পিকনিকে রাজি রচনা
পিকনিকে রাজি রচনা -আফটার দি ফিউনারেল ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
![পিকনিকে রাজি রচনা -আফটার দি ফিউনারেল ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ] 1 পিকনিকে রাজি -আফটার দি ফিউনারেল ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]](https://banglagoln.com/wp-content/uploads/2022/05/AgathaChristie-225x300.jpeg)
দ্বাদশ পরিচ্ছেদ
১২.১
পিকনিক, মঁসিয়ে পোয়ারো?
পোয়ারো বললেন, আপনার কাছে ব্যাপারটা অত্যন্ত খারাপ লাগছে, তাই না? কিন্তু আমার ধারণা বর্তমান পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করে তুলতে গেলে আমাদের প্রয়োজন স্বাভাবিক। এতে সকলেই খুব খুশি হবে। সুতরাং এ ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করুন, মাদমোয়াজেল। প্রত্যেককে এ পিকনিকে রাজি করান।
অপ্রত্যাশিত মার্শালের সঙ্গে প্রস্তাবটা গৃহীত হলো। ক্যাপ্টেন মার্শাল নিজেই বলেছেন সেদিন তাকে প্লিউমাউথ যেতে হবে। পোয়ারো রোজামন্ডকে বুঝিয়েছেন যে, এই পিকনিকে লিন্ডাকে ওর বর্তমান মানসিক অবস্থা থেকে অন্তত সাময়িকভাবে হলেও মুক্তি দেবে। আপনি পারবেন ওকে রাজি করাতে।
মেজর ব্যারী বলেছেন, পিকনিক তিনি পছন্দ করেন না। সকালে সকলে জমায়েত হলেন। তিনটে গাড়ির ব্যবস্থা করা হলো। মিঃ ব্ল্যাট সরব ও উৎফুল্ল কণ্ঠে টুরিস্ট গাইডের অনুকরণ করলেন। এইদিকে আসুন। ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ–ডার্টমুরে যাওয়ার পথ এইদিকে। এখানে রয়েছে বুনো ঝোঁপ ও জাম গাছের ছায়া, রয়েছে ডেভনশায়ারের বৈশিষ্ট্য ও অভিযুক্ত অপরাধীদের সমাবেশ স্ত্রীদের সঙ্গে নিয়ে আসুন অথবা সঙ্গে নিন। সুন্দরী সঙ্গিনীদের প্রত্যেককে স্বাগত জানাই। জানাই স্বাৰ্গীয় প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখানোর প্রতিশ্রুতি। তাড়াতাড়ি চলুন।
শেষ মুহূর্তে ডার্নলি, লিন্ডা আসবে না। ও বলেছে ওর নাকি ভীষণ মাথা ধরেছে। আমি কয়েকটা অ্যাসপিরিন দিয়েছি। সেগুলো খেয়ে ও শুয়ে পড়েছে। আমার মনে হয় আমার যাওয়াতা ঠিক হবে না।
মিঃ ব্ল্যাট ইয়ার্কির ছলে ওর হাত চেপে ধরে চেঁচিয়ে উঠলেন, সেটি হচ্ছে না দেবী। অনুষ্ঠানকে মধুর করে তুলতে আপনার উপস্থিতি প্রয়োজন। আপনাকে আমি বন্দী করলাম, হা। হা। ডার্টমুরের কারাগারে আপনাকে নির্বাসন দেওয়া হলো।
ক্রিস্টিন বললো, আমি লিন্ডার কাছে থাকছি।
প্যাট্রিক বললো, কি হচ্ছে ক্রিস্টিন–চলো
পোয়ারো বললেন, না না, মাথা ধরায় কারও পক্ষে একা থাকাটাই ভালো। চলুন রওনা হওয়া যাক।
তিনটে গাড়ি চলতে শুরু করলো।
ওরা প্রথমে গেলেন শীপস্টরের আসল পিক্সির গুহায়, তার প্রবেশপথ অনুসন্ধান করে যথেষ্ট আনন্দ পেলেন। অবশেষে একটা ছবি পোস্টকার্ডের সাহায্যে পথটা খুঁজে পেলেন।
বড় বড় পাথরে পা ফেলে চলার পথটা ছিলো অত্যন্ত বিপজ্জনক। এরকুল পোয়ারো অনুসরণ করলেন পাথর থেকে পাথরে লাফিয়ে যাওয়া ক্রিস্টিন ও মিঃ রেডফার্নকে। সবাই সন্তর্পণে এগিয়ে চললো, সেই সঙ্গে অনুসন্ধানকারীদের ছবি তুলতে ভুললেন না।
গার্ডেনাররা এবং পোয়ারো পথের পাশে বসে রইলেন।
জানেন মঁসিয়ে পোয়ারো, আচমকা ছবি ভোলা অস্বস্তির কারণ হয়। অবশ্য, যদি না সেগুলো কেবল বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে ভোলা হয়। মিঃ ব্ল্যাটের সত্যিই কোনো কান্ডজ্ঞান নেই। সেদিন সমুদ্রতীরে তিনি সকলের বসা অবস্থায় একটা ছবি তুলেছেন। কিন্তু আগে জিজ্ঞেস করা উচিত ছিলো। মিঃ ব্ল্যাট সবাইকে ওই ছবির কপি দিচ্ছেন। আপনাকেও একটা দিয়েছেন না?
পোয়ারো বললেন, ওই ছবির মূল্য আমার কাছে অনেক।
মিসেস গার্ডেনার বলে চললেন, আর আজ দেখুন। মামুলি হৈ-হুঁল্লোড়ে সর্বক্ষণ মেতে আছেন। এই লোকটাকে বাড়িতে রেখে এলেই ভালো হতো।
হায় মাদাম, সেটা অত্যন্ত কঠিন কাজ হতো।
কঠিন বলে কঠিন। ওই লোকটা গুতোণ্ডতি করে হলেও নিজের জায়গা করে নেয়।
সেই মুহূর্তে নিচ থেকে ভেসে আসা সমবেত উল্লাস চিৎকার জানিয়ে দিলো গুহার প্রবেশপথ পাওয়া গেছে।
পিকনিক দল এবার দেখলো পাহাড়ি ঝোঁপের পাশ দিয়ে একটা নদীর তীরেমনোরম এক সবুজ প্রান্তর। নদী পার হওয়ার একটা সরু কাঠের তক্তা দিয়ে পোয়ারো ও মিঃ ও মিসেস গার্ডেনার পার হয়ে গুল্ম ঝোপে ঘেরা একটি ছোট্ট সবুজ জায়গায় এলেন, যেটা পিকনিকের পক্ষে আদর্শ স্থান।
![পিকনিকে রাজি রচনা -আফটার দি ফিউনারেল ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ] 2 পিকনিকে রাজি -আফটার দি ফিউনারেল ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]](https://banglagoln.com/wp-content/uploads/2022/05/odnb-9780198614128-e-1012602-graphic-1-full-237x300.jpeg)
অন্যান্যরা সহজেই দৌড়ে কাঠের সেতুটা পার হয়েছেন কিন্তু এমিলি স্টার সেই সরু তক্তার মাঝখানে চোখ বোজা অবস্থায় দাঁড়িয়ে।
পোয়ারো ও রেডফার্ন ব্যস্তভাবে তাকে উদ্ধার করলেন।
খাবার ভাগ করে দেওয়া হলো, পিকনিক শুরু হলো।
এই ছোট্ট অনুষ্ঠানটুকু সন্দেহ ও ত্রাসে ঘেরা এক পরিবেশ থেকে তাদের মুক্তি দিয়েছে। এখানে চঞ্চল জলের স্বপন। জলজ উদ্ভিদের নেশা ধরানো হালকা গন্ধ এবং গুল্ম পর্ণের উষ্ণ রঙীন ছটা। হত্যা, পুলিসী তদন্ত সব অস্তিত্বকে ভুলিয়ে দিয়েছিলো। এমনকি মধ্যমণি মিঃ ব্ল্যাট পর্যন্ত খাওয়া-দাওয়ার পর নিশ্চিন্তে শুয়ে পড়লেন।
অবশেষে এই সুন্দর পরিকল্পনার জন্য পোয়ারোকে সবাই ধন্যবাদ জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে হোটেলের দিকে ফিরলেন। আজকের দিনটা এককথায় চমৎকার ভাবে কাটলো।
.
১২.২
মেজর ব্যারী বেরিলয়ে, এই যে দিনটা ভালোই কাটলো তো?
মিসেস গার্ডেনার বললেন, নিশ্চয়ই খোলা সবুজ মাঠগুলোর তুলনা হয় না। একেবারে খাস ইংরেজি আর সাবেকী। সেখানকার সতেজ বাতাসে শুধু তৃপ্তির ছোঁয়া।
মেজর হেসে, জলার মাঝে বসে স্যান্ডউইচ খাওয়া–এ সবের বয়েস কি আর আছে?
হোটেল পরিচারিকা গ্ল্যাডিশ ন্যারাকট দ্রুত এসে বললো ক্রিস্টিনকে, মাদাম, ছোট দিদিমণি, মিস মার্শালের জন্য ভীষণ দুশ্চিন্তা হচ্ছে। এইমাত্র চা নিয়ে তার ঘরে গিয়ে তাকে জাগাতে পারলাম না, আর তাকে এত–অদ্ভুত দেখাচ্ছে….
ক্রিস্টিন দিশেহারা, পোয়ারো তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। ওরা সিঁড়ি ভেঙে লিন্ডার ঘরে উপস্থিত হলেন, এবং বুঝতে পারলেন কিছু একটা হয়েছে। ওর মুখের রঙ অদ্ভুত দেখে পোয়ারো নাড়ি দেখলেন, আর দেখলেন চাপা দেওয়া একটা খাম। তিনি বললেন, লিন্ডার নামে কি শুনছি? কি হয়েছে ওর?
পোয়ারো বললেন, যত শীঘ্রই পারেন একজন ডাক্তার নিয়ে আসুন। আমাদের হয়তো অনেক দেরি হয়ে গেছে।
তিনি নিজের নাম লেখা খামটা খুললেন তাতে লিন্ডার ছিমছাপ কিশোরী হাতে লেখা কয়েকটা লাইন।
“আমার মনে হয় এটাই মুক্তির সহজ পথ। বাবাকে বলবেন তার বিচারে আমাকে ক্ষমা করতে। আমিই আর্লেনাকে খুন করেছি। এতে আমার খুশি হওয়ার কথা কিন্তু হইনি। সব কিছুর জন্য আমার ভীষণ দুঃখ হচ্ছে।”
.
১২.৩
সবাই বিশ্রাম কক্ষে জমায়েত হয়েছেন। প্রত্যেকেই চুপচাপ বসে–প্রতীক্ষারত।
ডাঃ নিসডন ভেতরে এসে বললেন, এ যাত্রা মেয়েটা টিকে গেলেও যেতে পারে–তবে আশা খুব বেশি নেই।
মার্শাল বললেন, কিন্তু জিনিষটা ও পেলো কেমন করে?
দরজা খুলে নিসডন পরিচারিকাটিকে ডেকে বললেন, তুমি যা দেখেছো আর একবার আমাদের বলল।
মেয়েটি কান্নাভেজা গলায় বললো, আমি মোটেই ভাবিনি ভেতরে ভেতরে কোনো গলদ রয়েছে–অবশ্য ছোট দিদিমণিকে দেখে একটু অবাক লেগেছিলো। মিস মার্শাল তখন মিসেস রেডফানের ঘরে বেসিনের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন একটা ছোট শিশি হাতে নিয়ে। আমাকে ঢুকতে দেখেই চমকে শুধু বললেন, এই তো এটা খুঁজছিলাম বলেই ঘর ছেড়ে চলে গেলেন।
ক্রিস্টিন ফিসফিস করলো, আমার ঘুমের ট্যাবলেটগুলো।
ডাক্তার রূঢ়স্বরে, সে খবর মিস লিন্ডা পেলে কি করে?
ক্রিস্টিন বললো, আমি ওকে একটা দিয়েছিলাম আর্লেনা মারা যাওয়ার রাতে। ও বলেছিলো ঘুম আসছে না, একটাতেই হবে তো? আমি বলেছিলাম, হ্যাঁ, এগুলো খুব জোরালো-আমাকে একসঙ্গে দুটোর বেশি খেতে বারণ করা হয়েছে।
নিসডন বললেন, মেয়েটা একসঙ্গে ছ-ছটা ট্যাবলেট গিলেছে।
ক্রিস্টিন ফুঁপিয়ে কেঁদে, ওঃ, এসবই আমার দোষে হলো, শিশিটা তালাচাবি দিয়ে রাখা উচিত ছিলো।
সেটাই বুদ্ধিমানের কাজ হতো।
ও মারা যাচ্ছে–সম্পূর্ণ আমার দোষে…।
মার্শাল বললেন, না আপনার কোনো দোষ নেই। ও ট্যাবলেট খেয়েছে স্ব-ইচ্ছায়। হয়তো–এই সবচেয়ে ভালো হলো।
ডার্নলি চিৎকার করে উঠলো। আমি বিশ্বাস করি না লিন্ডা আর্লেনাকে খুন করেছে। কারণ সেটা সাক্ষ্য প্রমাণ অনুযায়ী অসম্ভব।
ক্রিস্টিন বললো হয়তো, অতিরিক্ত মানসিক দুশ্চিন্তায় ও ব্যাপারটা কল্পনা করে নিয়েছে।
কর্নেল ওয়েস্টন ঘরে ঢুকে, এসব কি শুনছি?
ডাঃ নিসডন চিঠিটা পুলিসপ্রধানের হাতে দিলেন। তিনি বিস্ময়ভরা সুরে বললেন, কিন্তু এর কোনো মানে হয় না–একেবারে অর্থহীন। অসম্ভব। তাই না পোয়ারো?
না, আমার ধারণা অসম্ভব নয়।
ক্রিস্টিন বললো, কিন্তু আমি ওর সঙ্গে পৌনে বারোটা পর্যন্ত ছিলাম, পুলিসকেও তাই বলেছি।
পোয়ারো বললেন, আপনার সাক্ষ্যই ওকে অ্যালিবাই জুগিয়েছে–হ্যাঁ। কিন্তু লিন্ডা মার্শালের হাতঘড়ির ওপর নির্ভর করে আপনার সাক্ষ্য, আপনি নিজে নিশ্চিত নন যে ঠিক পৌনে বারোটায় আপনি মিস মার্শালকে ছেড়ে চলে আসেন–ও আপনাকে যা বলেছে তাই। এবারে ভাবুন মাদাম, যখন আপনি বেলাভূমি ছেড়ে আসেন তখন কি তাড়াতাড়ি গিয়েছিলেন?
![পিকনিকে রাজি রচনা -আফটার দি ফিউনারেল ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ] 3 পিকনিকে রাজি -আফটার দি ফিউনারেল ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]](https://banglagoln.com/wp-content/uploads/2022/05/agatha-christie.jpeg)
যতদূর মনে পড়ছে–ধীরে সুস্থেই গিয়েছিলাম।
মাদাম, সে সময় আপনি কি চিন্তা করছিলেন?
আমি–এখান থেকে স্বামীকে না জানিয়ে চলে যাওয়ার কথা ভাবছিলাম।
পোয়ারো বললেন, ঠিক তাই। আপনি তখন একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেবার কথাই ভাবছিলেন। আমি বলবো, সেই সময়ে আপনার পারিপার্শ্বিকের প্রতি সম্পূর্ণ বধির ও অন্ধ ছিলেন এবং থমকে দাঁড়িয়ে আপনার মানসিক সমস্যার কথা ভাবছিলেন।
সত্যিই তাই, দেরি হয়ে যাবে ভেবে তাড়াতাড়ি ভেতরে ঢুকি কিন্তু লাউঞ্জের ঘড়িটা দেখে বুঝলাম তখনও অনেক সময় রয়েছে।
ঠিক তাই, পোয়ারো মার্শালের দিকে ফিরে। খুনের পরে আপনার মেয়ের ঘর থেকে যেগুলো পেয়েছি আপনাকে এখন বলা প্রয়োজন। ঘরের চুল্লীতে পেয়েছি বিশাল এক টুকরো গলা মোম, কিছু পোড়া চুল। পিচবোর্ড ও কাগজের কিছু ছেঁড়া অংশ, একটা আলপিন। বইয়ের তাকে লুকানো অবস্থায় একটা ডাকিনীবিদ্যা ও মায়াবিদ্যা সংক্রান্ত বইয়ের একটি বিশেষ চিহ্নিত পৃষ্ঠায় মোমের পুতুলের সাহায্যে, যা ইঙ্গিত শত্রুর প্রতীক, মৃত্যুসাধনের বিভিন্ন প্রক্রিয়া বর্ণনা করা আছে। তারপর সেই মোমের পুতুলকে গলিয়ে অথবা বিকল্প হিসেবে একটা আলপিন আপনি বসিয়ে দিতে পারেন এই পুতুলের হৃদপিণ্ডে।
ফলে ইঙ্গিত ব্যক্তির আসন্ন মৃত্যুফল নির্ধারিত হয়ে যাবে। পরে মিসেস রেডফার্নের কাছ জেনেছি সেইদিন ভোরে লিন্ডা এক প্যাকেট মোমবাতি কিনে এনেছিলো। মোমবাতির মোম দিয়ে লিন্ডা কাঁচা হাতে একটি পুতুল তৈরি করে–সম্ভবত আর্লেনার মাথা থেকে কেটে নেওয়া চুল দিয়ে সেটাকেও সাজিয়ে নেয় যাদুশক্তি জাগিয়ে তোলার জন্য–তারপর একটা আলপিন হৃদপিণ্ডে বসিয়ে পুতুলটাকে পিচবোর্ড জ্বেলে গলিয়ে ফেলে। এটা একটা শিশুসুলভ মনের কুসংস্কার, খুনের আকাঙ্খ।
এই আকাঙ্খায় লিন্ডা মার্শালের পক্ষে ওর সৎমাকে খুন করা কি সত্যিই সম্ভব ছিলো?
কিন্তু আলেনা মার্শাল যে পিক্সি কোভে সেটা ওর জানা প্রয়োজন এবং দৈহিক শক্তির দিক থেকে সেই বিশেষ কর্ম সম্পাদনে ওকে হতে হবে সক্ষম।
যদি লিন্ডা মার্শাল অন্য কারো নামে আর্লেনাকে চিঠি দিয়ে থাকে পিক্সি কোভে যাবার জন্যে। আর এই মানসিক বিশৃঙ্খলার সঙ্গী হয় অমানুষিক শক্তি। এছাড়া লিন্ডা মার্শালের মাকে ও খুনের দায়ে অভিযুক্ত করে বিচার হয়।
মার্শাল বললেন, বিচারে ও মুক্তি পেয়েছিলো। আর আমার স্ত্রী রুথসম্পূর্ণ নির্দেী ছিলো। লিন্ডা মার্শাল আর্লেনাকে খুন করেছে এ আমি বিশ্বাস করি না। এ সম্পূর্ণ অবাস্তব।
পোয়ারো বললেন, তাহলে কি চিঠিটা জাল?
মার্শাল মনোযোগ দিয়ে চিঠিটা পরীক্ষা করে, না, এটা লিন্ডারই হাতে লেখা।
পোয়ারো বললেন, তাহলে এর দুটো ব্যাখ্যা হতে পারে। হয় চিঠিটা ও নির্ভেজাল বিশ্বাসে লিখেছে। নিজেকে সত্যিই খুনী জেনে অথবা–এই চিঠি লিখেছে অন্য কাউকে রক্ষা করার জন্য তাকে পুলিস সন্দেহ করছে।
আপনি আমার কথা বলছেন?
সেটা খুব সম্ভব নয় কি, মার্শাল?
না, অসম্ভব। লিন্ডা নিশ্চিতভাবেই জানতো। পুলিস আমার অ্যালিন্ডাই মেনে নিয়েছে এবং তাদের মনোযোগ এখন অন্যদিকে।
পোয়ারো বললেন, লিন্ডা শুধুই ভাবেনি যে পুলিস তাকে সন্দেহ করছে, বরং সে জানতো, আপনিই প্রকৃত অপরাধী।
এ রীতিমতো হাস্যকর।
কি জানি। মিসেস মার্শালের মৃত্যুর একটা ব্যাখ্যা বলছে, তাকে কেউ ব্ল্যাকমেল করছিলো। সেদিন সকালে তিনি সেই ব্ল্যাকমেলারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে খুন হয়েছিলেন। দ্বিতীয়টি হলো, পিক্সি গুহাকে মাদকদ্রব্য চোরাচালানের কাজে ব্যবহার করা হতো। তিনি সে সম্পর্কে কিছু জেনে ফেলায় তাকে খুন করা হয়। তৃতীয় সম্ভাবনা হলো কোনো ধর্মোন্মাদ ব্যক্তির হাতে তার মৃত্যু হয়। আর চতুর্থ–আপনার স্ত্রীর মৃত্যুতে আপনার আর্থিক লাভ। হ্যাঁ মানছি আপনার পক্ষে স্ত্রীকে খুন করা অসম্ভব কিন্তু কেউ যদি আপনাকে সাহায্য করে থাকে।
একটা কঠিন ক্রুদ্ধস্বরে, কি বলতে চাইছেন আপনি?
![পিকনিকে রাজি রচনা -আফটার দি ফিউনারেল ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ] 4 পিকনিকে রাজি -আফটার দি ফিউনারেল ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]](https://banglagoln.com/wp-content/uploads/2022/05/images-2-1.jpeg)
আমি বলতে চাই, দুজন মানুষ এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে। একথা সত্যি যে একই সঙ্গে আপনার পক্ষে পিক্সি কোভে যাওয়া আর চিঠিটা টাইপ করা সম্ভব ছিলো না–কিন্তু চিঠিটা শর্টহ্যান্ডে লিখে রাখার মতো সময় আপনার হাতে ছিলো–যখন আপনি জল্লাদ কর্মে ব্যস্ত ছিলেন, তখন অন্য কেউ হয়তো সে চিঠি আপনার ঘরে বসে টাইপ করে থাকবে।
মিস ডার্নলি বলেছে, তিনি এগারোটা দশে লজ ছেড়ে আসেন এবং আপনার ঘরে টাইপ করতে দেখেন। সেই সময়ে মিঃ গার্ডেনার হোটেলে আসে তার স্ত্রীর উলের বল নিয়ে যেতে। মিস ডার্নলির সঙ্গে দেখা হয়নি। দেখে মনে হচ্ছে মিস ডার্নলি লজ ছেড়ে আসেননি এবং আপনি বলেছেন যে, মিস ডার্নলি সওয়া এগারোটায় ঘরে উঁকি মারলে আপনার আয়নায় তাকে দেখতে পান। খুনের দিন আপনার ঘরে টাইপ ও কাগজ এক কোণে রাখা ছিলো। অথচ সেই বিবৃতি মিথ্যে। সবকিছু সরিয়ে দেন আপনার গল্পকে প্রমাণ করার জন্য কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমার মনে হয় দুজনেই মিথ্যা কথা বলছেন।
পোয়ারো বললেন, আর্লেনা মার্শালের খুনীর মতো অত চালাক নই। ভেবে দেখুন। হ্যাঁ, এতে সন্দেহ নেই।
প্যাট্রিক রেডফার্ন চাপা সুরে বললো, কোনো বদমাইশ আমার নাম ব্যবহার করে থাকবে। প্যাট্রিক রেডফার্ন চেয়ে রইলো। তারপর আইরিশ সুরে বললো, আপনি পাগল হয়ে গেলেন? আমি তো সৈকতে আপনার সঙ্গে ছিলাম। আপনি গুহায় লুকিয়ে থেকে রাস্তা পরিষ্কার হওয়ার অপেক্ষা করছিলেন।
কিন্তু সেই দেহটা! মিস ব্রুস্টার এবং আমি সেটা দেখেছি। মৃতদেহ নয়, সেই মহিলার জীবন্ত দেহ, যিনি আপনাকে সাহায্য করেছেন। তার হাতে পায়ে রঙের প্রলেপ আর মুখ ঢাকা ছিলো টুপিতে। ক্রিস্টিন, আপনার স্ত্রী অথবা স্ত্রী নয়–আপনার দুষ্কর্মের সাথী। এ খুনে সাহায্য করেছেন, যেমন করে ছিলেন অতীতে, যেমন তিনি অ্যালিশ করিগানের দেহ আবিষ্কার করেন অ্যালিশ করিগানের মৃত্যুর কুড়ি মিনিট আগে–অ্যালিশকে খুন করেছিলো তার স্বামী, এডওয়ার্ড করিগান–আপনি।
ক্রিস্টিনের স্বর তীক্ষ্ণ ও শীতল, সাবধান, প্যাট্রিক, মাথা গরম কোরো না।
পোয়ারো বললেন, শুনলে হয়তো খুশি হবেন। এখানে ভোলা একটা গ্রুপ ফটো দেখে সারে পুলিশ খুব সহজেই আপনাকে এবং আপনার স্ত্রীকে চিনতে পেরেছে। তারা সঙ্গে সঙ্গে আপনাদের সনাক্ত করেছেন এডওয়ার্ড করিগান ও ক্রিস্টিন ডেভারিন বলে–ক্রিস্টিন ডেভারিন অর্থাৎ সেই মহিলাটি যিনি অ্যালিশের মৃতদেহ আবিষ্কার করেছিলেন।
প্যাট্রিক রেডফার্ন ক্রোধে উঠে দাঁড়িয়েছে। তার মুখ যেন কোনো খুনীর কোনো বাঘের। সে চিৎকার করে উঠলো, শালা হতচ্ছাড়া নাকগলানো টেকো গ্রুফো গোয়েন্দা।
সে ঝাপিয়ে পড়লো, এরকুল পোয়ারোর গলায় দুহাত চেপে বসলো, ক্ষিপ্ত স্বরে অশ্রাব্য শব্দের ফুলঝুরি।
![পিকনিকে রাজি রচনা -আফটার দি ফিউনারেল ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ] 1 পিকনিকে রাজি -আফটার দি ফিউনারেল ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]](https://banglagoln.com/wp-content/uploads/2022/05/AgathaChristie-225x300.jpeg)
আমাদের আরও পোষ্ট দেখুনঃ
- বেনামী চিঠি -স্যাড সাইপ্রেস ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
- পিটার লর্ড -স্যাড সাইপ্রেস ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
- আদালত ঘরে -স্যাড সাইপ্রেস ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
- প্রথম রহস্য কাহিনী -সামনে কুয়াশা ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
- নাটকীয় ঘটনা -লর্ড এডওয়্যারস ডেথ ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
- শহর বাগদাদ -মার্ডার ইন মেসোপটেমিয়া ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]