কানাহরি দত্ত (বা কানা হরিদত্ত) ছিলেন মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রাচীন কবি এবং মনসামঙ্গল কাব্যের আদি রচয়িতা হিসেবে পরিচিত। তাঁর রচনাসমূহের সম্পূর্ণ পাণ্ডুলিপি আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত না হলেও, তাঁর নাম ও কাব্যিক অবদান সম্পর্কে জানা যায় পরবর্তী কবিদের রচনার মাধ্যমে।
Table of Contents
জীবন ও সাহিত্যকর্ম
কানাহরি দত্তের জন্ম ও মৃত্যু সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। তবে ধারণা করা হয়, তিনি ১২শ থেকে ১৩শ শতকের মধ্যে পূর্ববঙ্গে (বর্তমান বাংলাদেশের ময়মনসিংহ অঞ্চলে) বাস করতেন। কবি বিজয় গুপ্ত তাঁর কাব্যে উল্লেখ করেছেন:
“প্রথমে রচিল গীত কানা হরিদত্ত”
এখানে “গীত” বলতে মনসামঙ্গল কাব্য বোঝানো হয়েছে। দীনেশচন্দ্র সেন তাঁর রচনায় “পদ্মার সর্প সজ্জা” নামে কিছু ছত্র কানাহরি দত্তের রচনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যদিও সম্পূর্ণ কাব্য আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

মনসামঙ্গল কাব্যে অবদান
মনসামঙ্গল কাব্য বাংলা সাহিত্যের মঙ্গলকাব্য ধারার অন্যতম প্রধান কাব্য। এই কাব্যের মূল উপজীব্য চাঁদ সদাগরের উপর দেবী মনসার অত্যাচার, চাঁদের পুত্র লখিন্দরের সর্পাঘাতে মৃত্যু ও পুত্রবধূ বেহুলার আত্মত্যাগের উপাখ্যান। এই কাব্যে সেযুগের হিন্দু বাঙালি সমাজের সমাজব্যবস্থা, অর্থনীতি, আচার-অনুষ্ঠান ইত্যাদি সম্পর্কে নানা অনুপূঙ্খ বর্ণনা পাওয়া যায়।
কানাহরি দত্তের রচনায় চাঁদ সদাগর, বেহুলা ও লখিন্দরের করুণ উপাখ্যানের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের দৈব লাঞ্ছনা ও সংগ্রামের চিত্র ফুটে উঠেছে। তাঁর কাব্যে লোকায়ত সমাজের চেতনা ও মানবিক আবেগের প্রকাশ দেখা যায়, যা পরবর্তী কবিদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে।
সাহিত্যিক প্রভাব ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব
যদিও কানাহরি দত্তের সম্পূর্ণ কাব্য আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি, তবে তাঁর নাম ও কাব্যিক অবদান বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। তাঁর রচনায় মধ্যযুগীয় বাংলার সমাজ, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতিফলন দেখা যায়, যা বাংলা সাহিত্যের বিকাশে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে।

আরও জানুন
কানাহরি দত্তের সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তাঁর রচনায় মানবিক আবেগ, সমাজের চিত্রায়ণ ও ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতিফলন দেখা যায়, যা বাংলা সাহিত্যের বিকাশে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে।