বর্ণনানুক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণনা পর্ব ৬ | ভাষাকোষ | শানজিদ অর্ণব

বর্ণনানুক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণনা পর্ব ৬ – হেরেরো (Herero): হেরেরো একটি বান্টু ভাষা। এ ভাষায় রয়েছে প্রায় এক লাখ তেত্রিশ হাজার বক্তা যারা ওভাহেরেরো নামে পরিচিত। বতসোয়ানা এবং নামিবিয়ার বিভিন্ন অংশে এ ভাষা ব্যবহৃত হয়।

বর্ণনানুক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণনা পর্ব ৬

হিলিগেনন (Hiligaynon)

এটি অস্ট্রোনেশীয় ভাষা পরিবারের ভিসায়ান (Visayan) গোষ্ঠীর সদস্য। ফিলিপাইনে এ ভাষার ১ কোটি ১০ লাখ বক্তা রয়েছেন যাদের মধ্যে ৭০ লাখের মাতৃভাষা এটি। লোইলো এবং নেগরোস অক্সিডেন্টাল নামে দুটি প্রদেশে এ বেশিরভাগ বাস করেন।

হিন্দি (Hindi)

হিন্দি একটি ইন্দো-আর্য ভাষা। প্রায় ৫০ কোটি মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এটি ভারতের অফিসিয়াল ভাষা। ভারতের অনেক রাজ্যে এটি প্রধান ভাষা। এছাড়া সমগ্র ভারত এবং পার্শ্ববর্তী পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপালের অনেক মানুষও এ ভাষা বুঝতে পারেন। হিন্দির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে উর্দু ভাষার।

ভাষাবিদদের ধারণা, হিন্দি এবং উর্দু দুটি ভাষাই ভারতের ‘খারি বোলি’ নামক উপভাষা থেকে উৎপন্ন হয়েছে যা হিন্দুস্তানি নামে পরিচিত। খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকে হিন্দি ভাষা লিখিত রূপ পায়। প্রথমে হিন্দি ভাষা লেখা হতো ব্রাহ্মী লিপি ব্যবহার করে। ১১ শতকে শুরু হয় দেবনাগরি বর্ণমালার ব্যবহার। হিন্দিতে প্রকাশিত বা ছাপার আকারে প্রথম বইটি ছিল জন গিলক্রিস্টের গ্রামার অব দ্য হিন্দুস্তানি ল্যাঙ্গুয়েজ যা প্রকাশিত হয় ১৭৯৬ সালে।

হাইনুখ (Hinukh)

এটি একটি উত্তর-পূর্ব ককেশীয় ভাষা। রাশিয়ার দাগেস্তানের দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত সুনতা জেলার ২০০-৫০০ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। ভাষাটির কোনো আদর্শ লিখিত রূপ নেই। ১৯৩০ থেকে সিরিলিক বর্ণমালা ব্যবহার করে ভাষাটি লেখা হয়।

হিট্টাইট (Hittite)

বিলুপ্ত হিট্রাইট ছিল ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার আনাতোলিয় শাখার সদস্য। প্রাচীন উত্তর-মধ্য আনাতোলিয়ায় এ ভাষা ব্যবহৃত হতো যা বর্তমান তুরস্কে অবস্থিত ছিল। এ ভাষার লিখিত রূপ পাওয়া গেছে খ্রিস্টপূর্ব ১৩ থেকে ১৬ শতকের মধ্যে।

ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগুলোর মধ্যে এ ভাষাই প্রথম লিখিত রূপ নিয়েছিল। এ ভাষা লেখা হতো সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে ব্যবহৃত আক্কাদিয়ান কুনিফর্মের একটি ভার্সন থেকে উৎসারিত কুনিফর্ম দিয়ে। বিশ শতকের শুরুর দিকে চেক ভাষাতত্ত্ববিদ বেডরিখ হরোজনি প্রথম হিট্টি ভাষার অর্থ উদ্ধারে সক্ষম হন।

হিক্সাকারায়ানা (Hixkaryana)

ভাষাটির একটি অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা অত্যন্ত বিরল। এ ভাষায় বাক্য গঠনে ‘কর্ম-কর্তা-ক্রিয়া’ এ ধারাবাহিকতায় শব্দ ব্যবহার করা হয়। ভাষাটি ব্যবহার করেন মাত্র ৫০০ মানুষ। ব্রাজিলে আমাজান নদী থেকে উৎপন্ন নাহামুন্দা, মপুয়েরা এবং জাপাতু নদীর তীরবর্তী মানুষ এ ভাষা ব্যবহার করেন। ভাষাতত্ত্ববিদ ডেসমন্ড ডার্বিশায়ার ব্যাখ্যা করার আগে বাক্য গঠনের এমন রীতির অস্তিত্ব আছে এমন তথ্য ভাষাবিদদের কাছে ছিল না। ১৯৬৬ সালে এ ভাষায় বাইবেলের কিছু অংশ অনুবাদ করা হয়।

হোপি (Hopi)

এটি একটি উতো-আজটেকান ভাষা। যুক্তরাষ্ট্রের আরিজোনায় বসবাসকারী প্রায় ৫ হাজার হোপি রেড ইন্ডিয়ান এ ভাষা ব্যবহার করেন। এ ভাষার রয়েছে চারটি প্রকার- ফার্স্ট মেসা বা পোলাক্কা, মিশংনোভি, সিপাউলোভি এবং থার্ড মেসা।

এ ভাষাকে প্রথম বিশ্লেষণ করে এর প্রকারগুলো সম্পর্কে নিশ্চিত হন বেনজামিন হোর্ফ। সময় এবং স্থান বর্ণনার ক্ষেত্রে এ ভাষায় বেশ ভিন্নতর এক পদ্ধতির দেখা পাওয়া যায়। বক্তার কাছ থেকে অনেক দূরে ঘটা কোনো ঘটনাকে এমনভাবে বর্ণনা করা হয় যেন তা দূর অতীতে ঘটেছিল।

হুয়াসটেকো (Huasteco)

মায়াদের এ ভাষার প্রায় দেড় লাখ বক্তা আছে মেক্সিকোতে; বিশেষত ম্যান লুইস পোটোসি, ভেরাক্রুজ এবং তামাউলিপাস শহরে। ভাষাটির স্থানীয় নাম টিনেক। এ ভাষার তিনটি প্রধান প্রকার আছে-উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় হুয়াসটেকো, মধ্যাঞ্চলীয় হুয়াসটেকো এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় হুয়াসটেকো। অনেক ভাষাবিদ এগুলোকে হুয়াসটেকোর উপভাষা মনে করলেও অনেকের ধারণা এগুলো পৃথক ভাষা।

হাঙ্গেরিয়ান (Hungarian)

এটি একটি উরাল (uralic) ভাষা। হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, সার্বিয়া, ইউক্রেন এবং স্লোভাকিয়ায় এ ভাষায় প্রায় দেড় কোটি বক্তা বাস করেন। এ ভাষায় বিভক্তিযুক্ত শব্দের ব্যবহার খুব বেশি। এ ভাষায় বিশেষ্য পদ প্রায় ২৩৮ রকমের রূপ নিতে পারে। এ ভাষা অব-উজরিক ভাষাগোষ্ঠীর সদস্য মানসি ও অসটায়াক ভাষার সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত। মানসি ও অসটায়াক ভাষা দুটি রাশিয়া ও সাইবেরিয়ায় বয়ে চলা অব নদীর তীরবর্তী মানুষেরা ব্যবহার করেন।

প্রাথমিক হাঙ্গেরীয় ভাষার সাহিত্য রচিত হয়েছিল ল্যাটিন বর্ণমালা ব্যবহার করে ১২ শতকে। ১৩ শতকে ল্যাটিন বর্ণমালা থেকে উদ্ভব ঘটে নিজস্ব হাঙ্গেরিয়ান বর্ণমালার। এ বর্ণমালা ব্যবহার করে হাঙ্গেরিয়ান ভাষার প্রথম বই প্রকাশিত হয়েছিল ১৫২৭ সালে পোল্যান্ডের ক্রাকোতে। ১৮ ও ১৯ শতকে বিকশিত হয় এ ভাষার সাহিত্য।

হুনজিব (Hunzib)

এটি উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ককেশীয় ভাষা। রাশিয়ার দাগেস্তানের প্রায় ১৮৪০ জন মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এ ভাষার কোনো আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি নেই। শুধু স্কুলে প্রাথমিক পর্যায়ে শেখানো হয়। এরপর তাদের অ্যাভার এবং রুশ ভাষা শিখতে হয়।

আইসল্যান্ডিক (Icelandic)

এটি একটি উত্তরাঞ্চলীয় জার্মান (Northern Germanic) ভাষা। আইসল্যান্ড, কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় তিন লাখ মানুষ এ ভাষা ব্যবহার করেন। এ ভাষা উত্তরাঞ্চলীয় জার্মান থেকে প্রাচীন নর্থ ভাষার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ। আইসল্যান্ডিক ভাষীরা সহজেই মূল প্রাচীন ন কাব্য পড়তে পারেন।

যে ভাষাটি জানা না থাকলেও ১৯৪৪ সালে আইসল্যান্ড স্বাধীনতা লাভ করার পর আইসল্যান্ডিক ভাষার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি মেলে এবং সাহিত্যের ভাষা হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। বর্তমানে আইসল্যান্ডের প্রকাশনা শিল্প অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং এখানকার পাঠকদের দুনিয়ার সব থেকে মনোযোগী এবং অনুসন্ধিৎসু পাঠক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

ইগবো (Igbo)

এটি নাইজেরিয়ার চারটি অফিসিয়াল ভাষার একটি। ভাষাটি নাইজার-কঙ্গো ভাষা পরিবারের ভোল্টা-নাইজার শাখার সদস্য। নাইজিরিয়া এবং নিরক্ষীয় গায়ানার প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। জি. সি. এ. ওলডেনডর্প নামক এক জার্মান মিশনারি ১৭৭৭ সালে ইগবো ভাষায় প্রথম বই রচনা করেন। অবশ্য এ বইয়ে ইগবো ভাষার সমৃদ্ধ ব্যবহার হয়নি।

ইগবো ভাষায় প্রথম পূর্ণাঙ্গ বই প্রকাশ করেন সাবেক দাস এবং শিক্ষক স্যামুয়েল আজায়ায়ি ক্রোথার ১৮৫৭ সালে। বইটির নাম ‘ইসোয়ামা-ইবো’। ক্রোথার একজন বিশিষ্ট ভাষাবিদও। এ ভাষার অনেক উপভাষা আছে। ১৯৬২ সালে ওয়েরি এবং উমুহায়িয়া উপভাষাকে ভিত্তি করে ইগবো ভাষার আদর্শ লিখিত রূপ গ্রহণ করা হয়।

ইয়োকো (lioko)

অস্ট্রোনেশীয় এ ভাষায় কথা বলেন ফিলিপাইনের প্রায় ১ কোটি মানুষ। বিশেষত উত্তর-পশ্চিমের লুজন দ্বীপ এবং মিন্দানায়ে। স্থানীয়রা এ ভাষাকে ডাকেন স্যামটোয় (Somtoy) নামে। স্যামটোয় নামটির উদ্ভব ঘটেছে ইয়োকো ভাষার একটি বাক্য ‘Sao mi ditoy’ থেকে যার অর্থ ‘এখানে আমাদের ভাষা’। এ ভাষা শুরুতে লেখা হতো বেবেয়িন (Baybayin) দলবর্ণমালা ব্যবহার করে। ১৬ শতকে স্প্যানিয়াডরা ফিলিপাইনে আসার পর বেবেয়িনের বদলে ল্যাটিন বর্ণমালা দিয়ে এ ভাষা লেখা শুরু হয়। এ ভাষায় প্রথম প্রকাশনা ‘Doctrina Cristiana’ প্রকাশিত হয় ১৬২১ সালে।

 

বর্ণনানুক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণনা পর্ব ৬ | ভাষাকোষ | শানজিদ অর্ণব

 

ইনগ্রিয়ান (Ingrian)

ভাষাটি একটি ফিনো-উজরিক ভাষা। রাশিয়ার পূর্ব বাল্টিক উপকূলের ইনগ্রিয়ার প্রায় ৫০০ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। ভাষাটি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে আছে। ১৯৩২ থেকে ‘৩৭ সালের মধ্যে ল্যাটিন বর্ণমালাকে ভিত্তি করে এ ভাষার উচ্চারণ পদ্ধতি তৈরি হয়।

ইনারি সামি (Inari Sami)

ফিনল্যান্ডের ইনারি পৌর অঞ্চলের মাত্র ৩০০ জন মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এ ভাষার অধিকাংশ বক্তাই এখন বৃদ্ধ না হয মধ্যবয়সী। ভাষাটিকে তাই বেশ ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। ভাষাটিকে বাঁচিয়ে রাখতে ইনারি সামি ল্যাংগুয়েজ এসোসিয়েশন ১৯৮৬ সাল থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আসছে। ২০০৭ সালে এ ভাষার র‍্যাপ গানের সিডি প্রকাশিত হয়েছে।

ইনগুশ (Ingush)

উত্তর ককেশীয় ভাষা পরিবারের একটি সদস্য এ ভাষা। উজবেকিস্তান এবং ইনগুশেটিয়ার প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এ ভাষার মানুষ তাদের ভাষাকে ডাকেন ‘ঘালঘাই মট’ (Ghalghaai Mott) নামে।

ইনর (Inor)

এটি একটি সেমেটিক ভাষা। ইথিওপিয়ার মধ্যাঞ্চলের প্রায় তিন কোটি মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন।

ইনুপিয়াক (Inupiaq)

এটি একটি এসকিমো-আলেউট (Eskimo-Aleut) ভাষা। আলাস্কার প্রায় ১০ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন যারা ইন্মপিয়াট নামে পরিচিত। বিভিন্ন সময় এ ভাষা লেখার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়। বর্তমানে প্রচলিত পদ্ধতিটি তৈরি করেন ১৯৪৬ সালে সামার ইনস্টিটিউট অব লিঙ্গুয়িস্টিকসের একজন সদস্য।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

আইরিশ (Irish)

এটি একটি সেলটিক ভাষা। ভাষাটি প্রধানত আয়ারল্যান্ডের ভাষা। দেশটির প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। ভাষাটি ইংরেজিতে আইরিশ নামে পরিচিত হলেও এর অফিসিয়াল আদর্শ নাম গেইলজ (Gaeilge) ভাষাটি সেলটিক ভাষার গোন্ডেলিক শাখার সদস্য। এ ভাষার তিনটি প্রধান উপভাষা রয়েছে Munster, Connacht, Dister। ১৭ থেকে ২০ শতকের শুরুর মধ্যবর্তী সময়ে আইরিশ ভাষা ইংরেজি দ্বারা প্রতিস্থাপিত হতে থাকে।

এরপর ১৯২২ সালে রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড প্রতিষ্ঠিত হলে আইরিশ ভাষা ইংরেজির সঙ্গে অফিসিয়াল ভাষার মর্যাদা পায়। কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং পদের নাম আইরিশ ভাষায় ডাকা শুরু হয়। যেমন-Garda (Police), Taoiseach (Prime Minister), Dali (Parliament)। বর্তমানে সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদির মাধ্যমে আইরিশ ভাষা পুনরুজ্জীবিত হয়েছে।

ইটেলমেন (Itelmen)

এ ভাষাটি Chukotko-kamchatkan ভাষা পরিবারের একমাত্র জীবিত সদস্য। সাইবেরিয়ার কামচাটকা উপদ্বীপের মাত্র ১০০ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। ১৮ শতকে একজন রুশ অভিযাত্রী, প্রকৃতিবিদ স্টেপান পেত্রোভিচ সর্বপ্রথম এ ভাষাটির বিস্তারিত বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেন। ভাষাটিকে বাঁচিয়ে রাখতে বর্তমানে বিভিন্ন তৎপরতা চলছে।

ইতালিয়ান (Italian)

এটি একটি রোমানস (Romance) ভাষা। ইতালি, মাল্টা, স্যান মেরিনো, সুইজারল্যান্ড, এরিত্রিয়া, ভ্যাটিকান সিটির প্রায় ৬ কোটি মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এ ভাষা প্রথম লিখিত রূপ পায় ১০ম শতকে। এরপর ১৩ শতকে দান্তে, পেত্রার্ক, বোকাচ্চিওর মতো বিখ্যাত লেখকদের হাত ধরে ইতালীয় ভাষার একটি উপভাষা ‘দ্য টুসকান অব ফ্লোরেন্স’ সাহিত্যের আদর্শ ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৪ শতক নাগাদ পুরো ইতালিই টুসকান রাজনৈতিক ও সব গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। এ ভাষার প্রথম ব্যাকরণ ‘Regule lingue florentine’ প্রকাশ করেন বাত্তিস্তা আলবার্তি ১৪৯৫ সালে। বর্তমানে টুসকান উপভাষাটিই আদর্শ ইতালীয় ভাষা হিসেবে পরিচিত এবং এটি
ইতালির অফিসিয়াল ভাষা।

জাপানিজ (Japanese)

জাপানিজ ভাষার পরিচয় নিয়ে আছে নানা মত। কোন কোন ভাষাবিদের মতে, এটি অলটাইক (Altaic) ভাষা পরিবারের সদস্য। কারও মতে, জাপানিজের সাদৃশ্য আছে অস্ট্রোনেশীয় ভাষার সাথে। আরও একটি মত অনুযায়ী, এ ভাষা Japanese-Ryukyuan ভাষা পরিবারের সদস্য। এটি জাপানের জাতীয় ভাষা। এ ভাষা প্রধানত ব্যবহৃত হয় জাপানে। এ ভাষার মোট বক্তার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১২ কোটি।

৪র্থ শতক পর্যন্ত এ ভাষার কোন লিখন পদ্ধতি ছিল না। ৫ম শতকে আমদানি হয় চায়নিজ লিপি। শুরুতে চায়নিজ বা জাপানিজ-চায়নিজ হাইব্রিড পদ্ধতিতে লেখা হতো এ ভাষা। আধুনিক জাপানিজ লেখা হয় হিরাগানা ও কাতাকানা বর্ণমালার সাহায্যে। এ দুই বর্ণমালার উদ্ভব চায়নিজ বর্ণমালা থেকে।

জাভানিজ (Javanese)

এটি একটি অস্ট্রেনেশিয়ান ভাষা। ইন্দোনেশিয়া এবং সুরিনামের প্রায় ৮ কোটি মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এ ভাষার লিখিত হবার প্রমাণ পাওয়া যায় ৪র্থ শতক সময়কাল থেকে। সেসময় এ ভাষা লিখতে ব্যবহৃত হত পল্লব (Pallava) বর্ণমালা। ১০ম শতকের মধ্যে শুরু হয় পল্লব বর্ণমালা থেকে উদ্ভুত কাবি (Kawi) বর্ণমালার ব্যবহার।

১৭ শতকে বর্তমানে ব্যবহৃত জাভানিজ বর্ণমালার উদ্ভব হয় যার নাম কারাকান (Carakan)। ১৯ শতকে ডাচরা ইন্দোনেশিয়ায় এ ভাষা লিখতে ল্যাটিন বর্ণমালার প্রবর্তন করে যা কারাকানকে স্থানচ্যুত করে। বর্তমানে শুধু গবেষকরাই জাভানিজ লিখতে কারাকান ব্যবহার করেন।

জ্যামাইকান (Jamaican)

জ্যামাইকান মূলত ইংরেজি ভাষাভিত্তিক একটি ক্রেয়ল। এতে আছে পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার ভাষাগুলোর প্রভাব। ১৭ শতকে আবির্ভাব ঘটে এ ক্রেয়ল ভাষাটির। এ ভাষায় আছে ১০ লাখ মানুষ যার অধিকাংশ বাস করেন জ্যামাইকায়।
ভাষাটি মূলত কথা বলার কাজে ব্যবহৃত হলেও গত এক শতকে সাহিত্যচর্চাতেও অল্পবিস্তর ব্যবহার হয়েছে। ভাষাটির লিখিত রূপের কোনো আদর্শ না থাকলেও জ্যামাইকার স্কুলগুলোতে এর ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের ফলে তৈরি হয়েছে একটি আংশিক আদর্শ রূপ।

জুল’হোয়ান (Jul’hoan)

উত্তর-পূর্ব নামিবিয়া এবং বতসোয়ানার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। ভাষাটির আছে চারটি আঞ্চলিক উপভাষা এপুকিরো, সামকে, রানডু এবং ওমাতাকো।
ভাষাটির আছে তিন ধরনের বানানপদ্ধতি। প্রথমটি তৈরি করেন জ্যান স্যাইমান। এটি সাউথ আফ্রিকান ডিপার্টমেন্ট অব এডুকেশন কর্তৃক ১৯৬৯ সালে গৃহীত হয়। বাকি দুটির একটি তৈরি করেছে দ্য বাইবেল সোসাইটি অব সাউথ আফ্রিকা এবং অন্যটি করেছে জুবা বুশম্যান ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন।

জুহুরি (Juhuri)

এটি দক্ষিণ-পশ্চিম ইরানীয় ভাষা। মূলত ইস্টার্ন ককেশাস পার্বত্যঞ্চলে বসবাসরত ইহুদি মানুষেরা এ ভাষায় কথা বলেন। বর্তমানে ভাষাটি প্রধানত ব্যবহার হয় ইসারায়েল, আজারবাইজান এবং দাগেস্তানে। ভাষাটির আছে প্রায় এক লাখ বক্তা। ভাষাটিতে প্রচুর শব্দ এসেছে হিব্রু, আরবি এবং আরামায়িক থেকে। ১৯০০ সালের দিকে হিব্রু বর্ণমালায় লেখা হতো এ ভাষা। এরপর ল্যাটিন, সিরিলিক বর্ণমালার পর বর্তমানে আবার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে হিব্রু বর্ণমালা।

কাবারদিয়ান (Kabardian)

এটি উত্তর-পশ্চিম ককেশীয় ভাষা। রাশিয়ার কাবারদিয়ান বলকার এবং কারাসায় সিরাকাসিয়ান এলাকার প্রায় সাড়ে ছয় লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। ১৯২৩ সালে ল্যাটিন বর্ণমালার একটি ভার্সন দিয়ে এ ভাষা লিখিত রূপ পায়। সিরিলিক বর্ণমালা দিয়ে লেখা শুরু হয় ১৯৩৬ সাল থেকে। অন্যান্য ককেশীয় ভাষার মতো এ ভাষাতে আছে অল্প কয়েকটি স্বরবর্ণ এবং বেশিসংখ্যক ব্যঞ্জনবর্ণ। অনেক ক্ষেত্রে একটি ব্যঞ্জনবর্ণ লেখা হয় চারটি অক্ষর ব্যবহার করে।

 

বর্ণনানুক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণনা

 

 

কাবায়লে (Kabyle)

এটি একটি বার্বার (Berber) ভাষা, প্রায় ৮০ লাখ মানুষ কথা বলেন এ ভাষায়। প্রধানত আলজিরিয়ার উত্তরাংশে বাস এ ভাষার মানুষদের। ভাষাটির কোনো অফিসিয়াল মর্যাদা নেই আলজিরিয়ায়। কিন্তু কিছু টিভি ও রেডিও অনুষ্ঠান হয় এ ভাষায়।

কাদাজানদুসান (Kadazandusan)

মালয়েশিয়ার বোর্নিওর উত্তরাংশের সাবাহ রাজ্যের প্রায় ৫ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। মালয়া-পলিনেশীয় ভাষা পরিবারের উত্তর বোর্নিও শাখার সদস্য এ ভাষা।
২০ শতকে এ অঞ্চলে কাদাজানদুসান ভাষার পরিবর্তে মালয় ভাষা ব্যবহারের প্রবণতা শুরু হয়। সাবাহর প্রশাসন এ পরিবর্তন থামাতে নানা পদক্ষেপ নেয়। স্কুলগুলোতে এ ভাষা শিক্ষার পাশাপাশি ভাষাটিকে অফিসিয়াল মর্যাদা দেয়ারও চেষ্টা চলছে।.

কালমাইক (Kalmyk)

এটি মঙ্গোলীয় ভাষার Kalmyk-oirat সাব গ্রুপের সদস্য। রাশিয়ার ভলগা ও ডন নদীর মধ্যবর্তী এলাকা, পশ্চিম চীন ও মঙ্গোলিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ৫ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। ১১ শতকে উইঘুর লিপিতে প্রথম এ ভাষা লিখিত হয়। ১৬৪৮ সালে একজন বৌদ্ধ ধর্মগুরু Zaya Pandita Oktorguin Dalai কালমাইক বর্ণমালা বা Todo Bichig তৈরি করেন। চীনে এ ভাষা লিখতে এখনও এটি ব্যবহৃত হয় কিন্তু রাশিয়ায় সিরিলিক বর্ণমালা ব্যবহৃত হয়।

কাইনগ্যাং (Kaingang)

ব্রাজিলের সাও পাওলো, পারানা, সান্তা ক্যাটরিনা এবং রিও গ্রান্দে দো সুলিন রাজ্যে। এটি ম্যাক্রো-জি (Macro-Ge) ভাষা পরিবারের সদস্য। ১৮ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। কাইনংগ্যাং নৃ-গোষ্ঠীর মানুষেরাই এ ভাষা ব্যবহার করেন।

১৯৬৯ সালে নিজেদের ভাষা লিখতে এবং শিখতে পারার জন্য কাইনগ্যাং মানুষেরা একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এখান থেকে প্রশিক্ষণ পেয়ে নিজের গোষ্ঠীর মানুষদের মাতৃভাষা শেখান অনেকে। এভাবেই নিজেদের মাতৃভাষার গৌরব ধরে রেখেছে কাইনগ্যাং মানুষেরা। এ ভাষার একটি ডিকশনারি ও বেশ কিছু প্রকাশনা রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment