জর্জ ক্রসফিল্ড রচনা -আফটার দি ফিউনারেল ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]

জর্জ ক্রসফিল্ড রচনা

জর্জ ক্রসফিল্ড রচনা -আফটার দি ফিউনারেল ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]

জর্জ ক্রসফিল্ড -আফটার দি ফিউনারেল ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]
আগাথা ক্রিস্টি

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

০১.

একটা মেয়ের পিঠ দরজা দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যেতে জর্জ ক্রসফিল্ড এক মুহূর্ত থামল। তারপর অনুসরণ করতে আরম্ভ করল জর্জ।

একটা দরজার কাছে এল। দরজাটা একটা দোকান ঘরের। অনেকদিন আগে থেকে দোকানটা বন্ধ হয়ে গেছে। কাঁচের জানালা দিয়ে ভেতরটা খালি মনে হয়। দরজাটা বন্ধ। কিন্তু দরজায় জর্জ শব্দ করল। একজন তরুণ, চোখে চশমা। দরজা খুলল।

ক্ষমা করবেন, জর্জ বলল। আমার মনে হল আমার পিসতুতো বোন এক্ষুনি এখানে ঢুকল।

ঢুকে পড়ল জর্জ।

সে বলল, হ্যালো সুসান।

একটা প্যাকিং বাক্সের উপর সুসান দাঁড়িয়েছিল।

হ্যালো জর্জ, তুমি কোত্থেকে এলে?

আমি তোমার পেছনটা দেখে চিনে ফেলেছি।

তাহলে পেছন দিকের একটা বৈশিষ্ট্য থাকে।

জর্জ বলল, এই খালি দোকানটাতে খুন হলে কেমন হত। রাস্তার লোকেরা ভেতর দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখত একটা সুন্দরী লাশকে।

আমাকে খুন করার তোমার কোনো প্রয়োজন নেই। মামার এস্টেটের চতুর্থ অংশ আমি পেয়ে যাব। কারুর খুব টাকার আকাঙ্খা থাকলে এই কারণেই খুন করতে পারে।

বসে পড়ে একটা সিগারেট ধরাল সুসান।

মামার সম্পত্তির টাকার ভাগ তোমার খুব দরকার তাই না?

আজকাল কেউ বলতে পারবে না ওর টাকার দরকার নেই।

জর্জ বলল, তুমি দোকানটা ব্যবসার জন্য নিচ্ছ নাকি?

আমি পুরো বাড়িটা কিনব। উপরের ফ্ল্যাট দুটো সহ।

টাকা থাকলে ভালো লাগে, তাই না?

হ্যাঁ, আমার পক্ষে ভালো, আমার প্রার্থনায় দয়া করেছেন।

প্রার্থনায় কি বৃদ্ধ আত্মীয়কে মারা যায়?

সুসান কথাটাই গুরুত্ব দিল না।

জর্জ বলল, এখানে বেশ ভালো ব্যবসা করতে পারবে। হা, সুসান তুমি সফল হবে, ব্যবসাটার কথাটা কি অনেকদিন ধরে মাথায় ঘুরছিল?

হা এক বছরের বেশি।

রিচার্ড মামাকে বলনি কেন? তিনি সাহায্য করতেন।

আমি বলেছিলাম।

তিনি ব্যবসাটার ভবিষ্যৎ বুঝতে পারেননি।

সুসান কিছু বলল না।

জিজ্ঞেস করল জর্জ, গ্রেগ তার এখনকার কাজ ছেড়ে দেবে?

হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। আমরা নিজেরাই পেছনের দিকে একটা ল্যাবরেটরি করব এবং ফেস ক্রিমের ফরমূলা নিজেরাই তৈরি করব।

জর্জ বলল, তোমার মধ্যেই এবারেনথীদের গুণের সমাবেশ ঘটেছে। তুমি মেয়ে হয়ে গেলে। যদি ছেলে হতে তাহলে সব সম্পত্তিটাই বাগাতে পারতে।

সুসান বলল, তা বোধহয় হত। একটু থেমে আবার বলতে লাগল : উনি গ্রেগকে পছন্দ করেননি।

ওহ জর্জ ভুরু তুলে বলল, তার ভুল হয়েছে।

হ্যাঁ।

যা হোক তোমার সময় ভালোই যাচ্ছে, সবই প্ল্যানমত হয়ে যাচ্ছে।

প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে বলল : আচ্ছা তুমি হেলেনের কাছ থেকে কোনো চিঠি পেয়েছ নাকি? এণ্ডারবি সম্বন্ধে?

হ্যাঁ, আজ সকালে, তুমি পেয়েছ?

হ্যাঁ, কি করছ এ ব্যাপারে।

আমি ভেবেছি পরের উইকএণ্ডে যাব। যদি সবার সুবিধে হয়। হেলেন সবাইকে ডেকেছে।

জর্জ হাসল।

অথবা একজন অন্যজনের চেয়ে দামী কোনো আসবাব নিয়ে নেবে।

সুসানও হাসল।

আমি ওখান থেকে কিছু আসবাব আনব। আমাদের বংশের কিছু স্মৃতি। তুমি ওখানে যাবে তো?

আমি সেখানে গিয়ে ভাগাভাগি দেখব, আর কিছু না?

জর্জ বলল, তুমি যে সবুজ স্যালাটীট টেবিলটা নেবে বলেছিলে। রোজামণ্ড ওটা চাইতে পারে স্টেজ সেটের জন্য।

সুসান বিরক্ত হল।

তুমি এর মধ্যে রোজামণ্ডকে দেখছ?

অন্ত্যেষ্টির পর আমি আর সেই সুন্দরী পিসতুতো বোনকে দেখিনি।

আমি ওকে দুএকবার দেখেছি–কেমন অস্বাভাবিক।

কেন কি ব্যাপার?

না, ওকে একটু কেমন হতাশ মনে হয়।

বেচারা সুন্দরী রোজামণ্ড।

তবে সবাই যতটা ভাবে রোজামণ্ড ততটা বোকা নয়। কোনো কোনো সময় তুমি যা লক্ষ্য করবে না, ও তা লক্ষ্য করবে।

আমাদের আন্ট কোরার মত

হা….

কোরা ল্যান্স কোয়েনেটের প্রসঙ্গ ওঠার পর সাময়িক অস্বস্তির মধ্যে দুজনে পড়ল।

তারপর জর্জ বলল : কোরা ল্যান্স কোয়েনেটের সেই সঙ্গীর খবর কি? ওর জন্য কিছু একটা করা দরকার।

কি বলতে চাইছ?

আমি বলছিলাম কোরার সঙ্গীর পক্ষে আর কোনো কাজ খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে।

এ ভাবনা তোমার মাথায় এসেছে?

হ্যাঁ, লোকে ভীষণ কুসংস্কারে বিশ্বাস করে। সবাই জানে এই মহিলা একটা কুড়ুল দিয়ে কাউকে খুন করতে পারে না। তবুও এটা শোনার পর ওকে কেউ কাজ দিতে চাইবে না।

তোমার মাথায় এসব চিন্তা এল কেন? তুমি এসব জানলে কি করে?

জর্জ বলল, তুমি ভুলে যাচ্ছ আমি একজন ল-ইয়ার। আমি লোকের অনেক অযৌক্তিক দিক জানি। ভদ্রমহিলাকে কিছু ভাতা দেওয়া দরকার। অথবা উনি যদি পারেন কোনো অফিসে কাজ জুটিয়ে দেওয়া উচিত। আমার মনে হয় মহিলার সাথে সম্পর্ক রাখা দরকার।

ভেবো না জর্জ, সুসানের গলাও শুকনো। আমিও এইরকম কথা ভেবে ওকে টিমোথির বাড়িতে কাজে লাগিয়ে দিয়েছি।

অবাক হল জর্জ।

সুসান এটা কি ঠিক হল?

এই মুহূর্তে এটাই সবচেয়ে ভালো কাজ মনে হয়। ওর দিকে উৎসুক্যের দৃষ্টিতে তাকান জর্জ।

তুমি নিজের সম্পর্কে খুব আত্মবিশ্বাসী, তাই না সুসান? তুমি জান তুমি কি করছ, এবং কখনো নিজের কাজের অনুশোচনা কর না।

হাল্কাভাবে সুসান বলল : অনুশোচনা মানে সময় নষ্ট।

.

সপ্তদশ পরিচ্ছেদ

০১.

রোজামণ্ডের দিকে চিঠিটা মাইকেল ফেলে দিল।

কি সম্বন্ধে?

আমরা যাবো, তাই তো?

আস্তে আস্তে মাইকেল বলল।

যাওয়া যেতে পারে।

গয়না-টয়না থাকতে পারে–অবশ্য ও বাড়ির সব কিছুই অনেক পুরনো।

হ্যাঁ, মিউজিয়ামের জিনিসপত্র, আমি বসার ঘরের দু-একটা স্কেচ নেব, আমাদের নাটকের কাজে লাগতে পারে।

উঠে দাঁড়িয়ে সে ঘড়ি দেখল।

আমাকে এখন রোজনহেমের সাথে দেখা করতে হবে। আমার ফিরতে দেরি হবে। অস্কারের সাথে ডিনার খেয়ে নেব, আমেরিকার অফারের কথা আমাদের আলোচনা করে দেখতে হবে।

অস্কারকে আমার শুভেচ্ছা জানিও, সে এতদিন পরে তোমায় দেখে নিশ্চয়ই খুশী হবে?

এতদিন পরে মানে। সবাই ভাববে আমাকে যেন মাসখানেক ধরে দেখা যায়নি।

হা, তোমায় দেখা যায়নি তো? রোজামণ্ড বলল : আমাকে দেখা গেছে। আমরা সপ্তাখানেক আগে একসাথে লাঞ্চ খেয়েছি।

ও হয়ত সেকথা ভুলে গেছে। সে পরশুদিন ফোন করে বলল যে তোমাকে টিলি লুকস ওয়েস্ট প্রথম রাত থেকে সে তোমায় দেখেনি।

এই পাগলটা নিশ্চয়ই তার মাথা হারিয়েছে। মাইকেল হাসল। তার বড় বড় নীল চোখে তাকিয়েছিল রোজামণ্ড। কোনো অবেগ ছিল না চোখে।

তুমি ভাব আমি একটা পাগল?

প্রতিবাদ করল মাইকেল।

না না, তা কেন ভাবব!

হ্যাঁ, তুমি ভাব, আমি একেবারে বন্ধু নই।

আমি বলছি আমি জানি তুমি কোথায় ছিলে….।

মাইকেল রোজামণ্ডের দিকে তাকাল।

মাইকেল বলল : আমি জানি না তুমি কি বলতে চাইছ।

আমাকে ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যে কথা বলে বোকামো কর।

দেখ রোজামণ্ড।

মাইকেল স্ত্রীর কথায় হতভম্ব হয়ে গেল।

আমরা এই নাটকটা করতে চাই তাই তো?

হ্যাঁ, এইরকম একটা পার্ট আমি সবসময় চেয়েছি।

হা, তাই আমি বলছি।

তাহলে তুমি কি বলছ?

এতে অনেক টাকা খরচ হবে, এত ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না।

সে স্ত্রীকে বলল : টাকাটা তোমার আমি তা জানি। যদি তুমি ঝুঁকি নিতে না চাও।

ডার্লিং টাকাটা আমাদের।

শোন ডার্লিং, ইলিন পার্টটায় ভালো অভিনয় করতে হবে।

রোজামণ্ড হাসল।

আমি পার্টটা করতে চাই।

হতভম্ব হল মাইকেল। তোমার মাথায় কি ভর করল?

কিছুই ভর করেনি।

না না, তুমি এখন পাল্টে গেছ, মেজাজী নার্ভাস, কিন্তু কেন?

কিছু না, আমি একটু সাবধানী হতে চাই মাইক।

কিসে সাবধান হবে। আমি সবসময় সাবধানে থাকি।

না তুমি থাক না। তুমি সেদিন অস্কারের কাছে বোকামো করেছ।

রেগে গেল মাইকেল।

আর তোমার ব্যাপার কি? তুমি যেদিন বললে জেনের সাথে কেনাকাটা করতে যাচ্ছ। তুমি যাওনি।

হ্যাঁ, ওটাও বোকামো হয়েছে আমি একটু রিজেন্ট পার্কে গেছিলাম।

রিজেন্ট পার্ক? তুমি কোনো দিন রিজেন্ট পার্কে বেড়াতে যাও না। কেন গেছিলে? তোমার কি কোনো বয়ফ্রেণ্ড হয়েছে। তুমি এখন সবকিছু করতে পার। তুমি এখন অনেক পাল্টে গেছ। কিন্তু কেন?

আমি ভাবছি কি করা যায়…।

টেবিলটা অতিক্রম করে মাইকেল রোজামণ্ডের কাছে এসে আবেগের গলায় বলল : ডার্লিং তুমি জান আমি তোমায় পাগলের মত ভালোবাসি। জড়িয়ে ধরল মাইকেল।

আমি যাই করি না, তুমি সবসময় আমায় ক্ষমা করেছ, করনি; মাইকেল জিজ্ঞেস করল।

হ্যাঁ, করেছি কিন্তু সেদিন আর নেই। এখন আমাকে ভাবতে হবে, প্ল্যান করতে হবে।

কি ভাববে কি প্ল্যান করবে?

বিরক্ত হয়ে বলল রোজামণ্ড : তুমি যা করে ফেলছ তার এখনো শেষ হয়নি। আমরা শুরু করতে যাচ্ছি, পরবর্তী কথা আমাদের ভাবতে হবে না। কোনোটা গুরুত্বপূর্ণ আর কোনোটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।

রোজামণ্ড…।

সে বলল, তার দৃষ্টি চলে গেছে দূরে যার মধ্যে মাইকেল নেই।

তুমি কি ভাবছিলে?

ভাবছিলাম লীচেট সেন্ট মেরীতে যাবো কিনা? গিয়ে আন্ট কোরার সঙ্গী সেই মহিলার সাথে দেখা করতাম।

কিন্তু কেন?

সে ইতিমধ্যেই কোথাও চলে যাবে। কোনো আত্মীয়-টাত্মীয়ের কাছে। একটা কথা জিজ্ঞেস না করা পর্যন্ত ওকে যেতে দেবো না।

কি জিজ্ঞেস করবে?

জিজ্ঞেস করব কে কোরাকে মারল?

মাইকেল তাকাল।

তুমি বলছ সে খুনীকে জানে?

রোজমণ্ড বলল : আমি তাই আশা করি, সে ওখানে থাকত।

জানলে পুলিশের কাছেই বলত।

আহা সে এভাবে জানে তা বলছি না, সে বোধহয় নিশ্চিত কারুর সম্বন্ধে। কারণ আঙ্কল রিচার্ড ওখানে গিয়ে কিছু বলে এসেছে। তুমি জান তিনি ওখানে গেছিলেন, সুসান আমাকে বলল।

কিন্তু তিনি কি বলেছিলেন সে হয়ত শোনেইনি।

না না শুনেছে, তার কথা শুনে মনে হচ্ছিল।

হতে পারে না, রিচার্ড এবারেনথী কোনোদিন বাইরের লোকের সামনে ফেমিলির কারুর উপরে সন্দেহের কথা বলবেন না।

সে হয়ত দরজার বাইরে থেকে শুনেছে।

আড়িপাতার কথা বলছ।

হা তাই, এবং সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।

ওর দিকে মাইকেল হতাশার দৃষ্টিতে তাকাল।

তুমি করবে?

না না, আমি কোনোদিন গ্রামে গিয়ে কারুর সঙ্গী হতে পারব না। তার চেয়ে আমি মরে যাব।

আমি বলছি তুমি চিঠি পড়তে আর ঐসব। শান্তভাবে রোজামণ্ড বলল : যদি আমি কিছু জানতে চাইতাম তাহলে পড়তাম। সবাই পড়ে, পড়ে না?

স্বামীর দিকে রোজামণ্ড তাকাল।

আমি জানি গিলফ্রিস্ট কৌতূহলের বশে চিঠি পড়ত ও কথা শুনত। আমি নিশ্চিত, সে জানে।

ধরা গলায় মাইকেল বলল : কোরাকে কে খুন করেছে বলে তোমার মনে হয়? আর বৃদ্ধ রিচার্ডকে?

আবার রোজামণ্ড তার দিকে তাকাল।

ডার্লিং অবান্তর কথা বোল না- আমি যতটা জানি, তুমিও জান, তবে সেটা উল্লেখ করার জন্য শক্ত নার্ভের দরকার। তাই আমরা করি না।

.

অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ

০১.

এরকুল পোয়ারো লাইব্রেরীর ঘরে আগুনের পাশে বসে সমবেত আত্মীয়দের দেখছিলেন।

সুসানের ওপর তার চোখ। তারপর তিনি তাকালেন জর্জ ক্রসফিল্ডের দিকে, নিজেকে নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট রোজামণ্ডের সাথে কথা বলছিল। তারপর মাইকেলের দিকে, চেহারায় সেই একই আকর্ষণ মাইকেলের। তারপর হেলেনের দিকে–একটু অন্যমনস্ক। তারপর টিমোথির দিকে, তার পাশে মড শক্ত চেহারা, স্বামীর চিরসঙ্গী। এর বাইরে গিলফ্রিস্ট বসে আছে মুখে অপরাধী অপরাধী ভাব।

তিনি একসাথে চেয়েছিলেন ওদের, একসাথে এক জায়গায় পেয়েছেন। তিনি এবার কি করবেন?

তিনি এবার এই কাজ নেওয়ার জন্য একটু অসন্তুষ্টি অনুভব করলেন, কি জন্য? এটা কি হেলেন এবারেনথীর প্রভাব? হেলেন রিচার্ডের মৃত্যুর ব্যাপারে ঠিক জল ঘোলা করতে ইচ্ছুক নয়। এ ব্যাপারটা চাপা পড়ে থাক হেলেন চাইছিল। এই চাওয়ার একটা মানে আছে। কিন্তু তার নিজের মন যেন একমত হচ্ছে তার মনোভাবের সাথে?

আত্মীয়দের সম্বন্ধে মিঃ অ্যান্টহুইসল বেশ প্রশংসনীয় বর্ণনা দিয়েছেন।

পোয়ারো চেয়েছিলেন তার সামনে এদের এনে বুঝতে পারবেন কে এই কাজটা করেছে। যেমন শিল্পীরা কোনো শিল্পী দেখে বুঝতে পারে এ শিল্পী। তেমনি তিনিও ভেবেছিলেন এদের মধ্যে অপরাধীকে চিনতে পারবেন।

ব্যাপরটা কিন্তু অত সহজ নয়।

কারণ তিনি খুনীর তালিকা থেকে এদের সবাইকে বাদ দিতে পারবেন না। যেমন আটকে পড়া ইঁদুর হিংস্র হয়ে ওঠে, সেই ভাবে জর্জ খুন করতে পারে। শান্তভাবে দক্ষ হাতে খুন করতে পারে সুসান তার ভবিষ্যতের প্ল্যান সফল করার জন্য। গ্রেগরি শান্তি চায়, শান্তি পাওয়ার জন্য খুন করতে পারে। মাইকেলের ভবিষ্যত কল্পনার জন্য। রোজামণ্ড কারণ তার জীবন দর্শন ভীষণভাবে সোজা। টিমোথি তার ভাইকে হিংসে করত। এবং তার ভাইয়ের অর্থ ও ক্ষমতার লোভের জন্য, মড? কারণ তার ছেলে হচ্ছে টিমোথি। সে ছেলের জন্য সবকিছু করতে পারে। এমনকি গিলফ্রিস্ট পর্যন্ত খুন করতে পারে যদি চায়ের দোকান আবার ফিরে পাওয়ার কোনো সুযোগ থাকে।

খুনী ভাবা যায় না হেলেনকে। ভদ্র, শান্ত এবং তার স্বামী রিচার্ডকে খুব ভালোবাসত।

নিঃশ্বাস ফেলল পোয়ারো। সত্যে পৌঁছবার কোনো সোজা রাস্তা নেই।

পোয়ারো বলল, আমি একটা গাড়ীর জানলা থেকে দেখছি তুমি গ্যারেজের একটা মেকানিকের সাথে কথা বলছিলে। তুমি আমায় দেখনি।

গারেজে কখন? কোথায়?

ঠিক এক সপ্তাহ আগে, পোয়ারো ভালোভাবেই কিংস আর্মের গ্যারেজের কথা মনে ছিল তবুও বলল : ঠিক কোথায় বলতে পারছি না।

আপনার রিফিউজিদের জন্য বাড়ি খুঁজেছিলেন?

হা, রিফিউজি বাড়ির জন্য অনেক জায়গা ঘুরতে হয়েছে।

একজন বিদেশীর কাছে বাড়িটা চলে যাচ্ছে তোমার খারাপ লাগছে না ম্যাডাম।

না না, সুসান বলল, আমার মনে হয় না এখানে কেউ থাকতে পারবে। এ বাড়িটা আমার কোনোদিনই পছন্দ হয়নি।

ম্যাডাম। তুমি নিজের একটা বাড়ির কথা ভাবছ, তাই না?

সুসান হাসল।

পোয়ারো বললেন : তুমি সফল হবে, তুমি এগিয়ে যাবে। তোমার ভাগ্য ভালো, তোমার টাকার চিন্তা নেই। অনেকের কাজ করার ক্ষমতা থাকলেও টাকার অভাবে কিছু করতে পারে না।

আমি তাতেও পিছিয়ে যেতাম না, আমার প্ল্যান সফল করায় ঠিক কাউকে যোগাড় করে নিতাম।

তোমার মামা রিচার্ড যার বাড়ি এটা, তিনি বেঁচে থাকলেও তোমায় সাহায্য করতেন।

না না করতেন না।

আচ্ছা তাই নাকি?

তরুণদের পথে বুড়োদের দাঁড়ানো উচিত না, ও করবেন।

পোয়ারো হেসে বলল, আমি বুড়ো তবে আমি তরুণের পথে দাঁড়াই না, আমরা মৃত্যুর জন্য কেউ বসে থাকেনি।

উঃ, কি মারাত্মক কথা।

কিন্তু ম্যাডাম তুমি তো বাস্তববাদী। ওরা বসে আছে বৃদ্ধদের মৃত্যুর আশায়, সে মৃত্যু তাদের বড়লোক করবে না, কিন্তু সুযোগ করে দেবে।

হা সুযোগ, সুযোগই দরকার হয়, সুসান বলল।

পোয়ারো বলল : হা, সুযোগকে দুহাত দিয়ে কাজে লাগাতে হয়।

পোয়ারো গ্রেগরী ব্যাঙ্কের সাথে কথা বললেন, রঙের গন্ধ থেকে এখানে চলে এসেছেন, তাতে খুব ভালো হয়েছে বললেন। মড গিলফ্রিস্টের কথা বললেন, একটা বাড়িতে থাকতে ও নার্ভ পেল না বললেন।

আমার মনে হয় এটা দেরী করে আসা আঘাত।

সম্ভবতঃ।

যুদ্ধের সময় একটা বোমা আমাদের বাড়ি থেকে মাইলখানেক দূরে পড়েছিল, আমার মনে পড়ে টিমোথি।

টিমোথি থেকে পোয়ারো প্রসঙ্গ পরিবর্তন করল।

ঐ দিনে বিশেষ কিছু ঘটেছিল? জিজ্ঞাসা করলেন তিনি।

ঐ দিনে? কোনো দিনে?

যেদিন মিসেস গিলফ্রিস্ট ভয় পেয়েছিলেন।

না, বোধহয় লীচেট সেন্ট মেরী থেকে আসার পর থেকেই ভয় পেতে আরম্ভ করেছে। লীচেট সেন্ট মেরীতেও ভয় পেত না।

বিষাক্ত ওয়েডিং কেক, তারপরে যে ভয় পাবে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

ও ঐ বাড়িতে কিছুতে ভয় পেয়েছে? ও কি নিজে জানে কিসে ভয় পেয়েছে?

পোয়ারো গিলফ্রিস্ট কে একা পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন।

ঐ বীভৎস খুনের সময় তুমি ও বাড়িতে ছিলে?

হ্যাঁ ছিলাম, মাপ করবেন, ও ব্যাপারে কথা বলতে আমার ইচ্ছে করে না।

বুঝতে পারছি।

মন দিয়ে পোয়ারো তার কথা শুনতে লাগলেন, তার কথা শেষ হতে সাবধানে পোয়ারো বললেন : তুমি কটেজে একা না থেকে ভালো করেছ।

আমি তা করতে পারতাম না মিঃ পনটার্লিয়ার।

না, আমি শুনলাম তুমি মিঃ টিমোথির বাড়িতে একা থাকতেও চাওনি?

অপরাধী দেখাল গিলফ্রিস্টকে।

আমি ভীষণ লজ্জিত। কিন্তু কেন জানি না আমি ভীষণ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম।

কিন্তু কেন? জানা দরকার–তুমি সবেমাত্র বিষ দিয়ে খুনের চেষ্টা থেকে বেঁচে গেছ।

গিলফ্রিস্ট বললেন, জানি না কে আমায় বিষ দিতে চেয়েছিল।

নিশ্চয়ই ঐ খুনীটা ভেবেছে তুমি এমন কিছু জান যা পুলিশ জানতে পারলে ওর বিপদ হবে।

কিন্তু আমি কি জানি? কোনো নৃশংস ভবঘুরে অথবা কোনো অর্ধোস্পদ।

যদি ভবঘুরে হয়, তাহলে আমার মনে হয় না।

প্লীজ মিঃ পনটার্লিয়ার, হঠাৎ অস্বাভাবিক হল গিলক্রিস্ট, ওরকম কথা বলবেন না। আমি বিশ্বাস করি না।

কি বিশ্বাস কর না?

আমি বিশ্বাস করি না যে এটা—

কথা থামিয়ে ইতস্ততঃ করল।

তুমি কিছু একটা বিশ্বাস কর।

না না, আমি করি না, করি না।

আমার বিশ্বাস তুমি কর, তাই তুমি ভয় পাও, এখনও ভয় পাচ্ছ।

না না এখানে ভয়ের কিছু নেই। এত লোজন এবং সবাই বেশ ভালো।

আমার কৌতূহলকে ক্ষমা করবেন। আমি বুড়ো লোক আমার কৌতূহল একটু বেশি। আমার মনে হয় স্ট্যানসফিল্ড গ্রেঞ্জে তুমি এমন কিছু দেখেছ যা তোমায় ভয় পাইয়ে দিয়েছে, ডাক্তাররা আজকাল অর্ধচেতন মনকে খুব গুরুত্ব দেন।

হ্যাঁ, হ্যাঁ, তা বোধহয় দেন।

আমার ধারণা তোমার অন্তনিহিত ভয় কোনো একটা ছোট ঘটনা দেখার পর বাস্তবে রূপ নিয়েছে।

গিলফ্রিস্ট কথাটা লুফে নিল।

আপনি ঠিক কথা বলেছেন, সে বলল।

তাহলে তোমার মতে এই ব্যাপারটা কি?

এক মুহূর্ত ভাবল মিস গিলফ্রিস্ট তারপর বলল : আমার মনে হয় মিঃ পনটার্লিয়ার এটা সেই নান।

পোয়ারো কথাটা বোঝার আগেই সুসান তার স্বামী এবং হেলেন এল।

নান ভাবতে লাগলো পোয়ারো।

সে সন্ধ্যের দিকে নানের কথাটা নিয়ে আলোচনা করবে ভাবল।

.

ঊনবিংশ পরিচ্ছেদ

০১.

খুব পরিচিত হয়ে গেলেন মিঃ পনটার্লিয়ার। পনটার্লিয়ারকে সবাই মেনে নিয়েছে। সাধারণের ধারণা হল এই বিদেশীকে–এই উইকএণ্ডে আসতে বলেনি। কিন্তু যখন এসেই গেছে ওর সাথে মানিয়ে নিতে হবে। কফি খেতে খেতে পোয়ারো ওদের কথাবার্তা শুনছিল।

টিমোথি বলছিল, আমাদের কোনো বাচ্চা নেই। সুতরাং আর বেশি জিনিসপত্র দিয়ে বোঝা বাড়ানো ঠিক না। তবে পারিবারিক কারণে আমি পুরোনো ডেসার্ট সারভিসটা নিয়ে যাব।

আপনি দেরী করে ফেলেছেন মামা, জর্জ বলল। আমি ওটা আজ সকালেই হেলেনকে আমাদের জন্য রেখে দিতে বলেছি।

না তা হবে না, টিমোথি গজরালেন। মড এবার অংশ নিলেন।

প্লীজ জর্জ, তোমার মামার সাথে কথা কাটাকাটি কোর না। ওর হার্ট খুব দুর্বল। ও যদি স্পোডঠা চায় তাহলে ওটা ওই পাবে। ও বংশের সবার চেয়ে বয়সে বড়। বেছে বেছে নেওয়ার অধিকার ও আগে পাবে।

ও জিনিসটা কিন্তু বাজে দেখতে, সুসান বলল।

চুপ কর সুসান, টিমোথি বলল।

হেলেন বলল, তুমি ওটা তোমার মামাকে দিয়ে দাও জর্জ।

এটা তোমার পক্ষে সম্মানের হবে।

জর্জ মাথা নিচু করে বলল, তোমার ইচ্ছেই আইন। আন্ট হেলেন, আমি আমার দাবী তুলে নিচ্ছি।

তাহলে তুমি চাও না। হেলেন বলল।

জর্জ হেলেনের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাসল। তোমাকে যতটা চালাক মনে হয় তুমি তার চেয়েও বেশি চালাক। টিমোথি আঙ্কল ডেটা আপনার। আমি একটু মজা করছিলাম।

শরীর খারাপের জন্য আমি অন্ত্যেষ্টিতে আসতে পারিনি। আস্তে আস্তে টিমোথি বলছিলেন, তবে মড আমাকে বলেছে কোরা কি বলেছে। কোরা সবসময় বোকার মত কথা বলে। তবে এই কথাটার অর্থ ছিল মনে হয় এবং যদি কথাটা সত্যি হয়, তবে আমি জানি কাকে আমি সন্দেহ করব।

টিমোথি ঝড়ের গলায় কঠিন কর্তৃত্বের সুর। আজকে তুমি খুব বাড়াবাড়ি করছ। তোমার স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা কর।

সবার দিকে চোখ বুলিয়ে নিয়ে মড় ঘরে টিমোথির হাত ধরে বেরিয়ে গেল।

জর্জ নীরবতা ভাঙল ওরা চলে যাওয়ার পর।

গিলফ্রিস্ট এসে আবার অস্থিরতার সাথে বলল, মিসেস এবারেনথী খুব দয়ালু।

ব্যর্থ হল মন্তব্যটা।

হঠাৎ মাইকেল শেন বলল, আমি বেশ উপভোগ করছিলাম। এবার আমাদের দাবীটা পেশ করি। রোজামণ্ড এবং আমি বসার ঘরের স্যালাটীট টেবিলটা চাই।

না না, সুসান চেঁচিয়ে উঠল, আমি ওটা নেব।

এদিকে আবার আরম্ভ হয়েছে। জর্জ সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে বলল।

না আমরা রাগারাগি করব না, সুসান বলল।

আমার এটা দরকার কারণ এটা আমার বিউটি সপে লাগবে। স্যালাটীট টেবিল সাধারণতঃ পাওয়া যায় না।

এই জন্যই ওটা আমাদের দরকার, রোজামণ্ড বলল।

বুঝলাম, সুসান বলল, আমার মত তোমাদের দরকার নেই।

গ্রেগ নার্ভাস গলায় বলল : সুসান ঐ টেবিলটা চায়।

একটা অস্বস্তিকর নীরবতা নেমে এল।

তাড়াতাড়ি হেলেনে বলল : জর্জ তুমি স্পেড় ছাড়া কি চাও?

জর্জ হাসল।

আমার কোনো জিনিসে লোভ নেই। যাক টেবিলের যুদ্ধ আজকের মত থাক। আমি সুন্দরী সুসানের পক্ষ নিলাম।

ইচ্ছাকৃতভাবে হেলেন প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য বিদেশী অতিথির দিকে ঘুরল।

মিঃ পনটার্লিয়ার এসব নিশ্চয়ই আমার ভালো লাগছে না। আদৌ না এই সাংবাদিক অধিবেশনে উপস্থিত থাকতে পেয়ে আমি সম্মানিত। পোয়ারো মাথা নিচু করলেন। তবে বাড়িটা আপনাদের হাত থেকে একজন বিদেশীর কাছে চলে যাচ্ছে তাতে আমি দুঃখিত।

না আমাদের বিশেষ দুঃখ নেই, সুসান বলল। পোয়ারো বললেন, বাড়িটাকে ধর্মশালা করলে কেমন হয়? মিস্ গিলফ্রিস্ট তুমি তো নানদের পছন্দ করো না?

না না, তা ঠিক নয়। ওরা স্বার্থহীন মহিলা। ওদের এত একরকম দেখতে হয়, গিলফ্রিস্ট বলল। মিঃ এবারেনথীর বাড়িতে একজন নান চাঁদা নিতে এসেছিল, আমি ওকে দেখে চমকে উঠেছিলাম। লীচেট সেন্ট মেরীতে মিসেস ল্যান্স-কোয়েনেটর মৃত্যুর যেদিন তদন্ত হল সেদিন এক নান এসেছিল ঠিক তার মত। কেন সে আমাকে অনুসরণ করে বেড়াচ্ছে।

আমি ভাবতাম দুজন নান একসাথে চাদা তোলে, জর্জ বলল।

না না, একজন মাত্র নান এসেছিলেন, গিলফ্রিস্ট বলল।

আবার বলল : নিশ্চয়ই ইনি সেই একই নান নন, কিন্তু দুজনেরই একই রকম চেহারা? পোয়ারোর গলায় কৌতূহল।

পোয়ারোর দিকে গিলক্রিস্ট তাকাল।

হ্যাঁ প্রায়, উপরের ঠোঁটে দুজনেরই গোঁফের মত ছিল। আমি সত্যি ভয় পেয়ে গেছিলাম। তবে এরকম ভাবনা সম্পূর্ণ বোকামীর লক্ষণ আমি পরে বুঝতে পেরেছিলাম।

সত্যি ব্যাপারটা হল; জর্জ বলল, কেউ কারুর দিকে মনযোগ দিয়ে তাকায় না। তাই কোর্টে সাক্ষীরা একই লোকের বিভিন্ন বর্ণনা দেয়। ঐ ঠিক বর্ণনাকারী লোককে বেছে নেওয়া মুশকিল।

ম্যাডাম গুডনাইট, কাল সকালের ট্রেনেই চলে যাব। আপনার আদর আপ্যায়নের জন্য অনেক ধন্যবাদ। বাড়ি হস্তান্তরের দিন মিঃ অ্যান্টহুইসলের সাথে ঠিক করে নেওয়া যাবে। অবশ্য আমাদের সুবিধে অনুযায়ী।

আপনি ইচ্ছে করলে ওটা যে কোনো মুহূর্তে করে দেওয়া হবে মিঃ পনটার্লিয়ার। আমি যেজন্য এখানে এসেছিলাম সব হয়ে গেছে।

আপনি এবার আপনার সাইপ্রেসের ভিলায় ফিরে যাবেন?

হা, হেলেনের মুখে একটা মৃদু হাসি ফুটল।

পোয়ারো বললেন : আপনি খুশী তো? কোনো অনুশোচনা নেই?

হা হা, অতীতের সাথে জড়িয়ে থেকে কোনো লাভ নেই। অতীতকে পেছনে ফেলে যেতেই হয়।

অনিশ্চিতভাবে সুসান হাসল। পোয়ারো বললেন : আমি আন্তরিক ভাবেই বলছি।

তাহলে আপনি বলতে চাইছেন মাইকেল, আপনার রিফিউজিরা যখন এখানে বসবাস করবে তখনও তাদের অতীত দুঃখ কষ্টকে সারাতে পারবে না?

আমি রিফিউজিদের কথা বলিনি।

রোজামণ্ড বলল, তিনি আঙ্কল রিচার্ড, আন্ট কোরা, কুড়ুল খুন এসব বলতে চাইছেন।

পোয়ারোর দিকে ঘুরে সে জিজ্ঞেস করল : ঠিক বলিনি?

পোয়ারো বললেন, তোমার একথা মনে হল কেন?

কারণ আপনি একজন রহস্য সন্ধানী, তাই না? সেইজন্যই আপনি এখানে এসেছেন, আপনি ঐসব রিফিউজিদের কথা বলেছেন, ওসব ভুয়ো ব্যাপার।

.

বিংশ পরিচ্ছেদ

০১.

পোয়ারো রোজামণ্ডের দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন। পোয়ারো বললেন, ম্যাডাম তোমার অনুমানশক্তির প্রশংসা করছি।

রোজামণ্ড বলল, একবার এক রেস্তোঁরার একজন আপনাকে চিনিয়ে দিয়েছিল।

কিন্তু তুমি এখনও তা বলনি! পোয়ারো তার চোখটা মাইকেলের উপর রাখলেন।

সবার মুখের ভাব এই পরিস্থিতিতে অস্বাভাবিক নয়। তার মনে হচ্ছিল যে মুহূর্তে রোজামণ্ডের মুখ থেকে রহস্যসন্ধানী কথাটা বেরিয়েছিল, সেই মুহূর্তে মুখের ভাবগুলো দেখলে ভালো হত।

তিনি ওদের উদ্দেশ্যে বোকার কথা বললেন। আর বিদেশী টান ছিল না তার কথায়।

হ্যাঁ, উনি বললেন, আমি একজন রহস্যসন্ধানী।

জর্জ জিজ্ঞেস করল, আপনাকে কে পাঠিয়েছে?

আমাকে রিচার্ড এবারেনথীর মৃত্যু সংক্রান্ত বিষয়ে অনুসন্ধান করার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে।

কে নিযুক্ত করেছে?

এই মুহূর্তে সেটা কোনো ব্যাপার নয়। যদি নিঃসন্দেহে প্রমাণ করা যায় যে, রিচার্ড এবারেনথীর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে তাহলে সেটা আপনাদের পক্ষে স্বস্তির কারণ হবে না কি?

তিনি স্বাভাবিক ভাবেই মারা গেছেন। অন্যরকম কে বলে?

কোরা ল্যান্স কোয়েনেট এইরকম কথা বলেছিলেন, এবং উনি নিজেই মারা গেছেন।

সে সেই কথাটা এই ঘরে বলেছিল, সুসান বলল, তবে আমার মনে হয়নি।

তোমার মনে হয়নি নাকি? জর্জ ক্রসফিল্ড তার শ্লেষাত্মক দৃষ্টি ঘোরালো সুসানের দিকে। আর কেন ভান করছ? মিঃ পনটার্লিয়ারের সামনে?

ওঁর নাম পনটার্লিয়ার নয়, হারকিউলিস না কি যেন, রোজামণ্ড বলল।

এরকুল পোয়ারো।

আপনি কোনো সিদ্ধান্তে এলেন জানতে পারি কি? জিজ্ঞেস করল জর্জ।

উনি তোমায় বলবেন না ডার্লিং, রোজামণ্ড বলল, বললেও তা সত্যি হবে না।

.

০২.

পোয়ারো ঐ রাতে ঘুমাতে পারলেন না। কোনো কোনো সময় তন্দ্রার মত আসছিল, হঠাৎ কোনো চিন্তা এসে আবার ঘুম ভেঙে যাচ্ছিল। কোরার তেল রঙ-রঙ আর কোরা। তেল রঙের গন্ধ। কিছু একটা বলেছিলেন না অ্যান্টহুইসল। গোঁফওয়ালা নান। স্ট্যান্সফিল্ড গ্রেঞ্জ আর লীচেট সেন্ট মেরীতে। স্টেজের মধ্যে নানের সাথে রোজামণ্ড। ঐ কথাটা কোরা বলার সময় হেলেন কি অস্বাভাবিক অনুভব করেছিল? যখন তিনি ঐ কথাটা বলেছিলেন হেলেনের হাত থেকে ফুলদানীটা পড়ে গেল কেন?

তবে এখনও অনেক পথ বাকি।

মোজাইকের কক্ষগুলো তিনি পরীক্ষা করলেন।

মিঃ অ্যান্টহুইসল, রঙের গন্ধ। টিমোথির বাড়ি….এর মধ্যে নিশ্চয়ই আছে….মোমের ফুল হেলেন….ভাঙা কাঁচ।

.

০৩.

শুতে দেরী করল হেলেন। সে চিন্তা করছিল।

পোয়ারো এ বাড়িতে নিয়ে আসতে তার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু মিঃ অ্যান্টহুইসলের অনুরোধ এড়াতে পারল না। এখন সব প্রকাশ হয়ে গেল। রিচার্ড আরও কবরে শান্তিতে শুয়ে থাকতে পারল। এই কোরা কথাটা থেকে।

.

০৪.

মিস্ অ্যান্টহুইসলের আরামের ঘুম ভেঙে গেল ফোন বাজার শব্দে।

বিরক্ত মুখে উঠে বসার ঘরের দিকে চললেন মিস অ্যান্টহুইসল।

ফেনিংস্টন ৬৭৫৪৮৯ রিসিভার তুলে বললেন, আমি লিও এবারেনথী কথা বলছি।

ওহ, সুপ্রভাত, আমি মিস অ্যান্টহুইসল, আমার ভাই এখনও ঘুমোচ্ছে।

দুঃখিত, খুব দরকার, আপনার ভায়ের সাথে এক্ষুনি কথা বলতে হবে।

তিনি ভায়ের ঘরে ঢুকলেন।

সেই এবারেনথী।

মিসেস লিও এবারেনথী, এই সাত সকালে।

মিসেস লিও নাকি? আমার ড্রেসিং গাউনটা কোথায়?

এখন তিনি বলছিলেন।

অ্যান্টহুইসল বলছি, হেলেন নাকি? তোমার মনে পড়েছে?

হেলেন বলল, হা, কিন্তু এর কোনো মানে খুঁজে পাচ্ছি না।

সেটা আমায় ভাবতে দাও, তুমি কারুর মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করেছিলে?

হ্যাঁ।

বল।

অবাস্তব মনে হচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত, গত রাতে আমি আয়নার সামনে বসে থাকার সময় মনে পড়ল…।

একটা ছোট আর্তনাদের সাথে একটা শব্দ ফোনে শোনা গেল, শব্দটা কি ঠিক বোঝা গেল না।

জোরে জোরে তিনি বলতে লাগলেন : হ্যালো, হ্যালো হেলেন, হ্যালো হেলেন কি হল….?

আমাদের আরও পোষ্ট দেখুনঃ

cropped Bangla Gurukul Logo জর্জ ক্রসফিল্ড রচনা -আফটার দি ফিউনারেল ( এরকুল পোয়ারো সমগ্র-আগাথা ক্রিস্টি রচনা সমগ্র ) [ অনুবাদ সাহিত্য ]

Leave a Comment