কয়েকটি ব্যক্তিগত পত্ৰের নমুনা

আজকে আমরা কয়েকটি ব্যক্তিগত পত্ৰের নমুনা নিয়ে আলোচনা করবো। যা বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি এর পত্র রচনা অংশের অন্তর্গত।

 

কয়েকটি ব্যক্তিগত পত্ৰের নমুনা

 

কয়েকটি ব্যক্তিগত পত্ৰের নমুনা

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

ক. মনে কর তোমার নাম দুরন্ত । তোমার বন্ধুর নাম রাহুল। সে খুলনায় থাকে। বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তার কাছে একটি পত্র লেখ।

পল্লবী,ঢাকা

২৩.০১.২০০২

প্রিয় রাহুল,

আমার শুভেচ্ছা নিও। অনেক দিন হলো তোমার কোনো খবর পাই না। আশা করি ভালো আছ। গতদিন আমাদের স্কুলে ‘বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা’ বিষয়ে একটি সেমিনার হয়ে গেল। সেই সেমিনারেই বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব সম্পর্কে অনেক ভালো ভালো কথা শুনলাম। তোমাকে সেগুলো জানাতেই এ চিঠি লিখতে বসেছি।

তুমি তো জানো, গাছ আমাদের পরম বন্ধু। আমরা শ্বাস-প্রশ্বাসে অক্সিজেন গ্রহণ করি, কার্বন-ডাই- অক্সাইড ত্যাগ করি। আর গাছ আমাদের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং বিষাক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে নেয়, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। কিন্তু মানুষ তার প্রয়োজনে প্রচুর গাছ কাটছে। বন উজাড় হচ্ছে। তাতে প্রকৃতি ও পরিবেশের ভীষণ ক্ষতি হচ্ছে।

তুমি হয়তো জানো, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য একটি দেশের মূল ভূ-খণ্ডের কমপক্ষে পঁচিশ ভাগ বন থাকা দরকার। আমাদের দেশে তা নেই। বরং যা আছে তা-ও নির্বিচারে ধ্বংস করা হচ্ছে। সভ্যতা ও উন্নয়নের ফলে সৃষ্টি হচ্ছে কলকারখানা। রাস্তায় যানবাহনের চলাচল বাড়ছে। কলকারখানা ও গাড়ির ধোঁয়ায় বাতাসে বাড়ছে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ। ক্ষয় হচ্ছে বাতাসের ওজন স্তর। সৃষ্টি হচ্ছে গ্রিনহাউজ অ্যাফেক্ট। ফলে মানুষের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে। দেখা দিচ্ছে নানা রোগ-ব্যাধি।

এসবই ঘটছে বাতাসে অক্সিজেনের অভাবের কারণে। তাই বেশি বেশি গাছ লাগালে বাতাসে অক্সিজেনের ঘাটতি পূরণ হবে। প্রকৃতির ভারসাম্য ফিরে আসবে। পরিবেশ দূষণমুক্ত হবে। তা ছাড়া আমাদের জ্বালানির চাহিদার বেশির ভাগ পূরণ হয় বৃক্ষের মাধ্যমে। কাঠ থেকে আমরা বাড়িঘর এবং আমাদের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র প্রস্তুত করে থাকি ।

সুতরাং ভবিষ্যতের কথা ভেবে এখনই আমাদের অধিক হারে বৃক্ষরোপণ করা প্রয়োজন। বাড়ির চারপাশে, রাস্তার দুপাশে, পতিত জমিতে প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগাতে হবে। বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জনগণকে আরও সচেতন করে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে, বৃক্ষ বাঁচলে আমরা বাঁচব।

আজ এই পর্যন্তই। তোমার মা-বাবাকে আমার শ্রদ্ধা জানিও। চিঠি দিও।

ইতি,

তোমার বন্ধু

দুরন্ত

 

কয়েকটি ব্যক্তিগত পত্ৰের নমুনা

 

খ. তোমার বন্ধু মোহনার মা হঠাৎ মারা গেছেন। তাকে সান্ত্বনা জানিয়ে একটি পত্র লেখ।

লক্ষ্মীবাজার, ঢাকা।

২৬.০৭.২০০২

সুপ্রিয় মোহনা,

কিছুক্ষণ আগে তোমার চিঠি পেয়েছি। চিঠি পড়ে আমি স্তম্ভিত। তুমি লিখেছ তোমার মায়ের আকস্মিক মৃত্যুর কথা। আমার কাছে এখনো সব অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো! আমি খুবই মর্মাহত। তোমাকে সান্ত্বনা দেবার মতো ভাষা আমার নেই। শুধু জেনো, তোমার এ মর্মবেদনার আমিও সমান অংশীদার।

ছোটবেলায় আমি মাকে হারিয়েছি। মায়ের আদর-ভালোবাসা কাকে বলে জানতাম না। তোমার মা আমার সেই অনুভূতি জাগিয়েছিলেন। তাই তাঁকে আমি মা বলে ডেকেছি। আজ আমি আবার মা-হারা হলাম । মানুষ মরণশীল – এই নির্মম সত্যটা আমাদের জন্য বড়ই বেদনাদায়ক। কাজেই দুঃখ না করে মায়ের আত্মার শান্তির জন্য তিনি যেমনটি ভেবেছিলেন ভবিষ্যতে আমাদের সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে। পড়াশোনায় আত্মনিয়োগ করো। বাবা ও ছোট ভাইয়ের প্রতি খেয়াল রেখো। কয়েক দিন পরে তোমার দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষা। নিজের পড়ার কাজে ডুবে থাকলে এ বেদনা হয়তো ধীরে ধীরে প্রশমিত হবে।

পরীক্ষার কারণে আমি তোমার এই দুঃসময়ে কাছে থাকতে পারলাম না, এটাও আমার জন্য খুব কষ্টকর। কায়মনোবাক্যে কামনা করি, তুমি এই প্রতিকূলতা যেন কাটিয়ে উঠতে পারো। আমার আন্তরিক সমবেদনা রইল। আল্লাহ তোমার সহায় হোন ।
তোমার বাবাকে সালাম জানিও। ছোট ভাই সিয়ামের প্রতি রইল আমার অসীম স্নেহ।

ইতি,
তোমার বন্ধু
সুমনা ।

 

কয়েকটি ব্যক্তিগত পত্ৰের নমুনা

 

গ. মনে কর, তোমার ছোট ভাই হাসান ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। তাকে ‘পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন ব্যক্তি তথা জাতির জন্য হুমকিরূপ’ এই মর্মে একটি পত্র পাঠাও ।

সিদ্ধিরগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জ

১৭.০৮.২০০২

স্নেহের হাসান,

আমার আদর নিও। গতকাল তোমার চিঠি পেয়েছি। তুমি ও বাড়ির সবাই ভালো আছ জেনে খুশি হয়েছি।

চিঠিতে জানতে পারলাম আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে তোমার পরীক্ষা শুরু হবে। তোমার পড়াশোনা নিশ্চয়ই ভালোভাবে চলছে? মনোযোগ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো পড়ো এবং বারবার লেখো। নিজের ভুলগুলো নিজেই সংশোধন করো। এতে তোমার হাতের লেখা যেমন সুন্দর হবে, তেমনি লেখায় বানান ভুলও কমে যাবে। ফলে পরীক্ষার খাতায় বেশি নম্বর পাবে।

আজকাল অনেক শিক্ষার্থীই ক্লাসে মনোযোগ দিয়ে শিক্ষকদের কথা শোনে না। বাড়িতেও ঠিকমতো পড়ালেখা করে না। তারা পরীক্ষার হলে গিয়ে নকল করে। কেউ কেউ নকল করে ভালোভাবে পাসও করে যায়। কিন্তু প্রকৃত শিক্ষা তাদের হয় না। ছাত্ররা দেশের ভবিষ্যৎ। আগামীতে তারাই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেবে। তাই পরিশ্রম ও সাধনার মাধ্যমে তাদের নিজেকে সব দিক দিয়ে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। পরীক্ষায় নকল করা একটি সামাজিক ব্যাধি। এই ব্যাধি জাতিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। নকলের মতো দুর্নীতি বা পাপের ওপর ভিত্তি করে জীবনে কখনোই সাফল্য লাভ করা যায় না ।

আশা করি, তুমি শিক্ষকদের উপদেশ মতো পড়াশোনার প্রতি গভীর মনঃসংযোগ করবে। মানুষের মতো মানুষ হয়ে আমাদের পরিবার ও দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে। তোমার কৃতিত্ব ও গৌরব কামনা করি। ভালো থেকো। বাবা ও মাকে আমার সালাম জানিও।

ইতি,

বাঁধন ।

কয়েকটি ব্যক্তিগত পত্ৰের নমুনা

 

ঘ. কম্পিউটার শিক্ষার গুরুত্ব বর্ণনা করে তোমার ছোট বোন বনানীকে একটি পত্র লেখ।

আহসান রোড
বগুড়া
১৫.০৭.২০২২

প্রিয় বনানী,

আমার স্নেহাশিস নিও। অনেক দিন পর তোমার চিঠি পেলাম। তুমি ক্লাসে প্রথম হয়েছ জেনে খুব আনন্দিত হয়েছি। আমি আরও খুশি হয়েছি তুমি ক্লাসের পড়াশোনার বাইরে কম্পিউটার শিখছ বলে।

বর্তমান যুগ হচ্ছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ। আর প্রযুক্তির এ যুগে সর্বোচ্চ স্থান দখল করে আছে কম্পিউটার। কম্পিউটার ছাড়া আধুনিক জীবন-যাপন কল্পনা করা যায় না। শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, ব্যবসা- বাণিজ্য, অফিস-আদালত, চিকিৎসা, বিনোদন সব ক্ষেত্রেই কম্পিউটারের ব্যবহার আজ অপরিহার্য।

তাই কর্মক্ষেত্রেও এখন কম্পিউটার জানা লোকদের অগ্রাধিকার। কম্পিউটার-অভিজ্ঞ লোক বেকার বসে থাকে না। তাই বর্তমান শিক্ষা-ব্যবস্থায় কম্পিউটার শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আমাদের প্রত্যেকেরও উচিত অন্যান্য বিষয়ের সাথে কম্পিউটার শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া। তুমি ক্লাসের পড়াশোনার পাশাপাশি কম্পিউটার ভালোভাবে আয়ত্ত করবে, আমার এই শুভ কামনা রইল ।

আজ আর না। মা ও বাবাকে আমার সালাম দিও। তুমি ভালো থেকো।

ইতি,
তোমার ভাইয়া
রনি

কয়েকটি ব্যক্তিগত পত্ৰের নমুনা

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment