো লেম্যানের লেখা জন্মবৃত্তান্ত লেখা প্রমাণ পত্র এবং আরও নানারকম কাগজপত্র রয়েছে। ফার্নে বললেন যে এটা মাদাম গিজেলের প্রথম জীবনের উপর কিছুটা আলোকপাত করেছে।

থিকো বললেন যে, এর থেকে তিনি যা আন্দাজ করেছেন, মেরি মারিসোর সঙ্গে লেম্যান লোকটির সঙ্গে পরিচয় হয় এবং তার বিবাহের পর দুশ্চরিত্র লোকটি তার স্ত্রীকে ফেলে পালায়। তিনি তখন কুমারী অবস্থায় নাম ব্যবহার করেন। কুইবেকের ইনস্টিটিউট এই শিশুটিকে পালন করে। মিসেস লেম্যান একটি লোকের সঙ্গে ফ্রান্সে চলে আসেন। তিনি শিশুটির জন্য প্রতি মাসে পঞ্চাশ টাকা পাঠাতেন এবং শেষকালে তিনি একটি মোটা অঙ্কের টাকা পাঠান। সেটা শিশুর ২১ বছর পূর্ণ হলে তাকে দেওয়া হবে। মেয়েটিকে জানানোর জন্য তারা বিভিন্ন কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন। মনে হয় এর কোনো একটা ইনিস্টিটিউট দ্যা মেরী অধ্যক্ষার চোখে পড়ে। তিনিই মিসেস রিচার্ডসকে জানান। এই রিচার্ডস হলেন ডেট্রয়েট থেকে আসা একজন আমেরিকান যার যন্ত্রপাতি তৈরি করা পেশা। তিনি প্রখ্যাত ও আমেরিকাতে আছেন। মিসেস রিচার্ডস তার মায়ের মৃত্যুর সম্পর্কে কিছু বলতে পারবেন না। কারণ তার মায়ের কুমারী জীবনের নাম তিনি জানেন না।

 

অ্যান মারিসো -ডেথ ইন দ্য ক্লাউডস ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
আগাথা ক্রিস্টি

ফার্নে এই ভদ্রমহিলার আসাতেই তদন্ত সম্পর্কে কিছু আশাবাদী নন। তিনি তার সন্দেহের তালিকায় তিনজনকে রেখেছেন। সেখানে পোয়ারো চারজনকে রেখেছেন।

তাদের দুজনের কথাবলার মাঝে তারা খবর পেলেন মাদাম গিজেলের কন্যা এসেছেন, তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হল তাদের। গিজেলের গায়ের রঙ কালো হলেও তিনিও খুব সুন্দরী যুবতী। তিনি জানালেন যে, এ ব্যাপারে তার অনুমান ঠিক। মেয়ের শর্তময় কারণ তিনি নিজেকে অনাথ বলে মনে করেন। কারণ গিজেল তাকে করুণা করছেন বলে তার বিশ্বাস। তিনি বলেন যে তিনি আঠারো বছর বয়সে ইনস্টিটিউট ছেড়ে যান। তিনি নানা পেশায় ছিলেন। তার সঙ্গে স্বামীর প্রথম পরিচয় লাইনে। তাকে কানাডা যেতে হওয়ায় তিনি সেখানে যান। তিনি এখন সেখানেই যাচ্ছেন। তার ফরাসি উচ্চারণ বেশ সাবলীল, তাকে ইংরেজ না ভেবে ফরাসি বলে মনে হয়। তিনি কাগজে পড়েছিলেন কিন্তু জানতেন এটা তার মার মৃত্যু সংবাদ, মাদাম এঞ্জোলা তাকে বলেন এবং এরপর তিনি ফিকোর ঠিকানা জেনেছেন।

ফানে চিন্তিতভাবে মাথা নাড়লেন, একটা কারণ হলো যে মিসেস রিচার্ডস এতে খুব সাহায্য করতে পারবেন না। পোয়ারো একে নকল ভাবছেন না। তবে তার অন্য কারোর মুখ মনে পড়ছে। ফার্নে কৌতূহলী হয়ে তাকালেন। ফার্নের মতে পোয়রো হারানোনা মেয়েটিকে নিয়ে চিন্তা করছেন বলে তার একথা মনে হচ্ছে। পোয়ারো মনে করেন যে মাদাম মারা যেতে যার সবথেকে লাভ হবে তিনি ওই মেয়ে। এ ব্যাপারে সবথেকে বেশি জড়িত যদি এই মেয়েটি হয় তাহলে সন্দেহ কোথায়? ওই প্লেনে তিনজন মহিলা ছিলেন। তাদের একজন সুপরিচিত, কিন্তু আর দুজন মাদামের সহকারিণী যখন বলেছেন যে মাদামের স্বামী তখন তিনি নিশ্চিত যে বাকি দুজনের মধ্যে একজন তার কন্যা, মিস হরবেরিল একটু সন্দেহজনক ও মিস জেনকে বলেছেন যে তিনি অনাথ আশ্রমে মানুষ হয়েছেন। পোয়ারোর কথায় সহমত হলেন না ফানে, তবে পোয়ারোর মতে তিনি সহজ কল্পনার মধ্যে এগোচ্ছেন।

ফার্নে পোয়ারোর ডেস্কে একটা মিনিট পড়ে থাকতে দেখে বলেন যে তিনি লেডি হরবেরিল, ট্যুপের কুরলিশনল, ব্রায়ানের বাঁশি লক্ষ করেছেন তবে তার ব্রায়ানকে সন্দেহ হয় না। অভ্যর্থনা ডেস্কের দিকে চোখ পড়তেই দেখা গেল সেখানে ডাঃ ব্রায়ানের মুখটা।

ডাক্তার মিস্টার পোয়ারোর সঙ্গে কথা বলছিলেন। তিনি তাকে জানালেন তার কোনো রোগী নেই। তিনি অসম্ভব শান্ত সংযত ভঙ্গিতে কথা বলছিলেন। তিনি পদত্যাগ করেছেন কারণ তার নাম কাটা যাওয়ার আগেই তার পেশা তাকে প্রচুর আনন্দ দিলেও তিনি নিজেই সেই পদ ছেড়ে দিয়েছেন। পোয়ারোকে ডাক্তার জানালেন তিনি তার এক রোগিণীকে বিবাহ করছেন যাকে তার স্বামী খুব দুঃখ দিয়েছেন। তারা বিয়ের পর ফিনিয়োত যেতে চান। তার বাঁশি হল তার বন্ধু যখন তিনি একা থাকেন। পোয়ারো তার জীবনের সৌভাগ্য কামনা করলেন।

পোয়ারো কুইবেকে একটা ট্রাঙ্কল করেছিলেন।

.

২২.

 একটা ভালো নখ

ফার্নে বললেন যে, তিনি কি এবার উত্তরাধিকারী মেয়েটার পেছনে ঘুরবেন। পোয়ারো বললেন তা নয়। তিনি নিয়মে চলতে চান। পরের কাজে হাত দেওয়ার আগে তাকে আগের কাজ শেষ করতে হবে। জেন ও ফার্নেকে যেতে অনুরোধ করে তিনি অন্যত্র গেলেন।

ফার্নে জেনকে অ্যান রিচার্ডস সম্পর্কে জানালেন। সবই বলা হয়ে গেছে এমন সময় পোয়ারো এসে বললেন তিনি মাদাম অ্যার্তোলিকের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তিনি বলেছেন যে মাদামের মেয়ে ইনস্টিটিউট জ্যা মেরিতে মানুষ হয়েছে, তার মা এক মদ্য ব্যবসায়ীর সঙ্গে কুইবেক ত্যাগ করেন। মেয়ের উপর যাতে ঐ প্রভাব না পড়ে সেইজন্য ওই সময়ে তিনি চলে যান। তিনি টাকা নিয়মমাফিক পাঠালেও মেয়ের সঙ্গে দেখা করেননি। অ্যান মরিমে ইনস্টিটিউট ছেড়ে নখ পালিশের কাজ নেন। মাদাম অ্যাঞ্জেলি তিনি খুব বেশি চিঠিপত্র লিখতেন না। মাদাম দুবার নিজে খবর নিতেন। মাদাম বিচারবিভাগীয় তদন্তের কথা পড়ে ভেবেছিলেন এই মেরি মারিসোই খুব সম্ভবতঃ কুইবেকের মেরি মারসো।

মাদাম গিজেলের স্বামী নামক ইতর লোকটি জর্জ লেম্যান বিশ্বযুদ্ধের গোড়ার দিকে চিহ্নিত হয়। হঠাৎ জেনের একটা নখ ভেঙ্গে যেতে তিনি বলেন যে ওটা ঘষে নিতে হবে। পোয়ারো বললেন তার মনে পড়ে গেছে অ্যান মারিসের মুখটা, এত চেনা মনে হয়েছিল। কারণ লেডি হরবেরিলর তার সহচারিণীকে একটা উকো আনতে বলেছিলেন। অ্যান মারিসোই তার নাম ছিলো।

.

২৩.

 আমার ভয় করছে

হঠাৎ এই ঘটনা আবিষ্কারে অ্যান মারিসো ঘটনাস্থল থেকে বহু দূরে ছিলো না বরং একেবারে ঘটনাস্থলে হাজির হলো।

জেনও মনে করতে পারলেন যে তার নাম ছিল ম্যাডেলিন যাকে প্লেনের কামরায় পেছনের দিক থেকে একটা লাল সাজের বাক্স আনতে বলেছেন। ফার্নে বললেন তার মা যেখানে বসেছিলো ঠিক তার পাশ দিয়েই গিয়েছিলো। ফার্নে বললো যে খুনের উদ্দেশ্য এবং সুযোগ সবকিছু থাকা সত্ত্বেও কেন মেয়েটিকে সন্দেহ করা হয়নি। চাকর দুটো, অন্য যাত্রীরা সেটা লক্ষ্য করেননি, প্লেনটা সবে ছেড়েছে, তার প্রায় ঘণ্টাখানেক পরেও গিজেল বেঁচেছিলেন।

ফার্নে বললেন যে, বিষের প্রতিক্রিয়া পরে হতে পারে। এটা হতে পারে যে মিঃর পোয়ারো স্বীকার করেন বিষের প্রতিক্রিয়া দেরিতে হওয়া অসাধারণ ব্যাপার। এর বৈশিষ্ট্যগুলো বোঝ দরকার। ফার্নে বললেন, আমাদের ভবিষ্যত কর্মপন্থা নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক। তার মনে হয় এ মুহূর্তে অ্যান মারিসোকে সন্দেহ জাগানো ঠিক হবে না। তিনি যে তাকে চিনতে পেরেছেন এ কথা সে একেবারেই জানে না। তার সমস্ত কথাই সত্যি বলে মেনে নিয়েছি। দুটা জিনিস তার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে, সুযোগ এবং উদ্দেশ্য। আমাদের আরও একটা জিনিস প্রমাণ করতে হবে। অ্যান মারিসোর কাছে সত্যি কোনো সাপের বিষ ছিল কিনা। এরপর অবশ্য সেই আমেরিকান লোকটির ব্যাপার আছে যে বাঁকানল কিনেছিলো এর স্থলে পেরো ঘুষ দিয়েছিলো। এ নিশ্চয়ই তার স্বামী রিচার্ডস, যে কামরায় থাকে।

পোয়ারো খানিক চিন্তা করে বললেন যে অ্যান মারিসো হয় অপরাধী নয় একেবারে অজ্ঞ। যদি অজ্ঞই হন তাহলে মিথ্যা কেন বললেন, তিনি হরবেরিলর পরিচারিকা তা কেন গোপন করলেন। পোয়ারো বললেন, কেন যে তার অপরাধ তার মিথ্যের সঙ্গে খাপ খায় না। এতে ভিত্তি পাওয়া যাচ্ছে বটে। যদি ভিত্তি সত্যি হয় তাহলে অ্যান মারিসোর আদৌ ওই প্লেনে থাকার কথা নয়। একটা সহজ সমাধান হয় যে পরে যখন আবার জট পাকিয়ে গেল তখন ফানে আবার রেগে গেলেন। জেন ভাবলো যে, উনি কি বোঝাতে চাইছেন তার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না। পোয়ারো এবার একটা টেলিফোন করলেন এখানে, স্কোয়ার্ডে লেডি হরবেরিলর বাড়িতে।

 

অ্যান মারিসো -ডেথ ইন দ্য ক্লাউডস ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
আগাথা ক্রিস্টি

তিনি লেডি হরবেরিলকে একটা প্রশ্ন করতে চান তবে তা অ্যান মারিসো সম্পর্কে নয়। তিনি যখন লেডি হরবেরিলকে ফোনে জিজ্ঞাসা করলেন যে তিনি যখন কোথাও যান তার পরিচারিকা কি তার সঙ্গে প্লেনে যায় না ট্রেনে যায়। মাদাম জানালেন তার পরিচারিকা সাধারণত ট্রেনে বা জাহাজে যান। গিজেলের খুন হওয়ার দিন লেডি হরবেরিল একেবারে শেষ মুহূর্তে ঠিক করেন যে ম্যাডেলিন তার সঙ্গে প্লেনেই চলুক। কিন্তু সে ট্রেনে যায় এবং সে এখন কাজ ছেড়ে চলে গেছে।

লেডি মাদামের সব কথা শুনতে পেরে পোয়ারোর সব কথা জেনে ফার্নের সঙ্গে কোনো দেরি না করে অ্যান মারিসোর হোটেলের দিকে যেতে থাকে। এইজন্য ফার্নে অবাক হয়ে উঠতে তিনি বললেন তার ধারণা যদি ঠিক হয় তাহলে অ্যান মারিলো ভয়ানক বিপদের সম্মুখীন, পোয়ারো এ ব্যাপারে ভীত। তার ট্যাক্সিটা প্রায় ঘন্টায় ৪০ মাইল বেগে চলেছে। ফার্নে দুর্ঘটনার ভয় করলে এবং সেক্রেটারিকে কিছু না জানিয়ে আমার জন্য অভদ্রতা ভাবলেন কিন্তু পোয়ারো জীবন মরণের প্রশ্নে ভদ্রতা অভদ্রতার ধার ধারেন না।

অ্যান মারিসো হোটেলে তাড়াতাড়ি যেতে গিয়ে একজনের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। তিনি হলেন অভিনেতা রেমন্ড ব্যায়াকেল। ফার্নে পোয়ারো এই হটকারী সিদ্ধান্তে খুশী নয়। পোয়ারো তাকে এ ব্যাপারে অভয় দিলেন। তিনি বললেন, যে মাদাম রিচার্ডস এখানে আছে কিনা তা খোঁজ নিতে হবে। তাহলে বোঝা যাবে তার কোনো ক্ষতি হয়নি। তখন তারা পরবর্তী কর্মপন্থা স্থির করবেন। হোটেলে তারা জানতে পারলেন যে, মাদাম বেশ কিছুক্ষণ আগে (৩০ মিনিট) চলে গেছেন। ঠিকানা কিছু রেখে যাননি। তিনি আগে বলেছিলেন যে, সপ্তাহখানেক থাকবেন কিন্তু পরিকল্পনার বদলের জন্য তিনি চলে গেছেন।

আরো প্রশ্ন করা হল কুলী, লিফ্ট চালকদের। দারোয়ানের বক্তব্য অনুসারে জানা গেল এক ভদ্রলোক মহিলার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন, তিনি ছিলেন না। তারপর যখন তাদের দেখা হয় তারা একসঙ্গে খেয়ে একটা ট্যাক্সিতে তার মালপত্র তুলে দিতে বলেন। দারোয়ান বলেন যে ভদ্রমহিলা একাই উত্তর দিকের স্টেশনে গেছেন।

ফার্নে আন্দাজ করলেন বেলা দুটোর গাড়িতে ইংল্যান্ডে যাচ্ছেন। এটা ধাপ্পাবাজি হতে পারে। তিনি তার আগে বুলেন স্টেশনে ফোন করতে চান।

বিকাল ৫টা হোটেল লাউঞ্জে জেন বই পড়ছিলেন। পোয়ারো এসে দাঁড়ালেন। বুলেন স্টেশনে একজন মহিলাকে প্রথম শ্রেণির কামরায় মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে, তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। তিনি অ্যান মারিসো। পুলিশ আত্মহত্যা মনে করে ও পোয়ারো তাই মনে করেন। তার মনে হয় বাঁচার জন্য সাহস পাননি বোধহয় তিনি। তিনি কেন আত্মহত্যা করলেন? কয়েকটি কাজ দিয়ে প্যারিসে ছেড়ে চলে গেলেন। জেন দুবার জা জ্যাপের সঙ্গে দেখা করেছে এবং জেন যে তার সঙ্গে প্যারিসে যাচ্ছে তা বলতে জেন তা এড়িয়ে গেছে। পাঁচদিন পর টেলিগ্রাম করে তাকে ইংল্যান্ড ফিরিয়ে আনা হল। নরম্যান গেল ভিক্টোরিয়া বিমানবন্দরে তার সঙ্গে দেখা করলেন।

নরম্যান বেশ ভীত। কাগজে মিসেস রিচার্ডস-এর মৃত্যুর সংবাদ ছাপানো হয়েছিল। তবে তার সঙ্গে খুনের কোনো সম্পর্ক ছিল না। নরম্যানের মনে হয় খুনের ব্যাপারে মেয়েকে সন্দেহ করতে পারা যায় এক্ষেত্রে ব্যাপারটা যদি সাধারণ মানুষের মধ্যে ঠিকভাবে তুলে ধরা না হয় তাহলে তাদের মতো নির্দোষ লোকদের কি হবে তা অচিন্ত্যনীয়।

পোয়ারো, মিঃ ক্ল্যান্সি, জ্যাপ সকলকে ডিনারে নিমন্ত্রণ করা হলো। পোয়ারো নানা গল্প করছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে তিনি ঠিকভাবে এগোচ্ছেন। পোয়ারো বললেন তার কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে, বলতে গিয়ে গোড়ার কথায় নিয়ে যেতে চান। তিনি বললেন যে প্রমিউথিস বিমানে প্যারিস থেকে ক্রয়ডন যাবার দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় ফিরে যাচ্ছেন। তিনি ক্রয়ডন পৌঁছাবার আগেই যখন মাদাম খুন হয় তখন অপরাধ, মৃত্যু সম্পর্কে তার কেমন সন্দেহ হয়। এ বোধহয়। তার বলার জন্য, এই গুণ দুভাগে বিভক্ত। যেখানে মৃত্যুর ব্যাপারে করণীয় আছে। যেখানে মৃত্যুর ব্যাপারে করণীয় নেই, যদিও শেষের ব্যাপারটা খুব কম ঘটে। তবু তিনি দেখছেন মৃত্যুর গন্ধ তিনি পান। ডাঃ ব্রায়ান পরিচারকের কথা মেনে নিয়ে নিজে পরীক্ষা করে মৃত বললেন কিন্তু তখন জাপ বলছিলেন যে ভদ্রমহিলা ভীমরুমেলর কামড়ে মারা গেছেন। প্রমাণ হিসাবে তিনি ভীমরুল দেখিয়েছিলেন। প্লেনের মধ্যে ভীমরুল থাকা সত্ত্বেও ভদ্রমহিলার গলায় যে দাগটা ছিল তার সঙ্গে এই যুক্তি একেবারেই ঠিক যে তিনি ভীমরুলের কামড়ে মারা যান। আসলে ওটা একটা কাটা যা আদিবাসীরা ব্যবহার করে যাতে হলুদ কালো ফেসো জড়ানো থাকে।

মিঃ ক্ল্যান্সি এরপর কাটা সম্পর্কে তার জ্ঞান জানান। পোয়ারো এরপর বলেন যে, তিনি খুব অবাক হয়েছিলেন খুনীর দুঃসাহস দেখে। তাকে আরো দুটো জিনিস উৎসুক করেছিল। একটা ভীমরুল থাকার সুবিধা দুই বাঁকানল খুঁজে পাওয়া। শুধুমাত্র কাঁটাটা থাকলে সেটা খুঁজে বার করা অসুবিধে হত। কিন্তু দোকানের লেবেলের কিছু অংশ সমেত বাঁকানল থাকা এটা অন্য ব্যাপার। এতে বোঝা যায় খুনী চেয়েছিল বাঁকানল নজরে পড়ুক। কিন্তু কারণ হচ্ছে যদি একটা বিষাক্ত তীর একটা বাঁকানল একসঙ্গে পাওয়া যায় তাহলে স্বভাবতই এই ধারণা হয় বাঁকানল থেকে তীর ছুটে গিয়ে খুন হয়েছে সুতরাং আসলে ওইভাবে খুন করা হয়েছিল। এটা পরিষ্কার, বিষাক্ত তীর যখন মৃত্যুর কারণ সেটা গলায় লাগানোর বিশ্বস্ত উপায় হল হাত দিয়ে ফোঁটানো। তাই তিনি সবদিক বিচার করে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন মাদাম গিজেলের পাশে দাঁড়িয়ে কেউ একাজ করেছে। প্রথমেই সন্দেহ যায় দুজন পরিচারকের উপর। তাছাড়া মিঃ ক্ল্যান্সি বলে গিয়েছিলেন। আর তার যতদূর মনে হয় মিঃ ক্ল্যান্সি প্রথমে বাঁকানলের কথা বলেন। মিঃ ক্ল্যান্সি ভয় পেলেন ও প্রতিবাদ করতে যাওয়ায় পোয়ারো বলেন তার কথা এখনো শেষ হয়নি। পোয়ারো আবার বললেন, যে তিনজন সন্দেহভাজন মিবেল্য, ডেভিস ও ক্ল্যান্সি, কিন্তু তারা যে খুশী নন তা প্রমাণের জন্য তিনি ভীমরুল নিয়ে পড়লেন। তার মনে হয় কফি দেওয়ার আগে কেউ ওটাকে লক্ষ্য করেনি এটা কেমন অস্বাভাবিক! খুনী বোঝাতে চেয়েছে মাদাম গিজেল হার্টফেল করে মারা গেছেন। এটা প্রমাণ করার সাফল্য নির্ভর করবে। খুনী যদি ওই কথাটাকে ভীমরুলের মতো দেখতে কার এবং তাই করা হয়েছিল তা সন্দেহাতীত, তাহলে বোঝা যাচ্ছে খুনী মাদাম গিজেলের টেবিলের কাছে গিয়েছিলো, কাঁটাটা ফুটিয়ে দিয়েছিলো এবং সত্যিকারের ভীমরুল ছেড়ে দিয়েছিলো। এবং বিষের প্রভাবে ভদ্রমহিলার মৃত্যু সন্দেহ হয়। গিজেলের চিৎকার প্লেনের আওয়াজে শোনা যায়নি। ভীমরুল ভো ভো করায় মনে হয়েছে ভীমরুলের কামড়ে তার মৃত্যু হয়েছে। এটাকে তিনি পরিকল্পনা বলে এটা বলেন যে খুনী বাঁকানলটা সরিয়ে দিতে চায়নি। কিন্তু কাটা সকলের চোখে পড়তে তার পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। এক্ষেত্রে তার তত্ত্ব অনুযায়ী তিনজন সন্দেহভাজন ভাবে, চতুর্থ আর যোজনকে ধরা যায় তিনি সঁসিয়ে জা দুপ তিনি ভীমরুলের কামড়ে মৃত্যুর তত্ত্ব খাড়া করেছেন। তিনি সন্দেহভাজন করেছেন কারণ তিনি মাদামের সামনে বলেছিলেন এবং তার খুন করার এত সাহস হবে না। তিনি ভীমরুলের সমস্যা নিয়ে লেগে পড়লেন। খুনী প্লেনে ভীমরুল নিয়ে এসে থাকে এবং বিশেষ মুহূর্তে সেটা ছেড়ে দেয় তাহলে তার কাছে এমন কোনো বাক্স ছিলো, যাতে সে এটা রেখেছিল। তাই সবার সঙ্গের জিনিসগুলো দেখার এত উৎসাহ।

তিনি বললেন এ বিষয়ে যখন সন্দেহ করেন তখন নরম্যান গেল-এর পকেটে ব্রায়ান এন্ড মে কোম্পানির একটা ভাগ ছিল ও তার একটা কেসে একটা জিনিস পেয়েছে। নরম্যান হতভম্ব হলেন।

পোয়ারো বললেন, ওই কথা ছেড়ে তিনি অন্য চারকে সন্দেহ করেন। দুজন পরিচারক, ক্ল্যান্সি, গেল; তিনি বলেছেন খুনের উদ্দেশ্য ছিল। এবিষয়ে একমাত্র সেই মেয়েটিই খুনী হতে পারে যে তার মায়ের সম্পত্তির অধিকারিণী হতে পারত, প্রমিউস বিমানের মধ্যে একজন ছিলেন যিনি গিজেলের সঙ্গে মেলামেশা করতেন, তিনি হলেন লেডি হরবেরিল। লেডি হরবেরিলর ক্ষেত্রে উদ্দেশ্যটি পরিষ্কার। তিনি আগের দিন গিজেলের সঙ্গে দেখা করে ও তার বন্ধু অভিনেতা ব্যারাক্রে অ্যামেরিকান সেজে বাঁকানল কেনেন। সেই হয়তো গিজেলকে বেলা বারোটায় প্লেনে ব্যবস্থা করার জন্য এয়ারলাইন্সে পাঠাবার জন্য ঘুষ দিয়েছিলেন।

আসলে ঘটনাটা ছিল অন্য। পোয়ারো নরম্যান গিজেলকেই খুনী বলে মনে করেছেন। কারণ সবসময়েই তিনি গিজেলের কন্যা বা উত্তরাধিকারিণীর কথা ভেবেছেন। প্রথমে তিনি মিস জেনকে তার উত্তরাধিকারিণী বলে মানলেন। পরে তিনি তার নাম জেনে তাকে সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দেন। মিসেস গিজেলের মৃত্যুতে মিঃ গেলের সবথেকে ক্ষতি হয় কারণ এটা তিনি লেখা দেখিয়ে বলেছেন। তা হতে পারে কেননা পোয়ারো বলতে চান যে নিজের মধ্যে সবার প্রবণতা তাকে নিজেকে জাহির করা। তিনি নরম্যান গেলের সন্দেহভাজন যাতে না হন তাকে তিনি বিচারের কাজে নেন। এজন্য তাকে মিসেস হরবেরিলর বাড়িতে পাঠানোর জন্য ছদ্মবেশ নিতে বলেন। গেল প্রথমে এমন করে সেজে এসেছিলেন তা অবাস্তব, তাই এরপর যখন ভালো করে সাজে, লেডি চিনতে পারেননি। এই সময় পোয়ারো মাদাম জেনকে গেলের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য তাকে তার সেক্রেটারি নিযুক্ত করেন। প্লেনের সেই মেয়েটি যখন উত্তরাধিকারিণী হিসেবে এলো তখন তিনি চিনতে পারলেন এবং এটা সঠিক কিনা তা মাদাম হরবেরিলর ফার্নের মাধ্যমেই তিনি প্রমাণ পেলেন। তিনি বুঝলেন মেয়েটি তার কাছে সব মিথ্যে বলেছিল।

 

অ্যান মারিসো -ডেথ ইন দ্য ক্লাউডস ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
আগাথা ক্রিস্টি

মেয়েটি যদি দোষী হয় তাহলে তার সহকারী কে এটা ভাবতে শুরু করে। নরম্যান অধৈর্য হয়ে বলেন যে তাহলে কখন তিনি সন্দেহ ত্যাগ করেন যে তিনি খুনী। পোয়ারো তিনিই যে খুনী সেটা জানিয়ে বলেন যে তিনি যে তার বাঁচার জন্য এই পেশায় এসেছেন এটা ঠিক, কিন্তু সেটা তার ব্যাবসায় নামেন তার পদবীটাই গ্রহণ করেন। তার আসল পদবী হল লিওস। গত শীতকালে নাইসে অ্যান মারিসের সঙ্গে দেখা হয়। তার মনে অ্যানের কথা শুনে লোভ জাগে। তিনি জানতে পারেন মাদাম গিজেলের সঙ্গে হরবেরিলর একটা যোগাযোগ আছে। এই খুনের পরিকল্পনা গেল এমনভাবে করলেন যাতে হরবেরিল ওপরের পক্ষে তার পরিকল্পনা সব ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু অ্যান মারিস যখন প্লেনে গেলেন তখন একটু গোলমাল হয়ে যায়। তখন তার পরিকল্পনা একটু জট পাকিয়ে গেল। তার মূল পরিকল্পনা ছিল অ্যান মারিসো যেহেতু তার উত্তরাধিকার দাবী করবে সুতরাং তার অজুহাতটা একেবারে পাকাঁপোক্ত হওয়া চাই। সে যখন ট্রেনে বা জাহাজে রয়েছে তখন খুনের সময় তার প্লেনে থাকার প্রশ্ন ওঠে না। সুতরাং অজুহাত পাকা এবং এরপরেই আপনি তাকে বিয়ে করলেন এবং শেষ পর্যন্ত তা আর হলো না। তিনি একটা ভুল করলেন। তিনি টাকা এবং ভালোবাসার পাত্রী দুটোকেই পেতে চাইলেন। তাই তিনি অ্যান মারিসোকে এই বলে ভয় দেখালেন সে যদি নিজের পরিচয় দিয়ে দাবী নিয়ে যায় তাহলে পুলিশ তাকে খুনী বলে সন্দেহ করবে। সুতরাং তাকে বুঝিয়ে রটারডামে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করলেন।

অ্যান মারিসো সেদিন প্যারিসে গিয়ে তার উত্তরাধিকার দাবী করবে বলে আপনি দিন ধার্য করে দিয়েছিলেন, সেটা আমার প্যারিসে যাওয়ার দিনের সঙ্গে আকস্মিক ভাবেই মিলে গেল। মিস গেল সঙ্গে গেছিল, এটা তার পরিকল্পনার সঙ্গে খাপ খেললো না। তিনি মাদামের সঙ্গে দেখা করতে চান কিন্তু তিনি সফল হননি। উনি দেখলেন যে অ্যান উকিলের সঙ্গে দেখা করে আবার পোয়ারোর সঙ্গে দেখা করেছে তখন তিনি খুব ভয় পেলেন। তার ইচ্ছে ছিল স্ত্রীর সম্পত্তি হস্তগত করা তাই বিয়ের পর দুজনের নামে উইল করা হল। এরপর তার কানাডা যাবার কথা ছিল এবং তার কিছুদিন পর ইংল্যান্ডে ফিরে যাবার কথা ছিল।

নরম্যান গেল এসব গাঁজাখুরি সম্পর্কে পাত্তা দিতে চাইলেন না। তখন পোয়ারো বললেন যে তার হাতে প্রমাণ আছে যে টাকা তিনি গিজেলের আমলের কাছে এসে কাজটা করেন। পোয়ারো বললেন যে তিনি একটা লিলেন ডাক্তারী কোট নিয়ে এসেছেন, এটার সঙ্গে পরিচারকের কোটের সাদৃশ্য ছিল। আসলে ঘটনা এরকম ঘটেছিল। কফি দিয়ে পরিচারক দুজন যখন সামনের কামরায় চলে গেলো, তখন তিনি এ ঘরে গিয়ে লিলেনের কোটটা এগিয়ে দিলেন, তারপর গালের উপর তুলো চামড়ে নিয়ে পাশের ভাড়ার ঘর থেকে একটা কফির চামচ হাতে নিলেন এবং চামচ হাতে পরিচারকের মতো ব্যস্ত পায়ে মাঝের রাস্তা ধরে গিজেলের টেবিলে এসে তার গলায় কাঁটা ফুটিয়ে ভীমরুলটা উড়িয়ে দিলেন। আবার দ্রুত পায়ে প্রসাধন ঘরে এসে কোট খুলে রেখে ধীরেসুস্থে নিজের আসনে ফিরে এলেন। তাকে কেউ নজর করেনি। জেন তাকে লক্ষ্য করেন কারণ সে তখন নিজের প্রসাধন করতে ব্যস্ত ছিল।

গেল ব্যঙ্গ করলে তিনি বলেন যে, গেল একটা আখের খামারে কাজ করতেন। যেটা দক্ষিণ আফ্রিকায় ছিল এটা পোয়ারো আবিষ্কার করে। সেখানে আসল নাম রিচার্ডস নামেই তিনি কাজ করতেন। তার ছবি রেডিও টেলিফোন ও রটারডামে পাঠানো হয়। দুই জায়গাতেই সনাক্ত হলেন।

নরম্যান এবার একটু ভয় পেয়ে গেলেন। পোয়ারো বললেন, তিনি অ্যান মারিসোকে টেলিগ্রাম করেন এবং পরিপ্রেক্ষিতে যখন অ্যান তার সঙ্গে দেখা করতে আসেন তখন তিনি ভয় পেয়ে যান এবং তিনি ভয় পান এই ভেবে যে অ্যান তার সব কথা পোয়ারোকে বলে দিয়েছেন। তাই তিনি ট্রেনের কামরায় তাকে সাইট্রিক অ্যাসিড খাইয়ে দেন এবং খালি শিশিটা গুঁজে দিয়ে চলে আসেন এবং শিশির গায়ে আঙ্গুলের ছাপ ছিল। কিন্তু তখন হঠাৎ গেল বলে উঠলেন, তিনি দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন। তখন প্রমাণ হয়ে যায় যে নরম্যান আসল খুনী।

ব্যাটা খুদে ভণ্ড, বলে উঠলেন গেল, তার পর গেলকে গ্রেপ্তার করা গেল।

পোয়ারোকে মিঃ ক্ল্যান্সি বললেন যে তার জীবনের সব থেকে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা এটা। এটাতে পোয়ারো জ্যাপকে তার কৃতিত্ব থেকে খাটো করতে চান। পোয়ারো বললেন যে কানাডাতেও এক মেয়েকে খুনের ব্যাপারে অভিযুক্ত গেল।

জেনের জন্য দুজনেই সমব্যথা প্রকাশ করলেন। নরম্যান গেলের লাফালাফিতে কতগুলো ছবি ছড়িয়ে গেছিল। মাদাম ভেনেসিয়া কার এবং লর্ড হরবেরিল ছবি দেখে পোয়ারো বললেন অচিরেই এদের দুজনের সম্পর্ক বিবাহের রূপ নেয়। তিনি মিস জেন গ্রে এবং মঁসিয়ে জ্যা জ্যাপকে বিবাহ দিতে চান।

এর একমাস পরে জেন পোয়ারোর সঙ্গে দেখা করতে এসে বলেন যে আপনাকে আমার ঘৃণা করা উচিত।

পোয়ারো বললেন যে তার ধারণা আপনি যে ধরনের মেয়ে; মূখের স্বর্গে বাস করার থেকে সত্যের মুখোমুখি হবার সাহস রাখে জেনের প্রেম ভালোবাসায় রুচি নেই।

পোয়ারো জ্যাঁ দ্যুপদের থেকে টাকা পাঠিয়েছেন এবং জেনকে তাদের সঙ্গে প্যারিসে পাঠাতে চান এবং এরজন্য তিনি জেনকে জিজ্ঞাসা করলেন তিনি ছবি আঁকতে পারেন কিনা, জেন বললেন যে এই বিষয়ে তাকে তিনি করুণা করছেন না তো। তিনি স্কুলে বেশ ভালোই ছবি আঁকতেন।

জেন বললেন যে, প্রাগৈতিহাসিক মৃৎশিল্প দেখতে উৎসাহী। দরজার কাছে গিয়ে জেন ফিরে এলেন। ঠিক এই ব্যাপারে আপনি দয়ালু না হতে পারেন, কিন্তু আপনার আমার প্রতি তাও নেই। তার মাথার মাঝখানে একটা চুম্বন দিয়ে তিনি বেরিয়ে গেলেন।

লক্ষ্মী মেয়ে-পোয়ারো নিজের মনেই বললেন।

অ্যান মারিসো -ডেথ ইন দ্য ক্লাউডস ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
আগাথা ক্রিস্টি

আমাদের আরও পোষ্ট দেখুনঃ

Bangla Gurukul Logo অ্যান মারিসো রচনা-ডেথ ইন দ্য ক্লাউডস ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]

ফ্রেডরিকার আশ্চর্য ব্যবহার -পেরিল অ্যাট এন্ড হাউস ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]

নিক এর গোপন কথা -পেরিল অ্যাট এন্ড হাউস ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]

মিঃ ও মিসেস ক্রফট -পেরিল অ্যাট এন্ড হাউস ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]

ম্যাজিস্টিক হোটেল -পেরিল অ্যাট এন্ড হাউস ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]

দ্য অ্যাডভেঞ্চার অফ দ্য ওয়েস্টার্ন স্টার -পোয়ারো ইনভেস্টিগেটস ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]

বনফুল (১৮৮০) | কাব্যগ্রন্থ | কবিতা সূচি | পর্যায় : সূচনা (১৮৭৮ – ১৮৮১) | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Leave a Comment