বর্ণনানুক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণনা পর্ব ৪ – চিকাসা (Chickasaw): এটি একটি রেড ইন্ডিয়ান ভাষা। পশ্চিম মাসকোজিয়ান (Muskogean)। এ ভাষায় বর্তমানে ওকলাহোমায় বসবাসরত চিকাসা গোষ্ঠীর ১ হাজার মানুষ কথা বলেন। এ ভাষার বেশিরভাগ ব্যক্তিই এখন ৫০’র বেশি বয়সী। নতুনরা ঝুঁকছে ইংরেজি শিখতে।
চোকতাও এবং চিকাসা ভাষার মধ্যে সাদৃশ্য থাকলেও চোকতাও গোষ্ঠীর সদস্যরা চিকাসাকে দুর্বোধ্য মনে করেন। ১৭ এবং ১৮ শতকে মিসিসিপি নদীর নিচের দিকের আদিবাসী ইন্ডিয়ান গোষ্ঠীগুলো চিকাসা ভাষাকে লিংগুয়া ফ্রাংকা (সবার জন্য সাধারণ বোধগম্য ভাষা) হিসেবে ব্যবহার করত। ১৮৩০ সালে আরও চারটি উন্নত গোষ্ঠীর সঙ্গে সঙ্গে চিকাসাদেরও জোরপূর্বক তাদের বসবাস থেকে উচ্ছেদ করা হয়। বাকি চারটি গোষ্ঠী ছিল চেরোকি, চোকতাও, ক্রিক এবং সেমিনোলে।
Table of Contents
বর্ণনানুক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণনা পর্ব ৪
চোকতাও (Choctaw)
চোকতাও একটি পশ্চিম মাসকোজিন (Muskogean) ভাষা যা চিকাসা ভাষার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। দক্ষিণ-পূর্ব ওকলাহোমায় বসবাসরত চোকতাদের (রেড ইন্ডিয়ান গোষ্ঠী) ভাষা এটি। এ ভাষার রয়েছে প্রায় ৭ হাজার জনগোষ্ঠী। ওকলাহোমা একটি ঢোকতাও শব্দ যার অর্থ ‘লাল মানুষ’ চোকতাও ভাষা বলতে পারেন এমন বেশিরভাগ রেড ইন্ডিয়ানের বয়স ৪৫ বছরের বেশি। অবশ্য মিসিসিপিতে চেষ্টা চলছে তরুণদের মধ্যে এ ভাষার জীবনকে টিকিয়ে রাখার।
চিপ্পেবা (Chippewa)
চিল্পেবা একটি অ্যালগনকুইয়ান (Algonquian) ভাষা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর মিশিগান এবং নর্থ ডাকোটার ৭ হাজার ইন্ডিয়ান আদিবাসী এ ভাষায় কথা বলেন।
চুকেসে (chuukese)
এ ভাষা অস্ট্রোনেশিয় ভাষার মাইক্রোনেশীয় শাখার সদস্য। ভাষাটি চুক (Chuuk), লেগুন ঢুকেসে (Lagoon chukese), রাক (Ruk), ট্রাক (truk) নামেও পরিচিত। মাইক্রোনেশিয়ার ক্যারোলিন দ্বীপের আইল্যান্ড অব চুকের প্রায় ৪৮ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। ১৯ শতকে মিশনারিরা ল্যাটিন বর্ণমালা ব্যবহার করে এ ভাষা লেখার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন।
চুভাশ (Chuvash)
এটি একটি তুর্কি ভাষা। রাশিয়ার প্রায় ২০ লাখ মানুষ এ ভাষা ব্যবহার করেন। এটি চুভাশ রিপাবলিকের অফিসিয়াল ভাষা। এর বাইরে তাতারস্তান এবং বাশকোরতোস্ত নেও এ ভাষা ব্যবহৃত হয়। ১৭৬৯ সালে প্রথম এ ভাষার ব্যাকর তৈরি হয়। ১৮ এবং ১৯ শতকের প্রথম ভাগে এ ভাষার বেশ কয়েকটি অভিধান ধর্মীয় টেক্সটের অনুবাদ এবং লোককথার অনুবাদ প্রকাশিত হয়। রুনিক স্ক্রিপ্ট (Runic script), আরবি, সিরিলিক এবং ল্যাটিন বর্ণমালা ব্যবহার করে এ ভাষা লেখা হয়। এ ভাষার জন্য সিরিলিক বর্ণমালা চালু করেন আইভান ইয়াকোল্লেভিচ ইয়াকোল্লেভ।
কোমাঞ্চি (Comanche)
কোমাঞ্চি ইন্ডিয়ানদের ভাষাই কোমাঞ্চি ভাষা। এটি উতো-আজটেকান ভাষা। দক্ষিণ-পশ্চিম ওকলাহোমা এবং নিউ মেক্সিকোর প্রবীণ (আনুমানিক ৮৫৪ জন) কোমাঞ্চি এ ভাষার কথা বলেন। অথচ কোমাঞ্চিদের জনসংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। ১৯ শতকের শুরুর দিকে অনেক কোমাঞ্চি শিশুকে তাদের ঘর থেকে নিয়ে বোর্ডিং স্কুলে পাঠানো হয়। সেখানে শিক্ষার মাধ্যম ছিল ইংরেজি। কোমাঞ্চি ভাষা ব্যবহার করলে সেখানে তাদের শাস্তি দেয়া হতো। পরিণতিতে তারা কেবল ইংরেজিতেই কথা বলার অবস্থায় থাকল।
শতাব্দীর মধ্যভাগে এসে কেবল মধ্যবয়সীরাই তাদের আপন ভাষা বলতে পারত। ১৯৮৯ সালে কোমাঞ্চি গোষ্ঠী তাদের ভাষা এবং পূর্বপুরুষদের ইতিহাস সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণ করে। উদ্যোগের ফলস্বরূপ ১৫টি দুই ঘণ্টা দৈর্ঘ্যের অডিও টেপ তৈরি হয়। টেপগুলোতে প্রবীণ কোমাঞ্চি মাতৃভাষায় তাদের পূর্বপুরুষদের ইতিহাস বর্ণনা করেন। এর পরবর্তী দুবছর কোমাঞ্চিরা ভাষা শিক্ষার ক্লাসের আয়োজন করে।
১৯৯৩ সালে গঠিত হয় কোমাঞ্চি ভাষা এবং সংস্কৃতি সংরক্ষণ কমিটি। এই কমিটি উদ্যোগ নেয় যাতে সব কোমাঞ্চি জনগণ তাদের ভাষা লিখতে, পড়তে এবং বুঝতে পারার মতো শিক্ষা পায়। ১৯৯৪ সালে কোমাঞ্চিরা তাদের ভাষার বর্ণমালা এবং উচ্চারণ পদ্ধতি চালু করে। আর এই বর্ণমালা ও উচ্চারণ পদ্ধতি তৈরি করে দেন ইউনিভার্সিটি অব ওকলাহোমার ভাষাতাত্ত্বিক নৃতত্ত্ববিদ ড. অ্যালিস অ্যান্ডারটন। এরপর বেশ কিছু কোমাঞ্চি ডিকশনারি, বই এবং অন্যান্য লেখা প্রকাশিত হয়েছে।
কর্সিকান (Corsican)
এটি একটি রোমানস (Romance) ভাষা। দুনিয়ার প্রায় ৩ লাখ ৪১ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এ ভাষার বেশিরভাগ অধিবাসী বাস করেন কর্সিকায়। এছাড়া প্যারিস, মার্সেলি, বলিভিয়া, কানাডা, কিউবা, ইতালি, পুয়ের্তো রিকো, উরুগুয়ে, ভেনিজুয়েলা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও এ ভাষার কিছু মানুষ বাস করেন।
কর্সিকাতে দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃত ফ্রেঞ্চ, কর্সিকান নয়। কর্সিকান ভাষার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে ইতালিয়ান ভাষার, বিশেষত তুসকানি (Tuscany) উপভাষার। কর্সিকান প্রাথমিকভাবে ছিল একটি মৌখিক ভাষা। তাই অঞ্চলভেদে এ ভাষায় বেশ বৈচিত্র্য রয়েছে। যেমন দক্ষিণ ও উত্তর কর্সিকার মধ্যে। ১৯ শতকের শেষভাগে এ ভাষার লিখিত রূপ তৈরি হয়।
১৯৭০ সালের আগে আদর্শ বানানরীতি গড়ে ওঠেনি। এরপর পি. মার্সেষ্টি এবং ডি জেরোনিমি একটি বানান পদ্ধতি প্রবর্তন করেন। প্রথম দিকের কর্সিকান লেখায় বানানের প্রচুর পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। কর্সিকার সব ধরণের শিক্ষার মাধ্যম কর্সিকান ভাষা। ফ্রান্সের মূল ভূখণ্ডের প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য কর্সিকান ভাষা শেখার ব্যবস্থা আছে।
ক্রিমিন তাতার (Crimean Tatar)
এটি তুর্কি ভাষার ক্যাপচাক (Kypchak) শাখার একটি সদস্য। পৃথিবীতে এ ভাষার তিন লাখ অধিবাসী রয়েছে। এ ভাষার অধিবাসীরা বাস করেন ক্রিমিয়া, মধ্য এশিয়া প্রধানত উজবেকিস্তান, তুরস্ক, রোমানিয়া, বুলগেরিয়ায়। ক্রিমিন তাতার, ক্রিমিন বা ক্রিমিন তুর্কিশ নামেও পরিচিত।
ক্রিমিন তাতার ১৯২৮ থেকে ১৯৩৮ সালের মধ্যে লেখা হতো পার্সো-অ্যারাবিক (perso-Arabic) বর্ণমালা ল্যাটিন বর্ণমালায় এবং তারপর থেকে ১৯৩৮-১৯৯০ সময়কালে সিরিলিক বর্ণমালা এবং তারপর থেকে ব্যবহার হচ্ছে ল্যাটিন বর্ণমালা। অবশ্য এখনও কিছু মানুষ সিরিলিক বর্ণমালা ব্যবহার করেন।
চেক (Czech)
এটি ওয়েস্টার্ন স্নাভোনিক (western slavonic) ভাষা। চেক রিপাবলিকের ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এছাড়া চেক বংশোদ্ভূত অনেক মানুষ অন্যান্য দেশেও চেক ভাষায় কথা বলেন। যেমন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। চেক ভাষা শ্লোভাক, পোলিশ এবং সার্বিয়ান ভাষার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত। যে অঞ্চলে চেক ভাষা ব্যবহৃত হয় সেটি ঐতিহ্যের ধারায় বোহেমিয়া নামে পরিচিত।
বোহেমিয়া নামকরণ হয়েছিল বোয়ি (Boii) গোষ্ঠীর নামানুসারে। এ গোষ্ঠী খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে এ অঞ্চলে বসবাস শুরু করে। মোরাভিয়ায় ব্যবহৃত উপভাষাটি চেক ভাষা থেকে উদ্ভব হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ১৩ শতকে চেক সাহিত্য প্রকাশিত হতে শুরু করে।
চেক ভাষায় প্রথম প্রকাশিত ছিল ‘দ্য স্টোরি অব দ্য ট্রোজান ওয়ার’; বই প্রকাশিত হয় ১৪৬৮ সালে। প্রথম যুগের লেখকদের মধ্যে সব থেকে উল্লেখযোগ্য জান হাস (Jan Hus, 1369- 1415)। হাস ছিলেন একজন ধর্মীয় সংস্কারক এবং তিনি চেক ভাষায় বানান পদ্ধতি সংস্কার করেন।
ড্যানিশ (Danish)
ড্যানিশ একটি উত্তর জার্মান ভাষা। ডেনমার্কের প্রায় ৫৫ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। ডেনমার্কের বাইরে গ্রিনল্যান্ড, জার্মানি, নরওয়ে, সুইডেন, কানাডা, আরব আমিরাত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও এ ভাষা ব্যবহৃত হয়। ১৮৩০ সালে পর্যন্ত এ ভাষা নরওয়ে এবং ১৯৪৪ পর্যন্ত আইসল্যান্ডে দাপ্তরিক ভাষা ছিল।
বর্তমানে আইসল্যান্ডে এটি প্রথম বিদেশি ভাষা হিসেবে শেখা হয়। মধ্যযুগে ড্যানিশ ভাষা জার্মানির উপভাষা দ্বারা প্রভাবিত হয়। ১৭ শতকে এ ভাষায় আসে অনেক ফরাসি শব্দ। ১৯ শতকের পর শুরু হয় ইংরেজি শব্দের আগমন। ড্যানিশ সাহিত্যের প্রথম লিখিত কাজটি ছিল Gesta Danorum (History of the Danes) ।
১২০০ খ্রিস্টাব্দে ল্যাটিন বর্ণমালায় এটি লেখা হয়। এতে লিপিবদ্ধ হয় ১১৮৬ পর্যন্ত ডেনমার্কের ইতিহাস। সঙ্গে থাকে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান মিথ আর লোককাহিনীর ড্যানিশ সংস্করণ। ১৬ শতকে সাহিত্যের ভাষা হিসেবে ড্যানিশ ভাষার ব্যবহার শুরু হয়।
দারগবা (Dargwa)
ভাষাটি দারজিন (Dargin) নামেও পরিচিত। এটি উত্তর-পূর্ব ককেশীয় ভাষা। এ ভাষার রয়েছে প্রায় ৪ লাখ ৩৯ হাজার বক্তা যাদের বেশিরভাগ বাস করেন রাশিয়ার রিপাবলিক অব দাগেস্তানে।
এছাড়া দারগবা ভাষী আছেন রিপাবলিকস অব কালমাইকিরা, খানতিয়া-মানসিয়া এবং চেচনিয়া, আজারবাইজান, কাজাখস্ত ান, কিরগিজস্তান, তুরস্ক, তুর্কমেনিস্তান, ইউক্রেন এবং উজবেকিস্তানে। ১৯২৬ সাল পর্যন্ত এ ভাষা লেখা হয় আরবি বর্ণমালা দিয়ে। এরপর গৃহীত হয় ল্যাটিন বর্ণমালা। ১৯৩৭ থেকে সিরিলিক বর্ণমালার একটি ভার্সন ব্যবহার হচ্ছে এ ভাষা লেখার জন্য।
দারি (Dari)
দারি আফগানিস্তানের ফার্সি ভাষার একটি ভিন্ন রূপ। এটি সেখানকার একটি দাপ্তরিক ভাষা (আরেকটি হলো পশতু ভাষা)। দারি আফগানিস্তানের বিভিন্ন ভাষাগোষ্ঠীর মধ্যে লিংগুয়া ফ্রাংকা (Lingua Franca) হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আফগানিস্তানের অনেক স্কুলের শিক্ষার মাধ্যম দারি ভাষা। দেশটিতে দারি ভাষীর সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশ লাখ।
এর বাইরে ইরান এবং পাকিস্তানে রয়েছে আরও প্রায় ২৫ লক্ষ দারি ভাষী। এ ভাষা ফার্সি-এ দারি (Farsi-ye Dari) বা আফগান ফার্সি নামেও পরিচিত। ফার্সি-আরবি বর্ণমালা ব্যবহার করে এ ভাষা লেখা হয়।
দাবান (Dawan)
এটি একটি অস্ট্রোনেশীয় ভাষা। তিমুরের পশ্চিম অংশের প্রায় ৬ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। সঙ্গে আছে পূর্ব তিমুরের ওয়েকুসি (Oecusse) ছিটমহল। এ ভাষা আরও বেশ কিছু নামে পরিচিত। যেমন: মেটো, আব আতোনি নাহ মেটো, তিমোর, তিমোরেজ, তিমোল, তিমোরিজেন, রাবান ইত্যাদি। ওয়েকুসি ছিটমহলে এটি বাইকেনু নামে পরিচিত যদিও স্থানীয়রা সাধারণভাবে একে আব মেটো বলে ডাকেন। মিশনারিরা প্রথম এ ভাষাকে লিখিত রূপ দেন।
দেহং দাই (Dehong Dai)
এটি একটি তাই (Tai) ভাষা। চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ইউনান রাজ্যের দেহং এলাকার প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। চীনের বাইরে ভিয়েতনাম, ফ্রান্স, লাওস, মিয়ানমার, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ডেও এ ভাষার মানুষ রয়েছে। এ ভাষাটি তাই নুয়া, তাই লে, চায়নিজ শান বা চায়নিজ তাই নামেও পরিচিত।
এ ভাষার লিখিত বর্ণমালা তৈরি হয়েছে ওল্ড দাই (Old Dai) নামক বর্ণমালা থেকে। ওন্ড দাই তৈরি হয়েছিল বাইয়ি (Baiyi) নামক লিপি থেকে।
ধোলুয়ো (Dholuo)
ভাষাটি লুয়ো (Luo) নামেও পরিচিত। কেনিয়া, সুদান এবং তাঞ্জনিয়ার লেক ভিক্টোরিয়ার তীরবর্তী প্রায় ৩০ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এটি নিলো- সাহারান ভাষা পরিবারের সদস্য। ভাষাটির কোনো অফিসিয়াল স্বীকৃতি নেই। স্কুল, কলেজ এবং রেডিওতে সামান্য এ ভাষার ব্যবহার হয়। ১৯৬০ সাল থেকে এ ভাষার আদর্শ বানানরীতি তৈরির কাজ শুরু হয়।

দিনকা (Dinka)
নিলো-সাহারান (Nilo-Saharan) ভাষা পরিবারের পশ্চিম নাইলোটিক (Western Nilotic) শাখার সদস্য দিনকা ভাষা। ভাষাটি হয় প্রধানত ব্যবহার সুদানের দক্ষিণাঞ্চলে; ২০ থেকে ৩০ লাখ অধিবাসী আছেন এ ভাষার। এ ভাষার রয়েছে ৫টি উপভাষা-অ্যাগার, বোর, পাদান, রেক। কিছু দিনকা ভাষী আছেন মিসর, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে।
১৯ এবং ২০ শতকে মিশনারিদের হাতে ল্যাটিন বর্ণমালা ব্যবহার করে এ ভাষা লেখার বিভিন্ন পদ্ধতি প্রচলিত হয়। ১৮৬৬ সালে Johannes Chrysostomus Mitterrutzner কর্তৃক লিখিত Die Dinka-sprache in Central-Afaika থেকে প্রথম এ ভাষা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। এ ভাষার বর্তমান ল্যাটিন বানান পদ্ধতিটি ১৯২৮ সালে রেজাফ (Rejaf) ভাষা কনফারেন্সে উদ্ভাবিত হয়।
দিজিন (Dizin)
ভাষাটি আফ্রো-এশিয়াটিক ভাষা পরিবারের ওমোটিক শাখার সদস্য। ইথিওপিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ৩৪ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। ভাষাটি দিজি (Dizi) বা মাজি (Maji) নামেও পরিচিত। ভাষাটি লেখা হয় গি’জ (Ge’ez) বর্ণমালা ব্যবহার করে। ভাষাটির কোনো অফিসিয়াল স্বীকৃতি নেই। এ ভাষায় কথা বলার সময় গলার স্বরের তিন ধরনের তীব্রতা ব্যবহার করা হয় (নিম্ন, মধ্য, উচ্চ)। অবশ্য লেখার ক্ষেত্রে স্বরের এ তারতম্য উল্লেখ করা হয় না।
দুয়ালা (Duala)
এটি একটি বান্টু ভাষা ক্যামেরুনের প্রায় ৮৮ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। বাইবেল অনুবাদের মাধ্যমে ১৮৬২ সালে এ ভাষা প্রথম লিখিত রূপ পায়। ১৯৩২ সালে বানানরীতি সংস্কার করা হয়। ১৯৭৯ সালে আবারও সংস্কার হয়। কারণ এ সময় ক্যামেরুনের সব ভাষার জন্য একটি সাধারণ বর্ণমালা তৈরি করা হয় যা Alphabet General des Langues Cameroun-aises নামে পরিচিত।
দুংগান (Dungan)
এটি চায়নিজ ভাষার একটি প্রকার, যা ব্যবহৃত হয় কিরগিজস্তান, কাজাখস্তান এবং উজবেকিস্তানে। এর রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার বক্তা। ভাষাটির স্থানীয় নামের অর্থ ‘Language of the Hui’। এটি মান্দারিন ভাষার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত। এ ভাষায় রয়েছে দুটি উপভাষা।
একটির উৎপত্তি চীনের শানজি প্রদেশে অন্যটির উদ্ভব গানসু প্রদেশে। এ ভাষা প্রাথমিক সময়ে লিখিত হতো আরবি বর্ণমালায়। ১৯২৮ থেকে ১৯৫৩ সময়কালে ব্যবহৃত হয় ল্যাটিন বর্ণমালা। ১৯৫৩ থেকে ব্যবহৃত হচ্ছে সিরিলিক বর্ণমালার একটি ভার্সন।
ডাচ (Dutch)
ডাচ একটি পশ্চিম জার্মান ভাষা। নেদারল্যান্ডস এবং বেলজিয়ামে রয়েছে এ ভাষার প্রায় ২ কোটি বক্তা। এছাড়া এ ভাষার কয়েকটি ছোট কমিউনিটি আছে ফ্রান্স, সুরিনাম এবং ইন্দোনেশিয়ায়। ডাচ ভাষার অফিসিয়াল এবং আদর্শ রূপ জেনারেল সিভিলাইজড ডাচ (Algemeen Beschaafd Nederlan) নামে পরিচিত। নেদারল্যান্ডস এবং বেলজিয়ামের ফ্যান্ডার্সের সরকার কর্তৃক স্থাপিত Taaelunie (Langnage Union), জেনারেল সিভিলাইজড ডাচের বানান পদ্ধতি এবং উচ্চারণের শুদ্ধতা রক্ষা করে।
জংখা (Dzongkha)
জংখা বা ভুটানিজ নামের এ ভাষাটি ভুটানের জাতীয় ভাষা। ১৩ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। নেপাল এবং ভারতেও ব্যবহৃত হয় এ ভাষা। এটি সিনো- তিবেতান (Sino-Tibetan) ভাষা, যার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তিব্বতি এবং দূর সম্পর্ক রয়েছে চায়নিজ ভাষার সঙ্গে। জংখা লেখা হয় তিব্বতি বর্ণমালা দিয়ে যার প্রচলন করেছিলেন থানমি সামভোতা। অবশ্য ভুটানের প্রধান লিখিত ভাষা ক্লাসিক্যাল তিব্বতি যা জংখা থেকে ভিন্ন যেমন ফ্রেঞ্চ ভিন্ন ল্যাটিন থেকে। ল্যাটিন বর্ণমালা দিয়েও জংখা লেখার পদ্ধতি রয়েছে যার নাম রোমান জংখা।
এলফদালিয়ান (Elfdalian)
এ ভাষার অপর নাম ওভদালিয়ান (Ovdalian)। এটি একটি উত্তর জার্মান ভাষা। সুইডেনের নর্দার্ন দালারনার আলভদালেন মিউনিসিপ্যালিটির প্রায় তিন হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। কোনো কোনো ভাষাবিদ এটিকে স্বতন্ত্র পৃথক ভাষা মনে করলেও অনেকে মনে করেন এটি সুইডিশ ভাষার একটি উপভাষা।
ভাষাটি গড়ে উঠেছে বিচ্ছিন্ন অবস্থার মধ্যে বিশেষত মধ্যযুগে। ফলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে প্রাচীন নর্স বৈশিষ্ট্য যা অন্য কোনো উত্তর জার্মান ভাষায় পাওয়া যায় না। ফলে এ ভাষাটি সুইডিশ ভাষা থেকে বেশ ভিন্নতা নিয়ে গড়ে উঠেছে এবং সুইডিশরা এ ভাষা বুঝতে পারেন না। ২০০৫ সালে দ্য এলফদালিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ কাউন্সিল এ ভাষার একটি আদর্শ বানানরীতি প্রচলন করে এবং তা দ্য অর্গানাইজেশন ফর দ্য প্রিজারভেশন অব এলফদালিয়ান কর্তৃক গৃহীত হয়।
মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক (Egyptian Hieroglyphs)
প্রাচীন মিশরের মানুষেরা মনে করতেন, লেখা বা লিপির আবিষ্কারক হলেন দেবতা থথ (Thoth)। তাই এরা তাদের হায়ারোগ্লিফিক লিপিকে বলতেন “mdwt ntr” (দেবতার শব্দ) হায়ারোগ্লিফিক শব্দটি এসেছে গ্রীক Hieros (পবিত্র) এবং Glypho (লিখিত) শব্দ দুটি থেকে।
হায়ারোগ্লিফিক শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন ক্লমেন্ট অব আলেকজান্দ্রিয়া। মিশরে প্রাপ্ত সর্বপ্রথম লিখিত নিদর্শনের সময়কাল খৃষ্টপূর্ব ৩৪০০ অব্দ। আর হায়ারোগ্লিফিকের সর্বশেষ নিদর্শন ৩৯৬ খৃষ্টাব্দে ফিলে (Phine) মন্দিরের গেট পোস্টে লেখা চিত্রলিপি। হায়ারোগ্লিফিক প্রধানত ব্যবহৃত হত মন্দির, গম্বুজের দেয়ালে আনুষ্ঠানিক লিখনের কাজে। আর সাধারণ কাজে ব্যবহৃত হত হিয়েরাটিক (Hieratic) লিপি।
এনেটস (Enets)
এটি একটি সামোয়েদিক (Samoyedic) ভাষা। রাশিয়ার সাইবেরিয়ার ক্রাসনোয়ারসক ক্রাইয়ের ইয়েনিসেই নদী বরাবর বাস করেন এ ভাষার মানুষ। এ ভাষার আছে দুটি উপভাষা-ফরেস্ট এনেটস (madu) এবং তুন্দ্রা এনেটস (bai) । এ দুই উপভাষার সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে কারাসতিন (Karastin) এনেটস। এ ভাষার রয়েছে মাত্র ৭০ জন বক্তা।
ইংরেজি (English)
ইংরেজি একটি পশ্চিম জার্মানিক ভাষা যা ডাচ, ফ্রিজিয়ান এবং জার্মান ভাষার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ফ্রেঞ্চ, ল্যাটিন, গ্রিক এবং আরও বিভিন্ন ভাষা থেকে ইংরেজিতে যুক্ত হয়েছে প্রচুর শব্দ। দুনিয়ার প্রায় ৩৫ কোটি মানুষ মাতৃভাষা হিসেবে ইংরেজি বলেন সঙ্গে আর ২৭ কোটি মানুষ এ ভাষা ব্যবহার করেন সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ হিসেবে।
অ্যাংগলস (Angles), স্যাক্সন (Saxons), জুটস (Jutes) এবং অন্যান্য জার্মান গোষ্ঠী ৫ম খ্রিস্টীয় শতকে জার্মানিক ভাষা নিয়ে আসে ব্রিটেনে। এ জার্মানিক থেকেই উদ্ভব হয় ইংরেজির যা অ্যাংলো-স্যাক্সন বা ওল্ড ইংলিশ নামে পরিচিত। এ ভাষা ৫ম শতকে লিখিত রূপ পায়।
ওন্ড নর্স থেকে ইংরেজিতে শব্দ অন্তর্ভুক্ত হতে শুরু করে ৯ম শতকে, যখন নর্সম্যানরা ব্রিটেনের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে আবাস গড়তে শুরু করে। বর্তমানে উত্তর ইংল্যান্ডের মানুষের ইংরেজিতে ওল্ড নর্স শব্দ পাওয়া যায় যা অন্য কোনো জায়গার ইংরেজিতে পাওয়া যায় না। এখানকার উচ্চারণভঙ্গিতেও প্রাচীন নার্সের প্রভাব রয়েছে।
১০৬৬ সালে নর্মান আক্রমনের সঙ্গে সঙ্গে নর্মান এবং ল্যাটিন শব্দ স্রোতের মতো ইংরেজিতে প্রবেশ করে। পরবর্তী তিন শতকে ইংরেজি সাধারণ মানুষের কথ্য ভাষায় পরিণত হয়।
এরজায়া (Erzya)
এটি একটি ফিনো-উজরিক (Finno-Ugric) ভাষা। রাশিয়ার রিপাবলিক অব মলডোভিয়া এবং আরও কিছু এলাকার প্রায় ৫ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এছাড়া আর্মেনিয়া, এস্তোনিয়া, কাজাখস্তান এবং মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এ ভাষা ব্যবহৃত হয়।
এসকায়ান (Eskayan)
ভাষাটি ব্যবহৃত হয় ফিলিপাইনের আইল্যান্ড অব বোহোলে। এ ভাষার প্রকৃত লোকসংখ্যা সঠিকভাবে নির্ণয় করা হয়নি এখনও। অন্য কোনো ভাষার সঙ্গে এ ভাষাটি সম্পর্কযুক্ত নয়। তবে আইল্যান্ড অব বোহোলের প্রধান ভাষা বোহোলানো- বিসায়ানের (Boholano-Visayan) সঙ্গে কিছু বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যগত সাদৃশ্য আছে এ ভাষার। সাথে আছে স্প্যানিশ ভাষার প্রভাব। এ এলাকার মানুষ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করেন সেবুয়ানো ভাষা আর প্রার্থনা, গান এবং আনুষ্ঠানিক ভাষণে ব্যবহার করেন এসকায়ান ভাষা।
এস্তোনিয়ান (Estonian)
এটি একটি ফিনো-উজরিক (Finno-Ugric) ভাষা, যা এস্তোনিয়ার ১১ লাখ মানুষ ব্যবহার করেন। ভাষাটি ফিনিশ (Finnish) ভাষার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত। এস্তে ানিয়ান এবং ফিনিশের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো ফিনিশে এসেছে বহু সুইডিশ শব্দ অন্যদিকে এস্তোনিয়ানে এসেছে জার্মান, রাশিয়ান, ল্যাটিন, গ্রিক এবং ইংরেজি থেকে। এ ভাষার সব থেকে প্রাচীন লেখা বা টেক্সট পাওয়া যায় ১৩ শতকের। ফার্দিনান্দ জোহান ওয়াইডম্যান ১৮৬৯ সালে কম্প্রিহেনসিভ এস্তোনিয়ান- জার্মান ডিকশনারি এবং ১৮৭৫ সালে এ ভাষার ব্যাকরণ প্রকাশ করেন।
এভেন (Even)
এভেন, মাঞ্চ-তুংগুস (Manchu-Tungus) ভাষাগোষ্ঠীর উত্তরাঞ্চলীয় শাখার সাইবেরিয়ান গ্রুপের সদস্য। এ ভাষার লোকসংখ্যা প্রায় ৭ হাজার। রাশিয়ার সাইবেরিয়া বিশেষত মাগাদান অঞ্চল, চুকোট ও কোরায়াক এলাকা, খাবারভসক অঞ্চলের কিছু জেলা এবং রিপাবলিক অব ইয়াকুটিয়ায় প্রচলিত আছে এ ভাষা।
এভেনকি (Evenki)
এটি অলটায়িক (Altaic) ভাষা পরিবারের মাঞ্চ-তুংগুস (Manchu-Tungus) সাব- গ্রুপের অংশ। এ ভাষায় রয়েছে প্রায় ২০ হাজার বক্তা। এ ভাষা ব্যবহার হয় রাশিয়ার স্বায়ত্তশাসিত এভেনকিয়া (Evenkia) জেলায় এবং চীন, মঙ্গোলিয়ার কিছু অংশে। এভেনকিয়ার ৪৫ শতাংশ মানুষ এ ভাষাকে তাদের মাতৃভাষা বলে মনে করেন। বর্তমানে এ ভাষায় দক্ষদের বেশিরভাগই প্রবীণ। তরুণদের মধ্যে এ ভাষার জ্ঞান কম। ভাষাটি এভেনক, তুংগুস নামেও পরিচিত। ভাষাটি ইয়াকুত, বুরইয়াত এবং রুশ ভাষা দিয়ে বেশ প্রভাবিত।
এভেনকিয়া রাশিয়ার সাইবেরিয়ার দুর্গম এলাকায় অবস্থিত। ১৯৩০ সাল পর্যন্ত এখানকার মানুষ ছিল প্রধানত যাযাবর শিকারি। বর্তমানে কৃষিকাজ এবং শিল্পায়ন ঘটার পরও অনেকে এখনও শিকারি। শ্যামান (Shaman) বা ওঝা, জাদুকর শব্দটির ইংরেজি Shaman এসেছে এ ভাষার একটি শব্দ থেকে যার অর্থ ‘পবিত্র পুরুষ’। এ ভাষা প্রথম লিখিত রূপ পায় ১৯২০ সালে সিরিলিক বর্ণমালা দিয়ে। চীনে ল্যাটিন এবং মঙ্গোলীয় বর্ণমালা দিয়ে এ ভাষা লেখা হয়।
ইভি (Ewe)
এটি একটি নাইজার-কঙ্গো (Niger-Congo) ভাষা। দক্ষিণ-পূর্ব ঘানার ভোল্টা রিজিয়ন, দক্ষিণ-পশ্চিম টোগো এবং বেনিনের কিছু অংশের প্রায় ৩০ লাখ মানুষ এ ভাষা ব্যবহার করেন। ঘানা এবং টোগোতে এটি জাতীয় ভাষা।
এ ভাষাকে কেন্দ্র করে তৈরি ইভি গোষ্ঠীর মানুষদের বিশ্বাস তাদের পূর্বপুরুষরা বেনিনের কেটু (Ketu) শহর থেকে ঘানা এবং টোগোতে ছড়িয়ে পড়ে। ডাইড্রিখ হারম্যান ওয়েস্টারম্যান (১৮৭৫-১৯৫৬) নামের একজন জার্মান মিশনারি ভাষাবিদ এ ভাষার ডিকশনারি এবং ব্যাকরণ প্রকাশ করেন।
এবোনডো (Ewondo)
এটি একটি বান্টু (Bantu) ভাষা। ক্যামেরুনের প্রায় ৫ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। ক্যামেরুনের রাজধানী ইয়ানদে (Yaunde) এবং এর আশপাশে এ ভাষার প্রায় এক লাখ স্থানীয় বক্তা আছেন। প্রায় পৌনে পাঁচ লাখ মানুষ এ ভাষাকে সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ হিসেবে ব্যবহার করেন দক্ষিণ ক্যামেরুনে। সেখানে এটি লিংগুয়া ফ্রাংকা Lingua Fnanca হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ফারোয়েজ (Faroese)
এটি উত্তর জার্মান ভাষা। ফারো (Faroe) দ্বীপের প্রায় ৪৭ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। ভাষাটির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে আইসল্যান্ডিক ভাষা এবং নরওয়ের উত্তরাংশের উপভাষাগুলোর। তথাপি বিচ্ছিন্ন ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ফারোয়েজের আছে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পৃথক চরিত্র। ৮২৫ খ্রিস্টাব্দে ফারো দ্বীপটি আবিষ্কার করেন গ্রিম কামবান (Grim kamban)। এরপর নবম শতাব্দীতে এ দ্বীপে বসতি স্থাপন করে নরওয়ে ও ব্রিটিশ আইল (British Isles) থেকে আগত ভাইকিংরা।
বসতি স্থাপনকারীদের প্রধান ভাষা ছিল ওন্ড নর্স বা Donsk tunga (Danish tongue) । ৮০০ থেকে ১০৫০ খ্রিস্টাব্দ সময়কালে পূর্ব নর্স (East Norse) ও পশ্চিম নার্সের (West Norse) মধ্যে বিভাজন গড়ে ওঠে। পূর্ব নর্স থেকে তৈরি হয় সুইডিশ ও ড্যানিশ ভাষা আর পশ্চিম নর্স থেকে জন্ম নেয় নরওয়েজিয়ান, ফারোয়েজ এবং আইসল্যান্ডিক ভাষা।
ভাষাটি প্রথম লিখিত রূপ পায় লোককথা-উপকথার আকারে ১৪ শতকে যেগুলো আজও সেখানে জনপ্রিয়। ১৮৪৬ সালে Venceslaus Ulricus Hammershaimb (1819-1909) ফারোয়েজের একটি আদর্শ লিখিত রূপ তৈরি করেন। ১৯ শতকে আধুনিক ফারোয়েজ সাহিত্যের আবির্ভাব ঘটে। এ ভাষার প্রথম সংবাদপত্র Foringatioindi আত্মপ্রকাশ করে ১৮৯০ সালে।
ফিজিয়ান (Fijian)
এটি মালায়ো-পলিনেশিয়ান (Malayo-Polynesian) ভাষা পরিবারের একটি অস্ট্রোনেশিয়ান ভাষা। ফিজির প্রায় ৩২ লাখ এবং নিউজিল্যান্ডের কয়েক হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন।
ডেভিড কারগিন (১৮০৯-১৮৪৩) নামক এক স্কটিশ মিশনারি এবং ফিজিয়ান ভাষা বিশেষজ্ঞ ল্যাটিন বর্ণমালা ব্যবহার করে এ ভাষা লেখার একটি পদ্ধতি তৈরি করেন।
ফিলিপিনো (Filipino)
ফিলিপিনো ভাষা প্রকৃতপক্ষে তাগালোগ (Tagalog) নামক ফিলিপাইনের স্থানীয় ভাষার আদর্শ রূপ। Tagalog শব্দটি এসেছে Tagailog থেকে। Tagailog এসেছে taga (স্থানীয়) এবং ilog (নদী) শব্দ দুটি থেকে; এর অর্থ ‘নদীর বাসিন্দা’। ১৯৫৭ থেকে ফিলিপিনো ফিলিপাইনের জাতীয় ভাষা।
ফিনিশ (Finnish)
ফিনিশ (Suomi) একটি ফিনো-উজরিক (Finno-Ugric) ভাষা। ফিনল্যান্ড, সুইডেন, নরওয়ে, এস্তোনিয়া, কানাডা এবং রাশিয়ার প্রায় ৫০ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এ ভাষা লিখিত রূপ পায় ১৬ শতকে। ফিনিশ সাহিত্যের প্রথম কাজটি ছিল নিউ টেস্টামেন্টের অনুবাদ। এটি প্রকাশিত হয় ১৫৪৮ সালে আর অনুবাদটি করেছিলেন Michael Agricola.
আরও পড়ুনঃ