আমি কোনো আগন্তুক নই || আহসান হাবীব

আমি কোনো আগন্তুক নই কবিতা – আমি কোনো আগন্তুক নই কবিতা পাঠটি মাদ্রাসা দাখিল বাংলা এসএসসি বাংলা তথা নবম শ্রেণীর বাংলা ও দশম শ্রেণীর বাংলা, বাংলা প্রথম পত্রের, সাহিত্যপাঠ বই এর অংশ।

 

আহসান হাবীব

 

আমি কোনো আগন্তুক নই

 

আহসান হাবীব বেঁচে থাকলে আজ শতবর্ষী হতেন। শতবর্ষী কবি দেখতে কেমন হতেন- আমি তা জানি না। নাসির আলী মামুনের তোলা মাথাভর্তি সাদা চুলের মধ্যে নিবিড়-মনস্ক এক কবির ফটোগ্রাফের সামনে যখন নিজের দু’টো চোখ রাখি, মনে হয়, আরো কত কাল পর এই কবির ধ্যান ভাঙবে! আমার মতো যাদের বয়স ৩০ পেরিয়েছে তারা আহসান হাবীবের শারীরিক আকৃতি, কথা বলা, হাঁটা-চলা বা সাহিত্য সম্পাদকের চেয়ারে বসা ব্যক্তিটি কেমন তা জানবেন না।

আশির দশকের কবিরা তাকে দেখেছেন ভালোভাবে; নব্বইয়ের কেউ কেউ দেখতেও পারেন। ১৯৮৫ সালে তিনি পরলোকে গিয়েছেন মাত্র। তবু তিনি আমাদের কাছে দূরের কোনো দ্বীপ। যাকে আমরা পেয়েছি ক্লাসের পাঠ্যবইয়ের ভেতর : ‘খেলাঘর পাতা আছে এই এখানে,/ স্বপ্নের ঝিকিমিকি আঁকা যেখানে।/ এখানে রাতের ছায়া ঘুমের নগর,/ চোখের পাতায় ঘুম ঝরে ঝরঝর।… বা আরো কোনো কিশোর কবিতা বা ছড়ায়। ক্লাসের পাঠ্যবই আমাদের এমন ধারণা দিয়েছে যে, এরা মহাকালের আকাশে গেঁথে থাকা মিটিমিটি তারা। এর বাইরে আর কী ভাবতে পারি!

পরবর্তিকালে যারা সাহিত্য পাঠের সঙ্গে নিবিষ্ট থেকেছেন, বা সাহিত্য নিয়ে লেখাপড়া করেছেন তারা আহসান হাবীবকে পড়েছেন, বুঝতে চেষ্টা করেছেন। ১০০ বছরে একজন কবির কাব্যগ্রন্থ টেবিল থেকে তো শেলফেও ওঠে না! আহসান হাবীবের জন্ম-মৃত্যু কোনোটাই তেমনভাবে পালন করা হয় না। সাহিত্য পাতায় বিশেষ ক্রোড়পত্রও প্রকাশিত হয় না। যেনো অনতিক্রম্য এক দূরত্বের সঙ্গে আমাদের আর সাঁকো বাঁধা সম্ভব নয়।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

যদি বাংলা কবিতার (পূর্ববঙ্গ/বাংলাদেশ) উত্তরাধিকার প্রসঙ্গে আমাদের আলোচনা চালিয়ে যেতে হয়, তাহলে আমারা আমাদের সূচনাবিন্দু হিসেবে কাকে গ্রাহ্য করি? সেটা চল্লিশের দশক। চল্লিশের দশকে আছেন- আলী আহসান, ফররুখ আহমদ, সুফিয়া কামাল, আবুল হুসেন এবং আহসান হাবীব। এরমধ্যে ফররুখ আহমদ ইসলামী পুনর্জাগরণের স্বপ্নে জাহাজের মাস্তুলে দড়ি বাঁধলেন; আলী আহসান অস্পষ্ট; সুফিয়া কামাল যতটা প্রগতিশীল আন্দোলনে যুক্ত কবিতায় ততটা আলোকিত নন; আবুল হুসেনকে দেখি মন্থর-স্বপ্নকাতর। এই প্রজন্মের মধ্যে একমাত্র আহসান হাবীবের মধ্যে দেখি একজন আধুনিক কবিকে।

যে কবির কবিতার বিষয় ও শৈলী ত্রিশোত্তর আধুনিক বাংলা কবিতার উত্তরসূরী। যিনি আবার ছাপ ফেলেছেন উত্তরকালের কবিদের উপর। বলা যায়, শামসুর রাহমান আহসান হাবীবের চলার পথে অনেকখানি হেঁটেছেনও। এই অঞ্চলে নগরমনস্ক কবিতার যাত্রা শুরু হয়েছিল তার কলমেই। আহসান হাবীবের জন্মশতবর্ষে এই কথাই বারবার মনে হচ্ছে।

 

আমি কোনো আগন্তুক নই

 

আসমানের তারা সাক্ষী
সাক্ষী এই জমিনের ফুল, এই
নিশিরাইত বাঁশবাগান বিস্তর জোনাকি সাক্ষী
সাক্ষী এই জারুল জামরুল, সাক্ষী
পূবের পুকুর, তার ঝাকড়া ডুমুরের পালেস্থিরদৃষ্টি
মাছরাঙা আমাকে চেনে
আমি কোনো অভ্যাগত নই
খোদার কসম আমি ভিনদেশী পথিক নই
আমি কোনো আগন্তুক নই
আমি কোনো আগন্তুক নই, আমি
ছিলাম এখানে, আমি স্বাপ্নিক নিয়মে
এখানেই থাকি আর
এখানে থাকার নাম সর্বত্রই থাকা–
সারা দেশে।

আমি কোনো আগন্তুক নই। এই
খর রৌদ্র জলজ বাতাস মেঘ ক্লান্ত বিকেলের
পাখিরা আমাকে চেনে
তারা জানে আমি কোনো অনাত্মীয় নই।
কার্তিকের ধানের মঞ্জরী সাক্ষী
সাক্ষী তার চিরোল পাতার
টলমল শিশির, সাক্ষী জ্যোৎস্নার চাদরে ঢাকা
নিশিন্দার ছায়া
অকাল বার্ধক্যে নত কদম আলী
তার ক্লান্ত চোখের আঁধার
আমি চিনি, আমি তার চিরচেনা স্বজন একজন। আমি
জমিলার মা’র
শূন্য খা খা রান্নাঘর শুকনো থালা সব চিনি
সে আমাকে চেনে
হাত রাখো বৈঠায় লাঙ্গলে, দেখো
আমার হাতের স্পর্শ লেগে আছে কেমন গভীর। দেখো
মাটিতে আমার গন্ধ, আমার শরীরে
লেগে আছে এই স্নিগ্ধ মাটির সুবাস।

আমাকে বিশ্বাস করো, আমি কোনো আগন্তুক নই।
দু’পাশে ধানের ক্ষেত
সরু পথ
সামনে ধু ধু নদীর কিনার
আমার অস্তিত্বে গাঁথা। আমি এই উধাও নদীর
মুগ্ধ এক অবোধ বালক।

 

 

 

কবিতাটি নিয়ে বিস্তারিত ঃ

 

আরও দেখুন:

Leave a Comment