“বিশ্বনবী” আমাদের “বুকরিভিউ [Book Review]” সিরিজের ২১তম পর্ব, যেখানে আলোচিত হয়েছে প্রখ্যাত কবি ও লেখক গোলাম মোস্তফা রচিত বিশ্বনবী বইটি। এই অনন্য গ্রন্থে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনচরিত, মহান আদর্শ ও মানবতার প্রতি তাঁর অবদান কাব্যিক ভাষায় তুলে ধরা হয়েছে। বইটি শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, সাহিত্যিক সৌন্দর্যেও অতুলনীয়। আজকের ভিডিওতে বইটির ভাব, ভাষা ও পাঠের প্রভাব নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আমাদের সিরিজটি পাঠকদের জ্ঞান ও ভাবনার জগতে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বই তুলে ধরছে।
বিশ্ব নবী
গত শতকে বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি গোলাম মোস্তফা ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তিনি ভাষা ও সাহিত্যে বহু শাখায় অনবদ্য অবদান রেখে গেছেন। তবে তাঁকে চির স্মরণীয় করে রেখেছে নবী-জীবনী বিশ্ব নবী। সাহিত্য সমালোচকদের মতে এটাই কবি গোলাম গোস্তফার শ্রেষ্ঠ কীর্তি।
১৯৪২ সালের অক্টোবরে প্রথম প্রকাশের পর থেকে বইটি অদ্যাবধি বাংলা ভাষায় রচিত সিরাতগ্রন্থগুলোর মধ্যে পাঠকপ্রিয়তায় শীর্ষে রয়েছে। কবির জীবদ্দশায় ১৯৬৩ সালের জুলাই মাসে ‘বিশ্ব নবী’র অষ্টম সংস্করণ প্রকাশিত হয়। বস্তুত লেখক প্রগাঢ় নবীপ্রেম, ভাষার ভাব ও প্রাঞ্জলতা, পাঠের গভীরতা, পাণ্ডিত্য ও ইতিহাস-চেতনাই বাংলাভাষী মানুষের কাছে বইটির ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি করেছে। দীর্ঘ আট দশক পর্যন্ত ‘বিশ্ব নবী’ কিভাবে পাঠকের হৃদয়জুড়ে জায়গা দখল করে রইল—এক কথায় তার উত্তর দেওয়া কঠিন।
তবে সম্ভবত এর প্রধান কারণ ‘বিশ্বনবী’তে নবীজি (সা.)-এর প্রতি মুমিনের আবেগ-অনুভূতি ও লেখকের পাণ্ডিত্যে অপূর্ব সম্মিলন ঘটেছে। বইটির প্রথম সংস্করণে যার আভাস দিয়ে লেখক বলেন, ‘মহাপুরুষের জীবন শুধু ঘটনার ফিরিস্তি নহে; শুধু যুক্তি-তর্কের শয্যাও নহে; সে একটা ভক্তি, শ্রদ্ধা, বিস্ময় ও অনুভবের বস্তু; তাহাকে বুঝিতে হইলে একদিকে যেমন চাই সত্যের আলোক ও বিজ্ঞানের বিচারবুদ্ধি, অপরদিকে ঠিক তেমনি চাই ভক্তের দরদ, কবির সৌন্দর্যানুভূতি, দার্শনিকের অন্তর্দৃষ্টি, আর চাই প্রেমিকের প্রেম। আশেকে রাসুল না হইলে সত্যিকার রাসুলকে দেখা যায় না।’
তবে লেখক আবেগের বানে ভেসে যাননি; বরং তিনি জ্ঞান, বিজ্ঞান, ইতিহাস, যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে পৃথিবীর অন্য সব মহাপুরুষের ওপর তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের প্রয়াস পেয়েছেন। আর করতে গিয়ে তিনি অর্ধশতাধিক প্রামাণ্য গ্রন্থের সহায়তা নিয়েছেন। বইয়ের অষ্টম সংস্করণের শেষে বইগুলোর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বইয়ের তৃতীয় সংস্করণের ভূমিকায় লিখেছেন, “এই আলোকের যুগে ইসলাম ও হজরত মোহাম্মদকে উন্নতভাবে বুঝিবার সময় আসিয়াছে। ‘বিশ্বনবী’তে আছে সেই প্রয়াস। আধুনিক দর্শন ও বিজ্ঞান সম্বন্ধে খানিকটা জ্ঞান থাকা তাই পাঠক-পাঠিকার জন্য অপরিহার্য হইয়া পড়িয়াছে।
বিশিষ্ট লেখক, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ সৈয়দ আলী আহসান ‘বিশ্বনবী’র দশম সংস্করণে লিখেছেন, “কবি গোলাম মোস্তফার ‘বিশ্বনবী’ একটি আশ্চর্যরূপ সফল গ্রন্থ। হৃদয়ের আবেগ ও বিশ্বাস শব্দে যেভাবে সমর্পিত হয়েছে, অন্তরিক অনুভূতি বর্ণনায় যেভাবে উচ্চকিত হয়েছে এবং চিত্তের উপলব্ধিজনিত আনন্দ ভাষার আবহে যেভাবে জাগ্রত হয়েছে তার তুলনা আমাদের গদ্য সাহিত্যে সত্যিই বিরল। যদিও কখনো কখনো কবি ঐতিহাসিক ঘটনার প্রতিষ্ঠায় যুক্তি সমর্থন খুঁজেছেন কিন্তু সে সমস্ত যুক্তি উচ্ছ্বাসে সচকিত এবং বিশ্বাসের অবিচল নিষ্ঠায় প্রবহমান।”
শুধু মুসলিমরা নয়, অমুসলিম লেখক-সাহিত্যিকরাও ‘বিশ্বনবী’র প্রশংসা করেছেন। সাহিত্যিক মনোজ বসু বলেন, “আপনার ‘বিশ্বনবী’ পড়লাম। অপূর্ব! জাতির একটা বড় কাজ করলেন আপনি। আমি ও আমার মতো আরো অনেকে ধর্মে মুসলমান না হয়েও হজরতকে একান্ত আপনার বলে অনুভব করতে পারলাম। মহানবীর কাছে পৌঁছবার আপনার এ সেতু-রচনা আপনার তুলনীয় সাহিত্যরীতি। ভাষা, কবিত্ব-ঝংকার ও ভাব-লালিত্যে অপরূপ মহিমা লাভ করেছে।”
![বিশ্ব নবী - গোলাম মোস্তফা [ বুকরিভিউ [Book Review]] 4 আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন](https://banglagoln.com/wp-content/uploads/2023/01/google-news-300x225.jpg)
বিশ্ব নবী | গোলাম মোস্তফা :
আরও দেখুন: