প্রার্থী কবিতা । সুকান্ত ভট্টাচার্য

আজকের আলোচনার বিষয়ঃ প্রার্থী কবিতা । যা সাহিত্য কণিকার অন্তর্গত। এটি সুকান্ত ভট্টাচার্য রচিত কবিতা।‘প্রার্থী’ কবিতাটি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘ছাড়পত্র’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত।

 

 

প্রার্থী কবিতা । সুকান্ত ভট্টাচার্য 1 e1691216168858 প্রার্থী কবিতা । সুকান্ত ভট্টাচার্য

 

প্রার্থী কবিতা । সুকান্ত ভট্টাচার্য

হে সূর্য। শীতের সূর্য।

হিমশীতল সুদীর্ঘ রাত তোমার প্রতীক্ষায়

আমরা থাকি,

যেমন প্রতীক্ষা করে থাকে কৃষকের চঞ্চল চোখ

ধানকাটার রোমাঞ্চকর দিনগুলির জন্যে।

হে সূর্য, তুমি তো জানো,

আমাদের গরম কাপড়ের কত অভাব!

সারারাত খড়কুটো জ্বালিয়ে,

এক টুকরো কাপড়ে কান ঢেকে,

কত কষ্টে আমরা শীত আটকাই।

সকালের এক টুকরো রোদ্দুর-

এক টুকরো সোনার চেয়েও মনে হয় দামি।

ঘর ছেড়ে আমরা এদিক-ওদিকে যাই-

এক টুকরো রোদ্দুরের তৃষ্ণায় ।

হে সূর্য।

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

তুমি আমাদের স্যাঁতসেঁতে ভিজে ঘরে

উত্তাপ আর আলো দিও,

আর উত্তাপ দিও

রাস্তার ধারের ঐ উলঙ্গ ছেলেটাকে।

হে সূর্য।

তুমি আমাদের উত্তাপ দিও-

শুনেছি, তুমি এক জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ড,

তোমার কাছে উত্তাপ পেয়ে পেয়ে

একদিন হয়তো আমরা প্রত্যেকেই

এক একটা জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ডে পরিণত হব।

তারপর সেই উত্তাপে যখন পুড়বে আমাদের জড়তা,

তখন হয়তো গরম কাপড়ে ঢেকে দিতে পারব

রাস্তার ধারের ঐ উলঙ্গ ছেলেটাকে।

আজ কিন্তু আমরা তোমার অকৃপণ উত্তাপের প্রার্থী।

 

প্রার্থী কবিতা । সুকান্ত ভট্টাচার্য 2 e1691216209532 প্রার্থী কবিতা । সুকান্ত ভট্টাচার্য

 

শব্দার্থ ও টীকা

প্ৰাৰ্থী – প্রার্থনাকারী, আবেদনকারী।

হিমশীতল – তুষারের মতো ঠান্ডা ।

স্যাঁতসেঁতে – ভেজা ভাবযুক্ত।

অগ্নিপিণ্ড – আগুনের গোলা।

জড়তা – জড়ের ভাব,আড়ষ্টতা।

অকৃপণ – কৃপণ নয় এমন। উদার।

পাঠের উদ্দেশ্য

এ কবিতা পাঠ করে শিক্ষার্থীদের মনে অবহেলিত, বঞ্চিত ও দীন-দরিদ্র মানুষের প্রতি মমতা সৃষ্টি হবে। অন্নহীন, বস্ত্রহীন ও আশ্রয়হীন মানুষের দুর্দশায় তারা ব্যথিত হবে ।

পাঠ-পরিচিতি

‘প্রার্থী’ কবিতাটি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘ছাড়পত্র’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত। আমাদের এই পৃথিবীতে শক্তির মূল উৎস সূর্য। সূর্য যে তাপ বিকিরণ করে তার সাহায্যেই ভূপৃষ্ঠে উদ্ভিদ, জীবজন্তু ও মানুষ জীবনধারণ করে। প্রচণ্ড শীতে সূর্যের এই উত্তাপের জন্য সারারাত অপেক্ষা করে বস্ত্রহীন, আশ্রয়হীন শীতার্ত মানুষ । কবি সমাজের নিচুতলার মানুষের প্রতি গভীর মমতা থেকে সূর্যের কাছে উত্তাপ প্রার্থনা করেছেন। অবহেলিত ও বঞ্চিত শিশুর প্রতি তাঁর অসীম মমতা। কবি এই শিশুদের কল্যাণে সূর্যের অবদান থেকে প্রেরণা নিতে চান । তিনি এমন সমাজ গড়তে চান— যাতে বস্ত্রহীন শীতার্ত মানুষের জীবন থেকে সব দুঃখ চিরতরে ঘুচে যায় ।

কবি-পরিচিতি

সুকান্ত ভট্টাচার্য ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায়। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের এই সন্তান অল্প বয়সেই শোষিত-নিপীড়িত মানুষের মুক্তির আন্দোলনে নিজেকে সম্পৃক্ত করে তোলেন। বামপন্থি-বিপ্লবী কবি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। বঞ্চনাকাতর মানুষের জীবন-যন্ত্রণার চিত্র যেমন তাঁর কবিতায় অঙ্কিত হয়েছে তেমনি প্রতিবাদ ও বিদ্রোহের সুর উচ্চারিত হয়েছে।

তিনি সেকালের দৈনিক পত্রিকা ‘স্বাধীনতা’র কিশোর সভা অংশের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। আমৃত্যু তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর কবিতায় মানবমুক্তির জয়গান বলিষ্ঠভাবে উচ্চারিত হয়েছে। তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থের নাম : ‘ছাড়পত্র’,‘ঘুম নেই’, ‘পূর্বাভাস’, ‘অভিযান’, ‘হরতাল’ ও ‘গীতিগুচ্ছ”। সুকান্ত ভট্টাচার্য ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র একুশ বছর বয়সে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

কৰ্ম-অনুশীলন

ক. ‘সামাজিক বৈষম্য জাতীয় অগ্রগতির পথে প্রধান বাধা’ – এই মতের পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্কের আয়োজন করো (দলগত কাজ)।

খ. গত সপ্তাহে কে, কী ধরনের ভাল কাজ করেছ, এর একটি তালিকা তৈরি করে শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন করো (একক কাজ)।

 

প্রার্থী কবিতা । সুকান্ত ভট্টাচার্য 3 প্রার্থী কবিতা । সুকান্ত ভট্টাচার্য

 

নমুনা প্রশ্ন

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১. কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য কত বছর বয়সে মারা যান ?

ক. ২১

খ. ২২

গ. ২৩

ঘ. ২৫

২. সকালের এক টুকরো রোদকে কার সাথে তুলনা করা হয়েছে ?

ক. কৃষকের চঞ্চল চোখ

খ. এক টুকরো সোনা

গ. এক টুকরো গরম কাপড়

ঘ. এক জলন্ত অগ্নিপিণ্ড

৩. সূর্যের কাছে রাস্তার ধারের উলঙ্গ ছেলেটার জন্য উত্তাপ চাওয়ার মধ্যে কবির যে অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে তা হলো—

i. সহযোগিতা

ii. সহমর্মিতা

iii. সহনশীলতা

নিচের কোনটি সঠিক ?

ক. i

খ. iii

গ. ii

ঘ. i, ii ও iii

উদ্দীপকটি পড়ে ৪ ও ৫ নম্বর প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

লিয়াকতের বাবা অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। সেই থেকে সে প্রচণ্ড শোক বুকে নিয়ে ঢাকা শহরে রিকশা চালিয়ে তিল তিল করে সঞ্চয় করে কিছু টাকা। আর সে টাকা দিয়ে তার গ্রামের বাড়িতে গড়ে তোলে একটি হাসপাতাল; যাতে কোনো অসহায়, দুঃস্থ মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা না যায় ।

৪. লিয়াকতের কার্যক্রমে ‘প্রার্থী’ কবিতার যে দিকটি প্রকাশিত হয়েছে তা হলো—

i. মহানুভবতা

ii. মানবতা

iii. মমত্ববোধ

নিচের কোনটি সঠিক ?

ক. i

খ.  iii

গ. ii

ঘ. i, ii ও iii

৫. ‘প্রার্থী’ কবিতায় কবি সুকান্তের জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ড হওয়া আর উদ্দীপকে লিয়াকতের শোকগ্রস্ত হওয়া আসলে—

i. আর্ত-মানবতার কল্যাণ করা

ii. কল্যাণের লক্ষ্যে অনুপ্রাণিত হওয়া

iii. মানুষ মানুষের জন্য—এ সত্যে উদ্বুদ্ধ হওয়া

নিচের কোনটি সঠিক ?

ক. i ও ii

খ. i ও iii

গ. ii ও iii

ঘ, i, ii ও iii

সৃজনশীল প্রশ্ন

১. নাদিম সাহেব দামি গাড়ি হাঁকিয়ে অফিসে যাবার পথে রাস্তার সিগন্যালে অপেক্ষা করেন। জীর্ণ-শীর্ণ এক ভিক্ষুক তাঁর গাড়ির জানালার পাশে ভিক্ষার থালা বাড়িয়ে দিলে তিনি জানালার কালো গ্লাস তুলে দেন। আর ভীষণ বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, ভিক্ষুকে দেশটা ভরে গেছে। কথা শুনে ড্রাইভার মহসীন বলে— স্যার, গরিব মানুষ, কী করবে বলেন? এই ভিক্ষার আয় রোজগার দিয়েই তো ওরা সংসার চালায়।

ক. ‘প্রার্থী’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত ?

খ. কবি সূর্যকে জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ড বলেছেন কেন ?

গ. উদ্দীপকের নাদিম সাহেবের আচরণ ‘প্রার্থী’ কবিতার কোন ভাবের সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ? – বর্ণনা কর ।

ঘ. ড্রাইভার মহসীনের অভিব্যক্তিতে ‘প্রার্থী” কবিতার মূল চেতনা প্রকাশ পেলেও কবি সুকান্তের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটে নি— মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই কর ৷

২.

‘দেখিনু সেদিন রেলে,

কুলি বলে এক বাবু সাব তারে ঠেলে দিল নিচে ফেলে !

চোখ ফেটে এল জল,

এমনি ক’রে কী জগৎ জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল ?’

ক. ‘হিমশীতল’ অর্থ কী ?

খ. আমাদের গরম কাপড়ের অভাব কীভাবে দূর হতে পারে ? ব্যাখ্যা কর।

গ. কবিতাংশের প্রথম তিনচরণে ‘প্রার্থী’ কবিতার যে দিকটির সাথে বৈসাদৃশ্য রয়েছে তার বর্ণনা দাও ।

ঘ. উদ্দীপকের শেষ চরণের বক্তব্যে ‘প্রার্থী’ কবিতায় কবির অভিমতের প্রতিফলন ঘটেছে কী? যুক্তিসহ ব্যাখ্যা কর।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment