আজকে আমরা সমার্থক শব্দ প্রয়োগে বাক্য রচনা আলোচনা করবো। যা বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি এর অন্তর্গত।
সমার্থক শব্দ প্রয়োগে বাক্য রচনা
বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডারে এমন কতকগুলো শব্দ আছে যেগুলো একই অর্থ বহন করে। এ রকম সম-অর্থজ্ঞাপক ভিন্ন শব্দকে সমার্থক শব্দ, সমার্থশব্দ, বিকল্পশব্দ বা প্রতিশব্দ বলে।
একই অর্থবহ শব্দের মধ্যে বৈচিত্র্য থাকে। আকৃতি, ব্যঞ্জনা ও গাম্ভীর্যের দিক থেকে এসব শব্দের পার্থক্য থাকে। সমার্থক শব্দ জানা থাকলে লেখার বা বলার সময় একই শব্দ বার বার ব্যবহার করতে হয় না। ফলে বক্তার বা লেখকের মনের ভাব অনেক সুন্দর ও আকর্ষণীয়ভাবে প্রকাশিত হয়।

নিচে সমার্থক শব্দ বা প্রতিশব্দের কতিপয় দৃষ্টান্ত বাক্যে প্রয়োগ করে দেখানো হলো :
১. অগ্নি : ঘরে আগুন লেগে অগ্নিদগ্ধ হয়ে তিনজন মারা গেছে।
অনল : ‘সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু অনলে পুড়িয়া গেল।’
আগুন : ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে।’
বহি : ‘জাগো নারী জাগো বহ্নিশিখা। ‘
বৈশ্বানর : দেখতে দেখতে নিমতলি বস্তিটি বৈশ্বানরের উদরে চলে গেল ।
২. অশ্ব : অশ্বখুরে ধুলা উড়িয়ে অশ্বারোহী ছুটে চলে গেল।
ঘোটক : জগা ধোপার ঘোটক তার মতোই দুর্বল আর হাড় জিরজিরে
ঘোড়া : ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিল। ‘
তুরঙ্গ : দুরন্ত গতিতে তুরঙ্গ ছুটে চলেছে।
বাজি : নবাবের আদেশে বাজিপাল বাজি নিয়ে হাজির হলো।
৩. অনুমতি : আমার ঘরে ঢুকতে তোমাকে অনুমতি নিতে হবে না।
আজ্ঞা : আসতে আজ্ঞা হোক ।
আদেশ : “আদেশ করেন যাহা মোর গুরুজনে, আমি যেন সেই কাজ করি ভালো মনে ৷ ”
নির্দেশ : স্কুলের বেতন পরিশোধ করার জন্য প্রধান শিক্ষক ছাত্রদের নির্দেশ দিলেন।
হুকুম : ম্যাজিস্ট্রেটের হুকুমে পুলিশ আসামিকে কাঠগড়ায় উঠাল।
৪. আকাশ : আকাশে আজ মেঘ নেই।
আসমান : ‘নীল সিয়া আসমান লালে লাল দুনিয়া। ‘
গগন : ‘গগনে গরজে মেঘ ঘন বরষা। ”
দ্যুলোক: “ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া, উঠিয়াছি চির-
বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাতৃর।”
নভ : ‘হেথা শ্যামল দূর্বাদল, নবনীল নভস্তল। ‘
৫. আকাঙ্ক্ষা : মানুষের আকাঙ্ক্ষার শেষ নেই।
ইচ্ছা : ইচ্ছা থাকলে উপায় হয় ।
কামনা : বাংলাদেশের কল্যাণ কামনা করি।
বাঞ্ছা : ঈশ্বর তোমার মনোবাঞ্ছা পূরণ করুন।
সাধ : ‘আমার সাধ না মিটিল, আশা না পুরিল সকলই ফুরায়ে যায় মা।”
৬. উত্তম : ‘উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সাথে।’
উপাদেয়: বহুদিন এমন উপাদেয় খাবার খাই নি ।
বরেণ্য : শামসুর রাহমান একজন দেশবরেণ্য কবি।
ভালো : বকুল খুব ভালো ছেলে ৷
শ্রেষ্ঠ : রবীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ কোনটি তা বলা কঠিন ।
৭. কুল : বরুণের তিন কুলে কেউ নেই ।
গোত্র: তোমার গোত্র পরিচয় দাও।
জাত : ‘সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে।’
জাতি : ‘জগৎ জুড়িয়া আছে এক জাতি, সে জাতির নাম মানুষ জাতি।’
বর্ণ : মানুষে মানুষে বর্ণভেদ থাকা ভালো না।
৮. আলয় : শিক্ষার জন্য বিদ্যালয়ে যেতে হয়।
গৃহ : ‘গৃহহীনে গৃহ দিলে আমি থাকি ঘরে। ত :
ঘর : ‘আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা, আমি বাঁধি তার ঘর। ‘
ধাম : এ ধরাধাম ছেড়ে একদিন সকলকেই চলে যেতে হবে।
বাড়ি : ‘আমার বাড়ি যাইও ভ্রমর বসতে দেব পিঁড়ে।’
৯. চন্দ্র : আজ চন্দ্রগ্রহণ হবে।
চাঁদ : ‘পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।’ :
শশাঙ্ক : শশাঙ্কে কলঙ্করেখা কে দিয়েছে এঁকে?
শশধর : শশধরের পূর্ণ আলোয় পৃথিবী ঝলমল করছে।
শশী : ‘একলা শশী জাগিলে আকাশে বাতায়ন খুলে দিয়ো । ”
১০. জল : ‘জল পড়ে পাতা নড়ে ৷ ‘
পয়ঃ : এ শহরের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো নয় ।
পানি : বিশুদ্ধ পানির অপর নাম জীবন।
বারি : বর্ষার বারিধারায় পৃথিবী সজীব হয়ে উঠেছে।
সলিল : ঝড়ে লঞ্চ ডুবে যাওয়ায় অনেক লোকের সলিল-সমাধি হলো।
১১. অর্থ : জগতে অর্থই সকল অনর্থের মূল।
কড়ি : পার ঘাটেতে এসে দেখি পারের কড়ি নাই ।
টাকা : টাকা হলে বাঘের দুধও মেলে।
দৌলত : ‘দৌলত পানিতে ফেলে নেকি কর। ‘
ধন : ‘ধনের মানুষ বড় নয়, মনের মানুষ বড় ।
১২. গাঙ : মরা গাঙে বান এসেছে।
তটিনী : তটিনীর তরঙ্গে ভাসালাম এবার ভেলা।
তরঙ্গিণী : ঘর বেঁধেছি শেরি নামক তরঙ্গিণীর তীরে।
নদী : ‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে। ‘
প্রবাহিণী : প্রবাহিণী ছুটে চলে সাগরের পানে।
১৩. জন : জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস।
নর : নর-বানরের যুদ্ধে রাবণ নিহত হয়।
মানব : বিজ্ঞানীরা মানব জাতির কল্যাণে নিরলস গবেষণা করে চলেছেন।
মানুষ : মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব।
লোক : ‘লোকে বলে বলেরে ঘর-বাড়ি ভালা না আমার। ত
১৪. পর্বত : ‘পর্বতমালা আকাশের পানে চাহিয়া না কহে কথা। ’
গিরি : ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার। ‘
পাহাড় : ‘আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায় ওই। ‘
ভূধর : ‘আছ অনল-অনিলে, চিরনভোনীলে ভূধর সলিলে গহনে।’
শৈল : শৈলশৃঙ্গ তুষারে ঢাকা পড়েছে।
১৫. পাখি : ‘পাখিসব করে রব, রাতি পোহাইল। ‘
খগ : ‘ময়ূর-ময়ূরী সারী-শুক আদি খগ। ‘
খেচর : খেচর চলেছে উড়ে নৈঋত কোণে ।
পঙ্খি : ‘উইড়া যায়রে হংসপঙ্খি, পইড়া রয়রে ছায়া। ‘
বিহঙ্গ : ‘যাবার সময় হলো বিহঙ্গের। ‘
১৬. পৃথিবী : পৃথিবীর প্রায় ত্রিশ কোটি লোক বাংলা ভাষায় কথা বলে।
জগৎ : এই জগতে আমার আপন বলতে কেউ নেই ।
ধরা : ‘শরতে ধরাতল শিশিরে ঝলমল। ‘
বসুন্ধরা : ‘ধন-ধান্যে পুষ্পে ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা।
বিশ্ব : ‘বিশ্ব জোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র।’
ভুবন : ‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে।’
১৭. ফুল : সবাই ফুল পছন্দ করে।
কুসুম : ‘কাননে কুসুম-কলি সকলই ফুটিল।’
পুষ্প : ‘পুষ্প আপনার জন্য ফোটে না।”
প্রসূন : মরি মরি! এ কী প্রসূন শোভায় সেজেছে আমার গৃহ।
১৮ : বন : বন্যেরা বনে সুন্দর ।
অটবি : ‘অটবি বায়ুবশে উঠিত সে উছসি।’
অরণ্য : ‘দাও ফিরিয়ে সে অরণ্য, লও এ নগর।
জঙ্গল : জঙ্গলে বাঘ থাকে।
বনানী : ‘স্তব্ধ শরৎ দুপুরে ঘন বনানীর মধ্যে ঘুঘুর ডাক শুনিয়াছে। ‘
১৯. বাতাস : ঝড়ো বাতাস সব লণ্ডভণ্ড করে দিল।
পবন : পবনবেগে সে গাড়ি চালিয়ে দিল।
বায় : ‘দখিনা বায় মাগিছে বিদায় শাল বীথিকার কাছে। ‘
বায়ু : ডাক্তার তাকে বায়ু পরিবর্তন করতে বলেছেন।
সমীর : ‘গঙ্গার তীর স্নিগ্ধ সমীর জীবন জুড়ালে তুমি।’
২০. বিদ্যুৎ : বিদ্যুৎ ছাড়া মানুষের দৈনন্দিন জীবন এখন অকল্পনীয় ।
ক্ষণপ্রভা : ক্ষণিকের ক্ষণপ্রভায় তাকে এক ঝলক দেখলাম ।
তড়িৎ : লোকটি তড়িতাহত হয়ে মারা গেল।
বিজলি : বিজলিবাতিতে পুরো শহরটা যেন চমকাচ্ছে।
বিজুরি : ‘বিজুরি ঝলসে যেন মনে।’
২১. রাত : দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছি, সুখের নাগাল পাই না ।
নিশি : নিশি ভোর হয়েছে, এবার আঁখি খোল।
নিশীথ : ‘নিশীথে যাইও ফুল বনে। ‘
নিশীথিনী : ‘মধুর হলো বিধুর হলো মাধবী নিশীথিনী।’
যামিনী : ‘কেন যামিনী না যেতে জাগালে না ।
২২. রাজা : এক দেশে ছিল এক রাজা।
অধিপতি : বাবর ছিলেন ভারতের প্রথম মুঘল অধিপতি ।
নৃপতি : আলেকজান্ডারের মতো বীর নৃপতি বিশ্বে বিরল।
ভূপতি : ভূপতিকে দেখে মন্ত্রিবর্গ উঠে দাঁড়ালেন।
সম্রাট : সম্রাট অশোক ছিলেন জগদ্বিখ্যাত বীর।
২৩. সাগর : এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা ।
জলধি : উত্তাল জলধি বক্ষে কার ক্ষুদ্র তরীখানি নির্বিঘ্নে চলেছে পারে?
পাথার : অকূল পাথারে আমি ভাসিয়েছি আমার তরী।
সমুদ্র : সাত সমুদ্র তের নদীর পারে আছে এক রূপকথার দেশ।
সিন্ধু : “ওই মহাসিন্ধুর ওপার থেকে কী সংগীত ভেসে আসে!”
২৪. সুন্দর : আমাদের দেশটি খুব সুন্দর।
মনোরম : মনোরম ধরণীর তুলনা হয় না।
মনোহর : তার মনোহর চেহারা দেখে সবাই মুগ্ধ হয় ।
রমণীয় : বাহ। কী রমণীয় স্থান!
শোভন : তার পোশাক-আশাক চাল-চলন বেশ শোভন ৷
২৫. সোনা : সোনা অত্যন্ত মূল্যবান ধাতু।
কনক : ‘কনককষিত কান্তি কমনীয় কায় ।
কাঞ্চন : প্রাচীনকালে আমাদের দেশে কাঞ্চন মুদ্রার প্রচলন ছিল।
স্বর্ণ : স্বর্ণের দাম আকাশচুম্বী।
হিরণ : হিরণ জরির ওড়না গায়। ”
২৬. সূর্য : ‘পূর্বদিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্তলাল।
অরুণ : অরুণ কিরণ দেয় মধ্যগগনে।
দিবাকর: মেঘে মেঘে ঢেকে গেছে দিবাকর।
ভানু : ভানুর কৃপায় শীতের প্রকোপ থেকে উলঙ্গ ছেলেটি রক্ষা পেল ।
রবি : ‘রবির কিরণ লেগে করে ঝিকিমিকি। ”
২৭. সৰ্প : ‘সর্প হয়ে দংশন করো, ওঝা হয়ে ঝাড়ো। ‘
অহি : অহি-নকুলের যুদ্ধ লেগেছে।
আশীবিষ : ‘কি যাতনা বিষে বুঝিবে সে কিসে, কভু আশীবিষে দংশেনি যারে।’
নাগ : ‘সর্বাঙ্গে দংশিল মোরে নাগ নাগবালা। ‘
ফণী : প্রবাদ আছে- ফণীর মাথায় মণি থাকে।
সাপ : বাপরে বাপ! কত্তো বড় সাপ!
২৮. মাথা : তার মাথায় অনেক চুল ।
মস্তক : মস্তিষ্ক আছে বলেই মস্তকের দাম।
মুণ্ডু : কথায় কথায় সে কেন তোমার মুণ্ডুপাত করে?
মুড়ো : বাবা মাছের মুড়োটি ছেলের পাতে তুলে দিলেন ।
শির : ‘শির নেহারি আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির।
২৯. চোখ : তোমার চোখ দুটি খুব সুন্দর।
আঁখি : ‘তোমার আঁখির মতো আকাশের দুটি তারা।’
চক্ষু : চক্ষু থাকতে অন্ধের মতো চলো কেন?
নয়ন : ‘নয়ন ভরা জল গো তোমার আঁচল ভরা ফুল। ‘
নেত্র : তার নেত্র থেকে টপটপ করে অশ্রু পড়তে লাগল ।
৩০. কান : কান টানলে মাথা আসে।
কর্ণ : তার কথায় কর্ণপাত করো না।
শ্ৰুতি : তোমার কথা বাবার কর্ণগোচর হয়নি।
শ্রুতিপথ : চিৎকার করে বলো নয়তো তার শ্রুতিপথে ঢুকবে না ।
কর্ম অনুশীলন
১. বাজারে আগুন লেগেছে। ঝড়ো বাতাস বইছে। পানি দিতে হবে । দমকল বাহিনীর লোকজন এসেছে। আগুন লকলকিয়ে আকাশের দিকে উঠছে। উজ্জ্বল আগুনে অদ্ভুতভাবে সবকিছু পুড়ছে।
—উপরের অনুচ্ছেদটুকু ভালো করে পড়। অনুচ্ছেদে যেসব শব্দের সমার্থক শব্দ তোমার জানা আছে সেগুলোর সমার্থক শব্দ লেখ এবং দুটি করে বাক্য বানাও ৷
২. মানুষ-এর মাথা থেকেই সব নির্দেশ আসে। চোখ দেখে, কান শোনে আর ঠোঁট নড়ে নড়ে কথা বলে । সব ইচ্ছা-অনিচ্ছা, দুঃখ ও আনন্দ-এর বার্তা আসে মাথা থেকে।
—অনুচ্ছেদটিতে মোটাদাগের যেসব শব্দ আছে, সেগুলোর প্রতিশব্দ লিখে মনের মতো বাক্য তৈরি কর।
আরও দেখুনঃ